বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্ট
থেমে নেই জঙ্গি প্রস্তুতি ডার্কনেটে চলছে ‘রাহমানী-আওলাকি’র দাওয়াত!
উদিসা ইসলাম ১০:৫৬ , আগস্ট ০৮ , ২০১৬
গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর গত একমাসে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা সেমিনারের মধ্যে দিয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চলছে, কিন্তু এরপরেও থেমে নেই জঙ্গিদের প্রস্তুতি কার্যক্রম। অনলাইনে আল কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান হিসেবে চিহ্নিত জসীম উদ্দিন রাহমানীর বক্তব্য প্রচার প্রসারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা তৎপর আছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
জঙ্গিবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলছেন, জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে এখনও স্পষ্টচিত্র আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে নেই। যদিও পুলিশের দাবি, সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সূত্র বলছে, বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ‘গুপ্ত হত্যাকারীদের’ খুঁজে না পাওয়ায় অস্বস্তিও আছে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।
বাংলাদেশে জঙ্গি যে কোনও হামলায় বারবারই সামনে এসেছে নর্থসাউথসহ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির নাম। সেসব জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাহমানী-আওলাকি ‘দাওয়াত’ কার্যক্রম সেখানে চলছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের সিনিয়ররা ‘সামান্য হুমকিও’ দিচ্ছেন এ ব্যাপারে মুখ না খুলতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ‘দাওয়াতে’ রাহমানী-আওলাকির নানান প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলাপ করা হয়। সমসাময়িক বিষয়ে তাদের কী মত হতে পারতো সেগুলো নিয়েও আলাপ করা হয়।
অনলাইন গবেষকরা বলছেন, আনোয়ার আল আওলাকির ‘লেকচার’ ও ‘আরগুমেন্ট’ গুলো আল কায়েদার আধুনিক বিশ্বে চালানো রিক্রুটমেন্টগুলোর ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দাওয়াহিলাল্লাহ ফোরামে ‘আওলাকি’ নাম দিয়ে সার্চ দিলে সব থেকে বেশি এন্ট্রি আসে। এগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের আগ্রহ তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, ডার্কনেটে থাকা এই ফোরামটি বাংলাতে সব থেকে বড় ‘জিহাদি ফোরাম’। এটা এমন এক ধরনের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক যেখানে এক্সেস করতে বিশেষ সফটওয়ারের প্রয়োজন হয় এবং সাধারণত টর (TOR) ব্রাউজার ছাড়া এই ওয়েবসাইটগুলোকে দেখা যায় না। গুগল বা অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিনেও এগুলো দৃশ্যমান (ইনডেক্সড) হয় না। আর এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে জঙ্গিরা অবলীলায় সক্রিয় আছে।
কী ধরনের ‘দাওয়াত’ দেওয়া হয় জানতে চাইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার বন্ধুকে ওরা দলে ভিড়িয়েছে। বন্ধুটির মাধ্যমেই আমি পড়ার জন্য কিছু জিনিস পাই। আমার বন্ধুর হাতে লেখা। কিন্তু বক্তব্যগুলো আনোয়ার আল আওলাকি নামে আল কায়েদার এক নেতার বলে সে আমাকে জানায়। এসব বক্তব্যে কোনটি ধর্মীয় কাজ এবং কোনটি জিহাদি কার্যক্রম সেগুলো বোঝানো হয় ওদের মতো করে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ক্যাম্পাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ও ধানমণ্ডি এলাকায় ধর্মের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি হত্যা ফতোয়াও দিত। তারপর থেকে রাহমানীর বক্তব্যকে নানা কায়দায় প্রচার করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আর এবিটি বা জেএমবি এভাবে ভাবার সময় নেই। কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর তারা এখন কর্মীদের মনোবল শক্ত করার কাজেই বেশি ব্যস্ত।
জঙ্গিবাদ বিষয়ক গবেষক নির্ঝর মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আনোয়ার আল আওলাকি ইয়েমেনে নিহত হয়েছে, তারপরেও ‘জিহাদি’দের কাছে ওসামা বিন লাদেনের পরেই তার আবেদন সব থেকে বেশি। নানা ফোরাম আছে যার মধ্য দিয়ে তার তৈরি করা ‘জিহাদি ম্যাটেরিয়াল ও কনটেন্ট’ সরবরাহ করা হয়। এগুলো থেকেই বিভিন্ন ভাষার জিহাদি বই ও লেকচার বাংলাতে অনুবাদ করে নানান ফরম্যাটে সরবরাহ করা হয়। মূল সমস্যাটি হল এই যে, যারা জিহাদি ভাবধারাতে আগ্রহী, তাদের ছোট ছোট দলগুলো প্রধান কোনও জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ না করেও এই ভাবধারাগুলোর প্রচার চালাতে পারে এবং সেখানেই এই ধরনের কনটেন্ট এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর সেখান থেকেই পরবর্তীতে ‘লোন-উলফ এটাক’ ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা তারা অর্জন করে, যেখানে হামলাকারী মূল দলের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখেই তাদের হয়ে হামলা চালায়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক জিহাদিই নিজ উদ্যোগে ‘দাওয়াতি’ কার্যক্রম চালিয়ে সদস্য সংগ্রহের জন্য উদ্যোগী হচ্ছে। আর এখানেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার বিষয়টি আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই মুহূর্তে ভাবমূর্তির কথা চিন্তা না করে কেউ যেন ছাত্রদের মাঝে জিহাদি কার্যক্রম না চালাতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া এবং এগুলো বন্ধে বাস্তব ও দর্শনযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া।
জঙ্গিদের এই গোপন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তাদের সক্ষমতার ধারণা পেয়েছি। আমাদের সবাইকে এখন সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা দীর্ঘ প্রস্তুতির পর আত্মপ্রকাশ করেছিল। একেবারে প্রস্তুতি পর্যায়ে তাদের ধ্বংস করতে নানাবিধ তৎপরতা চলমান রয়েছে।
http://m.banglatribune.com/national/...A6%BE%E0%A6%A4
থেমে নেই জঙ্গি প্রস্তুতি ডার্কনেটে চলছে ‘রাহমানী-আওলাকি’র দাওয়াত!
উদিসা ইসলাম ১০:৫৬ , আগস্ট ০৮ , ২০১৬
গুলশানে আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনার পর গত একমাসে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা সেমিনারের মধ্যে দিয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চলছে, কিন্তু এরপরেও থেমে নেই জঙ্গিদের প্রস্তুতি কার্যক্রম। অনলাইনে আল কায়েদা নেতা আনোয়ার আল আওলাকি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান হিসেবে চিহ্নিত জসীম উদ্দিন রাহমানীর বক্তব্য প্রচার প্রসারের মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা তৎপর আছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
জঙ্গিবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলছেন, জঙ্গিদের সক্ষমতা সম্পর্কে এখনও স্পষ্টচিত্র আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে নেই। যদিও পুলিশের দাবি, সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সূত্র বলছে, বিভিন্ন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ‘গুপ্ত হত্যাকারীদের’ খুঁজে না পাওয়ায় অস্বস্তিও আছে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে।
বাংলাদেশে জঙ্গি যে কোনও হামলায় বারবারই সামনে এসেছে নর্থসাউথসহ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির নাম। সেসব জায়গায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাহমানী-আওলাকি ‘দাওয়াত’ কার্যক্রম সেখানে চলছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের সিনিয়ররা ‘সামান্য হুমকিও’ দিচ্ছেন এ ব্যাপারে মুখ না খুলতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ‘দাওয়াতে’ রাহমানী-আওলাকির নানান প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলাপ করা হয়। সমসাময়িক বিষয়ে তাদের কী মত হতে পারতো সেগুলো নিয়েও আলাপ করা হয়।
অনলাইন গবেষকরা বলছেন, আনোয়ার আল আওলাকির ‘লেকচার’ ও ‘আরগুমেন্ট’ গুলো আল কায়েদার আধুনিক বিশ্বে চালানো রিক্রুটমেন্টগুলোর ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দাওয়াহিলাল্লাহ ফোরামে ‘আওলাকি’ নাম দিয়ে সার্চ দিলে সব থেকে বেশি এন্ট্রি আসে। এগুলো আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের আগ্রহ তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, ডার্কনেটে থাকা এই ফোরামটি বাংলাতে সব থেকে বড় ‘জিহাদি ফোরাম’। এটা এমন এক ধরনের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক যেখানে এক্সেস করতে বিশেষ সফটওয়ারের প্রয়োজন হয় এবং সাধারণত টর (TOR) ব্রাউজার ছাড়া এই ওয়েবসাইটগুলোকে দেখা যায় না। গুগল বা অন্য কোনও সার্চ ইঞ্জিনেও এগুলো দৃশ্যমান (ইনডেক্সড) হয় না। আর এমন কার্যক্রমের মাধ্যমে জঙ্গিরা অবলীলায় সক্রিয় আছে।
কী ধরনের ‘দাওয়াত’ দেওয়া হয় জানতে চাইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার বন্ধুকে ওরা দলে ভিড়িয়েছে। বন্ধুটির মাধ্যমেই আমি পড়ার জন্য কিছু জিনিস পাই। আমার বন্ধুর হাতে লেখা। কিন্তু বক্তব্যগুলো আনোয়ার আল আওলাকি নামে আল কায়েদার এক নেতার বলে সে আমাকে জানায়। এসব বক্তব্যে কোনটি ধর্মীয় কাজ এবং কোনটি জিহাদি কার্যক্রম সেগুলো বোঝানো হয় ওদের মতো করে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ক্যাম্পাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ও ধানমণ্ডি এলাকায় ধর্মের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি হত্যা ফতোয়াও দিত। তারপর থেকে রাহমানীর বক্তব্যকে নানা কায়দায় প্রচার করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আর এবিটি বা জেএমবি এভাবে ভাবার সময় নেই। কল্যাণপুরে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার পর তারা এখন কর্মীদের মনোবল শক্ত করার কাজেই বেশি ব্যস্ত।
জঙ্গিবাদ বিষয়ক গবেষক নির্ঝর মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আনোয়ার আল আওলাকি ইয়েমেনে নিহত হয়েছে, তারপরেও ‘জিহাদি’দের কাছে ওসামা বিন লাদেনের পরেই তার আবেদন সব থেকে বেশি। নানা ফোরাম আছে যার মধ্য দিয়ে তার তৈরি করা ‘জিহাদি ম্যাটেরিয়াল ও কনটেন্ট’ সরবরাহ করা হয়। এগুলো থেকেই বিভিন্ন ভাষার জিহাদি বই ও লেকচার বাংলাতে অনুবাদ করে নানান ফরম্যাটে সরবরাহ করা হয়। মূল সমস্যাটি হল এই যে, যারা জিহাদি ভাবধারাতে আগ্রহী, তাদের ছোট ছোট দলগুলো প্রধান কোনও জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ না করেও এই ভাবধারাগুলোর প্রচার চালাতে পারে এবং সেখানেই এই ধরনের কনটেন্ট এর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আর সেখান থেকেই পরবর্তীতে ‘লোন-উলফ এটাক’ ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা তারা অর্জন করে, যেখানে হামলাকারী মূল দলের সঙ্গে যোগাযোগ না রেখেই তাদের হয়ে হামলা চালায়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক জিহাদিই নিজ উদ্যোগে ‘দাওয়াতি’ কার্যক্রম চালিয়ে সদস্য সংগ্রহের জন্য উদ্যোগী হচ্ছে। আর এখানেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার বিষয়টি আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই মুহূর্তে ভাবমূর্তির কথা চিন্তা না করে কেউ যেন ছাত্রদের মাঝে জিহাদি কার্যক্রম না চালাতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া এবং এগুলো বন্ধে বাস্তব ও দর্শনযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া।
জঙ্গিদের এই গোপন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তাদের সক্ষমতার ধারণা পেয়েছি। আমাদের সবাইকে এখন সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা দীর্ঘ প্রস্তুতির পর আত্মপ্রকাশ করেছিল। একেবারে প্রস্তুতি পর্যায়ে তাদের ধ্বংস করতে নানাবিধ তৎপরতা চলমান রয়েছে।
http://m.banglatribune.com/national/...A6%BE%E0%A6%A4
Comment