গত ১৮ জুন ২০২০, প্রথম আলোর একটি আর্টিকেল পড়লাম। আর্টিকেলটির শিরোনাম হলো,
'করোনাকাল: উগ্রবাদ প্রচারের ঝুঁকি বাড়ছে'।
লিখেছেন জান্নাতুল মাওয়া। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাসের রিলিজিয়াস স্টাডিজের গবেষক এবং আন্তধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতিবিষয়ক কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের উগ্রবাদ নিয়ে বেশ চিন্তিত একজন নারী।
অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে লেখিকার কাছে বা তার সমমনাদের কাছে উগ্রবাদের সংজ্ঞা বেশ একপেশে ও অদ্ভুত। তাদের কাছে জোর করে চাপিয়ে দেয়া নব্য উপনিবেশবাদ উগ্রতা নয়। গত সত্তর বছরে গনতন্ত্র, মানবাধিকার,সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোটি মানুষ হত্যা উগ্রবাদ নয়! কোটি কোটি মানুষের লাশের উপর জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত নাস্তিক্যবাদী সমাজতন্ত্র উগ্রতা নয়। এমনকি শাহবাগে বসে সুখ(!) টান দিতে দিতে ' একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর ' বলার চেতনাও উগ্রবাদ নয়!
তাদের কাছে উগ্রবাদ কেবল একটি বিশেষ ধর্ম অনুসরণের চেষ্টা। আর তা হলো, ইসলাম। তাদের কাছে ইসলামের বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্টা করাই উগ্রতা, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা মনে করাই উগ্রবাদ। আমাদের এতটুকু আলোচনা কারো কাছে বেঢপ, বেখাপ্পা বা ফ্যালাসি মনে হতে পারে, তাই আসুন আর্টিকেল থেকেই তাদের মতে এই ভয়ানক(!) উগ্রবাদ কী এবং উগ্রপন্থীদের কাজ কী? জানার চেষ্টা করি।
লেখিকার মতে উগ্রপন্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যতম প্রচারণা হলো,
//সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে ইসলামের প্রথম যুগের গৌরবগাথার বর্ণনা করা এবং মানুষকে ধারণা দেওয়া যে সেই যুগের সবকিছুই ছিল যথাযথ, কোথাও কোনো সমস্যা ছিল না।//
লেখিকার ধৃষ্টতা দেখে অবাক না হয়ে পারি না। ইসলামের প্রথম যুগ অর্থাৎ বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা. ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। সে যুগ জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে পৃথিবীকে সত্যের আলোকে আলোকিত করার যুগ। আর সে যুগের গৌরবগাথার বর্ণনা দেয়া নাকি লেখিকার চোখে উগ্রবাদী প্রচারণা! বা উগ্রপন্থীদের কাজ। নববী শাসনব্যবস্থা তো কল্যাণের, সব ধরনের ভ্রান্তি ও অকল্যাণ মুক্ত। এই যথাযথ কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাকে যথাযথ বলাও নাকি দোষনীয়, ইসলামের সমস্যাহীন ব্যবস্থাকে সমস্যাহীন মনে করাও নাকি উগ্রপন্থীদের কাজ।
এরপর বলেছেন , //উগ্রপন্থার প্রচারকেরা এ ক্ষেত্রে ইতিহাসের সঠিক চর্চার চেয়ে মানুষের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই কাজটি করে থাকে।//
মুসলিমরা তো কোরআন সুন্নাহ বর্ণিত ইতিহাস অবশ্যই বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়। আর নববীযুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের ইতিহাস চর্চার কথা বললে লেখিকার নিকট প্রশ্ন থাকবে সত্য ইতিহাস কোনটি? ওরিয়েন্টালিস্টদের লিখিত উদ্দেশ্যমূলক বিকৃত ইতিহাস! ওরিয়েন্টালিস্টদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণীত বিকৃত ইতিহাস মেনে না নেয়াই কী তবে উগ্রবাদ? বিশ্বাসের উর্ধ্বে উঠে তাহলে কোন ইতিহাসচর্চা করা উচিত? এটা তো লেখিকার জানানো কর্তব্য ছিলো।
লেখিকা উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করতে আরো একধাপ অগ্রসর হয়ে বলেন,
//বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা, বাস্তবতা ও সমস্যা এবং তার সমাধানের উপায় যে ইসলামের প্রথম যুগের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন, সেই বিচার-বিশ্লেষণ থেকে তারা দূরে থাকেন।//
লেখিকা এখানে সাফ জানিয়ে দিলেন মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সংকট ও সমাধান ইসলামের প্রথম যুগের থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ! এখন আপনি প্রথম যুগের শিক্ষাকে বর্তমান সময়ের জন্যও আদর্শ মনে করলেই লেখিকার চোখে আপনি উগ্রপন্থী হিসেবে ধরা দেবেন।
এরপর লেখিকা যুক্ত করেন, //বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের আরেকটি কৌশল হলো, তারা শুধু তাদের পছন্দের ইসলামকেই প্রকৃত ইসলাম বলে দাবি করে। আর এর বাইরের শান্তিপ্রিয় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘পাশ্চাত্য প্রভাবিত’ মুসলিমের লেবেল এঁটে দেয়।//
এপর্যায়ে লেখিকা নিজের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জানান দিয়েছেন খুব সুন্দরভাবে, 'পাশ্চাত্য প্রভাবিত' কথাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের প্রথম যুগকে আদর্শ মনে করা, প্রথম যুগের গৌরবগাঁথা বর্ণনা হলো উগ্রপন্থী প্রচারণা আর এর বিপরীতে থাকে কেবল ইসলামবিরুদ্ধ পাশ্চাত্যে কথিত আদর্শ মেনে নেয়া। আর যারা নিজস্ব ইসলামী স্বকীয়তা ভুলে পাশ্চাত্যকে মেনে নিয়েছে তাদেরকে পাশ্চাত্য প্রভাবিত বলাও উগ্রপন্থা। তবে কী পাশ্চাত্য প্রভাবমুক্ত আদি, অকৃত্রিম, শাশ্বত ইসলামকে মেনে নেয়া হলো লেখিকার ভাষায় উগ্রবাদ। আদি শাশ্বত চিরন্তন ইসলাম বর্জন করে পাশ্চাত্যের আদর্শ সাথে সাযুজ্যপূর্ণ কাটছাঁট ইসলাম পালন করা হয়তো লেখিকার দৃষ্টিতে খুব ভালো কাজ। বা ইসলামকে পুরোপুরি ত্যাগ করে 'শান্তিপূর্ণ' পাশ্চাত্য ডগমার উপর ঈমান আনা হয়তো সবচেয়ে ভালো হবে লেখিকা দৃষ্টিতে।
এরপর লেখিকা সবচেয়ে জঘন্য কথাটি লিখেছেন,// উগ্রপন্থীদের আরেকটি সর্বাধিক ব্যবহৃত কৌশল হলো মুসলমানরা যে সবকিছুর ভিকটিম, তা প্রমাণের চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, তাদের উদাহরণ টেনে এনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা হয় যে মুসলমানরা পৃথিবীর সব দেশে নির্যাতিত ও নিপীড়িত।//
সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমারা যে ভিকটিম তা বলাও লেখিকার দৃষ্টিতে উগ্রপন্থীদের কৌশল। জিনজিয়াং, আরকান, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলিমদের হত্যাকরে গনকবর তৈরি করা হবে আর এটার প্রতিবাদ তো দূরে থাক বলাটাও অপরাধ। কেবল মুসলিম হওয়ার অপরাধে(!) হাজার হাজার মানুষকে যে পৃথিবীর দেশে দেশে হত্যা করা হচ্ছে এটা গোপন কোনো বিষয়ও নয়। লেখিকার উগ্রপন্থী চেনার ইন্ডিকেটর গুলো বড়ই অদ্ভুত। আর লেখিকা কি তাহলে বলতে চাচ্ছেন মুসলিমরা ভিকটিম নয় ? তবে কী যারা অন্যায় গনহত্যা চালায় তারাই ভিকটিম! বাহ বেশ তো , ভালোই মানবতা শেখা যাচ্ছে!
আরো অবাক করা বিষয় হলো আর্টিকেলটিতে বলা হয়েছে, //কেয়ামতের আলামত তথা কেয়ামত–পূর্ব সময়ের আগমনের ইঙ্গিত দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা।//
অর্থাৎ কেয়ামতের আলামত, দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করা, হাদিসের আলোকে সতর্ক করে গোনাহ ছেড়ে আল্লাহমুখী হতে বলাও নাকি উগ্রপন্থিদের প্রচারণার অংশ।
এজন্য লেখিকার মতে সরকারের উচিত এই উগ্রবাদ বন্ধে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এধরনের কথা বলা চ্যানেল, আইডি ও পেজে গুলো বন্ধ করে দেয়া। আর জনপ্রিয়(!) আলেমদের এই ধরনের উগ্রপন্থীদের পেছনে লাগিয়ে দেয়া। লেখিকার দৃষ্টিতে কারা যে এই কুল ডুড শান্তিপ্রিয় আলেম তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি এবং সব কিছুই উগ্রবাদ হলে ইসলাম তাহলে কোনটি?
আর্টিকেল থেকে আমরা জানলাম মুসলিমরা নির্যাতিত হলে তা আর বলা যাবে না, আদি অকৃত্রিম, প্রকৃত ইসলামকে মেনে নেয়া যাবে না, খোলাফায়ে রাশেদীনের গৌরবগাথা বর্ণনা করা যাবে না, কেয়ামতের আলামত আলোচনা করা যাবে না, উম্মাহর সংকট উত্তরণে প্রথম যুগকে আদর্শ মনে করা যাবে না। সর্বোপরি একজন মুসলিমকে তার শেকড় থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে প্রাণশক্তি অর্জন করা যাবে না। তাহলে হয়তো লেখিকার দৃষ্টিতে আপনি হবেন একজন ভালো মানুষ। আর যদি ওগুলোতে বিশ্বাস করেন বা প্রচার করেন তবে আপনি হয়ে যাবেন উগ্রবাদী, উগ্রপন্থার প্রচারক।
জিহাদের নামে যদি কেউ অপরাজনীতি বা সীমালংঘন করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের মুসলিমদের অবস্থান ছিলো, আছে এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেকুলাঙ্গার বা প্রথমআলো গংদের উগ্রবাদ বিরোধীতার উদ্দেশ্য হলো ইসলামের বিরোধিতা করা, ইসলাম প্রতিষ্ঠার যাবতীয় চেষ্টা প্রচেষ্টায় বিরোধীতা করা। মুসলিমদের স্বকীয়তা ও আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়া। এজন্য কখনো প্রচার করে দাড়ি রাখা, পর্দা করা, টাখনুর উপর প্যান্ট পড়া, ফাহেশা পাপাচারী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা উগ্রবাদের আলামত।
আবার কখনো বলে ইসলামের প্রথম যুগের গৌরবগাথা বর্ণনা করা উগ্রপন্থিদের প্রচারণার অংশবিশেষ। এভাবে একের পর এক ইসলামী অনুসঙ্গকে আঘাত করে মূলতঃ ইসলামকেই একটি প্রশ্নবিদ্ধ ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় এরা। তারা চায় না মুসলিমরা নিজেদের আত্মপরিচয়ে বলিয়ান হোক, বিজাতীয় সংস্কৃতি ও মতবাদের দাসত্বের শৃংখল ছিন্ন করুক।
নিজেদের ইসলামবিরোধী বীভৎস রূপ আড়াল করতেই তারা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে না বলে ইসলামের নানা অনুষঙ্গের বিরুদ্ধে উগ্রবাদের তকমা লাগায়। এভাবে সেকু-বাম ও প্রথম আলো গং'রা নানা শব্দের আড়ালে ক্রমাগত ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে গেলে প্রশ্ন এসেই যায়, তবে কী তাদের কাছে অবিকৃত, পরিপূর্ণ ইসলাম প্রচার করাই উগ্রবাদ?!!! তাদের সংগ্রাম মূলত কিসের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ নাকি ইসলামের?
-সংগৃহীত
'করোনাকাল: উগ্রবাদ প্রচারের ঝুঁকি বাড়ছে'।
লিখেছেন জান্নাতুল মাওয়া। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাসের রিলিজিয়াস স্টাডিজের গবেষক এবং আন্তধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতিবিষয়ক কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রে বসে বাংলাদেশের উগ্রবাদ নিয়ে বেশ চিন্তিত একজন নারী।
অপ্রিয় হলেও বলতে হচ্ছে লেখিকার কাছে বা তার সমমনাদের কাছে উগ্রবাদের সংজ্ঞা বেশ একপেশে ও অদ্ভুত। তাদের কাছে জোর করে চাপিয়ে দেয়া নব্য উপনিবেশবাদ উগ্রতা নয়। গত সত্তর বছরে গনতন্ত্র, মানবাধিকার,সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোটি মানুষ হত্যা উগ্রবাদ নয়! কোটি কোটি মানুষের লাশের উপর জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠিত নাস্তিক্যবাদী সমাজতন্ত্র উগ্রতা নয়। এমনকি শাহবাগে বসে সুখ(!) টান দিতে দিতে ' একটা দুইটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর ' বলার চেতনাও উগ্রবাদ নয়!
তাদের কাছে উগ্রবাদ কেবল একটি বিশেষ ধর্ম অনুসরণের চেষ্টা। আর তা হলো, ইসলাম। তাদের কাছে ইসলামের বিধান পরিপূর্ণভাবে মেনে চলার চেষ্টা করাই উগ্রতা, ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা মনে করাই উগ্রবাদ। আমাদের এতটুকু আলোচনা কারো কাছে বেঢপ, বেখাপ্পা বা ফ্যালাসি মনে হতে পারে, তাই আসুন আর্টিকেল থেকেই তাদের মতে এই ভয়ানক(!) উগ্রবাদ কী এবং উগ্রপন্থীদের কাজ কী? জানার চেষ্টা করি।
লেখিকার মতে উগ্রপন্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যতম প্রচারণা হলো,
//সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে ইসলামের প্রথম যুগের গৌরবগাথার বর্ণনা করা এবং মানুষকে ধারণা দেওয়া যে সেই যুগের সবকিছুই ছিল যথাযথ, কোথাও কোনো সমস্যা ছিল না।//
লেখিকার ধৃষ্টতা দেখে অবাক না হয়ে পারি না। ইসলামের প্রথম যুগ অর্থাৎ বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা. ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। সে যুগ জাহেলিয়াতের অন্ধকার থেকে পৃথিবীকে সত্যের আলোকে আলোকিত করার যুগ। আর সে যুগের গৌরবগাথার বর্ণনা দেয়া নাকি লেখিকার চোখে উগ্রবাদী প্রচারণা! বা উগ্রপন্থীদের কাজ। নববী শাসনব্যবস্থা তো কল্যাণের, সব ধরনের ভ্রান্তি ও অকল্যাণ মুক্ত। এই যথাযথ কল্যাণধর্মী ব্যবস্থাকে যথাযথ বলাও নাকি দোষনীয়, ইসলামের সমস্যাহীন ব্যবস্থাকে সমস্যাহীন মনে করাও নাকি উগ্রপন্থীদের কাজ।
এরপর বলেছেন , //উগ্রপন্থার প্রচারকেরা এ ক্ষেত্রে ইতিহাসের সঠিক চর্চার চেয়ে মানুষের বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই কাজটি করে থাকে।//
মুসলিমরা তো কোরআন সুন্নাহ বর্ণিত ইতিহাস অবশ্যই বিনাপ্রশ্নে মেনে নেয়। আর নববীযুগ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগের ইতিহাস চর্চার কথা বললে লেখিকার নিকট প্রশ্ন থাকবে সত্য ইতিহাস কোনটি? ওরিয়েন্টালিস্টদের লিখিত উদ্দেশ্যমূলক বিকৃত ইতিহাস! ওরিয়েন্টালিস্টদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণীত বিকৃত ইতিহাস মেনে না নেয়াই কী তবে উগ্রবাদ? বিশ্বাসের উর্ধ্বে উঠে তাহলে কোন ইতিহাসচর্চা করা উচিত? এটা তো লেখিকার জানানো কর্তব্য ছিলো।
লেখিকা উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করতে আরো একধাপ অগ্রসর হয়ে বলেন,
//বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা, বাস্তবতা ও সমস্যা এবং তার সমাধানের উপায় যে ইসলামের প্রথম যুগের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন, সেই বিচার-বিশ্লেষণ থেকে তারা দূরে থাকেন।//
লেখিকা এখানে সাফ জানিয়ে দিলেন মুসলিম উম্মাহর বর্তমান সংকট ও সমাধান ইসলামের প্রথম যুগের থেকে পুরোপুরি ভিন্ন ! এখন আপনি প্রথম যুগের শিক্ষাকে বর্তমান সময়ের জন্যও আদর্শ মনে করলেই লেখিকার চোখে আপনি উগ্রপন্থী হিসেবে ধরা দেবেন।
এরপর লেখিকা যুক্ত করেন, //বাংলাদেশের উগ্রপন্থীদের আরেকটি কৌশল হলো, তারা শুধু তাদের পছন্দের ইসলামকেই প্রকৃত ইসলাম বলে দাবি করে। আর এর বাইরের শান্তিপ্রিয় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘পাশ্চাত্য প্রভাবিত’ মুসলিমের লেবেল এঁটে দেয়।//
এপর্যায়ে লেখিকা নিজের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জানান দিয়েছেন খুব সুন্দরভাবে, 'পাশ্চাত্য প্রভাবিত' কথাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের প্রথম যুগকে আদর্শ মনে করা, প্রথম যুগের গৌরবগাঁথা বর্ণনা হলো উগ্রপন্থী প্রচারণা আর এর বিপরীতে থাকে কেবল ইসলামবিরুদ্ধ পাশ্চাত্যে কথিত আদর্শ মেনে নেয়া। আর যারা নিজস্ব ইসলামী স্বকীয়তা ভুলে পাশ্চাত্যকে মেনে নিয়েছে তাদেরকে পাশ্চাত্য প্রভাবিত বলাও উগ্রপন্থা। তবে কী পাশ্চাত্য প্রভাবমুক্ত আদি, অকৃত্রিম, শাশ্বত ইসলামকে মেনে নেয়া হলো লেখিকার ভাষায় উগ্রবাদ। আদি শাশ্বত চিরন্তন ইসলাম বর্জন করে পাশ্চাত্যের আদর্শ সাথে সাযুজ্যপূর্ণ কাটছাঁট ইসলাম পালন করা হয়তো লেখিকার দৃষ্টিতে খুব ভালো কাজ। বা ইসলামকে পুরোপুরি ত্যাগ করে 'শান্তিপূর্ণ' পাশ্চাত্য ডগমার উপর ঈমান আনা হয়তো সবচেয়ে ভালো হবে লেখিকা দৃষ্টিতে।
এরপর লেখিকা সবচেয়ে জঘন্য কথাটি লিখেছেন,// উগ্রপন্থীদের আরেকটি সর্বাধিক ব্যবহৃত কৌশল হলো মুসলমানরা যে সবকিছুর ভিকটিম, তা প্রমাণের চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের যেসব দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু, তাদের উদাহরণ টেনে এনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা হয় যে মুসলমানরা পৃথিবীর সব দেশে নির্যাতিত ও নিপীড়িত।//
সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমারা যে ভিকটিম তা বলাও লেখিকার দৃষ্টিতে উগ্রপন্থীদের কৌশল। জিনজিয়াং, আরকান, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আফ্রিকাসহ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলিমদের হত্যাকরে গনকবর তৈরি করা হবে আর এটার প্রতিবাদ তো দূরে থাক বলাটাও অপরাধ। কেবল মুসলিম হওয়ার অপরাধে(!) হাজার হাজার মানুষকে যে পৃথিবীর দেশে দেশে হত্যা করা হচ্ছে এটা গোপন কোনো বিষয়ও নয়। লেখিকার উগ্রপন্থী চেনার ইন্ডিকেটর গুলো বড়ই অদ্ভুত। আর লেখিকা কি তাহলে বলতে চাচ্ছেন মুসলিমরা ভিকটিম নয় ? তবে কী যারা অন্যায় গনহত্যা চালায় তারাই ভিকটিম! বাহ বেশ তো , ভালোই মানবতা শেখা যাচ্ছে!
আরো অবাক করা বিষয় হলো আর্টিকেলটিতে বলা হয়েছে, //কেয়ামতের আলামত তথা কেয়ামত–পূর্ব সময়ের আগমনের ইঙ্গিত দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ভয়াবহ আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা।//
অর্থাৎ কেয়ামতের আলামত, দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করা, হাদিসের আলোকে সতর্ক করে গোনাহ ছেড়ে আল্লাহমুখী হতে বলাও নাকি উগ্রপন্থিদের প্রচারণার অংশ।
এজন্য লেখিকার মতে সরকারের উচিত এই উগ্রবাদ বন্ধে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এধরনের কথা বলা চ্যানেল, আইডি ও পেজে গুলো বন্ধ করে দেয়া। আর জনপ্রিয়(!) আলেমদের এই ধরনের উগ্রপন্থীদের পেছনে লাগিয়ে দেয়া। লেখিকার দৃষ্টিতে কারা যে এই কুল ডুড শান্তিপ্রিয় আলেম তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি এবং সব কিছুই উগ্রবাদ হলে ইসলাম তাহলে কোনটি?
আর্টিকেল থেকে আমরা জানলাম মুসলিমরা নির্যাতিত হলে তা আর বলা যাবে না, আদি অকৃত্রিম, প্রকৃত ইসলামকে মেনে নেয়া যাবে না, খোলাফায়ে রাশেদীনের গৌরবগাথা বর্ণনা করা যাবে না, কেয়ামতের আলামত আলোচনা করা যাবে না, উম্মাহর সংকট উত্তরণে প্রথম যুগকে আদর্শ মনে করা যাবে না। সর্বোপরি একজন মুসলিমকে তার শেকড় থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে প্রাণশক্তি অর্জন করা যাবে না। তাহলে হয়তো লেখিকার দৃষ্টিতে আপনি হবেন একজন ভালো মানুষ। আর যদি ওগুলোতে বিশ্বাস করেন বা প্রচার করেন তবে আপনি হয়ে যাবেন উগ্রবাদী, উগ্রপন্থার প্রচারক।
জিহাদের নামে যদি কেউ অপরাজনীতি বা সীমালংঘন করে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের মুসলিমদের অবস্থান ছিলো, আছে এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু সেকুলাঙ্গার বা প্রথমআলো গংদের উগ্রবাদ বিরোধীতার উদ্দেশ্য হলো ইসলামের বিরোধিতা করা, ইসলাম প্রতিষ্ঠার যাবতীয় চেষ্টা প্রচেষ্টায় বিরোধীতা করা। মুসলিমদের স্বকীয়তা ও আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়া। এজন্য কখনো প্রচার করে দাড়ি রাখা, পর্দা করা, টাখনুর উপর প্যান্ট পড়া, ফাহেশা পাপাচারী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা উগ্রবাদের আলামত।
আবার কখনো বলে ইসলামের প্রথম যুগের গৌরবগাথা বর্ণনা করা উগ্রপন্থিদের প্রচারণার অংশবিশেষ। এভাবে একের পর এক ইসলামী অনুসঙ্গকে আঘাত করে মূলতঃ ইসলামকেই একটি প্রশ্নবিদ্ধ ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করতে চায় এরা। তারা চায় না মুসলিমরা নিজেদের আত্মপরিচয়ে বলিয়ান হোক, বিজাতীয় সংস্কৃতি ও মতবাদের দাসত্বের শৃংখল ছিন্ন করুক।
নিজেদের ইসলামবিরোধী বীভৎস রূপ আড়াল করতেই তারা সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে না বলে ইসলামের নানা অনুষঙ্গের বিরুদ্ধে উগ্রবাদের তকমা লাগায়। এভাবে সেকু-বাম ও প্রথম আলো গং'রা নানা শব্দের আড়ালে ক্রমাগত ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালিয়ে গেলে প্রশ্ন এসেই যায়, তবে কী তাদের কাছে অবিকৃত, পরিপূর্ণ ইসলাম প্রচার করাই উগ্রবাদ?!!! তাদের সংগ্রাম মূলত কিসের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ নাকি ইসলামের?
-সংগৃহীত
Comment