আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
প্রিয় ভাইয়েরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে কুশলে আছেন।
পর কথা হলো: আপনারা জানেন আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়া দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে অবৈধ প্রশাসনের সৈন্যদেরকে হটিয়ে খুব দ্রুততার সাথে দখল করে নিচ্ছে। সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই।
যার কারণে তালেবান মুজাহিদদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাবুলের অবৈধ প্রশাসন মারাত্মকভাবে আতংকিত হয়ে পড়েছে। যার কারণে আশরাফ গনী মিয়া ও প্রশাসন তাদের প্রভু ক্রুসেডার আমেরিকার তাগুত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে নিজেদের সুরক্ষা করতে দাবি জানিয়েছে ও সাক্ষাৎ করে হাতে-পায়ে ধরে ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু তাদের সকল দাবি-দাওয়া ও অনুনয়-বিনয়কে বাইডেন সরাসরি অস্বীকার করে দিয়েছে! কারণ, আমেরিকা দীর্ঘ ২০ বছলে আফগানে মার খেতে খেতে এখন দিশেহারা হয়ে তালেবানের সাথে চুক্তি করে কোনরকম জানে বাঁচতে নাকে খত দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। আর আশরাফ গনী মিয়া গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে।
আচ্ছা যাই হোক, আশা ও আনন্দের কথা হচ্ছে- আল্লাহর ইচ্ছায় আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এবং শক্তিশালী ইমারতে ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা খুব সন্নিকটে। যারা কারণে পুরো মুসলিম উম্মাহ আনন্দিত ও আশাবাদী যে, ইমারতে ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠা হলে সারা বিশ্বের মুজাহিদরা নতুনভাবে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কুফফার বিশ্বের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক কুফুরী ব্যবস্থার ভিত ধ্বংস হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
অপরদিকে কুফফার বিশ্ব ও নামধারী মুসলিম বিশ্বের তাগুত শাসকরা চরমভাবে আতংকিত। তালিবানের উত্থানে তাদের মসনদে যেন কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। তাই তারা সকলে মিলে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে এবং মুসলিমদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে। তালেবান ক্ষমতায় এলে, এই হবে, সেই হবে, নারী স্বাধীনতা ও নারী শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হবে, সহিংসতা বাড়বে ইত্যাদি।
তাই আামাদেরকে তাদের সকল চক্রান্ত ও তাদের ছড়ানো ফিতনার ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কখনোই তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
পরিশেষে একটি জাতীয় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ থেকে একটি আনন্দদায়ক নিউজ আপনাদের সাথে শেয়ার করে বিদায় নিচ্ছি।
বাগরাম ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে তালেবানের অভিনন্দন
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি বাগরাম থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানিয়েছে তালেবান। তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা এই ঘটনাকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছি।
মার্কিন সেনারা বাগরাম থেকে সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জবিউল্লাহ মুজাহিদ এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হলে এদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র কাছে পাঠানো আলাদা এক বিবৃতিতে জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হলে এদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে বাগরাম বিমানঘাঁটি অবস্থিত। এটি ছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমানঘাঁটি। প্রায় বিশ বছর ধরে এই ঘাঁটি থেকেই বিদেশি বাহিনী তালেবান এবং আল কায়েদার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংশ্লিষ্টতার সময় এই বিমানঘাঁটিতে হাজারো সেনার উপস্থিতি ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ পদস্থ কর্মকর্তারা অঘোষিত সফরে আফগানিস্তান গেলে এই ঘাঁটিতে অবস্থান করতেন।
মূলত বাগরাম বিমানঘাঁটিকে কেন্দ্র করেই গত দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের কমান্ড স্থাপিত হয় এই বিমানঘাঁটিতে। কারাগার হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখানে হাজার হাজার তালেবান বন্দি ছিল।
এ ঘাঁটির তাৎপর্য
আমেরিকা এখন তাদের সবচেয়ে দীর্ঘ এই লড়াইয়ের অবসান চাইছে। এই যুদ্ধে বহু প্রাণহানি হয়েছে। অর্থের হিসাবেও এই যুদ্ধে ব্যয় হয়েছে বিশাল। আমেরিকা এখন আফগান সরকারের হাতে দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছে।
কিছুদিন আগে পর্যন্তও আফগানিস্তানে প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার আমেরিকান সৈন্য ছিল। তারা চলে যাবার পর এক হাজারের কম মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে থাকবে। মে মাস নাগাদ আফগানিস্তানে জোট বাহিনীর অন্যান্য দেশের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ হাজার।
ধারণা করা হচ্ছে এদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। জার্মানি এবং ইতালিও বুধবার ঘোষণা করেছে দেশটিতে তাদের মিশন শেষ।
এদিকে বিদেশি সেনাদের চলে যাবার খবরে আশান্বিত তালেবান আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বেশ কিছু জেলায় তাদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিদেশি বাহিনী পুরোপুরি দেশ ত্যাগ করার পর নতুন করে আবার গৃহযুদ্ধ বাধার আশংকা রয়েছে।
বিবিসির আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী বিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলছেন বাগরাম ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক নির্দেশক। আমেরিকান সামরিক শক্তির প্রতীক এই বিমান ঘাঁটি একসময় সোভিয়েত বাহনীর দখলে ছিল।
খুব শিগগিরি শহরের মধ্যে এই বিস্তীর্ণ ও ব্যস্ত বিমানঘাঁটি এলাকার দখল নেবার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে। বাগরামের দখল নেয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন লিস ডুসেট।
তিনি বলছেন প্রতীকী অর্থে এবং কৌশলগত কারণেও এই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া জরুরি।
তালেবান যোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে তাদের নজর বাগরামের ওপর, বলছেন লিস ডুসেট।
বিমান ঘাঁটির দেয়ালের ভেতর রয়েছে বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদের ভাণ্ডার। এই অস্ত্র সম্ভারই তালেবানের জন্য শীর্ষ টার্গেট।
তবে এই বিমান ঘাঁটিকে ঘিরে যে জনপদ ও জীবিকা গড়ে উঠেছে, যার ওপর বহু সাধারণ মানুষের রুটি রুজি নির্ভর করছে, তারা এখন তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিতাগ্রস্ত। লিস ডুসেট বলছেন, বাগরামের যে নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি কাবুলের ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) উত্তরে। এর নামকরণ কাছের একটি গ্রামের নামে।
বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি গড়ে তুলেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যখন তারা ১৯৮০এর দশকে আফগানিস্তান দখল করে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী সেখানে যায় ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এবং এই ঘাঁটির পরিসর তারা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তোলে। সেখানে এখন দশ হাজার সৈন্য থাকতে পারে।
বাগরামে বিমান ওঠানামার জন্য দুটি রানওয়ে আছে, এর মধ্যে নতুন রানওয়েটি ৩.৬ কিলোমিটার লম্বা। সেখানে নামতে পারে বিশাল মালবাহী বিমান এবং বোমারু বিমান।
বিমান পার্ক করার জন্য সেখানে ১১০টি জায়গা আছে। এগুলো বিস্ফোরণ প্রতিরোধী দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত।
এ্যাসোসিয়টেড প্রেস সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, এলাকার মধ্যে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, জরুরি সেবার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা, অস্ত্রোপচারের জন্য তিনটি অপারেটিং থিয়েটার এবং আধুনিক সরঞ্জামবিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসার ক্লিনিক।
সেখানে আছে সংঘাতের সময় গ্রেপ্তার হওয়া বন্দীদের কারাগার। যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন এই কারাগার পরিচিত হয়ে উঠেছিল আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো নামে।
আল কয়েদা সন্দেহভাজনদের সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে আমেরিকান সেনেটের একটি রিপোর্টে এই কারাগারের নাম উঠে আসে।
কিউবার গুয়ান্তানামোয় কুখ্যাত মার্কিন কারাগারের মত আফগানিস্তানের কারাগারেও বন্দীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন চালানোর কথা জানা যায়। সূত্র : বিবিসি
প্রিয় ভাইয়েরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে কুশলে আছেন।
পর কথা হলো: আপনারা জানেন আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামিয়া দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে অবৈধ প্রশাসনের সৈন্যদেরকে হটিয়ে খুব দ্রুততার সাথে দখল করে নিচ্ছে। সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই।
যার কারণে তালেবান মুজাহিদদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাবুলের অবৈধ প্রশাসন মারাত্মকভাবে আতংকিত হয়ে পড়েছে। যার কারণে আশরাফ গনী মিয়া ও প্রশাসন তাদের প্রভু ক্রুসেডার আমেরিকার তাগুত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে নিজেদের সুরক্ষা করতে দাবি জানিয়েছে ও সাক্ষাৎ করে হাতে-পায়ে ধরে ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু তাদের সকল দাবি-দাওয়া ও অনুনয়-বিনয়কে বাইডেন সরাসরি অস্বীকার করে দিয়েছে! কারণ, আমেরিকা দীর্ঘ ২০ বছলে আফগানে মার খেতে খেতে এখন দিশেহারা হয়ে তালেবানের সাথে চুক্তি করে কোনরকম জানে বাঁচতে নাকে খত দিয়ে বিদায় নিচ্ছে। আর আশরাফ গনী মিয়া গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে।
আচ্ছা যাই হোক, আশা ও আনন্দের কথা হচ্ছে- আল্লাহর ইচ্ছায় আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয় এবং শক্তিশালী ইমারতে ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা খুব সন্নিকটে। যারা কারণে পুরো মুসলিম উম্মাহ আনন্দিত ও আশাবাদী যে, ইমারতে ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠা হলে সারা বিশ্বের মুজাহিদরা নতুনভাবে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কুফফার বিশ্বের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে। যার ফলে আন্তর্জাতিক কুফুরী ব্যবস্থার ভিত ধ্বংস হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
অপরদিকে কুফফার বিশ্ব ও নামধারী মুসলিম বিশ্বের তাগুত শাসকরা চরমভাবে আতংকিত। তালিবানের উত্থানে তাদের মসনদে যেন কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। তাই তারা সকলে মিলে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে এবং মুসলিমদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখাচ্ছে। তালেবান ক্ষমতায় এলে, এই হবে, সেই হবে, নারী স্বাধীনতা ও নারী শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হবে, সহিংসতা বাড়বে ইত্যাদি।
তাই আামাদেরকে তাদের সকল চক্রান্ত ও তাদের ছড়ানো ফিতনার ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। কখনোই তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
পরিশেষে একটি জাতীয় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ থেকে একটি আনন্দদায়ক নিউজ আপনাদের সাথে শেয়ার করে বিদায় নিচ্ছি।
********
বাগরাম ঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহারে তালেবানের অভিনন্দন
প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ৯:১২ এএম
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি বাগরাম থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে স্বাগত জানিয়েছে তালেবান। তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা এই ঘটনাকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছি।
মার্কিন সেনারা বাগরাম থেকে সর্বশেষ সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর জবিউল্লাহ মুজাহিদ এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হলে এদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
বার্তা সংস্থা এএফপি’র কাছে পাঠানো আলাদা এক বিবৃতিতে জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হলে এদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে বাগরাম বিমানঘাঁটি অবস্থিত। এটি ছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমানঘাঁটি। প্রায় বিশ বছর ধরে এই ঘাঁটি থেকেই বিদেশি বাহিনী তালেবান এবং আল কায়েদার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংশ্লিষ্টতার সময় এই বিমানঘাঁটিতে হাজারো সেনার উপস্থিতি ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ পদস্থ কর্মকর্তারা অঘোষিত সফরে আফগানিস্তান গেলে এই ঘাঁটিতে অবস্থান করতেন।
মূলত বাগরাম বিমানঘাঁটিকে কেন্দ্র করেই গত দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর তৎপরতা পরিচালিত হয়েছে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের কমান্ড স্থাপিত হয় এই বিমানঘাঁটিতে। কারাগার হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং এখানে হাজার হাজার তালেবান বন্দি ছিল।
এ ঘাঁটির তাৎপর্য
আমেরিকা এখন তাদের সবচেয়ে দীর্ঘ এই লড়াইয়ের অবসান চাইছে। এই যুদ্ধে বহু প্রাণহানি হয়েছে। অর্থের হিসাবেও এই যুদ্ধে ব্যয় হয়েছে বিশাল। আমেরিকা এখন আফগান সরকারের হাতে দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দিতে চাইছে।
কিছুদিন আগে পর্যন্তও আফগানিস্তানে প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার আমেরিকান সৈন্য ছিল। তারা চলে যাবার পর এক হাজারের কম মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে থাকবে। মে মাস নাগাদ আফগানিস্তানে জোট বাহিনীর অন্যান্য দেশের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ হাজার।
ধারণা করা হচ্ছে এদের বেশিরভাগই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছে। জার্মানি এবং ইতালিও বুধবার ঘোষণা করেছে দেশটিতে তাদের মিশন শেষ।
এদিকে বিদেশি সেনাদের চলে যাবার খবরে আশান্বিত তালেবান আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বেশ কিছু জেলায় তাদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিদেশি বাহিনী পুরোপুরি দেশ ত্যাগ করার পর নতুন করে আবার গৃহযুদ্ধ বাধার আশংকা রয়েছে।
বিবিসির আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী বিষয়ক প্রধান সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলছেন বাগরাম ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক নির্দেশক। আমেরিকান সামরিক শক্তির প্রতীক এই বিমান ঘাঁটি একসময় সোভিয়েত বাহনীর দখলে ছিল।
খুব শিগগিরি শহরের মধ্যে এই বিস্তীর্ণ ও ব্যস্ত বিমানঘাঁটি এলাকার দখল নেবার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে। বাগরামের দখল নেয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন লিস ডুসেট।
তিনি বলছেন প্রতীকী অর্থে এবং কৌশলগত কারণেও এই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া জরুরি।
তালেবান যোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে তাদের নজর বাগরামের ওপর, বলছেন লিস ডুসেট।
বিমান ঘাঁটির দেয়ালের ভেতর রয়েছে বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদের ভাণ্ডার। এই অস্ত্র সম্ভারই তালেবানের জন্য শীর্ষ টার্গেট।
তবে এই বিমান ঘাঁটিকে ঘিরে যে জনপদ ও জীবিকা গড়ে উঠেছে, যার ওপর বহু সাধারণ মানুষের রুটি রুজি নির্ভর করছে, তারা এখন তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিতাগ্রস্ত। লিস ডুসেট বলছেন, বাগরামের যে নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি কাবুলের ৪০ কিলোমিটার (২৫ মাইল) উত্তরে। এর নামকরণ কাছের একটি গ্রামের নামে।
বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি গড়ে তুলেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যখন তারা ১৯৮০এর দশকে আফগানিস্তান দখল করে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী সেখানে যায় ২০০১ সালের ডিসেম্বরে এবং এই ঘাঁটির পরিসর তারা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তোলে। সেখানে এখন দশ হাজার সৈন্য থাকতে পারে।
বাগরামে বিমান ওঠানামার জন্য দুটি রানওয়ে আছে, এর মধ্যে নতুন রানওয়েটি ৩.৬ কিলোমিটার লম্বা। সেখানে নামতে পারে বিশাল মালবাহী বিমান এবং বোমারু বিমান।
বিমান পার্ক করার জন্য সেখানে ১১০টি জায়গা আছে। এগুলো বিস্ফোরণ প্রতিরোধী দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত।
এ্যাসোসিয়টেড প্রেস সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, এলাকার মধ্যে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, জরুরি সেবার জন্য নির্দিষ্ট এলাকা, অস্ত্রোপচারের জন্য তিনটি অপারেটিং থিয়েটার এবং আধুনিক সরঞ্জামবিশিষ্ট দন্ত চিকিৎসার ক্লিনিক।
সেখানে আছে সংঘাতের সময় গ্রেপ্তার হওয়া বন্দীদের কারাগার। যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন এই কারাগার পরিচিত হয়ে উঠেছিল আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো নামে।
আল কয়েদা সন্দেহভাজনদের সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে আমেরিকান সেনেটের একটি রিপোর্টে এই কারাগারের নাম উঠে আসে।
কিউবার গুয়ান্তানামোয় কুখ্যাত মার্কিন কারাগারের মত আফগানিস্তানের কারাগারেও বন্দীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন চালানোর কথা জানা যায়। সূত্র : বিবিসি
Comment