তালেবান হামলায় ‘আহত’ প্রথম আলো!
উপশমে মিথ্যা ছড়ালো!
- খালিদ মুন্তাসির
আলহামদুলিল্লাহি ওয়াহদাহ, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ।
সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের কাছাকাছি প্রদেশ ওয়ার্দাকে আমেরিকার গোলাম আফগান দালাল বাহিনীর ‘‘সুরক্ষিত’’ সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বরকতময়ী হামলা চালান তালেবান মুজাহিদগণ! তালেবান মুজাহিদীনের ঐ হামলায় পতনোন্মুখ আফগান দালাল সরকারী বাহিনীর প্রায় ২শতাধিক সেনা হতাহত হয়।
মুজাহিদগণের চালানো ঐ হামলাটি যে কেবল আফগান দালাল সরকারী বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি করেছে তা নয়, বরং সারা বিশ্বের কুফুরী শক্তির মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে! মাথায় যেন বাঁজ ভেঙ্গে পড়েছে তাদের! পাগলের মত আচরণও শুরু করে দিয়েছে কেউ কেউ! মিথ্যাচারে সয়লাব হয়েছে হলুদ মিডিয়াগুলোর পত্রিকার পাতা! বিশেষভাবে ‘প্রথম আলো’ নামক বাংলাদেশী একটি ইসলামবিদ্বেষী পত্রিকার কথাই বলি! আসলে, এই পত্রিকাটির নাম নিতেও গা ঘিন-ঘিন করে! মিথ্যাচার ও জাহালত পত্রিকাটির পাতায় পাতায় নজরে পরে! তালেবান মুজাহিদীনের করা সাম্প্রতিক বরকতময়ী ঐ হামলাটির পরে ‘প্রথম আলো’ নামক হলুদ মিডিয়া ‘এত বোমার খয়খরচা কয় পায় তালেবান?’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে! যদিও প্রতিবেদনটির অধিকাংশ তথ্যই তাদের নিজস্ব গবেষণা নয়, ধার করা! এসকল তথ্য সংগ্রহ করেছে এমন আরেকটি হলুদ মিডিয়া থেকে যারা চরম মিথ্যাবাদী ও প্রতারক হিসেবে বেশ কয়েকবার প্রমাণিত হয়েছে! সেই মিথ্যাবাদী প্রতারক মিডিয়াটির নাম হলো ‘বিবিসি’! বিবিসি’র প্রতারণার একটি নমুনা পাঠকদের সামনে উল্লেখ করার ইচ্ছা করছি। আশা করি, এই একটি প্রমাণই ‘বিবিসি’ সংবাদমাধ্যম যে কত বড় প্রতারক, তা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
২০১৮ সালের ৮ই আগস্ট ‘বিবিসি’-তে ‘“Israeli air strikes ‘kill woman and toddler” এই শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়; যেখানে বলা হয়- গাজায় ইসরাঈলের বিমান হামলায় একজন গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুসহ ৩জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন। কিন্তু, কিছুক্ষণ পরেই পাল্টে যায় বিবিসি’র সেই নিউজটি! পুরোপুরি বিপরীত কথা বলা হয় সেই নিউজে! তখন সেই নিউজের শিরোনাম হয়ে যায়, ‘Gaza air strikes `kill woman and child' after rockets hit Israel' অর্থাৎ, ইসরাইলে গাজার বিমান হামলায় মহিলা এবং শিশু নিহত হয়! ইসরাঈলের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কথায় বিবিসি তার নিউজটিই পাল্টে ফেলে! [https://www.albawaba.com/sites/defau.../Loop/bbc.png]
সারাবিশ্ব বিবিসি’র এই প্রতারণা প্রত্যক্ষ করেছে। বিবিসি’কে দেখতে পেয়েছে শক্তিশালীর দালালী করে দুর্বলের বিরোধীতা করতে। যাইহোক, আমাদের আলোচ্য বিষয় বিবিসি’কে নিয়ে নয়, প্রথম আলো’র সাম্প্রতিক রিপোর্টটি নিয়ে! তাহলে, মূল আলোচনায় আসা যাক ইনশাআল্লাহ।
‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনটির মূখ্য উদ্দেশ্য, তালেবান মুজাহিদীন হামলা করার অত্যাধুনিক অস্ত্র বা অস্ত্র কেনার অর্থ কোথা থেকে পায়!? অল্প কথাতেই তাদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া যেত, কিন্তু আলোচনার উদ্দেশ্য ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনটির মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচন করা। তাই, মিথ্যাচারগুলোর সমুচিত জবাব দেওয়ার মনস্থ করেছি, ওয়ামা তাওফিক্বী ইল্লা বিল্লাহ।
প্রতিবেদনটিতে যে বিষয়টির প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা হলো- ‘তালেবানের আয়ের অন্যতম উৎস মাদক! আফিম চাষ থেকে তালেবান বিপুল অর্থ আয় করে থাকে । ’
এ বিষয়টি নিয়ে পূর্বেও আমার একটি আর্টিকেলে আলোচনা করেছিলাম। সেখান থেকে প্রাসঙ্গিক আলোচনাটুকু এখানে পুনরায় উল্লেখ করছি-
আফগানিস্তানে ঐতিহাসিকভাবেই মূলত স্বল্পমাত্রায় আফিম চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু, আফগানিস্তানে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম আফিম সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ! দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না কখনোই! কেননা, এই অঞ্চল থেকে যুগে যুগে লুটেরার দল, যা পেরেছে নিজ দেশে পাচার করেছে! যুক্তরাষ্ট্রেরও সেরকম একটা ধ্যান-ধারণা অবশ্যই ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকগণ। আর, সেজন্য প্রয়োজন এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং এ ভূমির মানুষদেরকে শোষণ করার ক্ষমতা অর্জন! সে লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান অভিযান শুরু করে। তার এই অভিযান কিন্তু ২০০১ সালে আফগানে হামলা করার মাধ্যমে নয়, বরং আরো পূর্ব থেকেই শুরু! যাইহোক, সিআইএ-এর প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় আফগানিস্তানে আফিম চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সেগুলো পাচার হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে! বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে!! পরে, রাশিয়ার পলায়নের পর ক্ষমতালোভী জালিম সরকারের কবল থেকে আফগান জাতিকে উদ্ধারে অস্ত্র ধরেন তালেবান মুজাহিদগণ। খুব দ্রুতই দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন তালেবানরা। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন। কিন্তু, দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে উত্তম অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সময়ের প্রয়োজন। তালেবান সরকার অতি অল্প সময়ে জনসাধারণের মন জয় করে নিতে সক্ষম হন এবং কেবল বছরখানেকের মধ্যেই পশ্চিমাদের সরবরাহ করা আফগানজাতির জন্য ‘বিষ’ স্বরূপ আফিম উৎপাদনকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসেন। যা স্বীকার করতে বাধ্য হয় জাতিসংঘও! কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের আফগান হামলার পর তালেবান সরকারের পতন ঘটলে আবারও আফিম উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হয় । আর, সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’ পুনরায় আফিম উৎপাদনে ফিরে আসে! তারা পাকিস্তান বর্ডারসহ আফগানিস্তানের বিশাল ভূমিতে পুনরায় আফিম উৎপাদন শুরু করে। দ্যা গার্ডিয়ান’এর সূত্রানুসারে, ২০০৩ সালে আফগানিস্তানের জিডিপি’র ৬২% আসে আফিম থেকে!! [সূত্র: https://www.theguardian.com/news/201...n-afghanistan]
অতঃপর ঘটে গেল অদ্ভুত ঘটনা!!!! যারা আফিম উৎপাদন বন্ধ করে শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছিলেন, সেই তালেবানদের *বিরুদ্ধেই অপবাদ দেওয়া হলো আফিম উৎপাদনের!! আর, যারা আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে, মিডিয়া তাদেরকে প্রকাশ করলো আফিম উৎপাদনে বাধাদানকারী রূপে!!! খুবই অদ্ভুত!! এভাবে চলতে থাকলো, আর দিনে দিনে আফিম উৎপাদন এত বেশি বেড়ে গেল যে আফগানিস্তান উঠে গেল আফিম উৎপাদনে শীর্ষে!
আর, এদিকে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন বন্ধ করার দাবিদারদের নিজের দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল! ক্ল্যারি ফেল্টার নামক এক আমেরিকান বিশ্লেষকের মন্তব্য হলো- যুক্তরাষ্ট্রে ‘মাদকাসক্ততা’ মহামারী আকার ধারণ করেছে! ২০১৭ সালের ২৬শে ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে ঝাঁপটে ধরা সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মাদক! প্রতি সপ্তাহে আফিম সংক্রান্ত মাদকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা লোকের সংখ্যা ৮ শতাধিক!! প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, মিলিয়ন মিলিয়ন আমেরিকান আফিমে আসক্ত!! [ সূত্র: https://www.cfr.org/backgrounder/us-opioid-epidemic]
সুবহানাআল্লাহ! একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের ভূমি আফগানিস্তান আফিম উৎপাদনে শীর্ষে! আরেকদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে আফিমে আসক্ততা মহামারী আকার ধারণ করেছে!! কত মিল দুই জায়গায়!
তাহলে কারা আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের নেপথ্যে অবদান রাখছে!!! ??? জবাব চাই কথিত সংবাদমাধ্যমগুলোর থেকে। আজ যারা আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা তালেবানদের নিয়ন্ত্রাধীন বিবেচনায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের সমস্ত দোষারূপ তালেবানদের করে থাকে তাদের এই আফিম উৎপাদনের পূর্ব ইতিহাস জানা উচিত। মিথ্যাচার করে আফিম উৎপাদনের সাথে তালেবানকে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কূটচালগুলোর একটি! এতে, তাদের দুইটা ফায়দা আছে বলে মনে হয়- এক. যুক্তরাষ্ট্র যে এই আফিম উৎপাদনের শীর্ষ উদ্যোক্তা, তা যেন ঢাকা পড়ে যায়! আর, দুই. তালেবানদের দোষারূপ করার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিমবিশ্বে তালেবানদের প্রতি বিদ্বেষ এবং ঘৃণা ছড়ানোর অপচেষ্টা! [পুরো (আপডেটেড) আর্টিকেলটি পড়ুন এখান থেকে: https://risala.ga/fadq/]
এটুকু হলো পূর্ব আলোচনা। এখানে আমি ইসলাম বিদ্বেষী পত্রিকা ‘প্রথম আলো’র বক্তব্যকে উল্লেখপূর্বক আরো একটু যোগ করতে চাই ইনশাআল্লাহ। প্রথম আলো বলেছে,
‘‘তালেবান স্বীকার না করলেও দেশের ভেতরে তাদের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস মাদক। আফিমের উর্বর ভূমি আফগানিস্তান। সেই সুবাদে বিশ্বে আফিমের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী দেশ তারা। এই সুযোগকেই লুফে নিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানে এখন তালেবান–নিয়ন্ত্রিত এলাকাতেই অধিকাংশ আফিম চাষ হয়। তারা আফিমচাষি, আফিম থেকে হেরোইন উৎপাদনকারী ও কারবারিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। আফিম অর্থনীতির জোরে তালেবানের অর্থভান্ডারও বাড়বাড়ন্ত।’’
প্রথম আলো’র এই বক্তব্যের বিষয়ে বলবো, তারা এখানে চরম মিথ্যা কথা বলেছে। তাদের এ ধরণের কথার স্বপক্ষে আজ পর্যন্ত কোন বিশ্বস্ত প্রমাণ তারা হাজির করতে পারেনি। আর তারা নিজেরাই চরম মিথ্যাবাদী হওয়ায়, তাদের কোন বক্তব্যও সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতীত গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি, মানুষের আকলও তাদের এই মিথ্যাচারের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে যাবে। কেননা, আফগানিস্তানে চলমান রমরমা আফিম ব্যবসাকে যাঁরা ক্ষমতায় গিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন, তাঁরা কখনো সেই আফিম ব্যবসা চালু করতে পারেন না। যখন আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠিত ছিল, কেন তালেবান সরকার আফিমকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন? অথচ, তখনই তো তাঁদের আফিম ব্যবসার উপযুক্ত সময় ছিল, সুযোগ ছিল অন্যান্য দেশের সাথে আফিম ব্যবসার মাধ্যমে নিজের অর্থভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার সুযোগ তো তখনই ছিল। কিন্তু, তালেবান সরকার তা করেননি, বরং আফিম ব্যবসাকে আফগানিস্তান থেকে নির্মূল করেছেন। আফিম উৎপাদন শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছেন।
এদিকে, যখনই আমেরিকা আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালো, ক্ষমতায় বসলো আফগানের দালাল সরকার; তখন থেকেই বাড়তে শুরু করলো আফিম ব্যবসা! পুরোদমে শুরু হলো আফিম উৎপাদন! ২০০৬ সাল ছিলো আফিম ব্যবসার উপযুক্ত সময়!
আফগানিস্তানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আফিম উৎপাদনে বাধ্য করছে যুদ্ধবাজ অপরাধচক্রগুলো। আর, এ কাজে প্রকাশ্যে মদদ যুগিয়ে চলেছে আমেরিকার দালাল আফগান সরকার, দালাল সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, সিনিয়র পুলিশ অফিসার এবং সামরিক কর্মকর্তারা। এমনকি, তারা নিজেরাও সরাসরি আফিম ব্যবসার সাথে জড়িত ।
আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশ আফিম উৎপাদনের অন্যতম প্রধান স্থান! এমনকি, হেলমান্দের আফগান দালাল সরকারের গভর্নর নিজেই কয়েক টন আফিম মজুত রেখেছে বলে মনে করা হয়। এ অঞ্চলে আফিম ব্যবসায়ীদের অন্যতম সহযোগিতাকারী হলো দালাল সরকারের সিনিয়র পুলিশ অফিসার, সামরিক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। আর, যারাই তাদের এসকল নোংরা কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করে বা প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়ায়, তাদেরকেই তারা হত্যা করে দেয়! [তথ্যসূত্র: ১) আল-সমূদ, তারিখ: ২০১১-০৬-০৮; লিংক: http://www.alsomood.com/?p=11430 । ২) নিউইয়র্ক টাইমস্, ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৬; লিংক: https://www.nytimes.com/2016/02/16/w...-helmand.html]
এদিকে, আগ্রাসী আমেরিকায় মাদকাসক্ত হয়ে ২০১৬সালে মারা যায় ৬৪০০০ মানুষ, ২০১৫সালে যে সংখ্যাটি ছিল ৫২,৪০৪ জনে! বছরে এত বিশাল সংখ্যক মানুষ কেবল মাদকাসক্ত মারা যায় আমেরিকায়! [তথ্যসূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস্, ২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭]
এই হলো আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের নেপথ্য কাহিনী! যা জেনে বা না জেনেই তালেবান মুজাহিদীনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে লিপ্ত ইসলামবিদ্বেষী পত্রিকা ‘প্রথম আলো’।
‘প্রথম আলো’ নামক পত্রিকার প্রতিবেদনটিতে তালেবান সরকারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা বলতে গিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ভাষায়ও বৈধ, এরূপ কিছু বিষয়কেও বিকৃত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। যার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য মূলত ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের প্রতি বাংলাভাষীদের মনে ঘৃণার সঞ্চার করা। যেমন- রাষ্ট্রীয় কর আদায়, পরিষেবার বিনিময়ে অর্থ আদায়, রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ইত্যাদিকে তালেবান সরকারের ক্ষেত্রে ‘প্রথম আলো’ বিকৃত ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে, যা তাদের নিকৃষ্ট চিন্তা-চেতনার পরিচায়ক। আর, তালেবান সরকারের আর্থিক আয়ের অন্যতম উৎস হলো, ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মুসলিমদের সম্পদের উশর, পবিত্র যাকাত, গণিমতের মাল ইত্যাদি। কিন্তু, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এসকল বিষয়গুলোকে উল্লেখ না করে, ‘রাষ্ট্রীয় কর’ বলে বিষয়টি অস্পষ্ট রেখেছে।
তাদের প্রতিবেদনে নিকৃষ্ট এমন আরো বাক্যাবলি ব্যবহৃত হয়েছে, যা ইসলামের কোন কোন বিষয়কে কটাক্ষ করার শামিল। যেমন- তালেবান মুজাহিদীনের যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে অর্জিত গণিমতের মালকে তারা লুটের মাল বলে কটাক্ষ করেছে।
‘‘এ তো গেল দেশের কথা, বিদেশি উৎস থেকে প্রচুর অর্থ আসে তালেবানের হাতে। পাকিস্তান, ইরান ও রুশ সরকার তালেবানকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে আসছে বলে অভিযোগ আছে।’’
এটা হলো তাদের প্রতিবেদনের সর্বশেষ মিথ্যাচার। এটা এমন এক মিথ্যাচার, যার স্বরূপ আমি ‘বিবিসি’র দলিল দিয়েই উন্মোচন করবো ইনশাআল্লাহ! এখানে, প্রথম কথা হলো- তারা নিজেরাই বাক্যটিতে ‘অভিযোগ আছে’ বলে অস্পষ্টতা রেখেছে। মূলত, তাদের এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সুস্পষ্ট মিথ্যাচার। তালেবান সরকারকে রাশিয়ার সাহায্য প্রদান করা, না করা বিষয়ে ২রা এপ্রিল ২০১৮-তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘বিবিসি’! ঐ প্রতিবেদনের মাধ্যমেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাশিয়ার সাথে তালেবানের সাহায্যের কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস্ স্টুলটেনবার্গের বক্তব্যও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। তার বক্তব্য হলো, ‘‘আমরা কোন প্রমাণ দেখতে পাইনি, এ ধরণের সাহায্যের বিষয়ে কোন সুনিশ্চিত তথ্য পাইনি।’’
এ হলো ‘প্রথম আলো’ নামক ইসলাম বিদ্বেষী পত্রিকার ‘এত বোমার খয়খরচা কই পায় তালেবান’ শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত মিথ্যাচারের সংক্ষিপ্ত জবাব। তাদের এই মিথ্যাচার মূলত তালেবান বিদ্বেষীতার কারণে নয়, বরং ইসলাম বিদ্বেষীতার কারণে! আর তারা তালেবান বিদ্বেষীও নয়, তারা মূলত ইসলামবিদ্বেষী! এই কথাটি হয়তো অনেকে বুঝতে পারেননি। তাই, একটু বুঝিয়ে বলা আবশ্যক!
‘প্রথম আলো’কে তালেবান বিদ্বেষী না বলে ইসলাম বিদ্বেষী বলার কারণ হলো, তালেবানের প্রতি তাদের বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করার কারণ ইসলাম! অন্যথায়, তালেবান মুজাহিদগণ নিজ দেশকে বিদেশী শক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন, যেরকম করেছে ‘বাংলাদেশ’! ১৯৭১-এ বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধকারীরা তাদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা, আর আফগানিস্তানের পক্ষে যুদ্ধকারী তালেবানরা কেন ‘সন্ত্রাসী’ হবে? বাংলাদেশের হয়ে লড়াইকারীদের প্রতি তাদের মমত্ববোধ, আফগানের হয়ে লড়াইকারী তালেবানের প্রতি কেন বিদ্বেষভাব!? এর কারণ একমাত্র ইসলাম। কেননা, তালেবান সরকার আফগানিস্তানে ইসলাম কায়েম করতে চায়! ইসলামের বিধানকে রাষ্ট্রীয় সংবিধানরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এটাই হলো তালেবানের প্রতি ‘প্রথম আলো’সহ সমমনাদের বিদ্বেষী মনোভাবের মৌলিক কারণ।
সর্বশেষে, ‘‘তারাও কৌশল করে, আল্লাহও কৌশল করেন। আর আল্লাহই সর্বোত্তম কৌশলী।’’
Docx File Download Link :
PDF File Download Link:
অনলাইনে পড়ুন:
Comment