ইমাম মাহদির আগমনের দিনটিকে দাজ্জালি মিডিয়া কেমনভাবে বিশ্বে সংবাদ হিসাবে প্রচার করবে?
কাফেররা মুসলমানদেরকে যে দৃষ্টিভঙ্গির দিকেই নিতে চায়, সারা বিশ্ব ওদিকেই দৌড়ে যেতে শুরু করে। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার লাভ লোকসান বিবেচনা ছাড়াই হলিউড-বলিউড নায়িকাদের মায়াবী চুলের বন্ধনে বন্দি হয়ে আছে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে মানুষের সামনে পেশ করা হচ্ছে। দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধের যুদ্ধকে একতরফাভাবে “সন্ত্রাসী যুদ্ধ” বলে মানুষের ব্রেইনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে অনেক ভূখণ্ডেই আল্লাহর বান্দারা যুদ্ধ জারি রেখেছেন। বীরত্ব, বাহাদুরি, ধৈর্য এবং আত্মোৎসর্গের এমন এমন ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছেন যে, উম্মতের জন্য তা গৌরবের বিষয় ছিল। কিন্তু এই মিডিয়া মানুষকে পুরো বিষয়টিকে ‘সন্ত্রাস’ বলে মোহাচ্ছন করে রেখেছে। একমাত্র আল্লাহ যাকে চান, সেই একমাত্র এর থেকে মুক্ত হতে পারছে। কুফর ও ইসলামের মধ্যকার এ যুদ্ধে মানুষেরা ঐ মতামতটিকেই বিশ্বাস করে নিচ্ছে, যা দাজ্জালি শক্তি এবং তার অনুসারীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গও মিডিয়ার এ বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত নয়। যেমনটি হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেন,
“তোমাদের ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের ভয় করছি তা হচ্ছে যে, তোমাদের জানা থাকা সত্তেও তোমরা ঐ বস্তুকেই প্রাধান্য দিবে যা তোমরা প্রত্যক্ষ করবে এবং তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এমতাবস্থায় যে তোমরা টেরও পাবে না।” (ইবনে আবী শাইবা, ৭/৫০৩)
বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলোকে মিডিয়া যেভাবে পেশ করছে, তা যদি সামনে রাখা হয় – অতপর ইমাম মাহদি এর আবির্ভাবের সময় যখন উলামায়ে দ্বীন এবং মুজাহিদিন কর্তৃক উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার পরিস্থিতিকেও সামনে রাখেন, তবে আন্দাজ করা মুশকিল হয় না যে, মিডিয়া ইমাম মাহদিকে মানুষের সামনে কিভাবে পেশ করবে!! পাশাপাশি মিডিয়াভক্ত লোকেরা ঘটনাটিকে কিভাবে গ্রহণ করবে!!
আসুন আগে আমরা ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ, আগমনের দিনের ঘটনা, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা এবং তাঁর আগমন নিশ্চিত হবার পর তাঁর বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণের ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ সেই বছরের রমজান মাস থেকেই প্রকাশ পাবে।
ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উম্মতের কারা সেদিন নিরাপদ থাকবে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে। পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের। ঘটনার পরম্পরা এরূপঃ শব্দ আসবে রমজানে। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হবে শাওয়ালে। আরবের গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে। হাজী লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে জিলজ্জ মাসে। আর মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদ। শেষটা মুক্তি। সেদিন মুসলমান যে বাহনে চড়ে মুক্তি লাভ করবে, সেটি তার কাছে এক লাখ মূল্যের বিনোদন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ঘরের চেয়েও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
অপর এক বর্ণনায় আছে, “… সত্তর হাজার মানুষ ভয়ে পথ হারিয়ে ফেলবে। সত্তর হাজার অন্ধ হয়ে যাবে। সত্তর হাজার বোবা হয়ে যাবে এবং সত্তর হাজার বালিকার যৌনপর্দা ফেটে যাবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমজানে আওয়াজ আসবে। জুলকা’দায় গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে আর জিলহজ্জ মাসে হাজীলুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
হযরত আমর ইবনে শু’আইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুলকা’দা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদী) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়’আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯)
তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে, “বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন।” (আল মু’জামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)
মুসতাদরাকেরই আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হযরত মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। হযরত মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমানেও ‘মাহদি’।”
ইমাম যুহরি বলেছেন, হযরত মাহদির আত্মপ্রকাশের বছর দুজন ঘোষক ঘোষণা করবে। একজন আকাশ থেকে, একজন পৃথিবী থেকে। আকাশের ঘোষক ঘোষণা করবে, লোকসকল! তোমাদের নেতা অমুক ব্যক্তি। আর পৃথিবীর ঘোষক ঘোষণা করবে, ওই ঘোষণাকারী মিথ্যা বলেছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর ঘোষণাকারী যুদ্ধ করবে। এমনকি গাছের ডাল-পাতা রক্তে লাল হয়ে যাবে। সেদিনকার বাহিনীটি সেই বাহিনী, যাকে ‘জাইশুল বারাজি’ তথা ‘জিনওয়ালা বাহিনী’ বলা হয়েছে। সেদিন যারা আকাশের ঘোষণায় সাড়া দিবে, তাদের মধ্য থেকে বদরি মুজাহিদগণের সংখ্যার সমসংখ্যক লোক তথা তিনশো তেরজন মুসলমান প্রানে রক্ষা পাবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, মারাত্মক যুদ্ধ হবে – শেষ পর্যন্ত হকপন্থিদের মধ্যে শুধু বদর যুদ্ধের সেনাসংখ্যা (৩১৩) পরিমাণ লোক অবশিষ্ট থাকবে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে এসে ইমাম মাহদির কাছে এসে বাইয়াত হয়ে যাবে।
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি।”
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, “তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদী।” (সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
এখানে ‘খলীফা সন্তান’ অর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে। আর ‘ধন ভাণ্ডার’ দ্বারা কাবা ঘরের নিচের প্রোথিত ধন সম্পদ হতে পারে। আবার নিছক রাজত্বও হতে পারে। কারও মতে, ফোরাত নদীর স্বর্ণ পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু রাজত্ব হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ,
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে। বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদীর) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর।” (আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)
আবু দাউদের অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, “তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং মানুষ তাঁর জানাজা আদায় করবে।”
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে জাতীয়তাবাদহীন একক ভূখণ্ড) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের (ভারতীয় উপমহাদেশ) যুদ্ধ, কুনুস্তুন্তনিয়া (বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুল) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কাবা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনীর আগমন হবে। বায়দার প্রান্তরে পৌছা মাত্র বাহিনীর মধ্যভাগ ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। সম্মুখভাগ পেছন ভাগের সেনাদেরকে ডাকাডাকি করতে থাকবে। পরক্ষনেই সম্পূর্ণ বাহিনীকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।” (মুসলিম শরীফ)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন যেন করছিলেন। জাগ্রত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, এমন কেন করছিলেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন,
“খুবই আশ্চর্যের বিষয় – আমার উম্মতের কিছু লোক কাবা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে (ইমাম মাহদী) হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে।”
আমরা বললাম, ‘পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!!’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে অন্তর ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহ পাক তাদের পুনরুত্থান করবেন”। (মুসলিম শরীফ)
উপরের হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে, যে বছর ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে, সে বছরের রমজান থেকেই আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে। এবং সেই বছরের মধ্য রমজান হবে শুক্রবার।
২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী বছরগুলোতে মধ্য রমজান শুক্রবার হবার সম্ভাবনা যে সালগুলোতে সেগুলো হল, ২০১৪ সালের ১১ ও ১২ ই জুলাই (১৪৩৫ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০১৫ সালের ২ ও ৩ জুলাই (১৪৩৬ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার), ২০১৭ সালের ৯ ও ১০ ই জুন (১৪৩৮ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২০ সালের ৮ই মে (১৪৪১ হিজরির ১৫ ই রমজান শুক্রবার), ২০২২ সালের ১৫ ও ১৬ ই এপ্রিল (১৪৪৩ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২৩ সালের ৬ ও ৭ ই এপ্রিল (১৪৪৪ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এবং ২০২৫ সালের ১৪ ও ১৫ ই মার্চ (১৪৪৬ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার)।
চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং ২৯ বা ৩০ দিনে রমজান মাস হবার উপর ভিত্তি করে মধ্য রমজান শুক্রবার হিসাবে সাব্যস্ত হবে।
‘প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের’ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, প্রথম শব্দটি আকাশ থেকে আসবে আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু যেহেতু এই শব্দের প্রভাব দুনিয়ার সতর্ক মুমিনদের চোখ খুলে দিবে এবং তাই কাফিররা প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় এমন বিকট কোন শব্দ ঘটাবে, যাকে ‘শয়তানের শব্দ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এবং এই শব্দকে একটি প্রযুক্তিগত দুর্ঘটনা বলে দাজ্জালি মিডিয়াতে এমনভাবে রং লাগিয়ে প্রকাশ করা হবে, যাতে দুনিয়ার সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা সহজেই পথ ভ্রষ্ট হয়।
‘জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি’, ‘তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে’ এবং এ সময় ইমাম মাহদীর ‘মদিনা থেকে মক্কায় চলে আসা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবেন, যার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিসিক্তি নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। বর্তমানে সৌদি রাজ পরিবারের কাছে রাজত্বের পাশাপাশি মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি বাদশারা তাদের নামের সাথে তাদের মক্কা – মদিনার সংশ্লিষ্টতাও লিখে থাকেন। যেমন বর্তমান বাদশা তাঁর নাম সরকারীভাবে এভাবে লিখেনঃ King Abdullah Bin Abdul Aziz al Saud, Kingdom of Saudi Arabia & custodian of two holy mosques.
বর্তমান বাদশার বয়স ৮৯ বছর। সৌদি রাজ পরিবারের ব্যাপারে সেখানকার সাধারণ জনগণের অসন্তোষ, তাঁর ভবিষ্যৎ মৃত্যু এবং মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রও পিছিয়ে নাই। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপে যার শিরোনাম ‘How 5 countries in middle east could become 14’। সেখানে তারা বেছে নিয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সৌদি আরব। (এর ভিতরে ৩ টি ভূখণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে ইমাম মাহদীর আগমনের দিন, আমরা হাদিস থেকে জেনেছি, সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ ও ইরাকের ‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদীর নিকট বাইয়াত হবে)। আর সৌদি আরবকে ভাঙ্গার সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেঃ
‘Saudi Arabia faces its own (suppressed) internal divisions that could surface as power shifts to the next generation of princes. The kingdom’s unity is further threatened by tribal differences, the Sunni-Shiite divide and economic challenges’.
হাদিসেও এসেছে “গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে”। আর সব মিলিয়ে যদি সত্যিই পশ্চিমারা অদূর ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে চায়, স্বভাবতই সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা হলঃ “মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি” বা custodian of two holy mosques.
হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে’। এর অর্থ হল ইসলামের শত্রুরা হযরত মাহদীর অপেক্ষায় থাকবে এবং গোয়েন্দা মারফত হারাম শরীফের খবর নিতে থাকবে। হারাম শরীফের সিরিয়ার দিক থেকে বর্তমান সিরিয়া ব্যতীত যে ভূখণ্ডটি আছে তা হল জর্ডান (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর সময়ে এটি তৎকালীন শাম অর্থাৎ বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ ছিল)। যেহেতু সিরিয়া থেকে বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী দ্বিতীয় বাহিনী প্রেরণ করবে, তাতে আন্দাজ করা যায়, এই বাহিনীটি আসবে জর্ডান থেকে। এবং তা কিভাবে হবে, এটি বুঝতে হলে বর্তমান জর্ডানের সামরিক কার্যকলাপের দিকে নজর দিতে হবে। সিরিয়াতে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে উপলক্ষ্য করে একে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ দেখিয়ে জর্ডান সরকার ২০১৩ এর প্রথমার্ধে ৯০০ মার্কিন সৈন্যকে থাকার অনুমতি দেয়। এবং মার্কিন সামরিক সচিব টাইমস পত্রিকাকে এপ্রিলে জানায়, এটি যে কোন সময় বাড়িয়ে ২০,০০০ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই যদি হয়, বর্তমান অবস্থা, তাহলে যখন সৌদি আরবে গোত্রগুলোর বিদ্রোহের কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তখন এই জর্ডানের সরকারী বাহিনী তাদের মিত্র কাফের বাহিনীকে নিয়ে নিজ গদি ঠেকাতে কি পদক্ষেপ নিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পুরো বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে এবং “সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।” এরূপ এক আজাবের সাক্ষীকে স্বভাবতই গায়েব/হত্যা করা হবে এবং কখনোই তা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না।
হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, “অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে।” এর অর্থ হল, সে সময় বনু কালবও সিরিয়া শাসন করবে ও তারা ইসলামের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকবে।
কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে,তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মাহদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে।” (মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)
“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে,পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে।” (ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)
অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
“প্রথম বাহিনী বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মাহদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি “কাল্ব যুদ্ধ” নামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি ‘সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মাহদী (আঃ) তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বিগ্নের বিষয় হল, ১৯৬৬ সালে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী আল আসাদ পরিবারও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। তারা শিয়াদের যে শাখার অনুসারী অর্থাৎ “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি”/ “আলাওয়াতি” রাও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। এই আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। প্রথম শাসক ছিল হাফিজ আল আসাদ, তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় শাসক বাশার আল আসাদ। কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।
এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আল গুতা শহরে। এই ‘আল গুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা” নামক স্থানটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বর্ণিত “মালহামা” (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে,যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মাহদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে।”
(সুনানে আবি দাউদ,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী,খণ্ড ৯,পৃষ্ঠা ১৬৯)
আল গুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।
সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল গুতা তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।
হাদিসে মিনায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে বলা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাবে না। বরং ইসলামের শত্রু কাফেররা (ইহুদী খৃষ্টান ও মূর্তিপূজারীরা) আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে এবং তাদের অনুগত দাজ্জালি মিডিয়ার দ্বারা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অপপ্রচারটিই চালাবে। মিডিয়ার স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হবে হয়তোঃ “হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা।” তাদের অপপ্রচারের নমুনাটি নিম্নরূপ হতে পারেঃ
খবর পাঠকঃ আমরা এই মাত্র খবর পেলাম হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমরা সেখানে আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ (অথবা একটি আরব মুসলিম নাম) এর সাথে সরাসরি কথা বলব।….হ্যালো, আবদুল্লাহ শুনতে পাচ্ছেন?
আবদুল্লাহঃ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি।
খবর পাঠকঃ মিনাতে ঠিক কি হচ্ছে এবং কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে?
আবদুল্লাহঃ মক্কার মিনা প্রান্তরে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েছে……। ওখানে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে…। হাঙ্গামার কারণ এখনও অজানা…। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এর পিছনে ঐ সকল সন্ত্রাসীরাই জড়িত, যারা ইতিপূর্বে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়ে আসছে … এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছে। মিনা প্রান্তরে অসংখ্য হাজীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। লাশগুলো রক্তের বন্যায় ভাসছে। আমি যে সকল জীবিতদের সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে অনেকেরই হজ্জের সামানা লুণ্ঠিত হয়েছে।
খবর পাঠকঃ আব্দুল্লাহ, কাবা শরীফের এই মুহুর্তে ঠিক কি অবস্থা?
আবদুল্লাহঃ উপস্থিত সন্ত্রাসীরা আল্লাহর পবিত্র ঘর কা’বা শরীফ দখল করে নিয়েছে এবং কা’বা শরীফের আশেপাশের হাজীদেরকে বন্দি করে ফেলেছে। সন্ত্রাসীরা এই হাজীদেরকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। বন্দিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশু এবং অজস্র নারী বিদ্যমান। চারপাশ থেকে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সাহায্যের জন্য শিশুরা চিৎকার করে আহ্বান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সকল সন্ত্রাসীদের মধ্যে মার্কিনবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও বিদ্যমান…… যাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য আগে থেকেই অপারেশন জারি ছিল…… সন্ত্রাসীদের ধর্ম বলে কিছু নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মতো হবে। (ইমাম মাহদীর আগমন ও ৩১৩ জনের বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা আড়াল ও সন্ত্রাসী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া)।
সংবাদ পাঠকঃ আবদুল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আবার আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব। এইমাত্র আমাদের হাতে খবর এসে পৌঁছেছে যে, মক্কা শরীফকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জর্ডান ও মার্কিন সেনাদের নিয়ে গঠিত শান্তিরক্ষা বাহিনী যাত্রা শুরু করেছে। (তবে জোটবদ্ধ এই বাহিনীর পরিণামে কি হয়েছে, তা গোপন করা হবে)।
ইমাম মাহদীর দলকে ধ্বংস করতে যাওয়া বাহিনীর বায়দা প্রান্তরে মাটির নিচে ধ্বসে যাওয়ার যে কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সে পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যা, বানোয়াট, ধোঁকা এবং জাদুময়ী অপপ্রচারের আন্দাজ আপনি করতে পারেন।
সারা বিশ্বের জনসাধারণকে মিনার প্রান্তরের বিভিন্ন লাশের ছবি বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে টিভি স্ক্রিনে দেখানো হবে আর ইমাম মাহদীকে পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করে ‘স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলতে থাকবে। আর সাথে থাকবে সুন্নতি লেবাসধারী সরকারী/দরবারি আলেমদের কুরআন হাদিসের আলোকে পুরো ঘটনার অপব্যাখ্যাওয়ালা টক শো।
আমরা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি, বিভিন্ন ভূখণ্ডে কিভাবে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সাধারণ মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। আর এটি তো আরও অনেক বড় ব্যাপার। মিডিয়ার চালে চলমান এমন অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামধারীরা সেদিন ইমাম মাহদীর কথা মানা তো দূরের কথা, এদের মুখ থেকে কি ধরনের সব প্রতিক্রিয়া বের হতে থাকবে …… এর আন্দাজ করা কঠিন নয়।
পক্ষান্তরে ঐ সকল ব্যক্তি যারা বিবিসি/সিএনএন এর মতো পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও তাদের বিভিন্ন ভাষাভাষী দালাল মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সত্যকে গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র কাউকে ভয় করে না, কারও সাথে আপোষ করে না, যাদের অন্তর সদা হক্ক গ্রহণে উন্মুখ – তারা যদি পাহাড়ের গর্তেও অবস্থান করে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের জ্ঞান তাদের ঠিকই হয়ে যাবে।
যেহেতু “রিসালাত আল খুরুজ আল মাহাদি” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় এসেছে, “১৪০০ হিজরির পরে মানুষ ইমাম মাহদীকে ঘিরে একত্রিত হবে” (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
আর “আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক” কিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ “১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদীর আবির্ভাব হবে…”। (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
তাই বর্তমান ১৪৩৫ হিজরিতে এসে সামনের দিনগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর উপর সিরিয়াতে বনু কালব গোত্রের দ্বিতীয় শাসক (দ্বিতীয় সুফিয়ানি) এবং তার বর্তমান কার্যক্রম।
হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন, “দ্বিতীয় সুফিয়ানির জামানায় বিকট এক আওয়াজ আসবে। আওয়াজটি এতই বিকট হবে যে, প্রত্যেক গোত্রই মনে করবে – তাদের নিকটবর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।” (আল ফিতান, ৮৫০)
তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর
callected
কাফেররা মুসলমানদেরকে যে দৃষ্টিভঙ্গির দিকেই নিতে চায়, সারা বিশ্ব ওদিকেই দৌড়ে যেতে শুরু করে। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার লাভ লোকসান বিবেচনা ছাড়াই হলিউড-বলিউড নায়িকাদের মায়াবী চুলের বন্ধনে বন্দি হয়ে আছে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে মানুষের সামনে পেশ করা হচ্ছে। দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধের যুদ্ধকে একতরফাভাবে “সন্ত্রাসী যুদ্ধ” বলে মানুষের ব্রেইনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে অনেক ভূখণ্ডেই আল্লাহর বান্দারা যুদ্ধ জারি রেখেছেন। বীরত্ব, বাহাদুরি, ধৈর্য এবং আত্মোৎসর্গের এমন এমন ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছেন যে, উম্মতের জন্য তা গৌরবের বিষয় ছিল। কিন্তু এই মিডিয়া মানুষকে পুরো বিষয়টিকে ‘সন্ত্রাস’ বলে মোহাচ্ছন করে রেখেছে। একমাত্র আল্লাহ যাকে চান, সেই একমাত্র এর থেকে মুক্ত হতে পারছে। কুফর ও ইসলামের মধ্যকার এ যুদ্ধে মানুষেরা ঐ মতামতটিকেই বিশ্বাস করে নিচ্ছে, যা দাজ্জালি শক্তি এবং তার অনুসারীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গও মিডিয়ার এ বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত নয়। যেমনটি হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেন,
“তোমাদের ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের ভয় করছি তা হচ্ছে যে, তোমাদের জানা থাকা সত্তেও তোমরা ঐ বস্তুকেই প্রাধান্য দিবে যা তোমরা প্রত্যক্ষ করবে এবং তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এমতাবস্থায় যে তোমরা টেরও পাবে না।” (ইবনে আবী শাইবা, ৭/৫০৩)
বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলোকে মিডিয়া যেভাবে পেশ করছে, তা যদি সামনে রাখা হয় – অতপর ইমাম মাহদি এর আবির্ভাবের সময় যখন উলামায়ে দ্বীন এবং মুজাহিদিন কর্তৃক উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার পরিস্থিতিকেও সামনে রাখেন, তবে আন্দাজ করা মুশকিল হয় না যে, মিডিয়া ইমাম মাহদিকে মানুষের সামনে কিভাবে পেশ করবে!! পাশাপাশি মিডিয়াভক্ত লোকেরা ঘটনাটিকে কিভাবে গ্রহণ করবে!!
আসুন আগে আমরা ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ, আগমনের দিনের ঘটনা, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা এবং তাঁর আগমন নিশ্চিত হবার পর তাঁর বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণের ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ সেই বছরের রমজান মাস থেকেই প্রকাশ পাবে।
ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উম্মতের কারা সেদিন নিরাপদ থাকবে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে। পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের। ঘটনার পরম্পরা এরূপঃ শব্দ আসবে রমজানে। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হবে শাওয়ালে। আরবের গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে। হাজী লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে জিলজ্জ মাসে। আর মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদ। শেষটা মুক্তি। সেদিন মুসলমান যে বাহনে চড়ে মুক্তি লাভ করবে, সেটি তার কাছে এক লাখ মূল্যের বিনোদন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ঘরের চেয়েও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
অপর এক বর্ণনায় আছে, “… সত্তর হাজার মানুষ ভয়ে পথ হারিয়ে ফেলবে। সত্তর হাজার অন্ধ হয়ে যাবে। সত্তর হাজার বোবা হয়ে যাবে এবং সত্তর হাজার বালিকার যৌনপর্দা ফেটে যাবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমজানে আওয়াজ আসবে। জুলকা’দায় গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে আর জিলহজ্জ মাসে হাজীলুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
হযরত আমর ইবনে শু’আইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুলকা’দা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদী) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়’আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯)
তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে, “বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন।” (আল মু’জামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)
মুসতাদরাকেরই আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হযরত মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। হযরত মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমানেও ‘মাহদি’।”
ইমাম যুহরি বলেছেন, হযরত মাহদির আত্মপ্রকাশের বছর দুজন ঘোষক ঘোষণা করবে। একজন আকাশ থেকে, একজন পৃথিবী থেকে। আকাশের ঘোষক ঘোষণা করবে, লোকসকল! তোমাদের নেতা অমুক ব্যক্তি। আর পৃথিবীর ঘোষক ঘোষণা করবে, ওই ঘোষণাকারী মিথ্যা বলেছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর ঘোষণাকারী যুদ্ধ করবে। এমনকি গাছের ডাল-পাতা রক্তে লাল হয়ে যাবে। সেদিনকার বাহিনীটি সেই বাহিনী, যাকে ‘জাইশুল বারাজি’ তথা ‘জিনওয়ালা বাহিনী’ বলা হয়েছে। সেদিন যারা আকাশের ঘোষণায় সাড়া দিবে, তাদের মধ্য থেকে বদরি মুজাহিদগণের সংখ্যার সমসংখ্যক লোক তথা তিনশো তেরজন মুসলমান প্রানে রক্ষা পাবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, মারাত্মক যুদ্ধ হবে – শেষ পর্যন্ত হকপন্থিদের মধ্যে শুধু বদর যুদ্ধের সেনাসংখ্যা (৩১৩) পরিমাণ লোক অবশিষ্ট থাকবে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে এসে ইমাম মাহদির কাছে এসে বাইয়াত হয়ে যাবে।
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি।”
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, “তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদী।” (সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
এখানে ‘খলীফা সন্তান’ অর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে। আর ‘ধন ভাণ্ডার’ দ্বারা কাবা ঘরের নিচের প্রোথিত ধন সম্পদ হতে পারে। আবার নিছক রাজত্বও হতে পারে। কারও মতে, ফোরাত নদীর স্বর্ণ পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু রাজত্ব হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ,
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে। বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদীর) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর।” (আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)
আবু দাউদের অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, “তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং মানুষ তাঁর জানাজা আদায় করবে।”
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে জাতীয়তাবাদহীন একক ভূখণ্ড) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের (ভারতীয় উপমহাদেশ) যুদ্ধ, কুনুস্তুন্তনিয়া (বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুল) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কাবা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনীর আগমন হবে। বায়দার প্রান্তরে পৌছা মাত্র বাহিনীর মধ্যভাগ ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। সম্মুখভাগ পেছন ভাগের সেনাদেরকে ডাকাডাকি করতে থাকবে। পরক্ষনেই সম্পূর্ণ বাহিনীকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।” (মুসলিম শরীফ)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন যেন করছিলেন। জাগ্রত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, এমন কেন করছিলেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন,
“খুবই আশ্চর্যের বিষয় – আমার উম্মতের কিছু লোক কাবা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে (ইমাম মাহদী) হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে।”
আমরা বললাম, ‘পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!!’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে অন্তর ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহ পাক তাদের পুনরুত্থান করবেন”। (মুসলিম শরীফ)
উপরের হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে, যে বছর ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে, সে বছরের রমজান থেকেই আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে। এবং সেই বছরের মধ্য রমজান হবে শুক্রবার।
২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী বছরগুলোতে মধ্য রমজান শুক্রবার হবার সম্ভাবনা যে সালগুলোতে সেগুলো হল, ২০১৪ সালের ১১ ও ১২ ই জুলাই (১৪৩৫ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০১৫ সালের ২ ও ৩ জুলাই (১৪৩৬ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার), ২০১৭ সালের ৯ ও ১০ ই জুন (১৪৩৮ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২০ সালের ৮ই মে (১৪৪১ হিজরির ১৫ ই রমজান শুক্রবার), ২০২২ সালের ১৫ ও ১৬ ই এপ্রিল (১৪৪৩ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২৩ সালের ৬ ও ৭ ই এপ্রিল (১৪৪৪ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এবং ২০২৫ সালের ১৪ ও ১৫ ই মার্চ (১৪৪৬ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার)।
চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং ২৯ বা ৩০ দিনে রমজান মাস হবার উপর ভিত্তি করে মধ্য রমজান শুক্রবার হিসাবে সাব্যস্ত হবে।
‘প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের’ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, প্রথম শব্দটি আকাশ থেকে আসবে আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু যেহেতু এই শব্দের প্রভাব দুনিয়ার সতর্ক মুমিনদের চোখ খুলে দিবে এবং তাই কাফিররা প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় এমন বিকট কোন শব্দ ঘটাবে, যাকে ‘শয়তানের শব্দ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এবং এই শব্দকে একটি প্রযুক্তিগত দুর্ঘটনা বলে দাজ্জালি মিডিয়াতে এমনভাবে রং লাগিয়ে প্রকাশ করা হবে, যাতে দুনিয়ার সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা সহজেই পথ ভ্রষ্ট হয়।
‘জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি’, ‘তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে’ এবং এ সময় ইমাম মাহদীর ‘মদিনা থেকে মক্কায় চলে আসা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবেন, যার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিসিক্তি নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। বর্তমানে সৌদি রাজ পরিবারের কাছে রাজত্বের পাশাপাশি মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি বাদশারা তাদের নামের সাথে তাদের মক্কা – মদিনার সংশ্লিষ্টতাও লিখে থাকেন। যেমন বর্তমান বাদশা তাঁর নাম সরকারীভাবে এভাবে লিখেনঃ King Abdullah Bin Abdul Aziz al Saud, Kingdom of Saudi Arabia & custodian of two holy mosques.
বর্তমান বাদশার বয়স ৮৯ বছর। সৌদি রাজ পরিবারের ব্যাপারে সেখানকার সাধারণ জনগণের অসন্তোষ, তাঁর ভবিষ্যৎ মৃত্যু এবং মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রও পিছিয়ে নাই। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপে যার শিরোনাম ‘How 5 countries in middle east could become 14’। সেখানে তারা বেছে নিয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সৌদি আরব। (এর ভিতরে ৩ টি ভূখণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে ইমাম মাহদীর আগমনের দিন, আমরা হাদিস থেকে জেনেছি, সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ ও ইরাকের ‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদীর নিকট বাইয়াত হবে)। আর সৌদি আরবকে ভাঙ্গার সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেঃ
‘Saudi Arabia faces its own (suppressed) internal divisions that could surface as power shifts to the next generation of princes. The kingdom’s unity is further threatened by tribal differences, the Sunni-Shiite divide and economic challenges’.
হাদিসেও এসেছে “গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে”। আর সব মিলিয়ে যদি সত্যিই পশ্চিমারা অদূর ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে চায়, স্বভাবতই সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা হলঃ “মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি” বা custodian of two holy mosques.
হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে’। এর অর্থ হল ইসলামের শত্রুরা হযরত মাহদীর অপেক্ষায় থাকবে এবং গোয়েন্দা মারফত হারাম শরীফের খবর নিতে থাকবে। হারাম শরীফের সিরিয়ার দিক থেকে বর্তমান সিরিয়া ব্যতীত যে ভূখণ্ডটি আছে তা হল জর্ডান (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর সময়ে এটি তৎকালীন শাম অর্থাৎ বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ ছিল)। যেহেতু সিরিয়া থেকে বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী দ্বিতীয় বাহিনী প্রেরণ করবে, তাতে আন্দাজ করা যায়, এই বাহিনীটি আসবে জর্ডান থেকে। এবং তা কিভাবে হবে, এটি বুঝতে হলে বর্তমান জর্ডানের সামরিক কার্যকলাপের দিকে নজর দিতে হবে। সিরিয়াতে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে উপলক্ষ্য করে একে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ দেখিয়ে জর্ডান সরকার ২০১৩ এর প্রথমার্ধে ৯০০ মার্কিন সৈন্যকে থাকার অনুমতি দেয়। এবং মার্কিন সামরিক সচিব টাইমস পত্রিকাকে এপ্রিলে জানায়, এটি যে কোন সময় বাড়িয়ে ২০,০০০ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই যদি হয়, বর্তমান অবস্থা, তাহলে যখন সৌদি আরবে গোত্রগুলোর বিদ্রোহের কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তখন এই জর্ডানের সরকারী বাহিনী তাদের মিত্র কাফের বাহিনীকে নিয়ে নিজ গদি ঠেকাতে কি পদক্ষেপ নিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পুরো বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে এবং “সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।” এরূপ এক আজাবের সাক্ষীকে স্বভাবতই গায়েব/হত্যা করা হবে এবং কখনোই তা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না।
হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, “অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে।” এর অর্থ হল, সে সময় বনু কালবও সিরিয়া শাসন করবে ও তারা ইসলামের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকবে।
কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে,তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মাহদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে।” (মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)
“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে,পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে।” (ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)
অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
“প্রথম বাহিনী বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মাহদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি “কাল্ব যুদ্ধ” নামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি ‘সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মাহদী (আঃ) তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বিগ্নের বিষয় হল, ১৯৬৬ সালে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী আল আসাদ পরিবারও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। তারা শিয়াদের যে শাখার অনুসারী অর্থাৎ “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি”/ “আলাওয়াতি” রাও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। এই আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। প্রথম শাসক ছিল হাফিজ আল আসাদ, তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় শাসক বাশার আল আসাদ। কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।
এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আল গুতা শহরে। এই ‘আল গুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা” নামক স্থানটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বর্ণিত “মালহামা” (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে,যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মাহদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে।”
(সুনানে আবি দাউদ,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী,খণ্ড ৯,পৃষ্ঠা ১৬৯)
আল গুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।
সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল গুতা তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।
হাদিসে মিনায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে বলা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাবে না। বরং ইসলামের শত্রু কাফেররা (ইহুদী খৃষ্টান ও মূর্তিপূজারীরা) আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে এবং তাদের অনুগত দাজ্জালি মিডিয়ার দ্বারা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অপপ্রচারটিই চালাবে। মিডিয়ার স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হবে হয়তোঃ “হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা।” তাদের অপপ্রচারের নমুনাটি নিম্নরূপ হতে পারেঃ
খবর পাঠকঃ আমরা এই মাত্র খবর পেলাম হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমরা সেখানে আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ (অথবা একটি আরব মুসলিম নাম) এর সাথে সরাসরি কথা বলব।….হ্যালো, আবদুল্লাহ শুনতে পাচ্ছেন?
আবদুল্লাহঃ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি।
খবর পাঠকঃ মিনাতে ঠিক কি হচ্ছে এবং কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে?
আবদুল্লাহঃ মক্কার মিনা প্রান্তরে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েছে……। ওখানে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে…। হাঙ্গামার কারণ এখনও অজানা…। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এর পিছনে ঐ সকল সন্ত্রাসীরাই জড়িত, যারা ইতিপূর্বে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়ে আসছে … এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছে। মিনা প্রান্তরে অসংখ্য হাজীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। লাশগুলো রক্তের বন্যায় ভাসছে। আমি যে সকল জীবিতদের সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে অনেকেরই হজ্জের সামানা লুণ্ঠিত হয়েছে।
খবর পাঠকঃ আব্দুল্লাহ, কাবা শরীফের এই মুহুর্তে ঠিক কি অবস্থা?
আবদুল্লাহঃ উপস্থিত সন্ত্রাসীরা আল্লাহর পবিত্র ঘর কা’বা শরীফ দখল করে নিয়েছে এবং কা’বা শরীফের আশেপাশের হাজীদেরকে বন্দি করে ফেলেছে। সন্ত্রাসীরা এই হাজীদেরকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। বন্দিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশু এবং অজস্র নারী বিদ্যমান। চারপাশ থেকে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সাহায্যের জন্য শিশুরা চিৎকার করে আহ্বান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সকল সন্ত্রাসীদের মধ্যে মার্কিনবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও বিদ্যমান…… যাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য আগে থেকেই অপারেশন জারি ছিল…… সন্ত্রাসীদের ধর্ম বলে কিছু নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মতো হবে। (ইমাম মাহদীর আগমন ও ৩১৩ জনের বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা আড়াল ও সন্ত্রাসী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া)।
সংবাদ পাঠকঃ আবদুল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আবার আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব। এইমাত্র আমাদের হাতে খবর এসে পৌঁছেছে যে, মক্কা শরীফকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জর্ডান ও মার্কিন সেনাদের নিয়ে গঠিত শান্তিরক্ষা বাহিনী যাত্রা শুরু করেছে। (তবে জোটবদ্ধ এই বাহিনীর পরিণামে কি হয়েছে, তা গোপন করা হবে)।
ইমাম মাহদীর দলকে ধ্বংস করতে যাওয়া বাহিনীর বায়দা প্রান্তরে মাটির নিচে ধ্বসে যাওয়ার যে কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সে পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যা, বানোয়াট, ধোঁকা এবং জাদুময়ী অপপ্রচারের আন্দাজ আপনি করতে পারেন।
সারা বিশ্বের জনসাধারণকে মিনার প্রান্তরের বিভিন্ন লাশের ছবি বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে টিভি স্ক্রিনে দেখানো হবে আর ইমাম মাহদীকে পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করে ‘স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলতে থাকবে। আর সাথে থাকবে সুন্নতি লেবাসধারী সরকারী/দরবারি আলেমদের কুরআন হাদিসের আলোকে পুরো ঘটনার অপব্যাখ্যাওয়ালা টক শো।
আমরা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি, বিভিন্ন ভূখণ্ডে কিভাবে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সাধারণ মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। আর এটি তো আরও অনেক বড় ব্যাপার। মিডিয়ার চালে চলমান এমন অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামধারীরা সেদিন ইমাম মাহদীর কথা মানা তো দূরের কথা, এদের মুখ থেকে কি ধরনের সব প্রতিক্রিয়া বের হতে থাকবে …… এর আন্দাজ করা কঠিন নয়।
পক্ষান্তরে ঐ সকল ব্যক্তি যারা বিবিসি/সিএনএন এর মতো পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও তাদের বিভিন্ন ভাষাভাষী দালাল মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সত্যকে গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র কাউকে ভয় করে না, কারও সাথে আপোষ করে না, যাদের অন্তর সদা হক্ক গ্রহণে উন্মুখ – তারা যদি পাহাড়ের গর্তেও অবস্থান করে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের জ্ঞান তাদের ঠিকই হয়ে যাবে।
যেহেতু “রিসালাত আল খুরুজ আল মাহাদি” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় এসেছে, “১৪০০ হিজরির পরে মানুষ ইমাম মাহদীকে ঘিরে একত্রিত হবে” (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
আর “আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক” কিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ “১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদীর আবির্ভাব হবে…”। (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
তাই বর্তমান ১৪৩৫ হিজরিতে এসে সামনের দিনগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর উপর সিরিয়াতে বনু কালব গোত্রের দ্বিতীয় শাসক (দ্বিতীয় সুফিয়ানি) এবং তার বর্তমান কার্যক্রম।
হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন, “দ্বিতীয় সুফিয়ানির জামানায় বিকট এক আওয়াজ আসবে। আওয়াজটি এতই বিকট হবে যে, প্রত্যেক গোত্রই মনে করবে – তাদের নিকটবর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।” (আল ফিতান, ৮৫০)
তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর
callected
Comment