‘আমার জন্মই হয়েছে আসামে। আমার বাবা-মার জন্মও এখানেই। আমি একজন ভারতীয়। অথচ ওরা বলতে চায় আমি বাংলাদেশি। কেন আমার সঙ্গে এমন হচ্ছে?’ প্রশ্নটি ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যের একজন মুসলিম নারীর। মর্জিনা বিবি নামের ওই নারীর কাছে একটি ভোটার কার্ড রয়েছে। তবে রবিবার মধ্যরাতে প্রকাশিত নাগরিক তালিকায় জায়গা মেলেনি ২৬ বছর বয়সী মর্জিনার। দেশহীন (রাষ্ট্রহীন) হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। কেবল মর্জিনা নন, মুসলিমদের আসাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে; এমন গুঞ্জনে তার মতো হাজার হাজার মুসলিম অধিবাসীর মনে একই আশঙ্কা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসামের শাসনক্ষমতায় বসে। বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অবৈধ মুসলিম অভিবাসী’দের তাড়িয়ে দেওয়া ছিল তাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ৱ। তবে বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই অভিযানে কেবল বাংলাদেশি মুসলিমদের নয়; ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে বিজেপির কেন্দ্রীয় দুই মুখপাত্র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রয়টার্সের পাঠানো ইমেইল ও টেলিফোনের কোনও জবাব দেয়নি।
৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভারতের আসামে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয়। খসড়ায় স্থান পান ১ কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দা (মোট বাসিন্দার ৫৭.৭৫ শতাংশ)। বাদ পড়েন ১ কোটি ৩৯ লাখ (মোট বাসিন্দার ৪২.২৫ শতাংশ)।
প্রকাশিত প্রথম খসড়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বারাক উপত্যকতার বাসিন্দাদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় ধীরগতির প্রমাণ মিলেছে। চা উৎপাদন ও তেলসমৃদ্ধ আসামে নাগরিকত্ব ও অবৈধ অভিবাসী ইস্যুটি স্পর্শকাতর। সেখানকার বাসিন্দাদের এক-তৃতীয়াংশই মুসলিম। ৮০-র দশকে কয়েকশ মানুষ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন। প্রথম খসড়ার বাস্তবতা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে আসামের মুসলিমদের মধ্যে বিপুল উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে মর্জিনা বিবিসহ ২০ জনের বেশি মুসলিম বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যাদের সবাই জানিয়েছেন, তাদের নাম প্রাথমিক খসড়া তালিকায় নেই।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভারতে পালিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী হন। নাগরিকত্ব প্রমাণে তাই আসামের বাসিন্দাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যটিতে বসবাসের প্রমাণ দাখিল করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে আট মাস কারাগারে ছিলেন মর্জিনা। জাতীয়তা প্রমাণের নথিপত্র দেওয়ার পর তিনি মুক্তি পান। রয়টার্সের প্রতিবেদককে তিনি ভোটার আইডি কার্ড ও আদালতের মুক্তির আদেশ দেখান। তালিকায় স্থান না পাওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘আমার মনে হয় মুসলমান হওয়াটাই আমার দোষ।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার একটি এনআরসি কেন্দ্রে গিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদক দেখেন, প্রাথমিক খসড়া তালিকায় ১১ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র সাড়ে চার হাজার স্থান পেয়েছেন। রাজ্য বিজেপির দাবি, আগের সরকারগুলো ভোট পাওয়ার আশায় অনেক বাংলাদেশি অভিবাসীকে ভোটার করেছে। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা গৌতম শর্মা জানান, তালিকা তৈরিতে কোনও ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব ছিল না। তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। আমার শুধু নথি পর্যালোচনা করছি। লোকজন কী ধরনের নথি দাখিল করেছেন তার ওপর নির্ভর করছে যাচাইয়ের সময়। তবে একই কেন্দ্রে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা দেখেন, এক আদিবাসী হিন্দু নিজে ও পরিবারের ছয় সদস্যের নাম তালিকায় দেখে হাসিমুখে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর দুই মুসলিম নারী কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু তালিকায় নাম পেয়ে তাদের হতাশা গ্রাস করে।
পশ্চিমবঙ্গেও অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি রয়েছে। এদের মধ্যে অনেক হিন্দু ধর্মালম্বীও রয়েছেন। তবে হিন্দুদের না তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে কেন্দ্রীয় বিজেপির পক্ষ থেকে। নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, এনআরসি তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাদের ‘একঘরে’ করা হবে। জানান, প্রত্যার্পনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে। বাংলাদেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব হিন্দু ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের রাখা হবে।
স্থানীয় মুসলিম নেতারা দাবি করেছেন, পৃথিবীর সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের মতো করেই তাদেরকেও রাষ্ট্রহীন করার পায়তারা চলছে। এ কাজে এনআরসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্র হিসেবে। মুসলিম নেতারা উত্তাল বিক্ষোভের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে এইসব তৎপরতাকে উপেক্ষা করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, যাদেরকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করা হবে তারা সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। তাদেরকে মৌলিক ও ভোটের অধিকারও দেওয়া হবে না। তাদের শুধু একটি অধিকারই থাকবে। আর তা হলো মানবাধিকার। যা জাতিসংঘ মানবাধিকার হিসেবে খাদ্য, আশ্রয় ও বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে মর্জিনারা প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছেন।
মর্জিনা জানান, পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এই তালিকার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। ‘ আমরা গরিব মানুষ, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। কিন্তু যদি কোনও উপায় না থাকে তাহলে আমাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।‘ বলেন ওই ভাগ্যহত নারী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসামের শাসনক্ষমতায় বসে। বাংলাদেশ থেকে আসা ‘অবৈধ মুসলিম অভিবাসী’দের তাড়িয়ে দেওয়া ছিল তাদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ৱ। তবে বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই অভিযানে কেবল বাংলাদেশি মুসলিমদের নয়; ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে বিজেপির কেন্দ্রীয় দুই মুখপাত্র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রয়টার্সের পাঠানো ইমেইল ও টেলিফোনের কোনও জবাব দেয়নি।
৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভারতের আসামে বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয়। খসড়ায় স্থান পান ১ কোটি ৯০ লাখ বাসিন্দা (মোট বাসিন্দার ৫৭.৭৫ শতাংশ)। বাদ পড়েন ১ কোটি ৩৯ লাখ (মোট বাসিন্দার ৪২.২৫ শতাংশ)।
প্রকাশিত প্রথম খসড়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে বারাক উপত্যকতার বাসিন্দাদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় ধীরগতির প্রমাণ মিলেছে। চা উৎপাদন ও তেলসমৃদ্ধ আসামে নাগরিকত্ব ও অবৈধ অভিবাসী ইস্যুটি স্পর্শকাতর। সেখানকার বাসিন্দাদের এক-তৃতীয়াংশই মুসলিম। ৮০-র দশকে কয়েকশ মানুষ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় নিহত হয়েছিলেন। প্রথম খসড়ার বাস্তবতা ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে আসামের মুসলিমদের মধ্যে বিপুল উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে মর্জিনা বিবিসহ ২০ জনের বেশি মুসলিম বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যাদের সবাই জানিয়েছেন, তাদের নাম প্রাথমিক খসড়া তালিকায় নেই।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মানুষ ভারতে পালিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী হন। নাগরিকত্ব প্রমাণে তাই আসামের বাসিন্দাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যটিতে বসবাসের প্রমাণ দাখিল করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে আট মাস কারাগারে ছিলেন মর্জিনা। জাতীয়তা প্রমাণের নথিপত্র দেওয়ার পর তিনি মুক্তি পান। রয়টার্সের প্রতিবেদককে তিনি ভোটার আইডি কার্ড ও আদালতের মুক্তির আদেশ দেখান। তালিকায় স্থান না পাওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘আমার মনে হয় মুসলমান হওয়াটাই আমার দোষ।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার একটি এনআরসি কেন্দ্রে গিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদক দেখেন, প্রাথমিক খসড়া তালিকায় ১১ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র সাড়ে চার হাজার স্থান পেয়েছেন। রাজ্য বিজেপির দাবি, আগের সরকারগুলো ভোট পাওয়ার আশায় অনেক বাংলাদেশি অভিবাসীকে ভোটার করেছে। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা গৌতম শর্মা জানান, তালিকা তৈরিতে কোনও ধর্মীয় পক্ষপাতিত্ব ছিল না। তিনি বলেন, এটা অসম্ভব। আমার শুধু নথি পর্যালোচনা করছি। লোকজন কী ধরনের নথি দাখিল করেছেন তার ওপর নির্ভর করছে যাচাইয়ের সময়। তবে একই কেন্দ্রে রয়টার্সের প্রতিনিধিরা দেখেন, এক আদিবাসী হিন্দু নিজে ও পরিবারের ছয় সদস্যের নাম তালিকায় দেখে হাসিমুখে ফিরে যান। এর কিছুক্ষণ পর দুই মুসলিম নারী কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু তালিকায় নাম পেয়ে তাদের হতাশা গ্রাস করে।
পশ্চিমবঙ্গেও অবৈধ মুসলিম অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি রয়েছে। এদের মধ্যে অনেক হিন্দু ধর্মালম্বীও রয়েছেন। তবে হিন্দুদের না তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া আছে কেন্দ্রীয় বিজেপির পক্ষ থেকে। নাগরিক নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, এনআরসি তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাদের ‘একঘরে’ করা হবে। জানান, প্রত্যার্পনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে। বাংলাদেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব হিন্দু ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের রাখা হবে।
স্থানীয় মুসলিম নেতারা দাবি করেছেন, পৃথিবীর সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের মতো করেই তাদেরকেও রাষ্ট্রহীন করার পায়তারা চলছে। এ কাজে এনআরসিকে ব্যবহার করা হচ্ছে অস্ত্র হিসেবে। মুসলিম নেতারা উত্তাল বিক্ষোভের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তবে এইসব তৎপরতাকে উপেক্ষা করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, যাদেরকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করা হবে তারা সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। তাদেরকে মৌলিক ও ভোটের অধিকারও দেওয়া হবে না। তাদের শুধু একটি অধিকারই থাকবে। আর তা হলো মানবাধিকার। যা জাতিসংঘ মানবাধিকার হিসেবে খাদ্য, আশ্রয় ও বস্ত্রের নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে মর্জিনারা প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছেন।
মর্জিনা জানান, পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এই তালিকার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। ‘ আমরা গরিব মানুষ, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। কিন্তু যদি কোনও উপায় না থাকে তাহলে আমাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে।‘ বলেন ওই ভাগ্যহত নারী।
Comment