শাইখ কাসেম আর-রিমি রাহি. এর শাহাদাত উপলক্ষ্যে আল-কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখা “AQAP” এর বার্তা!
আল-কায়েদা অন্যতম আরব উপদ্বীপ শাখা “আনসারুশ শরিয়াহ্” (AQAP) এর অফিসিয়াল “আল-মালাহিম” মিডিয়া কর্তৃক গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এক অডিও বার্তায় শাইখ হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. “শাইখ কাসেম আর-রীমী” রহি. এর শাহাদাতের সংবাদ নিশ্চিত করেন।
শাইখ হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. দরুদ ও সালামের পর বলেন- আমরা আল কায়েদা আরব উপদ্বীপের পক্ষ থেকে পুরা উম্মতে মুসলিমাহকে এবং বিশেষ করে মুজাহিদীনদেরকে আমির কমান্ডার আবু হুরায়রা কাসেম আর-রিমি রহিমাহুল্লাহ এর শাহাদাতের সংবাদ দিচ্ছি। তিনি ছিলেন হিজরত, জিহাদ ও আত্মত্যাগের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগামী, যিনি আমেরিকার চালকবিহীন ড্রোনের বোমার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেছেন (ইনশাআল্লাহ্)।
এরপর শাইখ বলেন- জিহাদি জামাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার জোটের প্রচন্ড আক্রমণ, শত্রুর বিমানগুলো মুজাহিদদের উপর অনবরত হামলা এবং প্রতিটি ঘাঁটি থেকে আমাদের উপর শত্রুদের আক্রমণের মাঝেও জামায়াতে শুরা ও দায়িত্বশী নেতাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক থেকে মোশাওয়ারা গ্রহণ করার মাধ্যমে শাইখ খালেদ বাত্বারিফী হাফিজাহুল্লাহকে AQAP এর নতুন আমির নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকলে ঐক্যমত হয়েছেন। উনাকে শাইখ কাসিম আর-রিমি রাহিমাহুল্লাহ এর উত্তরসূরী হিসেবে মনোনিত করে বাইআহ সংঘঠিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
এরপর শাইখ উক্ত বার্তায় মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদদের লক্ষ্য করে বলেন, হে মুসলিম উম্মাহ! বর্তমান সময়ে আপনাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন আমীর আপনাদেরকে বিদায় জানিয়েছেন, যিনি ছিলেন আপনাদের মধ্যে মহান একজন ব্যক্তি। শাইখ রহিমাহুল্লাহ দুনিয়াতে জিহাদের পথে সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছেছিলেন এবং আখেরাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় অর্জন করেছেন আর তা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত, যেমনটা আমরা ধারণা করি।
যদিও উনার বিচ্ছেদ আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, অন্যদিকে উনি যা চেয়েছেন তা পেয়ে যাওয়াতে খুশি লাগছে, যা আমরা সবাই নিজেদের জন্য আশা করি এবং যা সত্যবাদী প্রত্যেক মুজাহিদ অর্জন করতে চায়। কারণ দুনিয়া হচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তু আর আল্লাহ তায়ালার কাছে উত্তম ব্যক্তিদের জন্য যা রয়েছে তা চিরস্থায়ী। তাই উনি যে মর্যাদা পেয়েছেন তার জন্য উনাকে সুসংবাদ দিচ্ছি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে তিনি জান্নাতবাসী সাথীদের সাথে মিলিত হতে পারেন এবং আমাদের সবাইকে যেন ভালো এবং হেদায়েতের উপর একত্রিত করেন। তিনি উত্তমভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন যেমন সম্মানের সাথে বেঁচে ছিলেন, আর যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু তো ছিল পূর্ববর্তিদের সম্মান।
হে আমাদের মুসলিম উম্মাহ! শাইখ কাসেম আর-রিমি রহিমাহুল্লাহ চলে গেলেন যখন উনার সময় চলে এসেছে। তিনি জীবনের শেষদিকে শুভ্র উজ্জ্বল সময় গুলোকে কাটিয়েছেন মহান ঘটনাবলীর, কঠিন আত্মত্যাগ ও আল্লাহ তায়ালা সাথে কৃত চুক্তির উপর অবিচলতা মধ্য দিয়ে।তিনি জীবনের অনেক দীর্ঘ সময় জিহাদ ও কুরবানীর ময়দানে কাটিয়েছেন ত্যাগ-তিতিক্ষা, কঠিন বিপদ ও অপদস্ততার উপর বিজয়ী এবং বিশাল দ্বায়িত্বের বোঝা বহন করে। জিহাদের এক সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্ত, এক প্রশিক্ষণ শিবির থেকে অন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে ছোটাছুটি করেছেন। প্রত্যেক স্থানেই উনার অবস্থান ছিল প্রতিষ্ঠাতা, উদ্বুদ্ধকারী ও অংশীদার হিসেবে। তিনি পূর্বসূরী সাথীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন, পথের তিক্ততা ও যুদ্ধের প্রচণ্ডতা মধ্য দিয়ে। ধৈর্য ও সবরের শহরে চাদর পরিধান করেছেন, কখনো পরিবর্তিত হননি বা বিচ্যুতও হননি। প্রতিটি ময়দানেই নিজের প্রাণকে হাতে নিয়ে ছুটছেন, যাতে উত্তম ভাবে রবের সাথে মিলিত হতে পারেন।
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ এমন অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন, যখন বিজয় ও সফলতার সূর্য উদিত হওয়ার নিকটবর্তী, যিনি পিছনে গভীর অন্ধকারের বিশাল কাল রাত্র ফেলে এসেছেন। এবং নিকটবর্তী বিজয়ের ইটগুলোর মাঝে শরিক হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজ কার্যক্রম, প্রোগ্রাম, আলোচনা, দিক-নির্দেশনা ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে দৃঢ় ছিলেন। শাইখ রহিমাহুল্লাহ শহিদ হয়েছেন এমন অবস্থায় যখন জিহাদের ময়দানের কিছু ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য যাচ্ছিলেন। তিনি সকল সন্দেহ থেকে পবিত্র অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন ও শাহাদাতের মৃত্যু লাভ করেছেন।
শাইখ রহিমাহুল্লাহ উম্মাহকে এমন অবস্থায় দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না, যখন তাদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হবে, অপদস্থ করা হবে এবং শত্রু তাদেরকে নিয়ে খেলা করবে, তার সম্মানকে বিনষ্ট করবে, তাদের সম্মানিত স্থান গুলোকে ধ্বংস করবে ও তাদের সম্ভ্রমকে ছিনিয়ে নিবে।
তিনি ছিলেন ১৯ শতকে আফগানিস্থানে জিহাদের জন্য হিজরত করা মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। সেখানেই তিনি প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কষ্টের সাথে আল-ফারুক্ব প্রশীক্ষন ক্যম্পে সাথীদের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এরপর বরকতময় 9/ll হামলার পর আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দৃঢ়তার সাথে অটল ছিলেন। পরে তিনি কিছু সাথীদের নিয়ে জাজিরাতুল আরব ফিরে আসেন এবং শাইখ আবু বাসীর রাহি. এর সাথে ইয়ামানে জিহাদের কাজকে গোছাতে শুরু করেন এবং আমেরিকান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি কুফফারদের কঠিন আক্রমণের মাঝেই সাথীদেরকে একত্রিত করতে থাকেন, এমনকি একসময় উনি গ্রেফতার হন এবং অনেক বছর জেলে পরীক্ষায় শিকার হন। এতে তিনি ভেংগে না পরে এটাকে পাহাড়সম ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করে নেন। যতক্ষননা এই জেলের দেয়াল উনার দৃঢ়তার সামনে ভেঙে পরে এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসায় তিনি অনেক সাথীসহ বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
অতঃপর তিনি আল-কায়েদার আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত সামরিক কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতেন আমেরিকা, সৌদি আরব ও ইয়ামমানী মুরতাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে, সেই সাথে ইয়ামানে ইরানের আনুগত্যশীল শিয়া হুথীদের বিরুদ্ধে। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধের অবস্থাগুলো পর্যবেক্ষন, শৃংখলাবদ্ধ ও পরিকল্পনা করে তা ইয়ামানী মুরতাদ ও শিরা হুথী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাহার করেছেন। সেই সাথে যুদ্ধের বিভিন্ন ময়দানের সামরিক কার্যক্রম ও আল-কায়েদার গোয়েন্দা বিভাগের দেখাশোনার কাজ করতেন, সাথে সাথে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কুফ্ফার বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমের প্রতিরোধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।
অনেকে তিনাকে শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ্ এর ডান হাত বলেও মনে করতেন। এসকল কারণে ক্রুসেডার আমেরিকার টার্গেটে পরিণত হন তিনি। তারা তাকে আক্রমণ করা ও শেষ করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তাদের যত চেষ্টা সম্ভব ছিল তা তারা করেছে। কিছুদিন পর পর সাধারণ মানুষকে দুনিয়ার বিভিন্ন লোভনীয় অফর দিয়ে শাইখকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যেও লিফলেট প্রচার করত ক্রুসেডার আমেরিকা। তবে আল্লাহ তায়ালা উনার সময়কে দীর্ঘ করে দিয়েছেন যাতে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন।
সর্বশেষ শাইখ- হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. শহিদ শাইখ কাসেম আর-রিমি রহ. প্রতি সালাম জানিয়ে বলেন-
হে আমাদের সম্মানিত শাইখ! আপনি ধৈর্য ধারণ করেছেন, কষ্ট পেয়েছেন এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করেছেন যেমনটা আমরা ধারণা করি। আমরা আশা রাখি আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। যদিও আপনার বিচ্ছেদ আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু এটা জেনে খুশি হন যে আমরা একই পথে অটল রয়েছি ও আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা থেকে সুসংবাদ গ্রহণ করছি এবং তার রহমতের জান্নাতের উত্তমন বাসস্থানে সবাই একত্রিত হব ইনশাআল্লাহ।
আপনি প্রশান্ত অন্তরে ঘুমিয়ে থাকুন, কেননা আপনি এমন কিছু ব্যক্তিকে রেখে গেছেন যারা আল্লাহর জন্য নিজেদেরকে বিক্রি করে দিয়েছে এবং এই পথে সবকিছুকে ত্যাগ করাকে সহজে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা আপনার অনুসৃত পথে কঠিন বিপদ ও মুসিবতের মধ্যে দৃঢ়-অটল রয়েছেন। তাদের রয়েছে এমন উঁচু হিম্মত যা বিপদের পাহাড়কেও রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলে এবং এমন অন্তর আল্লাহ তাআলার সুসংবাদের ওয়াদাতে প্রশান্ত। তাদের রয়েছে এমন আত্মমর্যাদা যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে ঝুকে না। এই বিষয়েই আমরা আপনার সাথে শপথ করেছি আর এমনই ভাবেই আপনার সাথীরা দ্বীনের অটল রয়েছে।
যেহেতু আমাদের আমির, নেতা ও কমান্ডারদের শাহাদাত হক্ব পথের আবশ্যকীয় বিষয় এবং এই মুবারক পথের আলোকবর্তিকা। কেননা এটা হচ্ছে এমন যুদ্ধ যেখানে আমাদের আমির ও ইমামগণ অধিক অগ্রসর হয়ে থাকেন। তাই শাইখের শাহাদাত বিজয়ের পথ চলায় আমাদেরকে প্রভাবিত করবে না। আল্লাহ তাআলার উপর উত্তম ধারণায় পরিবর্তন আসবে না এবং ভবিষ্যত বিজয়ের সুসংবাদে হতাশ হবো না।
সেই সাথে আমীরের মৃত্যু আমাদের মনোবলকে ভেঙ্গে দিবে না, আমাদেরকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত করবে না, আমাদের সাথীদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করবে না। কেননা আমরা আমাদের সব বিষয়কে আল্লাহ তায়ালার উপর ন্যস্ত করে দিয়েছি। তিনি হচ্ছেন আমাদের সাহায্যকারী অভিভাবক। যে তার কাছে নিজেকে সপে দেয়া তিনি তার জন্য যথেষ্ট, তিনি কখনোই তার বন্ধুদেরকে ছেড়ে দেন না।
সুতরাং আমাদের দ্বীন ও জিহাদ কোন সাহায্যকারী বা ব্যক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত বা সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর সাহায্যে শক্তিশালী। পূর্বেও যেমন আল্লাহ তা’আলা ইসলামকে সাহায্য করেছেন ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও সাহায্য করবেন, আমাদের রবের ব্যাপারে আমাদের এমনই ধারণা এবং এমনভাবে আমরা আল্লাহ তায়ালার ওয়াদাকে গ্রহণ করেছি।
পূর্ণ বার্তাটি বাংলায় পড়ুন: ডাউনলোড লিংক (৭৭৮ কেবি)
অনুবাদক: ত্বহা আলী আদনান,প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/26/33621/
আল-কায়েদা অন্যতম আরব উপদ্বীপ শাখা “আনসারুশ শরিয়াহ্” (AQAP) এর অফিসিয়াল “আল-মালাহিম” মিডিয়া কর্তৃক গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ১৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এক অডিও বার্তায় শাইখ হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. “শাইখ কাসেম আর-রীমী” রহি. এর শাহাদাতের সংবাদ নিশ্চিত করেন।
শাইখ হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. দরুদ ও সালামের পর বলেন- আমরা আল কায়েদা আরব উপদ্বীপের পক্ষ থেকে পুরা উম্মতে মুসলিমাহকে এবং বিশেষ করে মুজাহিদীনদেরকে আমির কমান্ডার আবু হুরায়রা কাসেম আর-রিমি রহিমাহুল্লাহ এর শাহাদাতের সংবাদ দিচ্ছি। তিনি ছিলেন হিজরত, জিহাদ ও আত্মত্যাগের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগামী, যিনি আমেরিকার চালকবিহীন ড্রোনের বোমার আঘাতে শাহাদাত বরণ করেছেন (ইনশাআল্লাহ্)।
এরপর শাইখ বলেন- জিহাদি জামাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার জোটের প্রচন্ড আক্রমণ, শত্রুর বিমানগুলো মুজাহিদদের উপর অনবরত হামলা এবং প্রতিটি ঘাঁটি থেকে আমাদের উপর শত্রুদের আক্রমণের মাঝেও জামায়াতে শুরা ও দায়িত্বশী নেতাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক থেকে মোশাওয়ারা গ্রহণ করার মাধ্যমে শাইখ খালেদ বাত্বারিফী হাফিজাহুল্লাহকে AQAP এর নতুন আমির নির্ধারণের ক্ষেত্রে সকলে ঐক্যমত হয়েছেন। উনাকে শাইখ কাসিম আর-রিমি রাহিমাহুল্লাহ এর উত্তরসূরী হিসেবে মনোনিত করে বাইআহ সংঘঠিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
এরপর শাইখ উক্ত বার্তায় মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদদের লক্ষ্য করে বলেন, হে মুসলিম উম্মাহ! বর্তমান সময়ে আপনাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন আমীর আপনাদেরকে বিদায় জানিয়েছেন, যিনি ছিলেন আপনাদের মধ্যে মহান একজন ব্যক্তি। শাইখ রহিমাহুল্লাহ দুনিয়াতে জিহাদের পথে সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছেছিলেন এবং আখেরাতের সর্বোচ্চ মর্যাদায় অর্জন করেছেন আর তা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত, যেমনটা আমরা ধারণা করি।
যদিও উনার বিচ্ছেদ আমাদের কষ্ট দিচ্ছে, অন্যদিকে উনি যা চেয়েছেন তা পেয়ে যাওয়াতে খুশি লাগছে, যা আমরা সবাই নিজেদের জন্য আশা করি এবং যা সত্যবাদী প্রত্যেক মুজাহিদ অর্জন করতে চায়। কারণ দুনিয়া হচ্ছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বস্তু আর আল্লাহ তায়ালার কাছে উত্তম ব্যক্তিদের জন্য যা রয়েছে তা চিরস্থায়ী। তাই উনি যে মর্যাদা পেয়েছেন তার জন্য উনাকে সুসংবাদ দিচ্ছি। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি, যাতে তিনি জান্নাতবাসী সাথীদের সাথে মিলিত হতে পারেন এবং আমাদের সবাইকে যেন ভালো এবং হেদায়েতের উপর একত্রিত করেন। তিনি উত্তমভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন যেমন সম্মানের সাথে বেঁচে ছিলেন, আর যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যু তো ছিল পূর্ববর্তিদের সম্মান।
হে আমাদের মুসলিম উম্মাহ! শাইখ কাসেম আর-রিমি রহিমাহুল্লাহ চলে গেলেন যখন উনার সময় চলে এসেছে। তিনি জীবনের শেষদিকে শুভ্র উজ্জ্বল সময় গুলোকে কাটিয়েছেন মহান ঘটনাবলীর, কঠিন আত্মত্যাগ ও আল্লাহ তায়ালা সাথে কৃত চুক্তির উপর অবিচলতা মধ্য দিয়ে।তিনি জীবনের অনেক দীর্ঘ সময় জিহাদ ও কুরবানীর ময়দানে কাটিয়েছেন ত্যাগ-তিতিক্ষা, কঠিন বিপদ ও অপদস্ততার উপর বিজয়ী এবং বিশাল দ্বায়িত্বের বোঝা বহন করে। জিহাদের এক সীমান্ত থেকে অন্য সীমান্ত, এক প্রশিক্ষণ শিবির থেকে অন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে ছোটাছুটি করেছেন। প্রত্যেক স্থানেই উনার অবস্থান ছিল প্রতিষ্ঠাতা, উদ্বুদ্ধকারী ও অংশীদার হিসেবে। তিনি পূর্বসূরী সাথীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন, পথের তিক্ততা ও যুদ্ধের প্রচণ্ডতা মধ্য দিয়ে। ধৈর্য ও সবরের শহরে চাদর পরিধান করেছেন, কখনো পরিবর্তিত হননি বা বিচ্যুতও হননি। প্রতিটি ময়দানেই নিজের প্রাণকে হাতে নিয়ে ছুটছেন, যাতে উত্তম ভাবে রবের সাথে মিলিত হতে পারেন।
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ এমন অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন, যখন বিজয় ও সফলতার সূর্য উদিত হওয়ার নিকটবর্তী, যিনি পিছনে গভীর অন্ধকারের বিশাল কাল রাত্র ফেলে এসেছেন। এবং নিকটবর্তী বিজয়ের ইটগুলোর মাঝে শরিক হওয়া পর্যন্ত তিনি নিজ কার্যক্রম, প্রোগ্রাম, আলোচনা, দিক-নির্দেশনা ইত্যাদি বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে দৃঢ় ছিলেন। শাইখ রহিমাহুল্লাহ শহিদ হয়েছেন এমন অবস্থায় যখন জিহাদের ময়দানের কিছু ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য যাচ্ছিলেন। তিনি সকল সন্দেহ থেকে পবিত্র অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন ও শাহাদাতের মৃত্যু লাভ করেছেন।
শাইখ রহিমাহুল্লাহ উম্মাহকে এমন অবস্থায় দেখতে প্রস্তুত ছিলেন না, যখন তাদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হবে, অপদস্থ করা হবে এবং শত্রু তাদেরকে নিয়ে খেলা করবে, তার সম্মানকে বিনষ্ট করবে, তাদের সম্মানিত স্থান গুলোকে ধ্বংস করবে ও তাদের সম্ভ্রমকে ছিনিয়ে নিবে।
তিনি ছিলেন ১৯ শতকে আফগানিস্থানে জিহাদের জন্য হিজরত করা মুহাজিরদের অন্তর্ভুক্ত। সেখানেই তিনি প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কষ্টের সাথে আল-ফারুক্ব প্রশীক্ষন ক্যম্পে সাথীদের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এরপর বরকতময় 9/ll হামলার পর আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং দৃঢ়তার সাথে অটল ছিলেন। পরে তিনি কিছু সাথীদের নিয়ে জাজিরাতুল আরব ফিরে আসেন এবং শাইখ আবু বাসীর রাহি. এর সাথে ইয়ামানে জিহাদের কাজকে গোছাতে শুরু করেন এবং আমেরিকান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি কুফফারদের কঠিন আক্রমণের মাঝেই সাথীদেরকে একত্রিত করতে থাকেন, এমনকি একসময় উনি গ্রেফতার হন এবং অনেক বছর জেলে পরীক্ষায় শিকার হন। এতে তিনি ভেংগে না পরে এটাকে পাহাড়সম ধৈর্যের সাথে গ্রহণ করে নেন। যতক্ষননা এই জেলের দেয়াল উনার দৃঢ়তার সামনে ভেঙে পরে এবং আল্লাহ তাআলার প্রশংসায় তিনি অনেক সাথীসহ বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।
অতঃপর তিনি আল-কায়েদার আভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত সামরিক কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতেন আমেরিকা, সৌদি আরব ও ইয়ামমানী মুরতাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে, সেই সাথে ইয়ামানে ইরানের আনুগত্যশীল শিয়া হুথীদের বিরুদ্ধে। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের যুদ্ধের অবস্থাগুলো পর্যবেক্ষন, শৃংখলাবদ্ধ ও পরিকল্পনা করে তা ইয়ামানী মুরতাদ ও শিরা হুথী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাহার করেছেন। সেই সাথে যুদ্ধের বিভিন্ন ময়দানের সামরিক কার্যক্রম ও আল-কায়েদার গোয়েন্দা বিভাগের দেখাশোনার কাজ করতেন, সাথে সাথে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কুফ্ফার বাহিনীর গোয়েন্দা কার্যক্রমের প্রতিরোধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।
অনেকে তিনাকে শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ্ এর ডান হাত বলেও মনে করতেন। এসকল কারণে ক্রুসেডার আমেরিকার টার্গেটে পরিণত হন তিনি। তারা তাকে আক্রমণ করা ও শেষ করে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তাদের যত চেষ্টা সম্ভব ছিল তা তারা করেছে। কিছুদিন পর পর সাধারণ মানুষকে দুনিয়ার বিভিন্ন লোভনীয় অফর দিয়ে শাইখকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্যেও লিফলেট প্রচার করত ক্রুসেডার আমেরিকা। তবে আল্লাহ তায়ালা উনার সময়কে দীর্ঘ করে দিয়েছেন যাতে তাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পারেন।
সর্বশেষ শাইখ- হামাদ বিন হামুদ আত-তামীমী হাফি. শহিদ শাইখ কাসেম আর-রিমি রহ. প্রতি সালাম জানিয়ে বলেন-
হে আমাদের সম্মানিত শাইখ! আপনি ধৈর্য ধারণ করেছেন, কষ্ট পেয়েছেন এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করেছেন যেমনটা আমরা ধারণা করি। আমরা আশা রাখি আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। যদিও আপনার বিচ্ছেদ আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু এটা জেনে খুশি হন যে আমরা একই পথে অটল রয়েছি ও আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা থেকে সুসংবাদ গ্রহণ করছি এবং তার রহমতের জান্নাতের উত্তমন বাসস্থানে সবাই একত্রিত হব ইনশাআল্লাহ।
আপনি প্রশান্ত অন্তরে ঘুমিয়ে থাকুন, কেননা আপনি এমন কিছু ব্যক্তিকে রেখে গেছেন যারা আল্লাহর জন্য নিজেদেরকে বিক্রি করে দিয়েছে এবং এই পথে সবকিছুকে ত্যাগ করাকে সহজে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা আপনার অনুসৃত পথে কঠিন বিপদ ও মুসিবতের মধ্যে দৃঢ়-অটল রয়েছেন। তাদের রয়েছে এমন উঁচু হিম্মত যা বিপদের পাহাড়কেও রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলে এবং এমন অন্তর আল্লাহ তাআলার সুসংবাদের ওয়াদাতে প্রশান্ত। তাদের রয়েছে এমন আত্মমর্যাদা যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে ঝুকে না। এই বিষয়েই আমরা আপনার সাথে শপথ করেছি আর এমনই ভাবেই আপনার সাথীরা দ্বীনের অটল রয়েছে।
যেহেতু আমাদের আমির, নেতা ও কমান্ডারদের শাহাদাত হক্ব পথের আবশ্যকীয় বিষয় এবং এই মুবারক পথের আলোকবর্তিকা। কেননা এটা হচ্ছে এমন যুদ্ধ যেখানে আমাদের আমির ও ইমামগণ অধিক অগ্রসর হয়ে থাকেন। তাই শাইখের শাহাদাত বিজয়ের পথ চলায় আমাদেরকে প্রভাবিত করবে না। আল্লাহ তাআলার উপর উত্তম ধারণায় পরিবর্তন আসবে না এবং ভবিষ্যত বিজয়ের সুসংবাদে হতাশ হবো না।
সেই সাথে আমীরের মৃত্যু আমাদের মনোবলকে ভেঙ্গে দিবে না, আমাদেরকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত করবে না, আমাদের সাথীদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করবে না। কেননা আমরা আমাদের সব বিষয়কে আল্লাহ তায়ালার উপর ন্যস্ত করে দিয়েছি। তিনি হচ্ছেন আমাদের সাহায্যকারী অভিভাবক। যে তার কাছে নিজেকে সপে দেয়া তিনি তার জন্য যথেষ্ট, তিনি কখনোই তার বন্ধুদেরকে ছেড়ে দেন না।
সুতরাং আমাদের দ্বীন ও জিহাদ কোন সাহায্যকারী বা ব্যক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত বা সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের দ্বীন হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর সাহায্যে শক্তিশালী। পূর্বেও যেমন আল্লাহ তা’আলা ইসলামকে সাহায্য করেছেন ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও সাহায্য করবেন, আমাদের রবের ব্যাপারে আমাদের এমনই ধারণা এবং এমনভাবে আমরা আল্লাহ তায়ালার ওয়াদাকে গ্রহণ করেছি।
পূর্ণ বার্তাটি বাংলায় পড়ুন: ডাউনলোড লিংক (৭৭৮ কেবি)
অনুবাদক: ত্বহা আলী আদনান,প্রতিবেদক আল-ফিরদাউস নিউজ
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/02/26/33621/
Comment