বোমার কুফল ফলেছে। তালেবান-মার্কিন শান্তি আলোচনার ঠিক মাঝে কাবুলে সন্ত্রাসী বোমা হামলার ঘটনায় অনেকেরই সন্দেহ ছিল, এটা বোধ হয় কোনো পক্ষের দ্বারা শান্তি আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা। এখন মনে হচ্ছে সেটাই ঘটছে। সে সময় আলোচনায় অংশ নেওয়া উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, চুক্তি মোটামুটি প্রস্তুত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদনের অপেক্ষায় যখন সবাই, তখনই কাবুলে বোমা হামলার জের ধরে তালেবানের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিডের বৈঠক বাতিল করে দিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই ঘোষণার কারণে আফগানিস্তানে শান্তির আশা কি মিইয়ে গেল? কারাকোরাম বা হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে কি শান্তির বাতাস বইবে না? শান্তি আলোচনা বাতিলে ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই তালেবানরা হামলার তোড়জোড় বাড়িয়ে দিয়ে বলেছে, লড়াই অব্যাহত থাকবে।
স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, আলোচনা এখানেই শেষ। কিন্তু গত এক বছরে আলোচনা চলাকালে তালেবানরা অনেকবারই হামলা চালিয়েছে। তালেবানরা কখনোই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। এমনকি আক্রমণের ধারও বাড়িয়েছে। সব সময় আফগান সরকারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এরপরও আলোচনা অব্যাহত ছিল। কখনোই হামলার কারণে আলোচনা স্থগিত করা হয়নি। আলোচনার টেবিল ও যুদ্ধের ময়দান—দুই জায়গাতেই সক্রিয় ছিল তালেবান।
সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে এসে আলোচনা নাটকীয় এক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। শান্তি আলোচনা কি একেবারেই বাতিল, না সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শুধু ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আলোচনা মৃত। তবে এই ঘোষণার পরও অনেকেই মনে করছেন, আলোচনা আবার জীবন লাভ করতে পারে। আপাতত আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে কেবল। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আমলে নিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। প্রথমত, সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলা বার্ষিকীর ঠিক আগ মুহূর্তেই তালেবানদের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করত। এই বৈঠককে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের ভেতর অস্বস্তি কাজ করছিল। অনেকেই ক্ষুব্ধ ও আহত হয়েছিলেন সেপ্টেম্বরেই এই বৈঠকের উদ্যোগকে ঘিরে। এমনিতেই শান্তি আলোচনায় বসে তালেবানকে এক ধরনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এরপর যদি ক্যাম্প ডেভিডে রীতিমতো আমন্ত্রণ করে বৈঠক করা হয়, তবে এটা তালেবানের জন্য বিশাল বিজয় হিসেবেই বিবেচিত হতো। কারণ তালেবানদের বিরুদ্ধে টুইন টাওয়ারে হামলাকারী আল-কায়েদাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার এখন সেই সন্ত্রাসীদেরই জামাই-আদরে আপ্যায়ন করা হবে। এটা হলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আর কোনো ভিত্তি থাকে না।
দ্বিতীয়ত, আলোচনা চলকালে তালেবানরা সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারকে চাপ রেখেছে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। হামলা করেছে অব্যাহতভাবে। এবং আফগান সরকারকে কখনোই আলোচনার অংশীদার করতে চায়নি। আফগানিস্তান নিয়ে শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা তিন পক্ষের মধ্যে—যুক্তরাষ্ট্র, আফগান সরকার ও তালেবান। কিন্তু আলোচনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে। আফগান সরকারকে তালেবানরা পাত্তাই দিচ্ছে না। রীতিমতো ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় হুট করে আলোচনা বাতিল করে ট্রাম্প তালেবানের ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছেন। উদ্দেশ্য, এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা। ট্রাম্প হয়তো আশা করছেন, পুনরায় আলোচনা শুরু করার জন্য তালেবান কিছুটা ছাড় দিতে পারে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে পারে বা আফগান সরকারের সঙ্গে একই টেবিলে বসতে রাজি হতে পারে। কারণ ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির অফিস থেকে মন্তব্য করা হয়, প্রকৃত শান্তি অর্জন করতে হলে তালেবানের হামলা বন্ধ করতে হবে। আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
হতে পারে এসব বিষয় মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র এখনই কোনো চুক্তি করতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া আগামী মাসে আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। এখনই কোনো চুক্তি হলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি নির্বাচন বাতিলের দাবি করতে পারে তালেবানরা। এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা কিছুটা ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সময় নিয়ে তালেবানদের মধ্যে বিভাজনকেও কাজে লাগাতে চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কান্দাহার ও পোশোয়ারভিত্তিক এক ধরনের বিভাজন তালেবানদের মধ্যে আছে। তালেবানদের এই বিভিন্ন দলের সঙ্গে পশ্চিমাদের আলোচনার কথাও শোনা যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। লন্ডনভিত্তিক সংগঠন কনসিলিয়েশন রিসোর্সেস তালেবানদের বিভিন্ন দলের পাঁচ নেতাকে নিয়ে গত বছর আলোচনার আয়োজন করে। এর মানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই না, পশ্চিমের বিভিন্ন গোষ্ঠীও তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
পশ্চিমারা বিভিন্নভাবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে তালেবানকে একীভূত করার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য চলে যাবে, এটা ধারণা করা যায়। সোমবারই ট্রাম্প বলেছেন, ১৪ হাজার সৈন্যকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু সৈন্য ফিরিয়ে নিলেই তালেবান যেন হুড়মুড়িয়ে এসে কাবুল দখল করে না ফেলে, তার জন্যই বিভিন্ন পক্ষ তালেবানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দর-কষাকষি করছে। এবং ভবিষ্যতে তালেবানদের সঙ্গে লেনদেনের হিসাব-নিকাশ কীভাবে হবে, তারও ফয়সালা করার চেষ্টা থাকবে। সৈন্য ফিরিয়ে নিলেও আফগানিস্তান যাতে কোনোভাবেই মার্কিনবিরোধী বলয়ে না চলে যায়, তারও নিশ্চয়তা চায় মার্কিন প্রশাসন।
এর সবকিছুর মূলেই আছে সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের আফগান ফাঁদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হতে চাওয়া। কিন্তু গ্লানি যত কম বহন করতে হয়, ততই মঙ্গল হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। ১৮ বছরের যুদ্ধে শুধু পশ্চিমা ও তালেবান যোদ্ধারাই নিহত হননি; অগুনতি সাধারণ মানুষও নিহত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের দায়মুক্তির জন্যই সময়ক্ষেপণ করার চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা এমনও হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠতে পারে। সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠতে পারে।
শান্তি আলোচনা সফল হোক আর ভেস্তে যাক, আফগান-যুদ্ধকে ঘিরে মার্কিনরা জটিল এক গ্যাঁড়াকলে আটকে পড়েছে। এখান থেকে বের হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিন। বের হওয়ার কাজটি যুক্তরাষ্ট্র সময় নিয়ে নিশ্চিত হয়ে করতে চাইছে। তাই আফগানিস্তানের শান্তির জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এবং তালেবানের হামলা, তালেবান ধ্বংসের নামে গ্রামে গ্রামে মার্কিনদের ড্রোন হামলা, সবকিছু মেনে নিতে হবে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে আমলে নিলে তালেবান নেতাদের এখন যুদ্ধাপরাধের দায় মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় থাকার কথা। কিন্তু সময় বড়ই নিষ্ঠুর ও বাস্তববাদী। সময়ই তালেবানদের যুদ্ধাপরাধী না করে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে। এই সময়ই নিশ্চয় আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।
ড. মারুফ মল্লিক: ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো, ইনস্টিটিউট অব অরিয়েন্ট অ্যান্ড এশিয়ান স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব বন।
(এই লেখায় কিছু তথ্যের ভুল ছিলো, তাই সেটি কেটে দেওয়া হয়েছে বাকি পুরো লেখা হুবহু রেখে দেওয়া হয়েছে - Edited By আবুল ফিদা )
স্বাভাবিকভাবে মনে হতে পারে, আলোচনা এখানেই শেষ। কিন্তু গত এক বছরে আলোচনা চলাকালে তালেবানরা অনেকবারই হামলা চালিয়েছে। তালেবানরা কখনোই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি। এমনকি আক্রমণের ধারও বাড়িয়েছে। সব সময় আফগান সরকারকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এরপরও আলোচনা অব্যাহত ছিল। কখনোই হামলার কারণে আলোচনা স্থগিত করা হয়নি। আলোচনার টেবিল ও যুদ্ধের ময়দান—দুই জায়গাতেই সক্রিয় ছিল তালেবান।
সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে এসে আলোচনা নাটকীয় এক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। শান্তি আলোচনা কি একেবারেই বাতিল, না সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শুধু ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আলোচনা মৃত। তবে এই ঘোষণার পরও অনেকেই মনে করছেন, আলোচনা আবার জীবন লাভ করতে পারে। আপাতত আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে কেবল। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ আমলে নিচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। প্রথমত, সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার হামলা বার্ষিকীর ঠিক আগ মুহূর্তেই তালেবানদের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি করত। এই বৈঠককে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের ভেতর অস্বস্তি কাজ করছিল। অনেকেই ক্ষুব্ধ ও আহত হয়েছিলেন সেপ্টেম্বরেই এই বৈঠকের উদ্যোগকে ঘিরে। এমনিতেই শান্তি আলোচনায় বসে তালেবানকে এক ধরনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এরপর যদি ক্যাম্প ডেভিডে রীতিমতো আমন্ত্রণ করে বৈঠক করা হয়, তবে এটা তালেবানের জন্য বিশাল বিজয় হিসেবেই বিবেচিত হতো। কারণ তালেবানদের বিরুদ্ধে টুইন টাওয়ারে হামলাকারী আল-কায়েদাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার এখন সেই সন্ত্রাসীদেরই জামাই-আদরে আপ্যায়ন করা হবে। এটা হলে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আর কোনো ভিত্তি থাকে না।
দ্বিতীয়ত, আলোচনা চলকালে তালেবানরা সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারকে চাপ রেখেছে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। হামলা করেছে অব্যাহতভাবে। এবং আফগান সরকারকে কখনোই আলোচনার অংশীদার করতে চায়নি। আফগানিস্তান নিয়ে শান্তি আলোচনা হওয়ার কথা তিন পক্ষের মধ্যে—যুক্তরাষ্ট্র, আফগান সরকার ও তালেবান। কিন্তু আলোচনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে। আফগান সরকারকে তালেবানরা পাত্তাই দিচ্ছে না। রীতিমতো ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছে। এ অবস্থায় হুট করে আলোচনা বাতিল করে ট্রাম্প তালেবানের ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করতে চাইছেন। উদ্দেশ্য, এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা। ট্রাম্প হয়তো আশা করছেন, পুনরায় আলোচনা শুরু করার জন্য তালেবান কিছুটা ছাড় দিতে পারে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে পারে বা আফগান সরকারের সঙ্গে একই টেবিলে বসতে রাজি হতে পারে। কারণ ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির অফিস থেকে মন্তব্য করা হয়, প্রকৃত শান্তি অর্জন করতে হলে তালেবানের হামলা বন্ধ করতে হবে। আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
হতে পারে এসব বিষয় মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র এখনই কোনো চুক্তি করতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া আগামী মাসে আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। এখনই কোনো চুক্তি হলে তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি নির্বাচন বাতিলের দাবি করতে পারে তালেবানরা। এ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা কিছুটা ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সময় নিয়ে তালেবানদের মধ্যে বিভাজনকেও কাজে লাগাতে চাইতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কান্দাহার ও পোশোয়ারভিত্তিক এক ধরনের বিভাজন তালেবানদের মধ্যে আছে। তালেবানদের এই বিভিন্ন দলের সঙ্গে পশ্চিমাদের আলোচনার কথাও শোনা যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। লন্ডনভিত্তিক সংগঠন কনসিলিয়েশন রিসোর্সেস তালেবানদের বিভিন্ন দলের পাঁচ নেতাকে নিয়ে গত বছর আলোচনার আয়োজন করে। এর মানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই না, পশ্চিমের বিভিন্ন গোষ্ঠীও তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
পশ্চিমারা বিভিন্নভাবে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে তালেবানকে একীভূত করার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য চলে যাবে, এটা ধারণা করা যায়। সোমবারই ট্রাম্প বলেছেন, ১৪ হাজার সৈন্যকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে। কিন্তু সৈন্য ফিরিয়ে নিলেই তালেবান যেন হুড়মুড়িয়ে এসে কাবুল দখল করে না ফেলে, তার জন্যই বিভিন্ন পক্ষ তালেবানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের দর-কষাকষি করছে। এবং ভবিষ্যতে তালেবানদের সঙ্গে লেনদেনের হিসাব-নিকাশ কীভাবে হবে, তারও ফয়সালা করার চেষ্টা থাকবে। সৈন্য ফিরিয়ে নিলেও আফগানিস্তান যাতে কোনোভাবেই মার্কিনবিরোধী বলয়ে না চলে যায়, তারও নিশ্চয়তা চায় মার্কিন প্রশাসন।
এর সবকিছুর মূলেই আছে সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের আফগান ফাঁদ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হতে চাওয়া। কিন্তু গ্লানি যত কম বহন করতে হয়, ততই মঙ্গল হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। ১৮ বছরের যুদ্ধে শুধু পশ্চিমা ও তালেবান যোদ্ধারাই নিহত হননি; অগুনতি সাধারণ মানুষও নিহত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের দায়মুক্তির জন্যই সময়ক্ষেপণ করার চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা এমনও হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ উঠতে পারে। সন্ত্রাস দমন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠতে পারে।
শান্তি আলোচনা সফল হোক আর ভেস্তে যাক, আফগান-যুদ্ধকে ঘিরে মার্কিনরা জটিল এক গ্যাঁড়াকলে আটকে পড়েছে। এখান থেকে বের হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিন। বের হওয়ার কাজটি যুক্তরাষ্ট্র সময় নিয়ে নিশ্চিত হয়ে করতে চাইছে। তাই আফগানিস্তানের শান্তির জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। এবং তালেবানের হামলা, তালেবান ধ্বংসের নামে গ্রামে গ্রামে মার্কিনদের ড্রোন হামলা, সবকিছু মেনে নিতে হবে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধকে আমলে নিলে তালেবান নেতাদের এখন যুদ্ধাপরাধের দায় মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় থাকার কথা। কিন্তু সময় বড়ই নিষ্ঠুর ও বাস্তববাদী। সময়ই তালেবানদের যুদ্ধাপরাধী না করে আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে। এই সময়ই নিশ্চয় আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।
ড. মারুফ মল্লিক: ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো, ইনস্টিটিউট অব অরিয়েন্ট অ্যান্ড এশিয়ান স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব বন।
(এই লেখায় কিছু তথ্যের ভুল ছিলো, তাই সেটি কেটে দেওয়া হয়েছে বাকি পুরো লেখা হুবহু রেখে দেওয়া হয়েছে - Edited By আবুল ফিদা )
Comment