অন্ধকার দিনগুলো
গত অক্টোবর মাসে বার্মার সেনাবাহিনী আরাকানে আক্রমণ চালানোর পর ৬৫,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণকে নির্দোষ সাব্যস্ত করতে কারণ উল্লেখ করে বলে, ‘এর সূত্রপাত হয়েছে রোহিঙ্গা কতৃক বার্মার নয়জন পুলিশ নিহত হওয়া থেকে।’ পালিয়ে আসা মুসলমানদের অধিকাংশই অস্থায়ী ক্যাম্প ও শরনার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের অনেকের জীবন কাহিনী খু্বই করুণ। মায়ানমার বাহিনী তাদের উপর গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ নানা প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক নির্যাতন করেছে।
আমেরিকার ফটোসাংবাদিক এলিসান জুয়াইস বাংলাদেশের কক্সবাজারস্থ বিভন্ন শরনার্থী শিবির ঘুরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা IBTimes-এর আরব আমিরাতের জোন কয়েকজন মহিলার লোমহর্ষক কাহিনী তাদের ছবিসহ প্রকাশ করে।
পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদে ভাষার নৈপুণ্যতার চেয়ে মূল কাহিনীর প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তাই ভাষার ত্রুটিকে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখে মূল কাহিনীকে গ্রহণের অনুরোধ রইল।
নাজিবা : সে বাংলাদেশে এসেছে দুইমাস আগে। তার বাড়ি মায়ানমারের দেলপাড়া গ্রামে। সেখানে সে সুখে শান্তিতেই জীবন কাটাচ্ছিল। তিন মাস পূর্বের কথা, হঠাৎ একদিন সেনাবাহিনী তাদের এলাকায় আক্রমণ চালায়। তারা জনগণকে হত্যা ও তাদের উপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা প্রকার অত্যাচার করতে আরম্ভ করে। সে বলে, একদিন আমি নিজের ভেতরে ভয় অনুভব করলাম। আমার ঘরবাড়ির নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে আমি নামায আদায় করি এবং কোরআন তেলাওয়াত করি। দিনগুলো আমি ভয়ের মধ্যেই কাটাচ্ছিলাম।
পালিয়ে আসার একদিন পূর্বের ঘটনা- সেদিন হঠাৎ সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে হানা দেয়। আমি অন্যান্য মহিলাদের সাথে একটি ঝোঁপে লুকিয়ে ছিলাম। আমাদের অবস্থান সম্পর্কে তারা জেনে ফেলে। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে অল্পবয়সী কয়েকটি মেয়েকে ধরে নিয়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে নিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। আমি তাদের চিৎকারের আওয়াজ শুনছিলাম। এক সেনা আমার মাথার উপর পিস্তল রেখে বলে, চলে এসো। আমি চিৎকার করতে থাকি আর তাদের সাথে লড়তে থাকি, কিন্তু তারা সংখ্যায় তিনজন। আমি একা আর তাদের সাথে পেরে উঠি না। তারা আমাকে টেনেহেঁচড়ে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যায়। মাথার উপর পিস্তল রেখে দুইজন সৈন্য আমাকে দীর্ঘ সময় ধর্ষণ করে।
পরের দিন নাজিবা ও তার পরিবার চিন্তা করল, এখন বসে থাকার সময় নেই, বাংলাদেশে পালাতে হবে। নাফ নদী মায়ানমারের শেষ সীমান্ত। এরপরই বাংলাদেশ। নদীর কাছে পৌঁছাতে তাদের পূর্ণ একদিন হাঁটতে হবে। নাজিবা বলে, “আমার সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। শরীর ছিল খুবই দুর্বল। আমার কোনো ভাবেই হাঁটার জন্য সাহস পাচ্ছিলাম না।”
নাজিবা এবং তার পরিবারের সদস্যরা ধনসম্পদ ও ঘরবাড়ি নৌকার মাঝিকে দিয়ে দেয়, যাতে সে নদী পার হতে সহায়তা করে। অবশেষে তারা বাংলাদেশের কুতুবখালিস্থ শরনার্থী শিবিরে পৌঁছায়।
নাজিবার ভাষ্য, এখানে আামাদের পর্যাপ্ত খাবার নেই, অনেকদিন না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। তবে আমরা এখানে নির্ভয়ে ঘুমাতে পারছি। এখানে আমাদের উপর কেউ আক্রমণ করতে আসে না।
ফারিয়া : তার বয়স সতের। সে বাংলাদেশে এসেছে মায়ানমারের শেলখালি গ্রাম থেকে। আরাকানের দিনগুলো তার আনন্দেই যাচ্ছিল। চার মাস পূর্বে বর্মী বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ ও নির্যাতন আরম্ভ করে।
ফারিয়া বলে, ১৬ই জানুয়ারি সেনাবাহিনীর একটি দল আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। তারা আমাদেরকে ঘর থেকে বের করে মানুষের সামনে এনে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকে। তারা আমাদেরকে হাত দ্বারা মারতে থাকে আর বন্দুক দ্বারা পেটাতে থাকে। সে বলে, একটি সৈন্য আমার সারা শরীর স্পর্শ করে। তারপর সে আমাকে একটি ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে যায় সেখানে সে আমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরে পাই তখন দেখি আমার শরীর একদম রক্তশূন্য হয়ে গেছে। তখন আমি বাংলাদেশে পালানোর কথা ভাবি। কিন্তু পথ অনেক দীর্ঘ। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবুও পালানোর বিষয়টি মনে স্থির করে নিই। অবশেষে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমরা বাংলাদেশের বালুখালি আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাই।
সে এখন ছয় মাসের অন্তসত্ত্বা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর স্বামীর সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সে বলছে, মায়ানমারে চার মাস আমি সবসময় ভয়ের মধ্যে কাটাতাম। এখানে সেই ভয়টুকু নেই, নির্ভয়ে ঘুমাতে পারছি।
জামালিদা বেগম : সে মায়ানমারের হাদগুদেজা গ্রাম থেকে বাংলাদেশে এসেছে। দুই মাস পূর্বে বর্মী বাহিনী তাদের গ্রামে হানা দেয়। তারা তার স্বামীকে হত্যা করে এবং তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পরের দিন সকালে সেনাবাহিনী তাদের এলাকা ঘেরাও করে।
জামালিদার ভাষ্য, তারা আমাকে ও অন্যান্য মেয়েদের ধরে একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাদেরকে বেদম প্রহার করতে থাকে। আমরা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করছিলাম আর আল্লাহ তা‘আলার কাছে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছিলাম। এক সেনা চিৎকার করে বলে, কোথায় তোদের আল্লাহ? তোদের আল্লাহ এখন তোদেরকে রক্ষা করতে পারবে না...।” তিনজন জামালিদাকে ধরে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা তার মুখের সামনে রিভলবার তাক করে বলে, যদি কোনো ধরণের বাধা দেওয়ার চেষ্টা কর, তাহলে সাথে সাথে তোমার মাথায় গুলি পরবে। তারপর তারা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরের কথা, কয়েকজন অপরিচিত সাংবাদিক তাদের গ্রামে আসে। তারা সব অবস্থা জানার পর জামালিদাসহ আরো যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের পক্ষে একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলে। সে রাতেই সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হামলা করে। তারা সেই সাংবাদিকদের একজনের মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে। সেনারা জামালিদার ছবি নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে। তাদের প্রতিবেশীরা দ্রুত গিয়ে তাকে সতর্ক করে দেয়, ফলে সে তখনই পালিয়ে যায়। বিভিন্ন জঙ্গল ও বাড়িতে পাঁচদিন অবস্থান করে অবশেষে বাংলাদেশে চলে আসে।
জামালিদা বলে, ‘মায়ানমারে প্রতি রাতেই বর্মী সেনাদের ভীতি আমাকে নির্ঘুম রেখেছে। এখন যখনই সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো স্মরণ হয় তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অস্থির হয়ে যাই। বিশেষ করে যখন কোনো বিকট আওয়াজ শোনি তখন আমার সামনে সেই চিত্রগুলো ভেসে উঠে। মাঝে মাঝে আমি শুনতে পাই, বার্মা সেনারা আমার ছবি সম্বোলিত বড় একটি পোস্টার লাগিয়ে আমাকে খুঁজছে। তারা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে হন্য হয়ে তালাশ করছে। আমি যেন তাদের হাত থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছি না। যখনই আমি ফিরে যাব তখনই তারা আমাকে হত্যা করবে। আমি আর কখনই আমার ঘরে ফিরে যেতে পারব না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যেন তারা আমাকে পেয়ে বসল।’
জামালিদা : আরেকজন মেয়ে আরাকান থেকে এসেছে। তার নামও জামালিদা। তার বয়স ১৬ বছর। সে আরাকানের শেলখালি গ্রাম থেকে এসেছে। বাংলাদেশে আসার কাহিনী তার মুখেই শুনুন-
‘ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবারে সেনাবাহিনী আমাদের এলাকায় হানা দেয়। তারা প্রথমে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে। মুসল্লিদের বের করে এনে তাদেরকে বেদম পেটাতে থাকে। মসজিদে যারা ছিল সবাইকে হত্যা করে। একদিন বর্মী সেনারা আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। আমি তখন পালানোর কোনো সুযোগ পাচ্ছিলাম না। তারা আমাকে ধরে ফেলে। আমার হাত বেঁধে রশিতে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর তারা আমার কাপড়গুলো ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে ফেলে। তারা আমাকে ঘুষি মারতে থাকে, পরিশেষে বন্দুক দিয়ে পেটাতে থাকে। দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর্যন্ত এভাবে নির্যাতন চলে তারপর চারজন সেনা আমাকে নিয়ে যায়। একটি কামরায় নিয়ে তারা আমাকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে। একসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
জামালিদা যখন জ্ঞান ফিরে পায় তখন সে মনে মনে ভাবে, এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়। তাই সে মনস্থ করে বাংলাদেশে চলে আসবে। তখনই সে নাফ নদীর দিকে রওয়ানা করে। নাফ নদীর তীরে পৌঁছালে সেখানের এক মাঝি তাকে বাংলাদেশে পার করে দেয়। পার হয়ে সে বাংলাদেশের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে পৌঁছায়। সে বলে, আমি মায়ানমারে নিরাপদ ছিলাম না, বিশেষত শেষ ঘটনাটি ছিল আমার জন্য খুব ভীতিকর। মায়ানমারে আমি বাহিরে বের হতে পারতাম না। আমি তো ঘরেও নিরাপদ ছিলাম না। এখানে আমি নিরাপদে আছি; আমি নির্ভয়ে ঘুমাতে পারি, বাহিরে বের হতে পারি। যদিও যথেষ্ট পরিমাণ খাবার না থাকার কারণে মাঝে মাঝে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে। তবুও এখানে নিরাপত্তা অনুভব করছি। পরিশেষে জামালিদা বলে, আমি প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় দুঃস্বপ্ন দেখি; আমি যেন আবার তাদের জুলুমের শিকার হচ্ছি। তারা আমাকে বন্দুক দিয়ে মারছে। আবার তাদের ধর্ষণের শিকার হচ্ছি।
নুরজাহান : সে মায়ানমারের নরাবিল এলাকায় থাকত। অন্যান্য নারীদের মতো সেও এখন নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত। মায়ানমারের সেনারা তার উপর নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার চালিয়েছে। তার ভিটেবাড়ি ছাড়ার বৃত্তান্ত তার মুখেই শুনুন। সে বলে, ‘পাঁচজন সেনা আমাদের বাড়িতে আসে। তারা একটি বেল্ট দিয়ে আমার চোঁখ বাঁধে। তারপর দুজন সৈন্য আমার ছোট্ট মেয়েটির সামনেই আমাকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে। ১৫ মিনিট পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন আমি জ্ঞান ফিরে পাই তখন সেনারা চলে গেছে। আমার ছোট্ট মেয়েটিকে দেখি পাশে বসে কাঁদছে।’ এ ঘটনার কয়েকদিন পরের কথা, কিছুদিন পর তারা আমার স্বামীকে হত্যা করে। আমি শুনতে পাই, সেনারা আরো এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, কারণ সে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করত। যখন সাংবাদিকরা ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে, তখনই সেনারা ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে। এক ব্যাক্তি ক্যামেরার সামনে কথা বলেছিল; সে তাদের হাত থেকে পালিয়ে যায়, তারা তাকেও খুঁজছিল। নুরজাহাজন বলে, আমার অন্তরে একথা বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, যদি আমি এখানে থাকি তাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে, তাই আমি সেখান থেকে পালানোর কথা চিন্তা করি। আমি অন্য গ্রামে গিয়ে তিনদিন লুকিয়ে থাকি। তারপর আমি নাফ নদীর পথে রওয়ানা করি। নদীর কাছে এসে এক মাঝিকে আমি কিছু টাকা দিই, যাতে সে আমাকে পার হতে সহযোগিতা করে। সে আমাকে নদী পার করে দেয়। বাংলাদেশে এসে আমি কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নিই। নুরজাহান বলে, আমি মায়ানমারে আমার জীবনের ৩১টি বছর কাটিয়েছি। কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো এ ধরণের ঘটনার শিকার হইনি। বিগত তিনটি মাস আমার জন্য খুবই ভীতিকর ছিল। আমি সর্বদা আমার পরিবারের লোকদের সান্তনা দিতাম। একদিন তারা বলে, সেনারা এসে আমার চাচার দাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দিয়েছে। রাতে যখনই আমি চোঁখ বন্ধ করি তখনই বিভিন্ন ভীতিকর দুঃস্বপ্ন দেখি। আমি দেখি, সেনারা আমার উপর আবার আক্রমণ চালিয়েছে, তারা আমাকে নির্যাতন করছে; আবার যেন তারা আসবে। আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। সেই ভীতিকর চিত্রগুলো এখনো আমাকে অস্থির করে তুলে।
ইয়াসমিন : তার বাড়ি মায়ানমারের নাইয়্যানসুঙ্গ এলাকায়। সেনাবাহিনী একদিন তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। তারা তার স্বামীকে দূরে কোথাও ধরে নিয়ে যায়। তারপর সেনারা তার উপর আক্রমণ চালায়; চারজন সেনা তাকে উপুর্যপুরি ধর্ষণ করে। সে বলে, ‘আমি বাংলাদেশে আসার আগে সাতদিন বিভিন্ন পাহাড়ে লুকিয়ে থাকি। নদী পার হওয়ার জন্য মাঝিকে প্রায় ৩০,০০০ মুদ্রা দিতে হয়েছে। এখনো আমার স্বামীর ব্যাপারে কোনো সংবাদ জানতে পারিনি। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও জানি না।’
নূর কালিমাহ : সেও একজন বাস্তুহারা রোহিঙ্গা মেয়ে। দুই মাস পূর্বে সে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সেনাবাহিনী তাদের এলাকায় আক্রমণ করে তার কয়েকজন প্রতিবেশীকে হত্যা করে। সে বাংলাদেশে চলে এসেছে কিন্তু তার পিতামাতা এখনো আসতে পারেনি। তারা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে গেছে, তাই তারা তারাতারি চলতেও পারে না। তবে এখন তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
গত অক্টোবর মাসে বার্মার সেনাবাহিনী আরাকানে আক্রমণ চালানোর পর ৬৫,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেনাবাহিনী তাদের আক্রমণকে নির্দোষ সাব্যস্ত করতে কারণ উল্লেখ করে বলে, ‘এর সূত্রপাত হয়েছে রোহিঙ্গা কতৃক বার্মার নয়জন পুলিশ নিহত হওয়া থেকে।’ পালিয়ে আসা মুসলমানদের অধিকাংশই অস্থায়ী ক্যাম্প ও শরনার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। তাদের অনেকের জীবন কাহিনী খু্বই করুণ। মায়ানমার বাহিনী তাদের উপর গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাসহ নানা প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক নির্যাতন করেছে।
আমেরিকার ফটোসাংবাদিক এলিসান জুয়াইস বাংলাদেশের কক্সবাজারস্থ বিভন্ন শরনার্থী শিবির ঘুরে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। লন্ডনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা IBTimes-এর আরব আমিরাতের জোন কয়েকজন মহিলার লোমহর্ষক কাহিনী তাদের ছবিসহ প্রকাশ করে।
পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদে ভাষার নৈপুণ্যতার চেয়ে মূল কাহিনীর প্রতি বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তাই ভাষার ত্রুটিকে মার্জনার দৃষ্টিতে দেখে মূল কাহিনীকে গ্রহণের অনুরোধ রইল।
নাজিবা : সে বাংলাদেশে এসেছে দুইমাস আগে। তার বাড়ি মায়ানমারের দেলপাড়া গ্রামে। সেখানে সে সুখে শান্তিতেই জীবন কাটাচ্ছিল। তিন মাস পূর্বের কথা, হঠাৎ একদিন সেনাবাহিনী তাদের এলাকায় আক্রমণ চালায়। তারা জনগণকে হত্যা ও তাদের উপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা প্রকার অত্যাচার করতে আরম্ভ করে। সে বলে, একদিন আমি নিজের ভেতরে ভয় অনুভব করলাম। আমার ঘরবাড়ির নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে আমি নামায আদায় করি এবং কোরআন তেলাওয়াত করি। দিনগুলো আমি ভয়ের মধ্যেই কাটাচ্ছিলাম।
পালিয়ে আসার একদিন পূর্বের ঘটনা- সেদিন হঠাৎ সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে হানা দেয়। আমি অন্যান্য মহিলাদের সাথে একটি ঝোঁপে লুকিয়ে ছিলাম। আমাদের অবস্থান সম্পর্কে তারা জেনে ফেলে। সেনাবাহিনী সেখানে গিয়ে অল্পবয়সী কয়েকটি মেয়েকে ধরে নিয়ে যায় এবং পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে নিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। আমি তাদের চিৎকারের আওয়াজ শুনছিলাম। এক সেনা আমার মাথার উপর পিস্তল রেখে বলে, চলে এসো। আমি চিৎকার করতে থাকি আর তাদের সাথে লড়তে থাকি, কিন্তু তারা সংখ্যায় তিনজন। আমি একা আর তাদের সাথে পেরে উঠি না। তারা আমাকে টেনেহেঁচড়ে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যায়। মাথার উপর পিস্তল রেখে দুইজন সৈন্য আমাকে দীর্ঘ সময় ধর্ষণ করে।
পরের দিন নাজিবা ও তার পরিবার চিন্তা করল, এখন বসে থাকার সময় নেই, বাংলাদেশে পালাতে হবে। নাফ নদী মায়ানমারের শেষ সীমান্ত। এরপরই বাংলাদেশ। নদীর কাছে পৌঁছাতে তাদের পূর্ণ একদিন হাঁটতে হবে। নাজিবা বলে, “আমার সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। শরীর ছিল খুবই দুর্বল। আমার কোনো ভাবেই হাঁটার জন্য সাহস পাচ্ছিলাম না।”
নাজিবা এবং তার পরিবারের সদস্যরা ধনসম্পদ ও ঘরবাড়ি নৌকার মাঝিকে দিয়ে দেয়, যাতে সে নদী পার হতে সহায়তা করে। অবশেষে তারা বাংলাদেশের কুতুবখালিস্থ শরনার্থী শিবিরে পৌঁছায়।
নাজিবার ভাষ্য, এখানে আামাদের পর্যাপ্ত খাবার নেই, অনেকদিন না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে। তবে আমরা এখানে নির্ভয়ে ঘুমাতে পারছি। এখানে আমাদের উপর কেউ আক্রমণ করতে আসে না।
ফারিয়া : তার বয়স সতের। সে বাংলাদেশে এসেছে মায়ানমারের শেলখালি গ্রাম থেকে। আরাকানের দিনগুলো তার আনন্দেই যাচ্ছিল। চার মাস পূর্বে বর্মী বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ ও নির্যাতন আরম্ভ করে।
ফারিয়া বলে, ১৬ই জানুয়ারি সেনাবাহিনীর একটি দল আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। তারা আমাদেরকে ঘর থেকে বের করে মানুষের সামনে এনে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকে। তারা আমাদেরকে হাত দ্বারা মারতে থাকে আর বন্দুক দ্বারা পেটাতে থাকে। সে বলে, একটি সৈন্য আমার সারা শরীর স্পর্শ করে। তারপর সে আমাকে একটি ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে যায় সেখানে সে আমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরে পাই তখন দেখি আমার শরীর একদম রক্তশূন্য হয়ে গেছে। তখন আমি বাংলাদেশে পালানোর কথা ভাবি। কিন্তু পথ অনেক দীর্ঘ। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তবুও পালানোর বিষয়টি মনে স্থির করে নিই। অবশেষে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমরা বাংলাদেশের বালুখালি আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাই।
সে এখন ছয় মাসের অন্তসত্ত্বা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর স্বামীর সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সে বলছে, মায়ানমারে চার মাস আমি সবসময় ভয়ের মধ্যে কাটাতাম। এখানে সেই ভয়টুকু নেই, নির্ভয়ে ঘুমাতে পারছি।
জামালিদা বেগম : সে মায়ানমারের হাদগুদেজা গ্রাম থেকে বাংলাদেশে এসেছে। দুই মাস পূর্বে বর্মী বাহিনী তাদের গ্রামে হানা দেয়। তারা তার স্বামীকে হত্যা করে এবং তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পরের দিন সকালে সেনাবাহিনী তাদের এলাকা ঘেরাও করে।
জামালিদার ভাষ্য, তারা আমাকে ও অন্যান্য মেয়েদের ধরে একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাদেরকে বেদম প্রহার করতে থাকে। আমরা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করছিলাম আর আল্লাহ তা‘আলার কাছে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছিলাম। এক সেনা চিৎকার করে বলে, কোথায় তোদের আল্লাহ? তোদের আল্লাহ এখন তোদেরকে রক্ষা করতে পারবে না...।” তিনজন জামালিদাকে ধরে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা তার মুখের সামনে রিভলবার তাক করে বলে, যদি কোনো ধরণের বাধা দেওয়ার চেষ্টা কর, তাহলে সাথে সাথে তোমার মাথায় গুলি পরবে। তারপর তারা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরের কথা, কয়েকজন অপরিচিত সাংবাদিক তাদের গ্রামে আসে। তারা সব অবস্থা জানার পর জামালিদাসহ আরো যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের পক্ষে একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলে। সে রাতেই সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হামলা করে। তারা সেই সাংবাদিকদের একজনের মাথা কেটে আলাদা করে ফেলে। সেনারা জামালিদার ছবি নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে হন্য হয়ে খুঁজতে থাকে। তাদের প্রতিবেশীরা দ্রুত গিয়ে তাকে সতর্ক করে দেয়, ফলে সে তখনই পালিয়ে যায়। বিভিন্ন জঙ্গল ও বাড়িতে পাঁচদিন অবস্থান করে অবশেষে বাংলাদেশে চলে আসে।
জামালিদা বলে, ‘মায়ানমারে প্রতি রাতেই বর্মী সেনাদের ভীতি আমাকে নির্ঘুম রেখেছে। এখন যখনই সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো স্মরণ হয় তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি অস্থির হয়ে যাই। বিশেষ করে যখন কোনো বিকট আওয়াজ শোনি তখন আমার সামনে সেই চিত্রগুলো ভেসে উঠে। মাঝে মাঝে আমি শুনতে পাই, বার্মা সেনারা আমার ছবি সম্বোলিত বড় একটি পোস্টার লাগিয়ে আমাকে খুঁজছে। তারা এক ঘর থেকে অন্য ঘরে হন্য হয়ে তালাশ করছে। আমি যেন তাদের হাত থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাচ্ছি না। যখনই আমি ফিরে যাব তখনই তারা আমাকে হত্যা করবে। আমি আর কখনই আমার ঘরে ফিরে যেতে পারব না। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই যেন তারা আমাকে পেয়ে বসল।’
জামালিদা : আরেকজন মেয়ে আরাকান থেকে এসেছে। তার নামও জামালিদা। তার বয়স ১৬ বছর। সে আরাকানের শেলখালি গ্রাম থেকে এসেছে। বাংলাদেশে আসার কাহিনী তার মুখেই শুনুন-
‘ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবারে সেনাবাহিনী আমাদের এলাকায় হানা দেয়। তারা প্রথমে মসজিদে মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করে। মুসল্লিদের বের করে এনে তাদেরকে বেদম পেটাতে থাকে। মসজিদে যারা ছিল সবাইকে হত্যা করে। একদিন বর্মী সেনারা আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। আমি তখন পালানোর কোনো সুযোগ পাচ্ছিলাম না। তারা আমাকে ধরে ফেলে। আমার হাত বেঁধে রশিতে ঝুলিয়ে দেয়। তারপর তারা আমার কাপড়গুলো ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে ফেলে। তারা আমাকে ঘুষি মারতে থাকে, পরিশেষে বন্দুক দিয়ে পেটাতে থাকে। দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর্যন্ত এভাবে নির্যাতন চলে তারপর চারজন সেনা আমাকে নিয়ে যায়। একটি কামরায় নিয়ে তারা আমাকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে। একসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’
জামালিদা যখন জ্ঞান ফিরে পায় তখন সে মনে মনে ভাবে, এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়। তাই সে মনস্থ করে বাংলাদেশে চলে আসবে। তখনই সে নাফ নদীর দিকে রওয়ানা করে। নাফ নদীর তীরে পৌঁছালে সেখানের এক মাঝি তাকে বাংলাদেশে পার করে দেয়। পার হয়ে সে বাংলাদেশের কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে পৌঁছায়। সে বলে, আমি মায়ানমারে নিরাপদ ছিলাম না, বিশেষত শেষ ঘটনাটি ছিল আমার জন্য খুব ভীতিকর। মায়ানমারে আমি বাহিরে বের হতে পারতাম না। আমি তো ঘরেও নিরাপদ ছিলাম না। এখানে আমি নিরাপদে আছি; আমি নির্ভয়ে ঘুমাতে পারি, বাহিরে বের হতে পারি। যদিও যথেষ্ট পরিমাণ খাবার না থাকার কারণে মাঝে মাঝে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে। তবুও এখানে নিরাপত্তা অনুভব করছি। পরিশেষে জামালিদা বলে, আমি প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় দুঃস্বপ্ন দেখি; আমি যেন আবার তাদের জুলুমের শিকার হচ্ছি। তারা আমাকে বন্দুক দিয়ে মারছে। আবার তাদের ধর্ষণের শিকার হচ্ছি।
নুরজাহান : সে মায়ানমারের নরাবিল এলাকায় থাকত। অন্যান্য নারীদের মতো সেও এখন নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত। মায়ানমারের সেনারা তার উপর নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার চালিয়েছে। তার ভিটেবাড়ি ছাড়ার বৃত্তান্ত তার মুখেই শুনুন। সে বলে, ‘পাঁচজন সেনা আমাদের বাড়িতে আসে। তারা একটি বেল্ট দিয়ে আমার চোঁখ বাঁধে। তারপর দুজন সৈন্য আমার ছোট্ট মেয়েটির সামনেই আমাকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে। ১৫ মিনিট পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন আমি জ্ঞান ফিরে পাই তখন সেনারা চলে গেছে। আমার ছোট্ট মেয়েটিকে দেখি পাশে বসে কাঁদছে।’ এ ঘটনার কয়েকদিন পরের কথা, কিছুদিন পর তারা আমার স্বামীকে হত্যা করে। আমি শুনতে পাই, সেনারা আরো এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, কারণ সে সাংবাদিকদের সহযোগিতা করত। যখন সাংবাদিকরা ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে, তখনই সেনারা ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে। এক ব্যাক্তি ক্যামেরার সামনে কথা বলেছিল; সে তাদের হাত থেকে পালিয়ে যায়, তারা তাকেও খুঁজছিল। নুরজাহাজন বলে, আমার অন্তরে একথা বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, যদি আমি এখানে থাকি তাহলে তারা আমাকে মেরে ফেলবে, তাই আমি সেখান থেকে পালানোর কথা চিন্তা করি। আমি অন্য গ্রামে গিয়ে তিনদিন লুকিয়ে থাকি। তারপর আমি নাফ নদীর পথে রওয়ানা করি। নদীর কাছে এসে এক মাঝিকে আমি কিছু টাকা দিই, যাতে সে আমাকে পার হতে সহযোগিতা করে। সে আমাকে নদী পার করে দেয়। বাংলাদেশে এসে আমি কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নিই। নুরজাহান বলে, আমি মায়ানমারে আমার জীবনের ৩১টি বছর কাটিয়েছি। কিন্তু ইতিপূর্বে কখনো এ ধরণের ঘটনার শিকার হইনি। বিগত তিনটি মাস আমার জন্য খুবই ভীতিকর ছিল। আমি সর্বদা আমার পরিবারের লোকদের সান্তনা দিতাম। একদিন তারা বলে, সেনারা এসে আমার চাচার দাড়িতে আগুণ লাগিয়ে দিয়েছে। রাতে যখনই আমি চোঁখ বন্ধ করি তখনই বিভিন্ন ভীতিকর দুঃস্বপ্ন দেখি। আমি দেখি, সেনারা আমার উপর আবার আক্রমণ চালিয়েছে, তারা আমাকে নির্যাতন করছে; আবার যেন তারা আসবে। আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভালোভাবে ঘুমাতে পারিনি। সেই ভীতিকর চিত্রগুলো এখনো আমাকে অস্থির করে তুলে।
ইয়াসমিন : তার বাড়ি মায়ানমারের নাইয়্যানসুঙ্গ এলাকায়। সেনাবাহিনী একদিন তাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। তারা তার স্বামীকে দূরে কোথাও ধরে নিয়ে যায়। তারপর সেনারা তার উপর আক্রমণ চালায়; চারজন সেনা তাকে উপুর্যপুরি ধর্ষণ করে। সে বলে, ‘আমি বাংলাদেশে আসার আগে সাতদিন বিভিন্ন পাহাড়ে লুকিয়ে থাকি। নদী পার হওয়ার জন্য মাঝিকে প্রায় ৩০,০০০ মুদ্রা দিতে হয়েছে। এখনো আমার স্বামীর ব্যাপারে কোনো সংবাদ জানতে পারিনি। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও জানি না।’
নূর কালিমাহ : সেও একজন বাস্তুহারা রোহিঙ্গা মেয়ে। দুই মাস পূর্বে সে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সেনাবাহিনী তাদের এলাকায় আক্রমণ করে তার কয়েকজন প্রতিবেশীকে হত্যা করে। সে বাংলাদেশে চলে এসেছে কিন্তু তার পিতামাতা এখনো আসতে পারেনি। তারা বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে গেছে, তাই তারা তারাতারি চলতেও পারে না। তবে এখন তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
Comment