আল্লাহ তায়ালা আমাদের কারাবন্দী ভাইদের হেফাজত করুন । তাদের প্রতি এখন কি নির্যাতন হচ্ছে আমরা তা জানতে পারছি না
বন্দীদের কথা কাচের দেয়ালে বন্দী
ভিড়ের মধ্যে চিৎকার দিয়ে ফাইজুল তাঁর কারাবন্দী ভাই সাইদুলকে বলেন, ‘ভাই, আপনি কেমন আছেন?’
জোর গলায় বার কয়েক বলার পরও সাইদুলের জবাব শুনতে ব্যর্থ হন ফাইজুল।
শুনতে পাবেন কী করে? কারাগারের দেখা-সাক্ষাতের কক্ষে বেজায় ভিড়। শব্দে গমগম। সবাই নিজ নিজ স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে মরিয়া। চিৎকার-চেঁচামেচি। তার ওপর স্বজন ও বন্দীদের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে কাচের দেয়াল। কাচের দেয়ালে ছোট ছোট গোল ছিদ্র আছে। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে সেই ছিদ্রের ভেতর দিয়ে একজনের কথা আরেকজনের কানে পৌঁছায় না। আর পৌঁছালেও তা ছাড়া ছাড়া। কাজেই একজনের কথা আরেকজনের কাছে কিছুই পরিষ্কার হয় না। কাচ আবার অস্বচ্ছ। তাই বন্দীরা তাঁদের স্বজনদের ঠিকমতো দেখতেও পান না।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাক্ষাৎকক্ষে এই দৃশ্য দেখা গেছে। নতুন কারাগারে সাক্ষাতে এসে বন্দীদের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতে না পেরে স্বজনেরা ক্ষুব্ধ।
কারাবন্দী সাইদুলের ভাই ফাইজুল বলেন, ‘কাচের দেয়ালের কারণে ভাইয়ের কথা আমি শুনতে পাইনি। ভাইও আমার কথা শুনতে পাননি। এই কাচ সরাতে হবে।’
ফাইজুলের মতো অনেকেই আজ তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের কারাগারে দেখা করতে এসে একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন। হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ কান্নাও করেছেন। একপর্যায়ে কাচ সরানোর দাবিতে সাক্ষাৎকক্ষের বাইরে ক্ষুব্ধ দর্শনার্থীরা স্লোগান দিয়েছেন।
মিজানুর রহমান নামের এক দর্শনার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কেমন ব্যবস্থা! কোনো কথাই শোনা যায় না। কাচের কারণে থেকে বন্দীর চেহারা ভূতের মতো লাগে।’
কুলসুম বেগম নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ‘জোরে কথা বললেও কাজ হয় না।’
কারাগারের একটি সূত্র স্বীকার করেছে, কাচের দেয়ালের কারণে শুরু থেকেই দর্শনার্থী ও বন্দীরা অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।
গত শুক্রবার পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরিত হয়। ওই দিন ঢাকা থেকে সব বন্দীকে কেরানীগঞ্জে নেওয়া হয়।
নতুন কারাগারে সাক্ষাতের সমস্যার পাশাপাশি খাবার নিয়েও অভিযোগ আছে।
স্বজনদের অভিযোগ, নতুন কারাগারে সময়মতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না। এতে বন্দীরা চরম কষ্ট পাচ্ছেন।
দর্শনার্থী কুলসুম বেগমের অভিযোগ, তাঁর ছেলে তাঁকে বলেছে, তিনি ঠিক সময়ে খাবার পাচ্ছেন না। খাবারের মানও ভালো না। পানিতে কটু গন্ধ।
একই অভিযোগ করেন দর্শনার্থী সুমি বেগম।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, নতুন কারাগারে প্রায় সাত হাজার বন্দী। কিন্তু এই কারাগারে গ্যাসের সংযোগ নেই। তাই কারাগারের ভেতরে খোলা জায়গায় হাতে তৈরি চুলায় কাঠ দিয়ে বিপুলসংখ্যক বন্দীর রান্না করতে হচ্ছে। এতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দীদের কাছ থেকে কাচের দেয়ালের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ওই কাচ সরানোর ব্যাপারে ইতিমধ্যে কারা মহাপরিদর্শক নির্দেশ দিয়েছেন। কাল শনিবার বিকেলের মধ্যে কাচ সরানো হবে।
খাবার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, এখানে গ্যাসের সংযোগ নেই। লাকড়ি দিয়ে রান্না হচ্ছে। এ কারণে প্রথম দিকে সমস্যা হয়েছিল। তবে পরে সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। এখন সময়মতো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
Comment