Announcement

Collapse
No announcement yet.

পৃথিবীতে লিবারেলদের পতন এবং ডানপন্থীদের উত্থান: বাস্তবতা, কারণ এবং শিক্ষা || " প্রথম পর্ব "

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পৃথিবীতে লিবারেলদের পতন এবং ডানপন্থীদের উত্থান: বাস্তবতা, কারণ এবং শিক্ষা || " প্রথম পর্ব "

    পৃথিবীতে লিবারেলদের পতন এবং ডানপন্থীদের উত্থান: বাস্তবতা, কারণ এবং শিক্ষা
    প্রথম পর্ব


    বর্তমানে অনেক জায়গায় লিবারেল দলগুলোর জনপ্রিয়তা কমে গেছে, যেখানে ডানপন্থী দল ও মতাদর্শের উত্থান স্পষ্ট। লিবারেলদের পতনের প্রধান কারণ হলো তাদের নীতির সাথে বাস্তব কাজের মিল না থাকা এবং বাস্তবসম্মত নীতির অভাব। অন্যদিকে, ডানপন্থীরা মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন ও চাহিদা লক্ষ্য করে রাজনীতি চালাচ্ছে এবং সফলভাবে মানুষের সমর্থন পাচ্ছে। এই পরিবর্তন শুধু রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সামাজিকবিজ্ঞানের একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ, যেখানে রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব এবং সামাজিক পরিবর্তনের গভীর বিশ্লেষণ করা যায়।
    .
    লিবারেলদের পতনের কিছু কারণ -
    .
    ক। কথা আর কাজে মিল নেইঃ
    .
    ১. লিবারেল নীতির দ্বন্দ্ব: লিবারেল মতাদর্শের মূল কথা হলো মানবাধিকার, সমতা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। এটি মানুষের জন্য ন্যায্য এবং সমৃদ্ধ সমাজের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু বাস্তবতায়, লিবারেল দেশগুলো প্রায়ই তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়। তারা কথায় মানবাধিকার রক্ষা করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের নীতিতে প্রায়শই স্ববিরোধিতা দেখা যায়।
    .
    ২. মানবাধিকার ও যুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো লিবারেল দেশগুলো প্রায়ই মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে, তাদের কার্যক্রম এই নীতির সাথে মিল না খাওয়ায় প্রায়ই বিপরীত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে যুদ্ধ শুরু করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগ তুলে। পরে জানা যায়, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। এর ফলে ইরাকে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং দেশটি চরম অস্থিতিশীলতায় পড়ে। ইউরোপীয় দেশগুলো শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, শরণার্থী সংকটের সময় ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাগুলোতে তাদের উদাসীনতা স্পষ্ট দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালে শরণার্থী সংকটের সময় ইউরোপের ভূমধ্যসাগরে প্রায় ৮,০০০ শরণার্থী ডুবে মারা যায়, যা মানবাধিকারের নীতি বিরোধী আচরণের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
    .
    ৩. অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও দারিদ্র্য: লিবারেল দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সাধারণ ইরানিদের খাদ্য ও ওষুধের সংকটে ফেলেছে, যা মানবাধিকার ধারণার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ইরানে খাদ্য এবং ওষুধের দাম প্রায় ৩০% বাড়ে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।
    .
    ৪.জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতি ও কর্পোরেট প্রভাব: লিবারেল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করার বড় প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কর্পোরেট লবিগুলোর চাপে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়। ইউরোপের অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, বেশ কিছু কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দেরি করছে। কানাডার লিবারেল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির একজন প্রবক্তা ছিল। তবে, তার সরকার তেল পাইপলাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প (Trans Mountain Pipeline Expansion) অনুমোদন করে। এই প্রকল্পটি জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবহনে ব্যবহৃত হবে, যা কার্বন নির্গমন আরও বাড়াবে। ট্রুডো সরকারের এই পদক্ষেপকে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে, তারা এটিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে।
    .
    খ। ইউটোপিয়ান চিন্তাভাবনাঃ
    .
    ১. লিবারেল আইডিওলজির সীমাবদ্ধতা: লিবারেল চিন্তার মূল লক্ষ্য হলো একটি নিখুঁত এবং ন্যায়সঙ্গত সমাজের স্বপ্ন, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পায় এবং কোনো বাধা ছাড়াই নিজের জীবন উন্নত করতে পারে। এটি একটি আদর্শিক ধারণা, যেখানে মানুষের নেতিবাচক দিকগুলো যেমন, লোভ, স্বার্থপরতা এবং প্রতিযোগিতার মতো বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করা হয়। লিবারেলরা প্রায়ই "সবার জন্য সমান সুযোগ" এবং "বিনামূল্যে অভিবাসন" এর মতো ধারণা প্রচার করে। এই ধারণাগুলো কাগজে-কলমে দারুণ শোনলেও বাস্তবে এটি সমাজ এবং অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
    .
    উদাহরণস্বরূপ বিনামূল্যে অভিবাসন: বিনামূল্যে অভিবাসনের ধারণা অনুযায়ী, যে কেউ যেকোনো দেশে বসবাস ও কাজ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে, এটি একটি দেশের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। যেমন, ইউরোপে অনেক শরণার্থী এসে একটি বড় সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের সময় জার্মানিতে অনেক অভিবাসী প্রবেশ করেছিল। এর ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে চাকরি হারানোর ভীতি বেড়েছিল এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে জার্মানিতে অভিবাসীদের বেশি হবার কারণে চাকরি বাজারে চাপ পড়ে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে চাকরি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।
    .
    ২. বাস্তবতার সীমাবদ্ধতা: ইতিবাচক হলেও, এই ধারণাগুলো বাস্তবে প্রায়ই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের প্রতিভা, পরিবার, এবং সামাজিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে সুযোগের ফারাক থাকে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পারেন। সরকারি স্কুলগুলোতে সবাই সমান শিক্ষা সুযোগ পায়, কিন্তু ধনী পরিবারের সন্তানরা ব্যক্তিগত স্কুলে ভালো শিক্ষা পায়। ফলে, "সমান সুযোগ" শুধুমাত্র একটি ধারণা হিসেবে থেকে যায়।
    .
    ৩. কর্পোরেট প্রতিযোগিতা: লিবারেল ধারণা অনুযায়ী, মানুষ স্বাভাবিকভাবে পরার্থপর এবং সহানুভূতিশীল। কিন্তু বাস্তবে, মানুষ প্রায়ই নিজের স্বার্থকে আগে রাখে। কর্পোরেট দুনিয়ার উদাহরণ থেকে এটা ভালোভাবে বোঝা যেতে পারে। বড় কোম্পানাগুলো ছোট ব্যবসাগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে তাদের বাজার থেকে বের করে দেয়। এর ফলে "সবার জন্য সমান সুযোগ" কেবল একটি ধারণা হিসেবে থেকে যায়।
    .
    গ। মানুষের প্রয়োজনকে গুরুত্ব না দিয়ে বৈশ্বিক নীতিকে গুরুত্ব দেয়াঃ
    .
    লিবারেল নীতিগুলো প্রায়শই বড় বিষয়গুলির দিকে মনোযোগ দেয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন এবং সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। তারা কর্পোরেট স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়, যা অনেক সময় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। এর ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং ডানপন্থী দলগুলোর উত্থান সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্যাংক এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেইলআউট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একই সময়ে সাধারণ মানুষ চাকরি হারিয়েছিল এবং তাদের বাড়ি বন্ধক রাখতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের জন্যে অইরকম কিছু করা হয়নি। কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে বড় ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল।
    .
    লিবারেল দেশগুলো সাধারণ মানুষের চাকরি ও জীবনযাত্রার উন্নতির চাইতে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক নীতির মতো বড় বিষয়গুলিতে বেশি মনোযোগ দেয়। উদাহরণ হিসেবে ফ্রান্সে "ইয়েলো ভেস্ট" আন্দোলনকে দেখা যেতে পারে। ফ্রান্স সরকার যখন পরিবেশ রক্ষার জন্য জ্বালানির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করল, তখন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হল। তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সড়কে নেমে আসে, কারণ এটি তাদের জীবনযাত্রার খরচ বাড়িয়ে দেয়।
    .
    ঘ। তাত্ত্বিকতা, "Woke" রাজনীতি এবং জনসাধারণের মূল সমস্যাগুলোর প্রতি উদাসীনতাঃ
    .
    লিবারেল দলগুলোর একটি বড় দুর্বলতা হলো তাত্ত্বিক আলোচনা এবং "ওয়োক" ("woke") রাজনীতিতে বেশি মনোযোগ দেওয়া। এর ফলে তারা প্রায়ই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা এবং বাস্তব সমস্যাগুলো থেকে দূরে চলে যায়। লিবারেলদের আলোচনা অনেক সময় জটিল তাত্ত্বিক বিষয়গুলিতে সীমাবদ্ধ থাকে, যা শিক্ষিত মধ্যবিত্তের জন্য আকর্ষণীয় হলেও, গ্রামীণ বা কম শিক্ষিত মানুষের সাথে তাদের দূরত্ব বাড়ায়। এই কারণে তারা সাধারণ মানুষের প্রকৃত চাহিদা এবং সমস্যাগুলো সঠিকভাবে বুঝতে পারে না।
    .
    ১। তাত্ত্বিক আলোচনা: লিবারেল নেতারা প্রায়ই মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার মতো বিষয় নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এই আলোচনাগুলো সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার সাথে সম্পর্কহীন। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট বিতর্কের সময় লিবারেল রাজনীতিকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে থাকার পক্ষে "অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি" এবং "বৈশ্বিক সংযোগ" এর কথা বলেন। কিন্তু তারা ব্রেক্সিট সমর্থকদের বাস্তব সমস্যাগুলো, যেমন চাকরি হারানো এবং স্থানীয় শিল্পের পতন, ঠিকভাবে বুঝতে পারেনি। এর ফলে, সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশ লিবারেল চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
    .
    ২। "Woke" রাজনীতি: "Woke Politics" শব্দটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক সচেতনতা এবং প্রগতিশীল অ্যাকটিভিজম বোঝাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। "Woke" রাজনীতি একটি সামাজিক আন্দোলন, যা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলিতে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রগতিশীল পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেয়। এটি লিঙ্গ সমতা, এলজিবিটিকিউ অধিকার এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই LGBTQ+ অধিকারের ব্যাপারে বেশি সচেতনতা দেখা যায়। তবে, এই আন্দোলন প্রায়ই সাধারণ মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলো, যেমন চাকরি, মূল্যস্ফীতি, নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা, উপেক্ষা করে। মূলত, এর দার্শনিক ভিত্তি পোস্ট-মডার্নিজম বা উত্তর-আধুনিকতাবাদ।
    .
    ৩। রাজনৈতিক শুদ্ধতা: "Woke" রাজনীতি প্রায়ই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে রাজনৈতিক শুদ্ধতার নামে ভিন্নমত প্রকাশ করতে বাধা দেয়। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরক্তি এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি "Woke" আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ করেছিল, যা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষের বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করতে পারেনি। এর ফলে, তারা ডানপন্থী রিপাবলিকানদের কাছে ভোট হারায়।
    .
    চলবে ...​
Working...
X