মাদ্রাসার বই নিয়ে মিথ্যাচার করে ধরা খেয়েছে শ্যামল দত্ত
গত ২০শে ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে “মাদ্রাসার বইয়ে অশ্লীলতা” শিরোনামে একটি আর্টিকেল ছাপিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলো শ্যামল দত্তের পত্রিকা ভোরের কাগজ। (https://archive.fo/Lq1i4)
পত্রিকার তথ্যমতে তার ঐ রিপোর্টের বিরোধীতা করে ২৩শে ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে শ্যামল দত্ত ও প্রতিবেদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্যকে উকিল নোটিশ পাঠায় দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা মাহবুবুল আলম আরিফ নামক এক ব্যক্তি। ঐ নোটিশে বলা হয়, “ঐ রিপোর্টের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে ভুল স্বীকার করে এবং আগামীতে ভুল হবে না, এমন প্রতিবেদন না ছাপালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
(https://www.dailyinqilab.com/article...A6%BF%E0%A6%B6)
উকিল নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫শে ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজ একটি প্রতিবেদন ছাপায়। যেখানে সে বলতে চায় যে,
“প্রকাশিত প্রতিবেদনে পবিত্র হাদিস ও ইসলাম ধর্মের প্রতি কোনো অবমাননা করা হয়নি এবং করার কোনো উদ্দেশ্যও নেই। এমনকী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য প্রতিবেদনটি লেখাও হয়নি। মাদ্রাসার চারটি শ্রেণির চারটি বইয়ে মদ ও যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয় লেখার কারণে সরকার নিজে উদ্যোগী হয়ে ছাপা হওয়া ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৬ কপি পাঠ্যবই বাজেয়াপ্ত করেছে। এসব বই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে বইগুলো ফেরত এনে নতুন করে মাদ্রাসার চারটি শ্রেণির চারটি বিষয়ের বই নতুন করে ছাপাচ্ছে সরকার। এ জন্য সরকারের ১৪ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। প্রতিবেদনে এই বিষয়গুলোই উল্লেখ করা হয়। মাদ্রাসার অন্যান্য বই নিয়ে প্রতিবেদনে কিছুই লেখা হয়নি। এ কারণে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বন্ধ করার অপপ্রয়াস কোনোভাবেই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নয়। এ ছাড়া কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়া কিংবা ইসলামের অবমাননা করাও প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নয়। ভোরের কাগজ মানুষের ধর্মানুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
(http://www.bhorerkagoj.net/print-edi.../25/171515.php)
যাই হোক, পুরো বিষয়টি অনুসন্ধান চালিয়ে যা দেখা হয়েছে । এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মাধ্যমে জানা গেছে যে, সরকার মাদ্রাসায় বই পাঠিয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু পরবর্তী বই বাজেয়াপ্ত করা বা বই ফেরত নেয়ার কোনটি হয়নি। স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন এসে যায়, শ্যামল দত্তের পত্রিকা তাহলে এই আজগুবি তথ্য পেলো কোথায় ?
২০১৮ সালের মাদ্রাসা বোর্ডের পাঠ্যপুস্তকের কিছু স্ক্রিণশটে প্রমাণ দিচ্ছি যে, আদৌ শ্যামল দত্তরা মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল।
গত ২০শে ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে ভোরের কাগজে “মাদ্রাসার বইয়ে অশ্লীলতা” শিরোনামে আর্টিকেলটির একটি লাইন হুবুহু তুলে ধরলাম, সেখানে সে লিখেছে- “দাখিলের নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মজিদ ও তাজভিদ বইয়ের ১৭৮তম পৃষ্ঠায় ২৮তম পাঠ/রুকুতে ‘আলোচ্য আয়াতের বাহ্যিক অর্থদ্বারা বুঝা যায়, যেভাবে ইচ্ছা এবং যে কোনো রাস্তা দিয়ে স্ত্রী সহবাস করা যায়।”
পাঠক, হঠাৎ করে অর্ধেক কথা পড়ে কেউ ভুল বুঝতে পারে যে, মাদরাসা শিক্ষায় তাহলে এসব কি শেখানো হচ্ছে? কিন্তু এবার আসুন দাখিলের নবম-দশম শ্রেণির কুরআন মজিদ ও তাজভিদ বইয়ের ১৭৮তম পৃষ্ঠায় কি লেখা আছে তা বইয়ের স্ক্রিণশটে দেখি-
“আলোচ্য আয়াতের বাহ্যিক অর্থদ্বারা বুঝা যায়, যেভাবে ইচ্ছা এবং যে কোনো রাস্তা দিয়ে স্ত্রী সহবাস করা যায়। আয়াতের প্রকৃত মর্ম হল, স্ত্রীগণ সন্তান লাভের দিক দিয়ে উৎপাদন ক্ষেত্র, যেন ফসলের যমিন।........জরায়ু বা সন্তান দানের রাস্তা ছাড়া অন্য রাস্তা দিয়ে স্ত্রী সহবাস করা......হারাম।”
মাদ্রাসা বোর্ড মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষার কথা বিবেচনা করেই তৈরী করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে একজন মানুষের সারাদিন কি করবে, কেমন করে করবে তার স্ববিস্তারে বর্ণনা আছে, অন্য কোন ধর্মে এত স্ববিস্তারে বর্ণনা আর পাওয়া যায় না। এজন্য ইসলাম ধমর্কে পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলে। যারা মাদ্রাসা বোর্ড থেকে স্কলার হবে, তাদেরকে সকল ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে স্ববিস্তারে জানতে হবে, এটাই নিয়ম। আলোচ্য পাঠ্যে সেটাই শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কিন্তু শ্যামল দত্তের কাছে তা অশ্লীল মনে হয়েছে (অথবা তার পছন্দের কোন বিষয়কে নিষেধ করা হয়েছে)। যদিও সেটা তার মাথাব্যথা হওয়ার কোন কারণ না।
সবশেষে বলবো-
হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থে কি আছে, সেটা নিয়ে মাদ্রাসার বোর্ডের শিক্ষকরা কোন প্রতিবেদন করেননি। কিন্তু শ্যামল দত্ত আর অভিজিত ভট্টরা কেন মূর্খতা নিয়ে মাদ্রাসার বোর্ড নিয়ে রিপোর্ট করতে গেলো তা আমরা অবশ্যই বুঝি। ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামক দূরারোগ্য ব্যধিতে তারা আক্রান্ত। মুজাহিদীনদের নিজস্ব উপায়েই তাদের চিকিৎসা করা জরুরী বলে মনে করছি।
.
Comment