বান্দরবান: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মায়ানমার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পোশাক পরে তাদের সেনাসদস্যরা সীমান্ত আইন ভেঙে সীমান্তের আশপাশ এলাকায় কৌশলে অবস্থান নিয়েছে। গতকাল রাতের দিকে হঠাৎ বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমার সীমান্তরক্ষীরা ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।
শুক্রবার সকালেও তমব্রু সীমান্তে মায়ানমার সেনারা দুইটি পিকআপে করে অতিরিক্ত সৈন্য বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল।
এদিকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ আর মায়ানমারের এ ধরনের হঠকারী ও উস্কানিমূলক আচরণে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা এবং সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সীমান্তে মায়ানমারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীরভাবে নজর রাখছে বাংলাদেশ। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শক্ত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মায়ানমার কিছু করলে তার সমুচিত জবাব দেবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া জরুরি পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মায়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ঘটনায় প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে বিজিবি। তবে এখনও পতাকা বৈঠকের আহ্বানে সাড়া দেয়নি মায়ানমার। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মায়ানমারের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে ‘বেশি গুরুত্ব’ দিয়ে দেখার কিছু নেই। বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দেশের ভেতরে এসে কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবে- এটা অসম্ভব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের জিরো লাইনের কাছাকাছি গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারে পাহাড়ে বাংকার খুঁড়ে মায়ানমারের সেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। ওই পয়েন্টে দেড় শতাধিক সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন বিজিবির এক সদস্য। সীমান্তের ওই স্থানে জিরো লাইনে অবস্থান করছে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা। তারা গত আগস্ট থেকে সেখানে রয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খায়রুল বশর বলেন, ‘বুধবার থেকে হঠাৎ করে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ করার খবর আমরা জানতে পেরেছি। সকালে দেখা গেছে, ভারী ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তারা সীমান্তে রণসজ্জায় আছে।’
শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে সাতটি ট্রাকে করে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তের বেড়া বরাবর তারা বাংকার খনন করেছে। মায়ানমারের সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরাও অবস্থান করছে।
শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মায়ানমারের সেনাসদস্যরা মর্টার, কামানসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে এসেছে। তারা জিরো লাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাইকিং করেছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশেও যেতে পারছি না, রাখাইনেও থাকতে পারছি না। আমরা এখন কোথায় যাব?’
জিরো লাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের দিনের মধ্যেই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো রোহিঙ্গা এখনও সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওই পয়েন্টে দায়িত্বরত বিজিবির এক সদস্য। তিনি বলেন, হঠাৎ করে মায়ানমার সীমান্তে সৈন্য বাড়িয়েছে কেন, তা জানা যায়নি। তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। টহল জোরদার করা হয়েছে।
শূন্যরেখার এপারে উপস্থিত কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ শুক্রবার জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে শূন্যরেখায় অবস্থিত প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার কথা। দুই সপ্তাহ না পেরোতেই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে, সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার খনন করে একটি যুদ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মায়ানমার সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা নেতা আকতার কামাল শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মায়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যরা তাদের অংশে মহড়া দেয়। এরপর বিজিবিও বাংলাদেশের অংশে মহড়া দিলে তারা কিছুটা পিছু হটে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জিরো লাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করলে সীমান্তের মায়ানমারের অংশ থেকে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই মায়ানমার সেনারা তাদের সৈন্য সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে মায়ানমার কিছু করলে তার জবাব দেবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির থেকে নিজ গ্রাম রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কথা। তার আগে উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের শূন্যরেখায় সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে মায়ানমার। শূন্যরেখার ওই শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এই সেনা সমাবেশ বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, সীমান্তে বিজিবির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ মায়ানমার মর্টার শেল ছুড়ে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে বিশ্ববাসীর নজর ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করতে পারে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মায়ানমার সেনারা। বাংলাদেশ সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
প্রস্তুত বিজিবি : নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে মায়ানমার সেনারা তাদের নিজেদের অংশের প্রায় দেড় গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সতর্ক অবস্থানেও আছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার বিজিবির সদর দপ্তর পিলখানায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান। তিনি আরও জানান, জরুরি পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মায়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায় বিজিবি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় বেশ কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এলাকাটি মায়ানমার অংশে। কিছুদিন ধরে মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তা আরও মজবুত করছে। তারা উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন করার কাজ করছে। এর মধ্যে শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে সেখানকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তারা বারবার বলছে। এটা গত এক মাস ধরে চলছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তমব্রু বর্ডার পোস্টের ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় নিজেদের অংশের প্রায় ১৫০ গজ ভেতরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মায়ানমার। বেশ কিছু মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপ, ট্রাক ও লরির মাধ্যমে তারা সেখানে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। সার্ভিল্যান্স ও ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। এর পর থেকে বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এরই মধ্যে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে এর সমাধান হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ পতাকা বৈঠকে সাড়া না দিলে বিজিবি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এমন প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সৈন্য সমাবেশ করা সীমান্তরীতির বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত। যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিজিবির সদস্যরা নিবেদিতপ্রাণ থেকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন বলেও জানান মুজিবুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে সীমান্তে যে সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। আর সে জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর কী কারণে তারা সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটা জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। আলোচনায় বসলে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে অন্য কোনো বাহিনীর সদস্যদের জানাতে হবে। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে মিয়ানমার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলেই আমরাও বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিছুদিন আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তাই এমন কোনো পদক্ষেপ তাদের নেওয়ার কথা নয়। এটি কোনো উস্কানির পর্যায়ে পড়ে না। তাদের নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশ (ঠেলে দেওয়া) করা হচ্ছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুজিবুর রহমান বলেন, শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে তারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা পুশিংয়েরই চেষ্টা। এ নিয়ে উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বিষয়টি স্বীকার করেছে।
মিয়ানমারের অজুহাত ভুল- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী :চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে গতকাল তমব্রু পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, মায়ানমার দাবি করেছে, ‘জিরো লাইনে’ অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে না ঢোকে, সে জন্যই তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, ১৯৭৮-এ দেখেছি, ‘৯১-এ দেখেছি, ২০১৬ সালে দেখেছি, ২০১৭-১৮-তেও দেখছি- তারা যা বলেন, তা তারা করেন না। আজকে তারা যে অজুহাত দিতে চাইছেন, তা ভুল। এগুলো আমরা দেখেছি। বিজিবি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের এলাকায় তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
মঙ্গলবার তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন নোবেল বিজয়ী তিন নারী। তারা শূন্যরেখার ওই স্থান পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন; রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিচারের দাবিও তোলেন তারা। তাদের সফরের একদিন পরই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা বাড়াল। সম্প্রতি প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। নানা অজুহাতে তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করতে এটি মিয়ানমারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
তথ্যসূএ:- নিজস্ব প্রতিনিধি
আরটিএনএন
শুক্রবার সকালেও তমব্রু সীমান্তে মায়ানমার সেনারা দুইটি পিকআপে করে অতিরিক্ত সৈন্য বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল।
এদিকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ আর মায়ানমারের এ ধরনের হঠকারী ও উস্কানিমূলক আচরণে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা এবং সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সীমান্তে মায়ানমারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীরভাবে নজর রাখছে বাংলাদেশ। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শক্ত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মায়ানমার কিছু করলে তার সমুচিত জবাব দেবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া জরুরি পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মায়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ঘটনায় প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে বিজিবি। তবে এখনও পতাকা বৈঠকের আহ্বানে সাড়া দেয়নি মায়ানমার। এ পরিস্থিতিতে ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মায়ানমারের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে ‘বেশি গুরুত্ব’ দিয়ে দেখার কিছু নেই। বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দেশের ভেতরে এসে কেউ কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবে- এটা অসম্ভব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের জিরো লাইনের কাছাকাছি গিয়ে দেখা যায়, সীমান্তের ওপারে পাহাড়ে বাংকার খুঁড়ে মায়ানমারের সেনারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। ওই পয়েন্টে দেড় শতাধিক সেনা মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন বিজিবির এক সদস্য। সীমান্তের ওই স্থানে জিরো লাইনে অবস্থান করছে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা। তারা গত আগস্ট থেকে সেখানে রয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি খায়রুল বশর বলেন, ‘বুধবার থেকে হঠাৎ করে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ করার খবর আমরা জানতে পেরেছি। সকালে দেখা গেছে, ভারী ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তারা সীমান্তে রণসজ্জায় আছে।’
শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গারা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে সাতটি ট্রাকে করে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়েছে। সীমান্তের বেড়া বরাবর তারা বাংকার খনন করেছে। মায়ানমারের সেনাদের সঙ্গে তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরাও অবস্থান করছে।
শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মায়ানমারের সেনাসদস্যরা মর্টার, কামানসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে এসেছে। তারা জিরো লাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাইকিং করেছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশেও যেতে পারছি না, রাখাইনেও থাকতে পারছি না। আমরা এখন কোথায় যাব?’
জিরো লাইনে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের দিনের মধ্যেই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো রোহিঙ্গা এখনও সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ওই পয়েন্টে দায়িত্বরত বিজিবির এক সদস্য। তিনি বলেন, হঠাৎ করে মায়ানমার সীমান্তে সৈন্য বাড়িয়েছে কেন, তা জানা যায়নি। তবে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। টহল জোরদার করা হয়েছে।
শূন্যরেখার এপারে উপস্থিত কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ শুক্রবার জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে শূন্যরেখায় অবস্থিত প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার কথা। দুই সপ্তাহ না পেরোতেই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে, সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার খনন করে একটি যুদ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মায়ানমার সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা নেতা আকতার কামাল শুক্রবার এ প্রতিবেদককে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মায়ানমার সেনা ও বিজিপি সদস্যরা তাদের অংশে মহড়া দেয়। এরপর বিজিবিও বাংলাদেশের অংশে মহড়া দিলে তারা কিছুটা পিছু হটে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জিরো লাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বিক্ষোভ করলে সীমান্তের মায়ানমারের অংশ থেকে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আজ শুক্রবার সকাল থেকেই মায়ানমার সেনারা তাদের সৈন্য সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে মায়ানমার কিছু করলে তার জবাব দেবে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির থেকে নিজ গ্রাম রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কথা। তার আগে উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সীমান্তের শূন্যরেখায় সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে মায়ানমার। শূন্যরেখার ওই শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এই সেনা সমাবেশ বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, সীমান্তে বিজিবির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ মায়ানমার মর্টার শেল ছুড়ে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে বিশ্ববাসীর নজর ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করতে পারে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মায়ানমার সেনারা। বাংলাদেশ সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
প্রস্তুত বিজিবি : নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে মায়ানমার সেনারা তাদের নিজেদের অংশের প্রায় দেড় গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করেছে। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সতর্ক অবস্থানেও আছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার বিজিবির সদর দপ্তর পিলখানায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান। তিনি আরও জানান, জরুরি পতাকা বৈঠক আহ্বানের পাশাপাশি মায়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ঘটনায় বিজিবি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে।
তিনি বলেন, তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন এলাকায় বেশ কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এলাকাটি মায়ানমার অংশে। কিছুদিন ধরে মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনী তমব্রু সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে তা আরও মজবুত করছে। তারা উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন করার কাজ করছে। এর মধ্যে শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে সেখানকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য তারা বারবার বলছে। এটা গত এক মাস ধরে চলছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তমব্রু বর্ডার পোস্টের ৩৪ ও ৩৫ পিলারের মাঝামাঝি এলাকায় নিজেদের অংশের প্রায় ১৫০ গজ ভেতরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মায়ানমার। বেশ কিছু মিলিটারি প্যাটার্নের পিকআপ, ট্রাক ও লরির মাধ্যমে তারা সেখানে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। সার্ভিল্যান্স ও ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে। এর পর থেকে বিজিবিও সতর্ক অবস্থানে আছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এরই মধ্যে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে এর সমাধান হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ পতাকা বৈঠকে সাড়া না দিলে বিজিবি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- এমন প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন, সৈন্য সমাবেশ করা সীমান্তরীতির বাইরে। আমরা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সতর্ক অবস্থানে আছি। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত। যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বিজিবির সদস্যরা নিবেদিতপ্রাণ থেকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন বলেও জানান মুজিবুর রহমান।
এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সৈন্যদের সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে সীমান্তে যে সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে, তা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। আর সে জন্য আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর কী কারণে তারা সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটা জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে। আলোচনায় বসলে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে অন্য কোনো বাহিনীর সদস্যদের জানাতে হবে। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে মিয়ানমার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলেই আমরাও বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিছুদিন আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তাই এমন কোনো পদক্ষেপ তাদের নেওয়ার কথা নয়। এটি কোনো উস্কানির পর্যায়ে পড়ে না। তাদের নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশ (ঠেলে দেওয়া) করা হচ্ছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুজিবুর রহমান বলেন, শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে তারা যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা পুশিংয়েরই চেষ্টা। এ নিয়ে উচ্চপর্যায়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বিষয়টি স্বীকার করেছে।
মিয়ানমারের অজুহাত ভুল- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী :চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে গতকাল তমব্রু পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, মায়ানমার দাবি করেছে, ‘জিরো লাইনে’ অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যাতে আর বাংলাদেশে না ঢোকে, সে জন্যই তারা নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, ১৯৭৮-এ দেখেছি, ‘৯১-এ দেখেছি, ২০১৬ সালে দেখেছি, ২০১৭-১৮-তেও দেখছি- তারা যা বলেন, তা তারা করেন না। আজকে তারা যে অজুহাত দিতে চাইছেন, তা ভুল। এগুলো আমরা দেখেছি। বিজিবি অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের এলাকায় তাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
মঙ্গলবার তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন নোবেল বিজয়ী তিন নারী। তারা শূন্যরেখার ওই স্থান পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন; রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিচারের দাবিও তোলেন তারা। তাদের সফরের একদিন পরই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা বাড়াল। সম্প্রতি প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। নানা অজুহাতে তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করতে এটি মিয়ানমারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
তথ্যসূএ:- নিজস্ব প্রতিনিধি
আরটিএনএন
Comment