সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও সাইবার জগতের সার্বিক দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে এবার ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’নামে একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অধীনে এই সাইবার পুলিশ সারাদেশে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ইউনিটের জনবল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিজিটাল আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্তেও বিশেষ দায়িত্ব পালন করবে সাইবার পুলিশ। একইসঙ্গে সাইবার অপরাধের জন্য পুলিশ সদর দফতরেও একটি সমন্বয় সেল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সাইবার সংক্রান্ত মামলাগুলো মনিটরিং করবে এ সমন্বয় সেল। যাতে কোনও অবস্থাতেই গুজব ছড়িয়ে কেউ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে।
‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’ গঠনের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে বলা হয়, ‘এনহ্যান্সিং সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ক্যাপাবিলিটি অফ বাংলাদেশ পুলিশ’ প্রকল্পের আওতায় সিআইডিতে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় স্থাপিত সর্বাধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার কাজ করছে। ২০১৭ সালে এটি উদ্বোধনের পর সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত দুই হাজারের বেশি মামলা তদন্ত, অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করেছে। প্রথমদিকে এ সংক্রান্ত অপরাধ কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ডাটা চুরি ও তথ্যপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে বহুসংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করা হচ্ছে। যে কারণে আরও বিস্তৃতভাবে কাজ করার জন্য আলাদাভাবে সাইবার পুলিশ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম অপারেশন ও ইনভেস্টিগেশন, সাইবার ক্রাইম সার্ভিলেন্স ও পেট্রোলিং এবং সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য কার্যকরী ভূমিকা থাকবে এ ইউনিটের।
একজন ডিআইজির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে সিআইডির এই বিশেষায়িত ইউনিট। ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও বিশেষ পুলিশ সুপারসহ ৩৪২ জনের একটি সাংগঠনিক কাঠামোও এরইমধ্যে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। যারা আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রমে দীর্ঘদিন পুলিশ বিভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হবে এই ইউনিটে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর উত্তরায় এপিবিএন-এর একটি অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া গুজব ঠেকাতে পুলিশের নতুন একটি ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র পেলেই এই ইউনিটের কাজ শুরু হয়ে যাবে। জনবল প্রস্তুতেরও কাজ চলছে। যাদের এ ইউনিটে পদায়ন করা হবে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র আরও জানায়, অনলাইনকেন্দ্রিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব প্রতিরোধে সাইবার জগতে মনিটরিং জোরদার করতে সারাদেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব জেলা ও বিভাগে সাইবার অপরাধ মনিটরিং করতে আলাদা টিম গঠনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এসব কাজ মনিটরিং করতে আলাদা সেল খোলা হয়েছে। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়িয়ে কোনও ব্যক্তি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠী অরাজক পরিস্থিতির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি মো.সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘পুলিশ সব সময়েই সাইবার অপরাধীর বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। ক্লোজ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশের পুলিশই সাইবার অপরাধ ঠেকাতে কাজ করছে। তবে এসব বিষয়ে বিশেষভাবে কাজ করার জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সাইবার পুলিশ সেন্টার নামের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হচ্ছে।’ শিগগির এ ইউনিটের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
Comment