ছাত্রীদের হয়রানি ও হিজাব খুলতে বাধ্য করছে ভাড়াটে শিক্ষকেরা!
| প্রকাশের সময় : ২০১৫-০৮-২২ Share on –
ইনকিলাব রিপোর্ট : ঢাকা শ্বিবিদ্যালয়ে পর্দানশীল ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকদের খারাপ আচরণ ও শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। বিগত পাঁচ বছরে শিক্ষকদের দ্বারা অন্তত ২০ জন শিক্ষর্থী যৌর হয়রানি শিকার হয়েছে। এই ঘটনার বাইরেও শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীদের অনেক যৌন হয়রানির ঘটনা চাপা পড়ে যায়। শুধু এই যৌন হয়রানি করেই শিক্ষকরা ক্ষান্ত নয়। সম্প্রতি সময় এক শিক্ষক ছাত্রীর নেকাব খেলার চেষ্টাও চালিয়েছে।এছাড়াও গত বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামছুন্নাহার হলে থেকে নামাজ পড়ার সময় চার ছাত্রীকে আটক করে ছাত্রলীগ। এই সময় ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রী সংস্থার অভিযোগ দেখিয়ে আটক করে বলে দাবি করেছিলেন। আটক থেকে ছাড়া পাওয়ার পর একজন ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেছেন, আমার কাছে ‘নারী-পুরুষের পর্দা’ নামক একটি বই ছিল। আমার এ বইটি দেখে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাকে সভাপতির রুমে ডেকে নিয়ে বলে, তোর কাছে ইসলামী বই আছে, তুই জঙ্গি। ছাত্রীটি আরো বলেন, ওই সময় ছাত্রলীগের হলের নেতারা আমাকে বলে, তুই তো জঙ্গি, এখন তোর আল্লাহ কোথায়? তোকে বাঁচালে আমরা বাঁচাবো, তা ছাড়া কেউ বাঁচাতে পারবে না। সর্বশেষ এই চার ছাত্রীর মধ্য থেকে একজনও হলে উঠতে পারেনি বলে জানা গেছে। সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ২১ জন ছাত্রীকে একরাতে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অভিযোগ ছিল বের করে দেওয়া ২১ জনই বিভিন্ন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাথে যুক্ত আছে। তাদের সবার কাছে জেহাদী বই ছিল এমন অভিযোগ ও আনা হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু হলের বাইরে বের দেওয়া ছাত্রীরা জানিয়েছিলেন, তাদের রুমে বই রেখে ছাত্রলীগের নেতা তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনে। বর্তমানে ওই ২১ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬ জন হলের সিট ফিরে পেয়েছে বলে জানা গেছে। আর বাকিরা সবাই হলে বাইরে থেকে ক্লাস করছে।এদিকে ওই সব ঘটনা হওয়ার পর থেকেই ইসলামিক স্ট্যাডিজ, ইসলামের ইতিহাস, আরবী, উর্দু ও ফারসি সাহিত্যসহ ইসলামিক সাবজেক্টগুলোর ছাত্রীদের প্রতি নজরদারি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের নাবিলা ইকবাল নামের এক ছাত্রী বোরখার হেজাব না খোলায় ওই বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে বলে জানা যায়। এই সময় ওই ছাত্রীকে মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত করে করার অভিযোগও উঠে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে হঠাৎ শিক্ষক আজিজুর রহমান তাকে দাঁড় করিয়ে এক ছাত্রীকে বলেন, তুমি বোরকা পরেছ কেন? বোরকাতো জঙ্গিরা পরে। বোরকা পরে বোমা সরবরাহ করে। বোরকা গায়ে জড়িয়ে আর ক্লাসে আসবানা। এসব বলে ওই ছাত্রীকে শ্রেণীকক্ষ থেকে থেকে বের করে দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় এসব যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী ও শিক্ষিকারা। সাহস করে বিচার দাবি করলেও আজো এসব যৌন হয়রানির কোনো সুষ্ঠু বিচার পাননি নির্যাতিতরা। প্রতিটি যৌন হয়রানির পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এ পর্যন্ত মাত্র একটি তদন্ত প্রতিবেদনই আলোর মুখ দেখেছে। আর বাকিগুলো কিছু দিন পরই চাপা পড়েছে এ সকল তদন্তের ফাইল।২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর রিটের পরিপ্রক্ষিতে হাইকোর্ট যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এ কমিটি যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাবি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ২০টিরও অধিক যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যার মধ্যে সর্বশেষ গত ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক আবু নাসের মুহাম্মদ সায়েফের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন একই বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের এক ছাত্রী। এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হলে তারা কোর ফলাফল পাওয়া যায়নি।এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। নির্যাতিত ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, মিডটার্ম পরীক্ষায় খাতায় সমস্যা হয়েছে- এমন কথা বলে শিক্ষক তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ডেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে অবশ্য তাকে স্থায়ী ভাবে চাকুরীচ্যুত করা হয়।২০১২ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমানের (বাহলুল) বিরুদ্ধে বিভাগেরই এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। একই ঘটনায় ওই শিক্ষককে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে বিভাগের অন্য দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই বছর একই অভিযোগ ওঠে সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিচালকের বিরুদ্ধে। ১৫ অক্টোবর আরবি বিভাগের প্রফেসর এটিএম ফখরুদ্দিনকে ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।২০১২ সালে যৌন হয়রানি ও পরীক্ষায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধেও। বিভাগের ছাত্রী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও বাইরের মেয়েদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, মাসের পর মাস ছাত্রীদের নিয়ে বাসাতে থাকার অভিযোগ উঠেছে পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ড. জাফর আহমেদ খানের বিরুদ্ধে।২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রফেসর ড. এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। একই বছরের প্রথম দিকে উর্দু বিভাগের সহকারী প্রফেসর ড. ইস্রাফিলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে তুলেছেন বিভাগেরই এক ছাত্রী। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে।২০১১ সালের জুন মাসে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মুমিত আল রশিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ করেন বিচার দাবি করে এক ছাত্রী। একই বিভাগের আরেক সহযোগী প্রফেসর ড. আবু মুসা আরিফ বিল্লাহকে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে প্রশাসন। একই বছর পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে।২০১১ সালের শেষের দিকে উর্দু বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে। ওই বছরেই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নুরুদ্দীন আলোর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে মামলা করা হয়।২০১০ সালে উর্দু বিভাগের প্রভাষক গোলাম মাওলা হিরণের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে। একই বছর ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।২০১০ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক সিনিয়র প্রফেসর বিরুদ্ধে একই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শওকত আরা তার সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ করেন। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে।নেকাব খুলতে চাওয়া শিক্ষক প্রফেসর ড. আজিজুর রহমানকে বেশ কয়েক বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এম এ আমজাদ আলী বলেছেন,হল থেকে যাদেরকে নামানো হয়েছে তাদের মধ্য থেকে ছয় ছাত্রীকে আবার হলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বাকিদের বিষয়ে অভিযোগ থাকার কারণে তাদের হলে ওঠানো হয়নি।সর্বশেষ এক শিক্ষকের হয়রানির ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-ভিসি (শিক্ষা) ড. নাসরীন আহমাদ জানিয়েছিলেন, ‘আমি মনে করি এসব ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও সমনভাবে দায়ী। শিক্ষদের আরো দায়িত্ববান হওয়া উচিত। এছাড়া প্রতিটি ঘটনারই আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু খুব দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত তো নেয়া যায়না। একজন শিক্ষককে আমরা তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করে দিতে পারি না, তবে তাকে আমরা বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়ে দিতে পারি।
http://anonym.to/?http://www.dailyin...A6%B0%E0%A6%BE!
Comment