চাল চুরির নেপথ্যে কী?
চলমান লকডাউনে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। খাদ্যের অভাবে অনেকে আত্মহত্যা করছেন—এমন সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু এমন করুণ পরিস্থিতিতেও দেশ ও জনতার পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী প্রশাসন। বরং করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার পেছনে আওয়ামী প্রশাসনের স্বার্থপরতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, দুর্বলতা এবং উদাসীনতাই দায়ী—এমনটাই মনে করছেন জনসাধারণ।
আওয়ামী সরকারের হিংস্রতার শিকার হয়ে আজ উভয়মুখী সংকটে সাধারণ মানুষ। একদিকে বাইরে বের হলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা, অন্যদিকে ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরার ভয়। কিন্তু দেশের সরকারের সেদিকে খেয়াল কই? তারা মুজিবপূজায় ব্যস্ত থেকে দেশে করোনাভাইরাস বিস্তারে ভূমিকা রেখেছে। আজ যখন দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে, তখনও তারা উদাসীন। দরিদ্র মানুষের খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেনা দেশের শাসকগোষ্ঠী; বরং দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক মিথ্যা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য।
হ্যাঁ, সরকার ত্রাণ দিয়েছে। ত্রাণ দেওয়াটা সরকারের দায়িত্ব, জনগণের প্রতি অনুগ্রহ নয়। কিন্তু কথা হলো, সরকারের ত্রাণ কারা পেয়েছে? যাদেরকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সরকারের ত্রাণ তারাই পেয়েছে। তারা চাল চুরি করেছে, তেল গুদামে ভরেছে। ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলেছে, তারপর ত্রাণ কেড়ে নিয়ে শূন্য হাতে বাড়ি পাঠিয়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষের সাথে তামাশা করেছে এই আওয়ামী প্রশাসন। এ নিয়ে বিস্তারিত বলার কিছু নেই, গত কয়েকদিনে চাল চুরির ঘটনা সবাই কমবেশি জানেন। চাল চোরদের বিরুদ্ধে সবার কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ। তবে চাল চুরির নেপথ্যে কী? এর সমাধান কোথায়? এ নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হলেও, প্রকৃত সমাধানের কথা উঠে এসেছে বলে মনে হয়নি।
চাল চুরির পেছনে বহু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো জবাবদিহিতার অভাব। সরকারের নিম্নপর্যায় থেকে একেবারে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত সবার চুরি করার পেছনে এই কারণটি বিদ্যমান। এই সরকারের ‘সবাই’ চুরি করে; কেউ ব্যাংক লোন আর বাজেটের নামে ‘পুকুর চুরি’ করে, আবার কেউ গরীবের হক মেরে ‘চাল চুরি’ করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জবাবদিহিতার পথ রুদ্ধ, কেউ কাউকে জবাবদিহি করার মতো নৈতিক যোগ্যতা রাখে না। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ চোরদের নৈতিক ক্ষমতা নেই নিম্নপদস্থ আঞ্চলিক চোরদের জবাবদিহি করার। বরং তারা একে অপরের সহযোগী; যাকে বলে চোরে চোরে মাস্তুতো ভাই।
স্বয়ং চোরদের হাতে চুরি ঠেকানোর ‘যন্ত্র’ দিয়ে রাখলে, চুরি বন্ধ করা অসম্ভব। ‘চাল চুরি’ বলুন কিংবা ‘পুকুর চুরি’—এসবের বাস্তবিক সমাধান চোরদের শাসনব্যবস্থায় অকল্পনীয়। কেননা, গণতান্ত্রিক চোরদের সরকারব্যবস্থায় গরীবের হক মারার এই চুরির বিরুদ্ধে জবাবদিহি করার কেউ নেই। আর জবাবদিহি করার বিষয়টি এতো সহজও নয়। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী এই সকল চোরকে যদি জবাবদিহি করতে যান, তাহলে আপনি তার রোষানলে পড়া ছাড়া ততোটা লাভ হবে না। আপনার উপরই চুরির অপবাদ দেওয়া হতে পারে, আপনাকেই দোষারোপ করে নির্যাতন করা হতে পারে। তাহলে কখন জবাবদিহি করা যাবে? প্রকৃতপক্ষে সমাধান কখন আসবে?
প্রকৃত সমাধান তখনই আসবে যখন দেশের এই চোর শাসকগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হবে; আর ক্ষমতায় থাকবেন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো ন্যায়পরায়ণ ও নিষ্ঠাবান শাসক, যিনি অর্ধ পৃথিবীর শাসক হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের সামনে জবাবদিহি করেছেন। সমাধান আসবে— চোরদের হাত কাটার বিধান বাস্তবায়ন করা হলে, রুদ্ধ করা হলে চুরির সমস্ত পথ। কিন্তু, চুরির পথ কীভাবে বন্ধ করবেন? যখন সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামী অর্থব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারবেন—চুরির পথ তখনই বন্ধ করা সম্ভব; আর এটা কোনো তাত্ত্বিক বয়ান নয়, বরং ইসলামী শাসনব্যবস্থায় যুগে যুগে এর বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ববাসী।
___________________________________
লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দ, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
Comment