'মুসলিমদের তাড়িয়ে আসামে মিয়ানমার বানাতে চায় বিজেপি'
শুভজ্যোতি ঘোষ বিবিসি বাংলা, দিল্লি
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে তাড়িয়ে সেখানে আরও একটি মিয়ানমার তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই মন্তব্য করার পর আসামে তোপের মুখে পড়েছেন জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের প্রবীণ নেতা আর্শাদ মাদানি।
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সে রাজ্যে একের পর এক এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে, আসাম পুলিশও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে।
আসামে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের যে তালিকা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, তার সূত্র ধরে মি: মাদানি এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছেন যারাই এই তালিকা প্রকাশের বিরোধিতা করবেন আসামে তাদের 'শত্রু' বলে গণ্য করা হবে।
আসামের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিমধ্যেই মি মাদানির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে, বিভিন্ন দলের মুসলিম নেতারাও তার মন্তব্য নিয়ে সাবধানী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে যে বৈধ নাগরিকদের তালিকা বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) তৈরির কাজ চলছে তা প্রকাশ হওয়ার কথা আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
বৈধ নাগরিকদের তালিকা থেকে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মুসলিম বাদ পড়তে পারেন, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে দিল্লিতে এ সপ্তাহে একটি সেমিনার আয়োজন করেছিল 'দিল্লি অ্যাকশন কমিটি ফর আসাম'।
সেই সভাতেই জামিয়ত নেতা মওলানা মাদানির বক্তব্য আসামে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।
আর্শাদ মাদানি সেখানে বলেন, "চারশো বছর ধরে যারা বংশপরম্পরায় আসামে বসবাস করছেন তাদের আপনি বাংলাদেশি বলে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন, তা আমরা কিছুতেই হতে দেব না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, তাহলে আগুন জ্বলে যাবে।"
"ভারতীয় নয় বলে এই মুসলিমদের যদি আপনি বের করার চেষ্টা করেন, তাহলে তো বলব আসামের বিজেপি সরকার এটাকেও আর একটা মিয়ানমার বানানোর চেষ্টা করছে।"
আসামের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হীরেন গোঁহাই-সহ ওই সভার উদ্যোক্তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানান, এ বক্তব্যের দায় তাদের নয়।
ওদিকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অসমিয়া ও হিন্দু সংগঠনগুলি এর পরই মওলানা মাদানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে দেয়, তার কুশপুতুল পোড়ানো হতে থাকে।
হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে তিনি বিদ্বেষ ছড়োচ্ছেন, এই অভিযোগে রাজধানী গুয়াহাটি ও তেজপুরের বিভিন্ন থানায় আর্শাদ মাদানির বিরুদ্ধে অনেকগুলো এফআইআর দায়ের করা হয়।
পুলিশ-প্রধান মুকেশ সহায় জানান, তারা জামিয়তের নেতার বিরুদ্ধে ভিডিও ও অডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছেন। তবে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল নিজে।
মি: সোনোওয়াল বলেন, "যে সব শক্তি এনআরসি বা নাগরিক-তালিকার বিরোধিতা করবে আসাম তাদের শত্রু বলে গণ্য করবে। তাদের বিরুদ্ধে আসাম সরকার হাত গুটিয়ে থাকবে না ... বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড় জুড়ে যে বৃহত্তর অহমিয়া জাতি, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই শত্রুদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে।"
এনআরসি-কে ঘিরে আসামের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র আশঙ্কা আছে সেটা সত্যি, কিন্তু মি: মাদানির বক্তব্য তাদেরকে অন্যরকম অস্বস্তিতেও ফেলে দিয়েছে।
রাজ্যে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দল এআইডিইউএফ-এর যেমন দাবি, তার বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের কথায়, "আর্শাদ মাদানির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমার সন্দেহ, উর্দুতে দেওয়া তার বক্তব্য মিডিয়ার সবাই বোঝেনি, তিনি কিন্তু শান্তি বজায় রাখার কথাই বলেছিলেন। উনি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেটা অনেকে বুঝতে পারেনি।"
কিন্তু রাজ্যে দীর্ঘদিন মুসলিমদের সমর্থন পেয়েছে যারা, সেই কংগ্রেসও এখন আর্শাদ মাদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে।
দলের সিনিয়র নেতা আবদুল খালেক বলছেন, "মাদানি সাহেবের বক্তব্য বলে মিডিয়ায় যা প্রচার হয়েছে, তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি একটা স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সন্তান, তার মুখে এ ধরনের কথা মানায় না।"
সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করছেন, "তবে আসামের মুসলিমদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তাদের কোনও মাদানির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।"
এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগে আসামের পরিবেশ যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে আছে, সম্ভবত এই সব কথাবার্তাই তার প্রমাণ।
জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের নেতা আর্শাদ মাদানি সেই উত্তেজনাকেই আরও উসকে দিয়েছেন, যার পরিণতিতে এখন টগবগ করে ফুটছে গোটা রাজ্য।
শুভজ্যোতি ঘোষ বিবিসি বাংলা, দিল্লি
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলিমকে তাড়িয়ে সেখানে আরও একটি মিয়ানমার তৈরি করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই মন্তব্য করার পর আসামে তোপের মুখে পড়েছেন জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের প্রবীণ নেতা আর্শাদ মাদানি।
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সে রাজ্যে একের পর এক এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে, আসাম পুলিশও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে।
আসামে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের যে তালিকা শীঘ্রই প্রকাশিত হবে, তার সূত্র ধরে মি: মাদানি এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছেন যারাই এই তালিকা প্রকাশের বিরোধিতা করবেন আসামে তাদের 'শত্রু' বলে গণ্য করা হবে।
আসামের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিমধ্যেই মি মাদানির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে, বিভিন্ন দলের মুসলিম নেতারাও তার মন্তব্য নিয়ে সাবধানী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামে যে বৈধ নাগরিকদের তালিকা বা ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) তৈরির কাজ চলছে তা প্রকাশ হওয়ার কথা আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই।
বৈধ নাগরিকদের তালিকা থেকে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মুসলিম বাদ পড়তে পারেন, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করে দিল্লিতে এ সপ্তাহে একটি সেমিনার আয়োজন করেছিল 'দিল্লি অ্যাকশন কমিটি ফর আসাম'।
সেই সভাতেই জামিয়ত নেতা মওলানা মাদানির বক্তব্য আসামে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।
আর্শাদ মাদানি সেখানে বলেন, "চারশো বছর ধরে যারা বংশপরম্পরায় আসামে বসবাস করছেন তাদের আপনি বাংলাদেশি বলে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন, তা আমরা কিছুতেই হতে দেব না। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, তাহলে আগুন জ্বলে যাবে।"
"ভারতীয় নয় বলে এই মুসলিমদের যদি আপনি বের করার চেষ্টা করেন, তাহলে তো বলব আসামের বিজেপি সরকার এটাকেও আর একটা মিয়ানমার বানানোর চেষ্টা করছে।"
আসামের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হীরেন গোঁহাই-সহ ওই সভার উদ্যোক্তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জানান, এ বক্তব্যের দায় তাদের নয়।
ওদিকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অসমিয়া ও হিন্দু সংগঠনগুলি এর পরই মওলানা মাদানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে দেয়, তার কুশপুতুল পোড়ানো হতে থাকে।
হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে তিনি বিদ্বেষ ছড়োচ্ছেন, এই অভিযোগে রাজধানী গুয়াহাটি ও তেজপুরের বিভিন্ন থানায় আর্শাদ মাদানির বিরুদ্ধে অনেকগুলো এফআইআর দায়ের করা হয়।
পুলিশ-প্রধান মুকেশ সহায় জানান, তারা জামিয়তের নেতার বিরুদ্ধে ভিডিও ও অডিও সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছেন। তবে সবচেয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল নিজে।
মি: সোনোওয়াল বলেন, "যে সব শক্তি এনআরসি বা নাগরিক-তালিকার বিরোধিতা করবে আসাম তাদের শত্রু বলে গণ্য করবে। তাদের বিরুদ্ধে আসাম সরকার হাত গুটিয়ে থাকবে না ... বরাক-ব্রহ্মপুত্র-পাহাড় জুড়ে যে বৃহত্তর অহমিয়া জাতি, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই শত্রুদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা হবে।"
এনআরসি-কে ঘিরে আসামের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র আশঙ্কা আছে সেটা সত্যি, কিন্তু মি: মাদানির বক্তব্য তাদেরকে অন্যরকম অস্বস্তিতেও ফেলে দিয়েছে।
রাজ্যে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় দল এআইডিইউএফ-এর যেমন দাবি, তার বক্তব্যকে বিকৃত করা হচ্ছে।
দলের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের কথায়, "আর্শাদ মাদানির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমার সন্দেহ, উর্দুতে দেওয়া তার বক্তব্য মিডিয়ার সবাই বোঝেনি, তিনি কিন্তু শান্তি বজায় রাখার কথাই বলেছিলেন। উনি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেটা অনেকে বুঝতে পারেনি।"
কিন্তু রাজ্যে দীর্ঘদিন মুসলিমদের সমর্থন পেয়েছে যারা, সেই কংগ্রেসও এখন আর্শাদ মাদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে।
দলের সিনিয়র নেতা আবদুল খালেক বলছেন, "মাদানি সাহেবের বক্তব্য বলে মিডিয়ায় যা প্রচার হয়েছে, তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি একটা স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের সন্তান, তার মুখে এ ধরনের কথা মানায় না।"
সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করছেন, "তবে আসামের মুসলিমদের ভাগ্য তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে, তাদের কোনও মাদানির প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।"
এনআরসি তালিকা প্রকাশের আগে আসামের পরিবেশ যে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে আছে, সম্ভবত এই সব কথাবার্তাই তার প্রমাণ।
জামিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের নেতা আর্শাদ মাদানি সেই উত্তেজনাকেই আরও উসকে দিয়েছেন, যার পরিণতিতে এখন টগবগ করে ফুটছে গোটা রাজ্য।
Comment