তাদের অপরাধ, আমাদের প্রতিবাদ, আমাদেরকে হত্যা, তাদের কাছে বিচার প্রার্থনা, বিচার করার আশ্বাস, আমাদের সন্তুষ্টি, তাদের প্রতারণা। এটা একটা কমন প্যাটার্ন। তাদের সাথে আমাদের এমনই একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতেও এ প্যাটার্নের বাস্তবতা লক্ষ্য করা গেছে। ভারতের বিরুদ্ধে পোস্ট দেওয়ায় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়। আমরা প্রতিবাদ করে সরকারের কাছে তথা যাদের মদদে হত্যা করা হয়েছে তাদেরই কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি। আমাদের দাবি তারা মেনে নিয়েছে কি নেয়নি, পরে আর সেটার কোন খোঁজ নেই! আবার, ভোলায় মুসলিমদের প্রাণাধিক প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে এক হিন্দু কটুক্তি করেছে। আর, তার শাস্তির দাবি আমরা বহু শাতিমে রাসূলের হেফাজতকারী সরকারের কাছে প্রার্থনা করে বিক্ষোভ করেছি। ইসলামবিদ্বেষী সরকার তার নীতি ও বন্ধুর স্বার্থ রক্ষার্থে নিরীহ মুসলিমদের উপর সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী দিয়ে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। আমাদের খুনে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। তারপরও আমাদের হুশ ফিরেনি। বিচারের দাবি নিয়ে গিয়েছি সেই সরকারেরই কাছে! যেন তারা প্রকৃত অর্থেই আমাদের শাসক! কর্তৃত্বের সুরে তাই তারা আমাদের বিচার করার আশ্বাস দেয় এবং দাবি মেনে নিয়েছে বলে নীতি বাক্য শোনায়। আর আমরাও সন্তুষ্ট চিত্তে ভেবে নিয়েছি যে তারা আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে! অথচ, তারা যে আমাদের সাথে প্রতারণা করছে সে বিষয়টি বুঝতে পারিনি! বিষয়টি সহজে বুঝতে, ভোলার ঘটনাটার উপর চলুন আবার নজর দিই।
ভোলাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে কটুক্তি করেছে এক হিন্দু। এর প্রতিবাদে নবী প্রেমিক তাওহিদী মুসলিমরা ভোলায় বিক্ষোভ করেন। আর, এসময় তাদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় হিন্দুত্ববাদের দালাল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী বাহিনী পুলিশ। এতে অন্তত 5জন মুসলিম নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো প্রায় দেড় শতাধিক। মুসলিমদের উপর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। আর, সরকারও সে দাবি মেনে নিয়েছে বলে মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণ জেনেছে।
এ হলো ভোলা ঘটনার সারসংক্ষেপ। এখানে ঘটনা ঘটেছে দুটি।
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করা।
দুই. কটুক্তির প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে পুলিশের নৃশংস হামলা।
এ দুটির মধ্যে মূল ঘটনা কোনটি? নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেওয়ার ঘটনা। এর প্রতিবাদেই মুসলিমরা রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, আমাদের ভাইয়েরা শহীদ (ইনশাআল্লাহ) হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাওহিদী জনতার মৌলিক দাবি ছিল আল্লাহর রাসূলের শানে কটুক্তিকারীকে ফাঁসি দেওয়া। যে ৬ দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করা হয় সেটিতেও ছিল কটুক্তিকারী ও তার সহযোগিদের ফাঁসি দিতে হবে। কিন্তু, সরকার যে বললো দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে! তার মানে কি কটুক্তিকারী মুশরিক হিন্দুকে ফাঁসি দেওয়া হবে? আমি-আপনি এমনি হয়তো ভেবে নিবো। মিডিয়া যে আমাদের এভাবেই ভাবতে শিখিয়েছে। প্রতিটা মিডিয়া এ শিরোনামে খবর করেছে যে, সরকার দাবি মেনে নিয়েছে। অথচ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটুক্তিকারীকে ফাঁসি দেওয়ার যে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে সরকার বলেছে তাদের প্রচলিত আইন অনুযায়ীই শাস্তি প্রদান করা হবে। অর্থাৎ, কটুক্তিকারীকে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল প্রদান করা হতে পারে। মূল দাবিই তো ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে কটুক্তিকারীকে ফাঁসি দেওয়া, আর এ দাবিতেই তো আমাদের ভাইয়েরা রক্ত ঝরালো। রক্ত ঝরানোর বিষয়টা তো ছিল এখানে গৌন। সরকার যদি সব পুলিশকে মুসলিমদের উপর হামলা করার কারণে ফাঁসিও দেয় আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি করা ঐ মুশরিক হিন্দুকে ছেড়ে দেয়, তবুও তো আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো না।
তাহলে মূল দাবি মেনে না নিয়েই সরকার যে বলছে তারা দাবি মেনে নিয়েছে, সেটা আমরা কীভাবে মেনে নিতে পারি? আর, তাদের কাছে বিচার প্রার্থনা করেই আমরা কী পেলাম? হিসাব মিলিয়ে দেখুন। তারা আমাদের রক্ত ঝরিয়েছে, আমাদের হত্যা করেছে, আমাদের দাবিও মেনে নেয়নি। অথচ, মুশরিক শাতিমে রাসূলের পক্ষ নিয়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারপরও, তাদের সিস্টেমে আবদ্ধ থাকবো? তাদের কাছেই বিচার চাইবো? তাদের উপরই আস্থা রাখবো? যদি মেনে নেই, তাহলে মুমিনের যে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে এবং পড়বে তার মূল্য কে দিবে? আমাদের ভাইদের রক্তমূল্য কি এতই সস্তা? এ রক্তের বদলা কে নিবে? কীভাবে নিবে? আবারো খুনী সরকারের কাছে বিচার প্রার্থনা করেই? নাকি অন্য কোন পথ-পদ্ধতি আছে?
সূত্র: https://alfirdaws.org/2019/10/26/28181/
Comment