সৌদি রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের খবর শোনা যাচ্ছিলো বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। ২০১৫ সালে যুবরাজ মনোনীত হওয়া মুহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে কিছুদিন আগে বাদশাহ সালমান তার নিজ সন্তান মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করেন। সেই থেকে গুঞ্জন ওঠে, সাবেক যুবরাজ নায়েফকে প্রাসাদে আটকে রাখা হয়েছে এবং বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এরইমধ্যে একদিকে মন্ত্রীদের ধরপাকড়, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীতে বড় ধরনের রদবদলের খবর মেলে শনিবার। রাজ কর্তৃপক্ষ বলতে চাইছে, সৌদি আরবে আধুনিকায়নের রাজনৈতিক সংস্কার চলছে। তবে এবারের গ্রেফতার-আটকের ঘটনায় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসনের পুরনো ঐতিহ্য ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। অনেক গোপনীয়তা সত্ত্বেও তা আড়াল করতে পারছে না রাজপরিবার।
বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদ কর্তৃক ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সৌদি রাজত্ব। এই ৮৫ বছরে শাসন করেছেন ছয়জন বাদশাহ। এরা সবাই বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের সন্তান। ৬ জনের কেউ ৫০ বছর বয়সের আগে হাল ধরেননি এই বিশাল তেল-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের। বর্তমান অসুস্থ বাদশাহ সালমান, প্রায় তিন বছর আগে সিংহাসনে বসেন। সে সময় তিনি ৭৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। বাদশাহ সালমান বর্তমান রাজমুকুটধারী যুবরাজের মাধ্যমে ডজন খানেক মন্ত্রী, রয়্যালস, কর্মকর্তা ও সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বরখাস্ত করেন। নজিরবিহীন এই ঘটনাটি এখনও গোপনীয়। তবে যার কারণে বস্তুত রাজকীয় সিংহাসনের এমন একটি টালমাটাল বাস্তবতা, সেই বাদশাহ সালমান তিন বছর আগে পুরোনো এবং অভিজ্ঞ শাসকদের মধ্যে সামান্য পরিচিত ছিলেন।
কয়েক দশক ধরেই, রাজ্য শাসনামলের দায়িত্ব ভাই থেকে ভাইয়ের মধ্যে স্থানান্তর করা হতো। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ তার বাবা থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব পেলেন। যুবরাজ ইতোমধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং দেশের অর্থনীতি, পরিকল্পনা, সংস্কার ও নিরাপত্তাসহ সকল দিকের তত্ত্বাবধানের দিকে নজরদারি দিচ্ছেন। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগে, সিংহাসনে তার দায়িত্বের সম্ভাবনা ছিলো খুব অল্প।
রাজকীয় প্রথা মোতাবেক, ২০১৫ সালে বাদশাহ আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ মনোনীত করা হয়। মুহাম্মদ বিন নায়েফ দেশটির প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। কিন্তু রাজা সালমান তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে থেকে সরিয়ে দেন। অভিযোগ আছে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করার পর সাবেক যুবরাজ নায়েফকে প্রাসাদে আটকে রাখা হয়েছে এবং বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও সিংহাসনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আরও ক’জন প্রতিদ্বন্দ্বী থেকেই যায়। এরইমধ্যে শনিবার ১১ রাজপুত্র গ্রেফতারের খবর শোনা যায়।
সম্প্রতি এক রাজ ডিক্রির মাধ্যমে বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে একটি দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। যার প্রতিফলন হিসেবে শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ১১জন রাজপুত্র, চারজন বর্তমান মন্ত্রী ও ১০ জন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করা হয়। আর এই দুর্নীতিবিরোধী জালিয়াতিতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এক সাহসী পদক্ষেপ দেখিয়েছেন তিনি। যুবরাজ সালমান তাঁর প্রজন্মের প্রথম রাজা হবেন ,যিনি কিনা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা আব্দুল আজিজ’এর ছেলে, তার বাবা সাবেক রাজা সালমানের কাছে থেকে সরাসরি রাজ্য শাসনের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
যুবরাজ তার শাসনের শুরুর দিকেই তার সৎ ভাই প্রিন্স মুকরিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরিয়ে ফেলেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে, বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদ বিন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ‘ক্রাউন প্রিন্স’ বা উপ-যুবরাজের উপাধিতে ভূষিত করেন। রাজার নেওয়া এমন পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন পরিবারের অনেক সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ সদস্যদেরকে বিস্মিত করেছিলো। সিংহাসনে আরোহণের ক্ষেত্রে ডজনেরও বেশি উত্তরাধির যুবরাজকে পেছনে ঠেলে তাকে সামনের কাতারে নিয়ে আসা হয়।
সৌদি রাজপ্রথা অনুযায়ী, এক জন বাদশাহর শাসনকাল শেষে সেই সময়ের যুবরাজ যখন দায়িত্ব নেন, তখন "এলিয়জ্যান্স কাউন্সিল" নামক একটি সংস্থা নতুন যুবরাজ মনোনীত করেন। সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করার পর ২০০৭ সংস্থাটি গঠন করেছিলেন। যদিও ২০১৫ সালের বিশৃঙ্খলা এর অকার্যকারিতাকেই সামনে এনেছে। সীমিত হয়ে এসেছে এর কর্মক্ষেত্র।
অবশ্য সৌদি রাজতন্ত্রে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সবসময়ই ছিল। তবে রাজপরিবারের সেই অভ্যন্তরীণ সংকট কোনদিন এমন জোরালোভাবে সামনে আসেনি। ভিন্নমত সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে রাজপরিবার একক কণ্ঠস্বরকেই ঐতিহ্য হিসেবে অনুসরণ করে আসছে। তবে এবার তা ভেঙে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে সামনে এসেছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গ্রেফতার-আটকের ঘটনাকে সংস্কার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সৌদি আরব ঠিক আগে যেমন ছিল, আবার তেমনই হবে। উদার নীতিতে ফিরে যাবে সৌদি আরব।’তবে পুরনো ঐতিহ্য ভেঙে এই বিপুল গ্রেফতার আটকের ঘটনার কারণে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রথমবারের মতো স্পষ্ট করে উন্মোচিত হয়েছে।
Source:
বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদ কর্তৃক ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সৌদি রাজত্ব। এই ৮৫ বছরে শাসন করেছেন ছয়জন বাদশাহ। এরা সবাই বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সৌদের সন্তান। ৬ জনের কেউ ৫০ বছর বয়সের আগে হাল ধরেননি এই বিশাল তেল-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের। বর্তমান অসুস্থ বাদশাহ সালমান, প্রায় তিন বছর আগে সিংহাসনে বসেন। সে সময় তিনি ৭৯ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। বাদশাহ সালমান বর্তমান রাজমুকুটধারী যুবরাজের মাধ্যমে ডজন খানেক মন্ত্রী, রয়্যালস, কর্মকর্তা ও সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বরখাস্ত করেন। নজিরবিহীন এই ঘটনাটি এখনও গোপনীয়। তবে যার কারণে বস্তুত রাজকীয় সিংহাসনের এমন একটি টালমাটাল বাস্তবতা, সেই বাদশাহ সালমান তিন বছর আগে পুরোনো এবং অভিজ্ঞ শাসকদের মধ্যে সামান্য পরিচিত ছিলেন।
কয়েক দশক ধরেই, রাজ্য শাসনামলের দায়িত্ব ভাই থেকে ভাইয়ের মধ্যে স্থানান্তর করা হতো। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ তার বাবা থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব পেলেন। যুবরাজ ইতোমধ্যেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং দেশের অর্থনীতি, পরিকল্পনা, সংস্কার ও নিরাপত্তাসহ সকল দিকের তত্ত্বাবধানের দিকে নজরদারি দিচ্ছেন। যদিও মাত্র কয়েক মাস আগে, সিংহাসনে তার দায়িত্বের সম্ভাবনা ছিলো খুব অল্প।
রাজকীয় প্রথা মোতাবেক, ২০১৫ সালে বাদশাহ আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর মুহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ মনোনীত করা হয়। মুহাম্মদ বিন নায়েফ দেশটির প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিষয়ক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। কিন্তু রাজা সালমান তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে থেকে সরিয়ে দেন। অভিযোগ আছে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করার পর সাবেক যুবরাজ নায়েফকে প্রাসাদে আটকে রাখা হয়েছে এবং বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তারপরও সিংহাসনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আরও ক’জন প্রতিদ্বন্দ্বী থেকেই যায়। এরইমধ্যে শনিবার ১১ রাজপুত্র গ্রেফতারের খবর শোনা যায়।
সম্প্রতি এক রাজ ডিক্রির মাধ্যমে বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে একটি দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করেন। যার প্রতিফলন হিসেবে শনিবার (৪ নভেম্বর) রাতে মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ১১জন রাজপুত্র, চারজন বর্তমান মন্ত্রী ও ১০ জন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করা হয়। আর এই দুর্নীতিবিরোধী জালিয়াতিতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে এক সাহসী পদক্ষেপ দেখিয়েছেন তিনি। যুবরাজ সালমান তাঁর প্রজন্মের প্রথম রাজা হবেন ,যিনি কিনা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা আব্দুল আজিজ’এর ছেলে, তার বাবা সাবেক রাজা সালমানের কাছে থেকে সরাসরি রাজ্য শাসনের দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
যুবরাজ তার শাসনের শুরুর দিকেই তার সৎ ভাই প্রিন্স মুকরিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরিয়ে ফেলেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে, বাদশাহ সালমান তার ছেলে মোহাম্মদ বিন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ‘ক্রাউন প্রিন্স’ বা উপ-যুবরাজের উপাধিতে ভূষিত করেন। রাজার নেওয়া এমন পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন পরিবারের অনেক সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ সদস্যদেরকে বিস্মিত করেছিলো। সিংহাসনে আরোহণের ক্ষেত্রে ডজনেরও বেশি উত্তরাধির যুবরাজকে পেছনে ঠেলে তাকে সামনের কাতারে নিয়ে আসা হয়।
সৌদি রাজপ্রথা অনুযায়ী, এক জন বাদশাহর শাসনকাল শেষে সেই সময়ের যুবরাজ যখন দায়িত্ব নেন, তখন "এলিয়জ্যান্স কাউন্সিল" নামক একটি সংস্থা নতুন যুবরাজ মনোনীত করেন। সাবেক বাদশাহ আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করার পর ২০০৭ সংস্থাটি গঠন করেছিলেন। যদিও ২০১৫ সালের বিশৃঙ্খলা এর অকার্যকারিতাকেই সামনে এনেছে। সীমিত হয়ে এসেছে এর কর্মক্ষেত্র।
অবশ্য সৌদি রাজতন্ত্রে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সবসময়ই ছিল। তবে রাজপরিবারের সেই অভ্যন্তরীণ সংকট কোনদিন এমন জোরালোভাবে সামনে আসেনি। ভিন্নমত সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে রাজপরিবার একক কণ্ঠস্বরকেই ঐতিহ্য হিসেবে অনুসরণ করে আসছে। তবে এবার তা ভেঙে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে সামনে এসেছে।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গ্রেফতার-আটকের ঘটনাকে সংস্কার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সৌদি আরব ঠিক আগে যেমন ছিল, আবার তেমনই হবে। উদার নীতিতে ফিরে যাবে সৌদি আরব।’তবে পুরনো ঐতিহ্য ভেঙে এই বিপুল গ্রেফতার আটকের ঘটনার কারণে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রথমবারের মতো স্পষ্ট করে উন্মোচিত হয়েছে।
Source:
Comment