Muslim news world
ডেস্ক রিপোর্ট : ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে; কয়েক দিন আগে বৈশি^ক রাজনীতির রূপ পাল্টে দেওয়া সেই হামলার ১৭ বছর পূর্ণ হলো। ওই হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আঙুল তুলেছিল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দিকে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধের নামে তড়িঘড়ি করে একই বছর ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট আফগানিস্তানে আঘাত হানে। সেই সময় তালেবান সরকারের পতন ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আজ ১৭ বছর পর আমরা কী দেখছি? হিসেবের খাতায় দেখা যাচ্ছেÑতালেবান গোষ্ঠীর শক্তি কোথায় কমে যাওয়ার কথা কিন্তু উল্টো তাদের প্রভাব–প্রতিপত্তি বেড়ে গেছে। বেড়েছে হামলার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই। একই সঙ্গে কূটনীতিক দিক দিয়েও অনেকটা এগিয়েছে তালেবান।
এবার চোখ বুলানো যাক তথ্যচিত্রের দিকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এক প্রতিবেদনে দিনে দিনে তালেবানের শক্তি বৃদ্ধির কিছু নমুনা তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, মার্কিন নথি অনুযায়ী ২০১৪ সালে তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এক মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
জানান, তালেবানের শক্তি বেড়ে গোষ্ঠীটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬০ হাজারে। এই ৬০ হাজার সংখ্যাটি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে চার বছরে তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। প্রতি বছর বেড়েছে ১০ হাজার করে। আরেক মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য, বর্তমানে তালেবান যোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কত তা নির্ধারণ করা বেশ জটিল। কেননা তালেবান যোদ্ধারা অনেক সময় সহযোগী সংগঠনের হয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়া তালেবানের অনেক সদস্য রয়েছে যারা ‘আদর্শিক সমর্থক’। তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও প্রকৃত তালেবান সদস্যরা আদর্শিক সমর্থকের সহায়তা নিয়ে হামলা পরিচালনা করে থাকে। এসব কারণে তালেবানের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলে থাকেন, তালেবান চক্করে পড়ে খেই হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গোষ্ঠীটির কর্মকা– যে দিন দিন বেড়ে চলেছে তা তাদের তৎপরতা থেকে সহজেই অনুমেয়। প্রায় প্রতিদিন আফগানিস্তানের কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে তালেবান। নিজেদের শক্তি প্রমাণে তালেবানরা যেসব হামলা চালায় সেগুলোর দায় স্বীকার করে থাকে তারা।
চলতি বছর সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, আফগানিস্তানের ৭০% এলাকা তালেবান হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে উচ্চ ঝুঁকি, মধ্যম ও অল্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৫% এলাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার অথবা দুই সপ্তাহে একবার হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শতাংশ এলাকা মাসে অন্তত তিনবার হামলার ঘটনা ঘটে। আর কম ঝুঁকিপূর্ণ ৩১% এলাকায় প্রতি তিন মাসে একবার হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। এদিকে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে এক নথিতে দেখা যায়, ২২৯টি জেলা আফগান সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অন্যদিকে ৫৯টি জেলা তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ১১৯টি জেলার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই, তালেবানের হাতেও নেই। এসব এলাকায় একেক সময় একেক গোষ্ঠী হানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
এক সময় মনে করা হতো, মোল্লা ওমর মারা গেলে তালেবানের শক্তি কমে আসবে। কিন্তু ওমরের পরবর্তী আমির মোল্লা আখতার মনসুরকে ২০১৬ সালে হত্যার পরও গোষ্ঠীটির সংঘ শক্তি কমেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আফগান দৃশ্যে হাজির হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সিরিয়া ও ইরাকে কোণঠাসা হওয়ার পর অনেক আইএস যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানে অন্তত ১০০০ হাজার আইএস রয়েছে। যদিও তালেবানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, আইএসের সঙ্গে তাদের বিস্তর মতপাথর্ক্য রয়েছে। এছাড়া হামলার লক্ষ্যবস্তুতে কিছু ফারাক রয়েছে। তালেবান সব সময় পশ্চিমা নিরাপত্তা বাহিনী ও আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী, সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা করে থাকে। তারা সাধারণত সাধারণ লোককে টার্গেট করে হামলা করে না। কিন্তু আইএস সাধারণ লোকের জমায়েতকে হামলার টার্গেট করে থাকে। এখন আইএসের চেয়ে যে তালেবানের শক্তি বেশি তা প্রমাণ করতেও তালেবানকে একের পর এক হামলা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সন্ত্রাস সমূলে নিমর্ূূলের উদ্দেশ্যে ন্যাটো বাহিনী আফগান যুদ্ধে অংশ নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৪ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। বর্তমানে কিছু সেনা থাকলেও তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়ে আফগান বাহিনীকে সহায়তা করে থাকে। আফগান যুদ্ধে পশ্চিমা বাহিনীর অংশগ্রহণ কমেছে কিন্তু তালেবানের হামলা বেড়েছে। সোজা কথায় বললে, আফগান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া সরাসরি বলে থাকে, আফগান যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় মেনে না নিলেও তারা যে যুদ্ধ আর দীর্ঘ করতে চায় না তা বেশ স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, তালেবানের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবরও বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ওই দিকে চীন–রাশিয়া তালেবান বিষয়ে নরম সুরে কথা বলে থাকে। কিছু সূত্রের দাবি, তালেবানকে অস্ত্র দিয়ে থাকে রাশিয়া। তাই বলতে হচ্ছে, যে তালেবানকে একদিন শেষ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র আজ সেই তালেবানের সঙ্গে এক টেবিলে বসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়ত দেখব, তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেই আফগান যুদ্ধের ইতি টানতে হয়েছে।
সূত্র : আমাদের সময়
Muslim news world সম্পাদকের মন্তব্য– আল্লাহর দ্বীন অবশ্যই বিজয়ী হবে যদিও কাফিরদের কাছে তা খারাপ লাগে। পশ্চিমা মিডিয়া বিভিন্নভাবে ইসলামি জিহাদকে অপব্যাখ্যা করে এবং বিভিন্ন যোগ সংযোগের নাম করে মুসলিম মুজাহিদদেরকে অনুৎসাহিত করার চেষ্টা করে। মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরানোই এদের কাজ। এসব ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। এ সংবাদেও তার কিছু স্পর্শ আছে।
https://muslimnewsworld.wordpress.co...7%81%e0%a6%a6/
ইয়েমেনি রক্তে ‘মেইড ইন আমেরিকা’র মুনাফা
ইয়েমেনে গত মাসে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসী যুদ্ধের বলি হয়েছে এক স্কুলবাসে থাকা ৪০ শিশু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সে সময় তাদের এক অনুসন্ধানে জানিয়েছিল, বিমান থেকে ফেলা যে বোমায় ওই শিশুরা প্রাণ হারায়, তা বানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। তবে সেটাই প্রথম নয়। ইয়েমেন যুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মার্কিন অস্ত্র। সেই অস্ত্রের বলি হচ্ছেন বেসামরিক নাগরিকেরা। ইয়েমেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন মোয়াতানা সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্রের ব্যবহারের বিস্তারিত আলামত সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত সেই আলামতকে উপজীব্য করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হাজির করেছে ‘মেইড ইন আমেরিকা’ শিরোনামে। সরেজমিন অস্ত্র–বোমার আলামত সংগ্রহ না করলেও, সিএনএন দাবি করছে, মোতায়ানার সংগৃহীত আলামত (ছবির মেটাডাটা) আর সরকারি ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য থেকে হামলার ঘটনাগুলোতে কোন কোন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র ও যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়েছে তা তারা নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞের মূল্যায়নও গ্রহণ করেছে ওই মার্কিন সংবাদমাধ্যম। তাদের প্রতিবেদনে ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট তাদের আগ্রাসনে কোন মাত্রায় মার্কিন অস্ত্র–সহায়তা পেয়েছে তার একটি চিত্র উঠে এসেছে সংগৃহীত তথ্য থেকে। মোতায়ানা মনে করছে, মুনাফার লোভে ইয়েমেনকে রক্তাক্ত করতেও ছাড়ছে না তারা। বিশ্লেষকরা তাই, ইয়েমেনের যুদ্ধ–বাস্তবতাকে সৌদি–আমেরিকান সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিচ্ছেন।
২০১৫ সালের প্রথমদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। এতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত আরেকটি শিয়া গোষ্ঠীর উত্থানের সম্ভাবনায় শঙ্কিত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও সাতটি আরব দেশ হাদিকে ফের ক্ষমতায় বসাতে তৎপর হয়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইয়েমেনের যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছে যাদের দুই-তৃতীয়াংশ বেসামরিক আর আহত হয়েছে আরও ৫৫ হাজার মানুষ। হতাহতদের অনেকেই বলি হয়েছেন মার্কিন অস্ত্রের, যার আলামত সংগ্রহ করেছে মোয়াতানা। ইয়েমেনভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংগঠনের পরিচয় দিতে গিয়ে সিএনএন লিখেছে, সংস্থাটি ইয়েমেনে সব পক্ষের বিধিভঙ্গের প্রমাণ সংগ্রহ করে। তারপর সেগুলো নিয়ে কথা বলে অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপের মধ্য দিয়ে অস্ত্রটির গতিপ্রকৃতি আর কোথায় তা তৈরি, তা জানা যায়। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট’ মোয়াতানাকে তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত করেছে।
ইয়েমেন যুদ্ধে বেসামরিকদের ওপর হওয়া হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব নিতে চায় না। তাদের বক্তব্য, তারা হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে দেয় না। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলছে, কিন্তু শত কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে এবং সৌদি আরবের যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের পাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এমন কি কিছু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যও দিয়েও সহায়তা করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটকে। তবে সৌদি যুদ্ধ জোটের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালিকি সিএনএনকে বলেছেন, যুদ্ধ জোট সাধারণ মানুষের ওপর চালানো সব হামলার অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং ‘অভিযানে চালানো হামলা রুলস অব এনগেজমেন্ট মেনেই হয় যা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে।’ এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র কমান্ডার রেবেকা রেবারিখ মন্তব্য করেছেন, ‘যুদ্ধে কী ধরনের অভিযান চালানো হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যরা, যুক্তরাষ্ট্র নয়। তারপরও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হওয়ার সব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।’ তবে মোয়াতানার চেয়ারওম্যান রাদিয়া আল মুতাওয়াক্কেল সিএনএনকে বলেছেন, ‘সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আইনি ও নৈতিক দুই দিক থেকেই দায়ী। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই ইয়েমেন যুদ্ধ আরও বেশি খারাপ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে মুতাওয়াক্কেল সিএনএনকে বলেছেন, ‘একাধিকবার এবং একাধিক হামলাস্থলে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বোমার অবশেষ পাওয়া গেছে। এই যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রই এই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে। এটা লজ্জার বিষয়, নিরীহ মানুষের রক্তের চেয়ে মুনাফা তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।’
মোয়াতানার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিএনএন কিছু ঘটনার তথ্য তুলে ধরেছে যেসব ঘটনায় মার্কিন বোমা ব্যবহার করা হয়েছে নিরীহ সাধারণ ইয়েমেনিদের ওপর। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটের হামলায় নিহত হন একজন। আর আহত হন ছয় জন। ওই হামলাটি চালানো হয়েছিল একটি বাড়ির ওপর। গৃহকর্তা ছিলেন হাইফা আল জাওকারি। তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে ছিল একটি শিশু ও দুইজন নারী। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বোমার ভগ্নাংশে পাওয়া ‘ন্যাশনাল স্টক নাম্বার’ (এনএসএন) এবং ‘পার্ট নম্বার’ জিবিইউ-১২ লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমার সঙ্গে মিলে যায়, যার নির্মাতা রেথিওন। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি ওই বোমার ওজন ২৩০-৩৩০ কেজি এবং এতে ৮৭ কিলোগ্রাম এইচ-৬ বিস্ফোরক থাকে।
২০১৫ সালের ২৬ মে তারিখে হামলা চালানো হয় আহমেদ বাকরি স্কুলে। সেটি হোদাইদাহর আল তাহেতা এলাকায় অবস্থিত ছিল। মোয়াতানার মতে, ওই স্কুলে অন্তত দুইবার বিমান হামলা চালানো হয়। তবে এসব হামলায় হতাহতের বিষয়ে কোনও তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি মোয়াতানা। সিএনএন ঘটনাস্থলে বোমার যে ভগ্নাংশ পেয়েছে তাতে ‘কমার্শিয়াল অ্যান্ড গভর্নমেন্ট এনটিটি’ (কেজি) নম্বর লেখা রয়েছে 96214। এ থেকে জানা যায়, বোমাটি রেথিওনের তৈরি। বোমার ভগ্নাংশে যে ‘অ্যাডাপ্টার এএসএসওয়াই ফরওয়ার্ড’ লেখা তা থেকেই সিএনএন মনে করে, প্রায় ৪৫০ কেজি ওজনের এমকে-৮৩ বোমার নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত কন্ট্রোলারের ভগ্নাংশের ছবি সংশ্লিষ্ট চিত্রটি।
২০১৫ সালের ১০ আগস্ট সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালায় হাজ্জাহ প্রদেশের হারাধ গ্রামে। সেখানে মাজেদ আলি নামক এক ২৮ বছর বয়সী কৃষকের বাড়িতে ফেলা হয়েছিল তিনটি ক্লাস্টার বোমা। মোয়াতানার দেওয়া তথ্য মতে, ওই হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিল ছয় শিশু ও তিন নারী। সংস্থাটি ঘটনাস্থলে সিবিইউ-৫৮এ/বি নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ৪৩০ কেজি ওজনের একটি ক্লাস্টার বোমার ভগ্নাংশ খুঁজে পায়। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানে দেখেছে, বোমার ভগ্নাংশের গায়ে লেখা এনএসএন নম্বরটি এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারের তৈরি এবং বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারই মার্কিন যুদ্ধ বিমানের সব অস্ত্র-বোমার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। ২০১২ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা মোয়াতানাকে বলেছেন, বিএলইউ-৬৩ বোমায় প্রায় ৬৩০টি ছোট ছোট বোমা থাকে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এরকম এক হাজার ক্লাস্টার বোমা দিয়েছিল সৌদি আরবকে। বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যারা ক্লাস্টার বোমার বিক্রি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে আনা নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। অপর দেশগুলো হচ্ছে: চীন, ইসরায়েল, ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও সৌদি আরব।
২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট হামলা চালানো হয় ইয়েমেনের দুইটি বাড়িতে। ইব প্রদেশের আল জাহার গভর্নোরেটে অবস্থিত। মোয়াতানার দেওয়া হিসেব মতে, ওই হামলায় আট জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন আরও ১২ জন। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের ছবি দেখে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভগ্নাংশটি একটি গাইডেন্স ইউনিটের পেছনের দিককার ডানা। কেজ নাম্বার ৭৮৩০১ থেকে সেটিকে সিমন্ডস মেশিনারির উৎপাদিত বলে চিহ্নিত করা গেছে। সানফ্রানসিসকোতে অবস্থিত সিমন্ডস বোমা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান না হলেও মোয়াতানার সঙ্গে কাজ করা গবেষকরা মনে করেন, সেটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত বোমারই অংশ বিশেষ।
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটের বিমান হামলার শিকার হয় সানা গভর্নোরেট। মোয়াতানার মতে ওই হামলায় দুইজন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বোমার ভগ্নাংশ থেকে জানা যায় এর বিস্তারিত। কেজ নম্বর নিশ্চিত করে এটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের তৈরি। ভগ্নাংশটি ছিল মূলত বোমার গতিপথ নিয়ন্ত্রণে যুক্ত ‘কন্ট্রোল একচুয়েটরের’। সেটি ২০১০ সালে প্রস্তুত করা।
২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারিতে ইয়েমেনর হোদেইদাহতে একটি কারখানায় বিমান হামলা চালানো হয়। কারখানাটিতে গাড়ির হাজার হাজার যন্ত্রাংশ মজুত করে রাখা হয়েছিল। ওই হামলায় কেউ প্রাণ না হারালেও প্রায় তিন দিন ধরে কারখানাটি আগুনে পুড়েছে। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানে জেনেছে, ঘটনাস্থলে থেকে সংগৃহীত বোমার ভগ্নাংশের গায়ে কেজ নম্বর হিসেবে লেখা ৯৬২১৪। এটিও রেথিওনের তৈরি। এটি বোমা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত যন্ত্রের অংশ।
২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয় ইয়েমেনের হাজ্জাহ প্রদেশের হাজার জেলার আল সার গ্রাম। ওই হামলায় একজন নিহত ও আট জন আহত হয়েছিলেন। সেখান থেকে পাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশের গায়ে লেখা এনএসএন নম্বর থেকে জানা যায়, সেটি এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারের তৈরি যা ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির ডিস্পেন্সারের গায়ে লেখা ছিল তার মডেল নম্বর: সিবিইউ-৫২/বি/বি।
২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের আল জফ গভর্নোরেটের আল মুতামা জেলায় সৌদি জোট বিমান হামলা চালায়। ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি গাড়ি। এক হামলাতেই একটি পরিবারের ১৫ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে ১২ জনই ছিল শিশু। একজন প্রত্যক্ষদর্শী মোয়াতানাকে জানিয়েছেন, বোমা হামলায় তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। দেহের রক্ত-মাংস গাছের সঙ্গে লেগেছিল। সংশ্লিষ্ট বোমার যে ভগ্নাংশটির ছবি পেয়েছে সিএনএন তাতে কেজ নম্বর লেখা ৯৬২১৪। এটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের।
দাহার জেলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় ব্যবহৃত বোমার যে খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে তাতে কেজ নম্বর লেখা ৯৬২১৪। এটিও রেথিওনের বানানো। ভগ্নাংশটি খুব সম্ভবত একটি এমকে-৮২ বোমায় ব্যবহৃত নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ডানা।
২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট মাছ ধরার নৌকায় আরেকটি হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা করে। হোদাইদাহতে চালানো ওই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল ক্লাস্টার বোমা। এর অবশেষে লেখা কেজ নম্বর ১৮৮৯৪ থেকে সিএনএন জানতে পারে, এই বোমাটিরও প্রস্ততুতকারক মার্কিন বিমান বাহিনীর এককালের অস্ত্র-বোমা সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টার, যা এয়ার ফোর্স ম্যাটেরিয়াল কমান্ডের অংশ ছিল। মোয়াতানার একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ভগ্নাংশটিতে লেখা ‘এএসএসওয়াই ৮৫৬২৮৩৭-৫’ দেখে জানিয়েছেন, এটি আঘাত হানার আগে বোমা থেকে বিযুক্ত হয়ে যায় এমন একটি যন্ত্রাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রর প্রস্তুত বিএলিউ-১০৮ ক্লাস্টার বোমার সঙ্গে যুক্ত চারটি সাবমিউনিশনের একটি।
সিএনএন সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিলের হামলার তথ্য তুলে ধরেছে। ওই দিন ছিল রবিবার। ইয়েমেনের হাজ্জা গভর্নোরেটের বনি কাইস জেলায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলাটি চালানো হয়েছিল। মোয়াতানার মতে, ওই হামলায় ২১ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে ছিল ১১টি শিশু। সৌদি জোটের ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন ৯৭ জন। আহতদের মধ্যে ছিল ৪৮ জন শিশু। ঘটনাস্থলে থেকে পাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশের যে ছবি পাওয়া গেছে তা দেখে মোয়াতানার অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সেটি ‘রিট্র্যাক্ট্র ম্যাকানিজমের’ একটি অংশ। এটিও জিবিইউ-১২ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত অপরাপর জিবিইউ ঘরানার ক্লাস্টার বোমায় ব্যবহৃত হয়। হুথি বিদ্রোহীদের সাংবাদমাধ্যম একই ঘটনায় ব্যবহৃত একটি বোমার খোলসের ছবি দেখিয়েছিল। তাতে কেজ নম্বর ছিল ৯৬২১৪। সেখান থেকে জানা যায়, এই বোমাটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের। বোমার ভগ্নাংশের পার্ট নম্বর থেকে জানা গেছে, সেটি জিবিইউ-১২ পেভওয়ে ২ গাইডেড বোমার অংশ।
সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্কের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাজন মেনন এশিয়া টাইমস সাময়িকীতে লেখা এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ যেন নরক থেকে উঠে এসেছে। বর্বর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অপর কিছু দেশ এবং উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে সমর্থন রয়েছে পেন্টাগন ও মার্কিন অস্ত্র ভাণ্ডারের। এতে সব সহিংসতাই দেখা গেছে। ডজনে ডজনে শিশুর মৃত্যু, সাধারণ নাগরিকদের বিষয়ে পরোয়াহীন অনিঃশেষ বিমান হামলা, দুর্ভিক্ষ, কলেরার মতো সবকিছু, যত কিছুর নাম আপনি মনে করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এই যুদ্ধ পাহাড় সমান সমালোচনার শিকার হয়েছে মার্কিন কংগ্রেস এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।’
https://muslimnewsworld.wordpress.co...6%86%e0%a6%ae/
ডেস্ক রিপোর্ট : ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে; কয়েক দিন আগে বৈশি^ক রাজনীতির রূপ পাল্টে দেওয়া সেই হামলার ১৭ বছর পূর্ণ হলো। ওই হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আঙুল তুলেছিল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের দিকে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ যুদ্ধের নামে তড়িঘড়ি করে একই বছর ৭ অক্টোবর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট আফগানিস্তানে আঘাত হানে। সেই সময় তালেবান সরকারের পতন ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আজ ১৭ বছর পর আমরা কী দেখছি? হিসেবের খাতায় দেখা যাচ্ছেÑতালেবান গোষ্ঠীর শক্তি কোথায় কমে যাওয়ার কথা কিন্তু উল্টো তাদের প্রভাব–প্রতিপত্তি বেড়ে গেছে। বেড়েছে হামলার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই। একই সঙ্গে কূটনীতিক দিক দিয়েও অনেকটা এগিয়েছে তালেবান।
এবার চোখ বুলানো যাক তথ্যচিত্রের দিকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি এক প্রতিবেদনে দিনে দিনে তালেবানের শক্তি বৃদ্ধির কিছু নমুনা তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, মার্কিন নথি অনুযায়ী ২০১৪ সালে তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। চার বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এক মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
জানান, তালেবানের শক্তি বেড়ে গোষ্ঠীটির সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬০ হাজারে। এই ৬০ হাজার সংখ্যাটি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে চার বছরে তালেবান যোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে ৪০ হাজার। প্রতি বছর বেড়েছে ১০ হাজার করে। আরেক মার্কিন কর্মকর্তার ভাষ্য, বর্তমানে তালেবান যোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কত তা নির্ধারণ করা বেশ জটিল। কেননা তালেবান যোদ্ধারা অনেক সময় সহযোগী সংগঠনের হয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়া তালেবানের অনেক সদস্য রয়েছে যারা ‘আদর্শিক সমর্থক’। তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও প্রকৃত তালেবান সদস্যরা আদর্শিক সমর্থকের সহায়তা নিয়ে হামলা পরিচালনা করে থাকে। এসব কারণে তালেবানের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলে থাকেন, তালেবান চক্করে পড়ে খেই হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গোষ্ঠীটির কর্মকা– যে দিন দিন বেড়ে চলেছে তা তাদের তৎপরতা থেকে সহজেই অনুমেয়। প্রায় প্রতিদিন আফগানিস্তানের কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে তালেবান। নিজেদের শক্তি প্রমাণে তালেবানরা যেসব হামলা চালায় সেগুলোর দায় স্বীকার করে থাকে তারা।
চলতি বছর সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিজস্ব অনুসন্ধান চালিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, আফগানিস্তানের ৭০% এলাকা তালেবান হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে উচ্চ ঝুঁকি, মধ্যম ও অল্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৫% এলাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার অথবা দুই সপ্তাহে একবার হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শতাংশ এলাকা মাসে অন্তত তিনবার হামলার ঘটনা ঘটে। আর কম ঝুঁকিপূর্ণ ৩১% এলাকায় প্রতি তিন মাসে একবার হামলার ঘটনা ঘটে থাকে। এদিকে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে এক নথিতে দেখা যায়, ২২৯টি জেলা আফগান সরকার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে অন্যদিকে ৫৯টি জেলা তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া ১১৯টি জেলার নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই, তালেবানের হাতেও নেই। এসব এলাকায় একেক সময় একেক গোষ্ঠী হানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
এক সময় মনে করা হতো, মোল্লা ওমর মারা গেলে তালেবানের শক্তি কমে আসবে। কিন্তু ওমরের পরবর্তী আমির মোল্লা আখতার মনসুরকে ২০১৬ সালে হত্যার পরও গোষ্ঠীটির সংঘ শক্তি কমেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আফগান দৃশ্যে হাজির হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সিরিয়া ও ইরাকে কোণঠাসা হওয়ার পর অনেক আইএস যোদ্ধা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে। ধারণা করা হয়, আফগানিস্তানে অন্তত ১০০০ হাজার আইএস রয়েছে। যদিও তালেবানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, আইএসের সঙ্গে তাদের বিস্তর মতপাথর্ক্য রয়েছে। এছাড়া হামলার লক্ষ্যবস্তুতে কিছু ফারাক রয়েছে। তালেবান সব সময় পশ্চিমা নিরাপত্তা বাহিনী ও আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনী, সরকারি স্থাপনার ওপর হামলা করে থাকে। তারা সাধারণত সাধারণ লোককে টার্গেট করে হামলা করে না। কিন্তু আইএস সাধারণ লোকের জমায়েতকে হামলার টার্গেট করে থাকে। এখন আইএসের চেয়ে যে তালেবানের শক্তি বেশি তা প্রমাণ করতেও তালেবানকে একের পর এক হামলা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সন্ত্রাস সমূলে নিমর্ূূলের উদ্দেশ্যে ন্যাটো বাহিনী আফগান যুদ্ধে অংশ নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৪ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। বর্তমানে কিছু সেনা থাকলেও তারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়ে আফগান বাহিনীকে সহায়তা করে থাকে। আফগান যুদ্ধে পশ্চিমা বাহিনীর অংশগ্রহণ কমেছে কিন্তু তালেবানের হামলা বেড়েছে। সোজা কথায় বললে, আফগান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া সরাসরি বলে থাকে, আফগান যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পরাজয় মেনে না নিলেও তারা যে যুদ্ধ আর দীর্ঘ করতে চায় না তা বেশ স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, তালেবানের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের খবরও বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ওই দিকে চীন–রাশিয়া তালেবান বিষয়ে নরম সুরে কথা বলে থাকে। কিছু সূত্রের দাবি, তালেবানকে অস্ত্র দিয়ে থাকে রাশিয়া। তাই বলতে হচ্ছে, যে তালেবানকে একদিন শেষ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র আজ সেই তালেবানের সঙ্গে এক টেবিলে বসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা হয়ত দেখব, তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেই আফগান যুদ্ধের ইতি টানতে হয়েছে।
সূত্র : আমাদের সময়
Muslim news world সম্পাদকের মন্তব্য– আল্লাহর দ্বীন অবশ্যই বিজয়ী হবে যদিও কাফিরদের কাছে তা খারাপ লাগে। পশ্চিমা মিডিয়া বিভিন্নভাবে ইসলামি জিহাদকে অপব্যাখ্যা করে এবং বিভিন্ন যোগ সংযোগের নাম করে মুসলিম মুজাহিদদেরকে অনুৎসাহিত করার চেষ্টা করে। মুসলিম ঐক্যে ফাটল ধরানোই এদের কাজ। এসব ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। এ সংবাদেও তার কিছু স্পর্শ আছে।
https://muslimnewsworld.wordpress.co...7%81%e0%a6%a6/
ইয়েমেনি রক্তে ‘মেইড ইন আমেরিকা’র মুনাফা
ইয়েমেনে গত মাসে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসী যুদ্ধের বলি হয়েছে এক স্কুলবাসে থাকা ৪০ শিশু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সে সময় তাদের এক অনুসন্ধানে জানিয়েছিল, বিমান থেকে ফেলা যে বোমায় ওই শিশুরা প্রাণ হারায়, তা বানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন। তবে সেটাই প্রথম নয়। ইয়েমেন যুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে মার্কিন অস্ত্র। সেই অস্ত্রের বলি হচ্ছেন বেসামরিক নাগরিকেরা। ইয়েমেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন মোয়াতানা সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্রের ব্যবহারের বিস্তারিত আলামত সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত সেই আলামতকে উপজীব্য করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হাজির করেছে ‘মেইড ইন আমেরিকা’ শিরোনামে। সরেজমিন অস্ত্র–বোমার আলামত সংগ্রহ না করলেও, সিএনএন দাবি করছে, মোতায়ানার সংগৃহীত আলামত (ছবির মেটাডাটা) আর সরকারি ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য থেকে হামলার ঘটনাগুলোতে কোন কোন মার্কিন প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র ও যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়েছে তা তারা নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞের মূল্যায়নও গ্রহণ করেছে ওই মার্কিন সংবাদমাধ্যম। তাদের প্রতিবেদনে ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট তাদের আগ্রাসনে কোন মাত্রায় মার্কিন অস্ত্র–সহায়তা পেয়েছে তার একটি চিত্র উঠে এসেছে সংগৃহীত তথ্য থেকে। মোতায়ানা মনে করছে, মুনাফার লোভে ইয়েমেনকে রক্তাক্ত করতেও ছাড়ছে না তারা। বিশ্লেষকরা তাই, ইয়েমেনের যুদ্ধ–বাস্তবতাকে সৌদি–আমেরিকান সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড আখ্যা দিচ্ছেন।
২০১৫ সালের প্রথমদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। এতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদি দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত আরেকটি শিয়া গোষ্ঠীর উত্থানের সম্ভাবনায় শঙ্কিত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও সাতটি আরব দেশ হাদিকে ফের ক্ষমতায় বসাতে তৎপর হয়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইয়েমেনের যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছে যাদের দুই-তৃতীয়াংশ বেসামরিক আর আহত হয়েছে আরও ৫৫ হাজার মানুষ। হতাহতদের অনেকেই বলি হয়েছেন মার্কিন অস্ত্রের, যার আলামত সংগ্রহ করেছে মোয়াতানা। ইয়েমেনভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংগঠনের পরিচয় দিতে গিয়ে সিএনএন লিখেছে, সংস্থাটি ইয়েমেনে সব পক্ষের বিধিভঙ্গের প্রমাণ সংগ্রহ করে। তারপর সেগুলো নিয়ে কথা বলে অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপের মধ্য দিয়ে অস্ত্রটির গতিপ্রকৃতি আর কোথায় তা তৈরি, তা জানা যায়। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ফার্স্ট’ মোয়াতানাকে তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কৃত করেছে।
ইয়েমেন যুদ্ধে বেসামরিকদের ওপর হওয়া হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দায়িত্ব নিতে চায় না। তাদের বক্তব্য, তারা হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে দেয় না। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলছে, কিন্তু শত কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে এবং সৌদি আরবের যুদ্ধবিমানকে জ্বালানি সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের পাশে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এমন কি কিছু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যও দিয়েও সহায়তা করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটকে। তবে সৌদি যুদ্ধ জোটের মুখপাত্র কর্নেল তুর্কি আল মালিকি সিএনএনকে বলেছেন, যুদ্ধ জোট সাধারণ মানুষের ওপর চালানো সব হামলার অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং ‘অভিযানে চালানো হামলা রুলস অব এনগেজমেন্ট মেনেই হয় যা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে।’ এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র কমান্ডার রেবেকা রেবারিখ মন্তব্য করেছেন, ‘যুদ্ধে কী ধরনের অভিযান চালানো হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যরা, যুক্তরাষ্ট্র নয়। তারপরও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হওয়ার সব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।’ তবে মোয়াতানার চেয়ারওম্যান রাদিয়া আল মুতাওয়াক্কেল সিএনএনকে বলেছেন, ‘সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আইনি ও নৈতিক দুই দিক থেকেই দায়ী। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই ইয়েমেন যুদ্ধ আরও বেশি খারাপ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে মুতাওয়াক্কেল সিএনএনকে বলেছেন, ‘একাধিকবার এবং একাধিক হামলাস্থলে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বোমার অবশেষ পাওয়া গেছে। এই যুদ্ধের কারণে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রই এই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছে। এটা লজ্জার বিষয়, নিরীহ মানুষের রক্তের চেয়ে মুনাফা তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।’
মোয়াতানার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিএনএন কিছু ঘটনার তথ্য তুলে ধরেছে যেসব ঘটনায় মার্কিন বোমা ব্যবহার করা হয়েছে নিরীহ সাধারণ ইয়েমেনিদের ওপর। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটের হামলায় নিহত হন একজন। আর আহত হন ছয় জন। ওই হামলাটি চালানো হয়েছিল একটি বাড়ির ওপর। গৃহকর্তা ছিলেন হাইফা আল জাওকারি। তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে ছিল একটি শিশু ও দুইজন নারী। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা বোমার ভগ্নাংশে পাওয়া ‘ন্যাশনাল স্টক নাম্বার’ (এনএসএন) এবং ‘পার্ট নম্বার’ জিবিইউ-১২ লেজার নিয়ন্ত্রিত বোমার সঙ্গে মিলে যায়, যার নির্মাতা রেথিওন। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি ওই বোমার ওজন ২৩০-৩৩০ কেজি এবং এতে ৮৭ কিলোগ্রাম এইচ-৬ বিস্ফোরক থাকে।
২০১৫ সালের ২৬ মে তারিখে হামলা চালানো হয় আহমেদ বাকরি স্কুলে। সেটি হোদাইদাহর আল তাহেতা এলাকায় অবস্থিত ছিল। মোয়াতানার মতে, ওই স্কুলে অন্তত দুইবার বিমান হামলা চালানো হয়। তবে এসব হামলায় হতাহতের বিষয়ে কোনও তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি মোয়াতানা। সিএনএন ঘটনাস্থলে বোমার যে ভগ্নাংশ পেয়েছে তাতে ‘কমার্শিয়াল অ্যান্ড গভর্নমেন্ট এনটিটি’ (কেজি) নম্বর লেখা রয়েছে 96214। এ থেকে জানা যায়, বোমাটি রেথিওনের তৈরি। বোমার ভগ্নাংশে যে ‘অ্যাডাপ্টার এএসএসওয়াই ফরওয়ার্ড’ লেখা তা থেকেই সিএনএন মনে করে, প্রায় ৪৫০ কেজি ওজনের এমকে-৮৩ বোমার নিয়ন্ত্রণে স্থাপিত কন্ট্রোলারের ভগ্নাংশের ছবি সংশ্লিষ্ট চিত্রটি।
২০১৫ সালের ১০ আগস্ট সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালায় হাজ্জাহ প্রদেশের হারাধ গ্রামে। সেখানে মাজেদ আলি নামক এক ২৮ বছর বয়সী কৃষকের বাড়িতে ফেলা হয়েছিল তিনটি ক্লাস্টার বোমা। মোয়াতানার দেওয়া তথ্য মতে, ওই হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিল ছয় শিশু ও তিন নারী। সংস্থাটি ঘটনাস্থলে সিবিইউ-৫৮এ/বি নামে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত ৪৩০ কেজি ওজনের একটি ক্লাস্টার বোমার ভগ্নাংশ খুঁজে পায়। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানে দেখেছে, বোমার ভগ্নাংশের গায়ে লেখা এনএসএন নম্বরটি এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারের তৈরি এবং বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারই মার্কিন যুদ্ধ বিমানের সব অস্ত্র-বোমার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। ২০১২ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা মোয়াতানাকে বলেছেন, বিএলইউ-৬৩ বোমায় প্রায় ৬৩০টি ছোট ছোট বোমা থাকে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এরকম এক হাজার ক্লাস্টার বোমা দিয়েছিল সৌদি আরবকে। বিশ্বের মাত্র সাতটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যারা ক্লাস্টার বোমার বিক্রি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে আনা নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবে সম্মত হয়নি। অপর দেশগুলো হচ্ছে: চীন, ইসরায়েল, ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও সৌদি আরব।
২০১৫ সালের ২৮ আগস্ট হামলা চালানো হয় ইয়েমেনের দুইটি বাড়িতে। ইব প্রদেশের আল জাহার গভর্নোরেটে অবস্থিত। মোয়াতানার দেওয়া হিসেব মতে, ওই হামলায় আট জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন আরও ১২ জন। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামতের ছবি দেখে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ভগ্নাংশটি একটি গাইডেন্স ইউনিটের পেছনের দিককার ডানা। কেজ নাম্বার ৭৮৩০১ থেকে সেটিকে সিমন্ডস মেশিনারির উৎপাদিত বলে চিহ্নিত করা গেছে। সানফ্রানসিসকোতে অবস্থিত সিমন্ডস বোমা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান না হলেও মোয়াতানার সঙ্গে কাজ করা গবেষকরা মনে করেন, সেটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত বোমারই অংশ বিশেষ।
২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ জোটের বিমান হামলার শিকার হয় সানা গভর্নোরেট। মোয়াতানার মতে ওই হামলায় দুইজন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বোমার ভগ্নাংশ থেকে জানা যায় এর বিস্তারিত। কেজ নম্বর নিশ্চিত করে এটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের তৈরি। ভগ্নাংশটি ছিল মূলত বোমার গতিপথ নিয়ন্ত্রণে যুক্ত ‘কন্ট্রোল একচুয়েটরের’। সেটি ২০১০ সালে প্রস্তুত করা।
২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারিতে ইয়েমেনর হোদেইদাহতে একটি কারখানায় বিমান হামলা চালানো হয়। কারখানাটিতে গাড়ির হাজার হাজার যন্ত্রাংশ মজুত করে রাখা হয়েছিল। ওই হামলায় কেউ প্রাণ না হারালেও প্রায় তিন দিন ধরে কারখানাটি আগুনে পুড়েছে। সিএনএন তাদের অনুসন্ধানে জেনেছে, ঘটনাস্থলে থেকে সংগৃহীত বোমার ভগ্নাংশের গায়ে কেজ নম্বর হিসেবে লেখা ৯৬২১৪। এটিও রেথিওনের তৈরি। এটি বোমা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত যন্ত্রের অংশ।
২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয় ইয়েমেনের হাজ্জাহ প্রদেশের হাজার জেলার আল সার গ্রাম। ওই হামলায় একজন নিহত ও আট জন আহত হয়েছিলেন। সেখান থেকে পাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ভগ্নাংশের গায়ে লেখা এনএসএন নম্বর থেকে জানা যায়, সেটি এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টারের তৈরি যা ২০১২ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটির ডিস্পেন্সারের গায়ে লেখা ছিল তার মডেল নম্বর: সিবিইউ-৫২/বি/বি।
২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইয়েমেনের আল জফ গভর্নোরেটের আল মুতামা জেলায় সৌদি জোট বিমান হামলা চালায়। ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি গাড়ি। এক হামলাতেই একটি পরিবারের ১৫ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে ১২ জনই ছিল শিশু। একজন প্রত্যক্ষদর্শী মোয়াতানাকে জানিয়েছেন, বোমা হামলায় তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। দেহের রক্ত-মাংস গাছের সঙ্গে লেগেছিল। সংশ্লিষ্ট বোমার যে ভগ্নাংশটির ছবি পেয়েছে সিএনএন তাতে কেজ নম্বর লেখা ৯৬২১৪। এটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের।
দাহার জেলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় ব্যবহৃত বোমার যে খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে তাতে কেজ নম্বর লেখা ৯৬২১৪। এটিও রেথিওনের বানানো। ভগ্নাংশটি খুব সম্ভবত একটি এমকে-৮২ বোমায় ব্যবহৃত নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ডানা।
২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট মাছ ধরার নৌকায় আরেকটি হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা করে। হোদাইদাহতে চালানো ওই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল ক্লাস্টার বোমা। এর অবশেষে লেখা কেজ নম্বর ১৮৮৯৪ থেকে সিএনএন জানতে পারে, এই বোমাটিরও প্রস্ততুতকারক মার্কিন বিমান বাহিনীর এককালের অস্ত্র-বোমা সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এয়ার আর্মামেন্ট সেন্টার, যা এয়ার ফোর্স ম্যাটেরিয়াল কমান্ডের অংশ ছিল। মোয়াতানার একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ভগ্নাংশটিতে লেখা ‘এএসএসওয়াই ৮৫৬২৮৩৭-৫’ দেখে জানিয়েছেন, এটি আঘাত হানার আগে বোমা থেকে বিযুক্ত হয়ে যায় এমন একটি যন্ত্রাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রর প্রস্তুত বিএলিউ-১০৮ ক্লাস্টার বোমার সঙ্গে যুক্ত চারটি সাবমিউনিশনের একটি।
সিএনএন সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিলের হামলার তথ্য তুলে ধরেছে। ওই দিন ছিল রবিবার। ইয়েমেনের হাজ্জা গভর্নোরেটের বনি কাইস জেলায় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলাটি চালানো হয়েছিল। মোয়াতানার মতে, ওই হামলায় ২১ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে ছিল ১১টি শিশু। সৌদি জোটের ওই হামলায় আহত হয়েছিলেন ৯৭ জন। আহতদের মধ্যে ছিল ৪৮ জন শিশু। ঘটনাস্থলে থেকে পাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশের যে ছবি পাওয়া গেছে তা দেখে মোয়াতানার অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সেটি ‘রিট্র্যাক্ট্র ম্যাকানিজমের’ একটি অংশ। এটিও জিবিইউ-১২ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত অপরাপর জিবিইউ ঘরানার ক্লাস্টার বোমায় ব্যবহৃত হয়। হুথি বিদ্রোহীদের সাংবাদমাধ্যম একই ঘটনায় ব্যবহৃত একটি বোমার খোলসের ছবি দেখিয়েছিল। তাতে কেজ নম্বর ছিল ৯৬২১৪। সেখান থেকে জানা যায়, এই বোমাটিও মার্কিন অস্ত্র নির্মাতা রেথিওনের। বোমার ভগ্নাংশের পার্ট নম্বর থেকে জানা গেছে, সেটি জিবিইউ-১২ পেভওয়ে ২ গাইডেড বোমার অংশ।
সিটি কলেজ অব নিউ ইয়র্কের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাজন মেনন এশিয়া টাইমস সাময়িকীতে লেখা এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘এ যুদ্ধ যেন নরক থেকে উঠে এসেছে। বর্বর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অপর কিছু দেশ এবং উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাতে সমর্থন রয়েছে পেন্টাগন ও মার্কিন অস্ত্র ভাণ্ডারের। এতে সব সহিংসতাই দেখা গেছে। ডজনে ডজনে শিশুর মৃত্যু, সাধারণ নাগরিকদের বিষয়ে পরোয়াহীন অনিঃশেষ বিমান হামলা, দুর্ভিক্ষ, কলেরার মতো সবকিছু, যত কিছুর নাম আপনি মনে করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এই যুদ্ধ পাহাড় সমান সমালোচনার শিকার হয়েছে মার্কিন কংগ্রেস এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।’
https://muslimnewsworld.wordpress.co...6%86%e0%a6%ae/
Comment