জঙ্গিদমনে (ইসলাম দমনে) ফরিদ উদ্দীন মাসঊদের ১০ ফতোয়া
সময়বার্তা২৪ ডেস্ক :
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ( মুসলমান ) বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ জন্য এক লাখ ( সরকারী ) মুফতি ও ওলামার স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করছেন তিনি। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার ( ১৫/১/১৬ ) স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, আমরা মনে করি, আগামী ফেব্রয়ারি মাসের মধ্যে এই সাক্ষর গ্রহণ সম্পন্ন হবে। মার্চ মাসে মুদ্রিত আকারে এই ফতোয়া সংশ্লিষ্ট মহলে সরবরাহ করা হবে।
প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত ফতোয়া প্রস্তাব নিয়ে দেশের বিভিন্ন আলেমের কাছে যাচ্ছেন জমিয়তের প্রতিনিধিরা। আলেমদের সামনে ছুড়ে দেয়া প্রশ্নগুলো এরকম :
১/ মহান শান্তির ধর্ম ইসলাম কি এই ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গী কর্মপন্থাকে সমর্থন করে?
২/ নবী রাসূলগণ বিশেষ করে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি এই ধরনের বর্বর পথ অবলম্বন করে ইসলাম কায়েম করেছেন?
৩/ ইসলামে জেহাদ আর এই ধরনের সন্ত্রাস কি একই জিনিস ?
৪/ সন্ত্রাস সৃষ্টির পথ কি বেহেশত লাভের পথ না জাহান্নামের পথ?
৫/ আত্মঘাতি সন্ত্রাসীর মৃত্যু কি শহীদী মৃত্যু বলে গণ্য হবে?
৬/ ইসলামের দৃষ্টিতে গণহত্যা কি বৈধ?
৭/ শিশু, নারী, বৃদ্ধ নির্বিশেষে নির্বিচার হত্যাকরা ইসলাম কি সমর্থন করে?
৮/ ইবাদতরত মানুষকে হত্যা করা কি ধরনের অপরাধ?
৯/ অমুসলিমগণের গির্জা, মন্দির, ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা কি বৈধ?
১০/ এ ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে সকলের কর্তব্য কি না?
পরবর্তীতে আরো একটি প্রশ্ন সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।এসব প্রশ্নের জবাবও দেয়া হয়েছে এবং ফতোয়া প্রস্তাব করা হয়েছে। ফতোয়ার সপক্ষে কোরআন, হাদিস ও বিভিন্ন ফতোয়া গ্রন্থের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ফতোয়াগুলো হলো:
১নং বিষয়ে ফতোয়া
ইসলাম কখনো সন্ত্রাস সমর্থন করে না। অধিকন্তু সন্ত্রাস হিংসা-হানাহানি নির্মূল করার জন্যই মহান ধর্ম ইসলামের আবির্ভাব। ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম।
২নং বিষয়ে ফতোয়া
নবী ও রাসূলগণ বিশেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কস্মিনকালেও সন্ত্রাস ও নির্মম বর্বরতার পথ অবলম্বন করেননি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ হলো দাওয়াত ও মুহব্বাতের পথ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর অনুসারী সাহাবীগণ প্রেম ও খেদমতের (সেবা) মাধ্যমে মানুষকে কল্যাণের প্রতি, হেদায়েতের প্রতি দাওয়াত জানিয়েছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা জীবন এর জ্বলন্ত সাক্ষী।
৩নং বিষয়ে ফতোয়া
জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হলো হারাম এবং অবৈধ। জিহাদ হলো নিজের এবং পরিবেশে ও সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া।
৪নং বিষয়ে ফতোয়া
সন্ত্রাস ও আতঙ্কসৃষ্টি করা যেহেতু হারাম এবং নিষিদ্ধ সুতরাং তা কখনও বেহেশত পাওয়ার পথ হতে পারে না। এ তো জাহান্নামের পথ। যারা বেহেশত লাভের জন্য বর্তমানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিাবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তাদের যদি বেহেশত লাভ করতে হয় তবে সন্ত্রাসবাদের মতো জাহান্নামের পথ থেকে অবিলম্বে তওবা করে শান্তি ও হেদায়েতের পথে ফিরে আসতে হবে।
৫নং বিষয়ে ফতোয়া
আত্মহত্যা ও আত্মঘাত ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। নিজেকে মানববোমা বানিয়ে উড়িয়ে দেয়া কখনও বৈধ নয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে জিহাদে শরীক এক ব্যক্তি যুদ্ধে আহত হয়ে আত্মহত্যা করলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা দেন।
৬নং বিষয়ে ফতোয়া
ইসলামে নিরপরাধ মানুষের গণহারে হত্যা বৈধ নয়। এমন কি সন্দেহের বশবর্তী হয়েও কাউকে হত্যা করা নিষেধ।
৭নং বিষয়ে ফতোয়া
শিশু, নারী, বৃদ্ধ, দুর্বল, যারা যুদ্ধে শরিক নয়, সেই ধরনের মানুষকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও তা জায়েয নয়। কিতাল বা সশস্ত্রযুদ্ধের উদ্দেশ্যে যখন মুসলিম দল বের হতেন তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে এই ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করতেন।
৮নং বিষয়ে ফতোয়া
যেকোনো অবস্থায় খুন করা অপরাধ। ইবাদত বা উপসানারত কাউকে হত্যা করা সবচে জঘন্য এবং মারাত্মক অপরাধ।
৯নং বিষয়ে ফতোয়া
অমুসলিমগণের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
১০নং বিষয়ে ফতোয়া
মুনকারাত অর্থাৎ অন্যায় ও দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সবার কর্তব্য। বর্তমান সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদ সারা পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিমদের বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, বদনাম করছে, এসব দুষ্কর্ম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শয়তানী ষড়যন্ত্র বই কিছুই নয়। সুতরাং এর বিরুদ্ধে শক্তি সামর্থের আলোকে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সকলের জন্য জরুরি ধর্মীয় কর্তব্য। চুপ করে থাকার অবকাশ নেই।
এ ব্যাপারে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বাংলামেইলকে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, বর্তমানে ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী সারা পৃথিবীতে ইসলামের নামে আতঙ্ক ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে চলছে। এরা মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে নির্বিচারে নিরপরাধ ও অসহায় নারী পুরুষ, বৃদ্ধ শিশু হত্যা করে যাচ্ছে। এমনকি মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নামাজরত বা প্রার্থনারত মানুষকেও হত্যা করছে। আত্মঘাতি বোমা মেরে নিজেকে উড়িয়ে দিয়ে তা শহীদী মৃত্যু বলে ঘোষণা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব পরিস্থিতিতে ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এই ফতোয়া উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমার নিজ উদ্যোগে চলতি মাসেই ফতোয়া দেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সারাদেশে কমিটি গঠন করে উলামা, মাশায়েখ ও মুফতি সাহেবদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, আগামী ফেব্রয়ারি মাসের মধ্যে এই স্বাক্ষর গ্রহণ সম্পন্ন হবে। মার্চ মাসে মুদ্রিত আকারে এই ফতোয়া সংশ্লিষ্ট মহলে সরবরাহ করা হবে।
লিঙ্কঃ http://www.shomoybarta24.net/2016/01...#2478;া/
Comment