মালি || সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের নতুন কবরস্তান
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে দিন দিন ক্রুসেডারদের জন্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদা। অঞ্চলটিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ‘জেএনআইএম’ এর বীর মুজাহিদদের একের পর এক বীরত্বপূর্ণ সফল অভিযানের ফলে লাঞ্ছনাকর পরাজয়ের শিকার হচ্ছে পশ্চিমা ক্রুসেডার জোট বাহিনীগুলো। ফলে ধীরে ধীরে মালি ছাড়তে শুরু করেছে ক্রুসেডার জোটের অংশীদার দেশগুলো।
পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর মতো মালিও ১৯ শতকে ঔপনিবেশিক জাতি ফ্রান্স-এর উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। এই দখলদারিত্ব ২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জারি ছিল। তবে এরপর ১৯৬০ সালে দেশটি নামেমাত্র স্বাধীনতা লাভ করে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ফ্রান্স তখনও স্বাধীনতা ঘোষণাকারী আফ্রিকান দেশগুলির উপর তাদের ঔপনিবেশিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। ১৯৬০ সালের পর সামরিক অভ্যুত্থান এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ফ্রান্স অনেকগুলো দেশ ছেড়ে গেলেও, মালিতে ফরাসিদের প্রভাব কখনই হ্রাস পায়নি।
এরপর ১৯৯০-এর দশকে মালিতে ‘কথিত গণতান্ত্রিক পরিবেশে’ উত্তরণের সময়েও ফ্রান্স ‘পর্দার আড়ালে’ মালিকে শাসন করতে থাকে।
ফলে সেসময় থেকেই দেশটিতে দখলদার ফ্রান্সের গোলাম সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং পরবর্তিতে যুদ্ধ করতে থাকেন দেশটির সচেতন তাওহিদবাদী মুসলিম জনগণ। আর ২০১১ সালের শেষের দিকে মালিতে জিহাদি কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। পরে, অল্প সময়ের মধ্যেই মুজাহিদ গ্রুপগুলো দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েনেন। এবং রাজধানী বামাকোর কাছে পৌঁছে যান তাঁরা। দেশটিতে দিন দিন মুজাহিদদের শক্তি ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেতে থাকলে, ফ্রান্স ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারী মালির বিরুদ্ধে তার সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে অন্যান্য সম্মিলিত ক্রুসেডার ও আঞ্চলিক জোটগুলোও এই যুদ্ধে জড়ায়।
তবে কয়েক বছরের মাথায় ক্রুসেডারদের এই সম্মিলিত জোটগুলো অকার্যকর প্রমাণীত হতে শুরু করে।
এই যুদ্ধে ক্রসেডারদের প্রথম দিকের কিছু অভিযান এবং বিমান হামলার ফলে মুজাহিদগণ সাময়িকভাবে পিছু হটেন এবং উচ্চপদস্থ আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়া মালিতে ক্রুসেডারদের এই যুদ্ধ পুরোপুরিভাবে ব্যর্থতাররূপ নেয়। কেননা, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই আবারো ঘুরে দাঁড়ায়। তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন উদ্যমে ক্রুসেডার জোট ও স্থানীয় গাদ্দার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁরা পূণরায় মালির বিস্তীর্ণ ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন। বিশেষ করে সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকাগুলো প্রথম পর্বের অভিযানগুলোতেই দখলে নেন মুজাহিদগণ। এরপর তাঁরা শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলো দখলে নিতে শুরু করেন। আর বর্তমানে তো মুজাহিদগণ শহুরে অঞ্চলগুলোতেও হামলার মাত্রা বৃদ্ধি করেছেন এবং সুযোগ মতো সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন।
মালিতে মুজাহিদদের এই বিজয় অভিযান দেখে আনেক পশ্চিমা সাংবাদিকরা মন্তব্য করে বলেন যে, “ফ্রান্স মালিতে ভুতুড়ে যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করছে।” অনেক সংবাদিক তো মালিতে ফ্রান্সের এই যুদ্ধকে আফগান জিহাদের সাথে তুলনা করে বলেন “মালি ফ্রান্সের জন্য আফগানিস্তানে পরিণত হয়েছে।”
যাইহোক, এই যুদ্ধে ক্রুসেডার ফ্রান্স ও তাদের স্থানীয় গোলামরা মুজাহিদদের কাছে পুরোপুরি ভাবে পরাজিত হয়েছে। ফলে বর্তমানে ক্রুসেডার জোটের শরীক দেশগুলো ঘোষণা দিয়ে এক এক করে মালি ছাড়তে শুরু করেছে।
এবার সেই সূত্র ধরেই মালি থেকে সম্পূর্ণরূপে পালাতে যাচ্ছে ইউরোপীয় দু’টি ক্রুসেডার জোট বাহিনী। যারা ক্রুসেডার ফ্রান্সের নেতৃত্বে মালিতে বোরখান এবং তাকুবা মিশনের অধীনে কাজ করছে।
রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই) দ্বারা প্রচারিত ফরাসি কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুসারে, ক্রুসেডার ফরাসি প্রশাসন মালি থেকে সরে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
এবিষয়ে ফ্রান্সের দাবি হচ্ছে, আমাদের শর্ত পূরণ না হলে আমরা মালিতে থাকব না। শর্তের বিষয়গুলো উল্লেখ না করে ঐ কর্মকর্তা তার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি সংক্ষিপ্ত করেছে। যার ফলে এটি এখনো জানা সম্ভব হয়নি যে, ফান্স কি ধরণের শর্তের কথা বলছে। নাকি এটি কেবলই মালি থেকে পালানোর অজুহাত!
সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে, ক্রুসেডার ফ্রান্স আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পরে অনুমান করা হচ্ছে যে, ইউরোপীয় ক্রুসেডার শক্তিগুলি প্রতিবেশী দেশগুলি প্রধানত বুর্কিনা ফাঁসো ও নাইজার থেকেও তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। মালির প্রতিবেশি এই দেশ দু’টিতেও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে আল-কায়েদা।
বিশ্লেসকরা মনে করেন, ক্রুসেডার দেশগুলো চাচ্ছে না যে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা মালির মত প্রতিবেশি দেশগুলোতেও শক্তিশালী হয়ে উঠুক। যদি প্রতিবেশি এই দু’টি দেশেও আল-কায়েদা শক্তিশালী হয়ে উঠে, তাহলে পশ্চিমারা আল-কায়েদার বিজয় অভিযান রুখতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে পড়বে। সেই সাথে তারা সম্পূর্ণ পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যা ভবিষ্যতে ইউরোপীয় দেশগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে পরিণত হবে। কেননা আল-কায়েদা কখনোই কেবল মাত্র আফ্রিকার সীমান্ত নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না। তাঁরা মুসলিমদের হারানো গৌরবময় ভূমি স্পেন বিজয় ও ইউরোপে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকবেন।
আমরা যদি বর্তমানে মালিতে আল-কায়েদার শক্তি বৃদ্ধির ফলে প্রতিবেশি দেশগুলোতে এর প্রভাব বিস্তার নিয়ে সামান্য কিছু আলোকপাত করি, তাহলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মালি পশ্চিম আফ্রিকার সবচাইতে বিস্তৃত সীমান্তের অধিকারী একটি দেশ। দেশটির সীমান্ত জুড়ে ৭টি দেশের অবস্থান। যার ৫ টিতেই সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট মুজাহিদগণ। দেশগুলো হচ্ছে: নাইজার, বুর্কিনা ফাঁসো, আইভরি কোষ্ট, গিনি ও সেনেগাল। অপরদিকে মৌরতানিয়া ও আলজেরিয়ায় কয়েক বছর পূর্বে অভিযান চালালেও বর্তমানে দেশ দু’টিতে কৌশলগত নিরবতা পালন করতে দেখা যাচ্ছে আল-কায়েদার বিজ্ঞ নেতৃত্বকে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর কারণ হতে পারে আল-কায়েদা এই দু’টি রাষ্ট্রকে নিজেদের সাপোর্টিং রাষ্ট্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। কেননা বর্তমানে জেএনআইএম এর শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ দায়িত্বশীল উমারাগণই আলজেরিয়া কিংবা মৌরতানিয়ার নাগরিক। সেই সাথে দলটির বেশিরভাগ বিদেশি যোদ্ধাই এ দু’টি দেশ থেকে আগত।
অপরদিকে মালির প্রতিবেশি দেশ বুর্কিনা ফাঁসো ও নাইজারেও এখন দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছেন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাগণ। এখানেও সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আল-কায়েদার। ফলে বর্তমানে এই দেশ দু’টি থেকেও মুজাহিদগণ প্রতিবেশি অন্য ৪টি দেশে হামলা চালাচ্ছেন। দেশগুলো হচ্ছে: বেনিন, টগো, ঘানা ও নাইজেরিয়া। এরমধ্যে আবার নাইজেরিয়ায় মুজাহিদগণ এখন অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মালিতে অবস্থিত জেএনআইএম যোদ্ধারা নাইজেরিয়ার সাথে স্থল পথে সরাসরি সংযুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লক্ষে তাঁরা অত্যন্ত কৌশলে তাদের শরিয়াহ-শাসিত ভূমি সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ্। যদি তাঁরা এই কাজে ইনশাআল্লাহ্ সফল হন, তবে নাইজেরিয়ার আনসারু মধ্য আফ্রিকা থেকে শুরু করে পূর্ব আফ্রিকার সীমান্ত পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। আর পূর্ব আফ্রিকার সীমান্তে পৌঁছা মানে হারাকাতুশ শাবাবের সাথে মজবুত এক রোড-লাইন তৈরি হওয়া। তখন পুরো আফ্রিকা মহাদেশের পরিস্থিতিই হয়ে উঠবে ভিন্নতর, পশ্চিমা ক্রুসেদার ও জায়নবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তখন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ইনশাআল্লাহ্। আল-কায়েদা যোদ্ধারা তখন হয়ে উঠবেন আরও অপ্রতিরোধ্য। তাঁরা হয়ে উঠবেন যুগশ্রেষ্ঠ একটি সামরিক বাহিনী।
লিখেছেন : ত্বহা আলী আদনান
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে দিন দিন ক্রুসেডারদের জন্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদা। অঞ্চলটিতে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ‘জেএনআইএম’ এর বীর মুজাহিদদের একের পর এক বীরত্বপূর্ণ সফল অভিযানের ফলে লাঞ্ছনাকর পরাজয়ের শিকার হচ্ছে পশ্চিমা ক্রুসেডার জোট বাহিনীগুলো। ফলে ধীরে ধীরে মালি ছাড়তে শুরু করেছে ক্রুসেডার জোটের অংশীদার দেশগুলো।
পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য দেশগুলোর মতো মালিও ১৯ শতকে ঔপনিবেশিক জাতি ফ্রান্স-এর উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। এই দখলদারিত্ব ২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জারি ছিল। তবে এরপর ১৯৬০ সালে দেশটি নামেমাত্র স্বাধীনতা লাভ করে। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ফ্রান্স তখনও স্বাধীনতা ঘোষণাকারী আফ্রিকান দেশগুলির উপর তাদের ঔপনিবেশিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। ১৯৬০ সালের পর সামরিক অভ্যুত্থান এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ফ্রান্স অনেকগুলো দেশ ছেড়ে গেলেও, মালিতে ফরাসিদের প্রভাব কখনই হ্রাস পায়নি।
এরপর ১৯৯০-এর দশকে মালিতে ‘কথিত গণতান্ত্রিক পরিবেশে’ উত্তরণের সময়েও ফ্রান্স ‘পর্দার আড়ালে’ মালিকে শাসন করতে থাকে।
ফলে সেসময় থেকেই দেশটিতে দখলদার ফ্রান্সের গোলাম সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং পরবর্তিতে যুদ্ধ করতে থাকেন দেশটির সচেতন তাওহিদবাদী মুসলিম জনগণ। আর ২০১১ সালের শেষের দিকে মালিতে জিহাদি কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। পরে, অল্প সময়ের মধ্যেই মুজাহিদ গ্রুপগুলো দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েনেন। এবং রাজধানী বামাকোর কাছে পৌঁছে যান তাঁরা। দেশটিতে দিন দিন মুজাহিদদের শক্তি ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেতে থাকলে, ফ্রান্স ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারী মালির বিরুদ্ধে তার সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর ফ্রান্সের সাথে অন্যান্য সম্মিলিত ক্রুসেডার ও আঞ্চলিক জোটগুলোও এই যুদ্ধে জড়ায়।
তবে কয়েক বছরের মাথায় ক্রুসেডারদের এই সম্মিলিত জোটগুলো অকার্যকর প্রমাণীত হতে শুরু করে।
এই যুদ্ধে ক্রসেডারদের প্রথম দিকের কিছু অভিযান এবং বিমান হামলার ফলে মুজাহিদগণ সাময়িকভাবে পিছু হটেন এবং উচ্চপদস্থ আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি শাহাদাত বরণ করেন। এছাড়া মালিতে ক্রুসেডারদের এই যুদ্ধ পুরোপুরিভাবে ব্যর্থতাররূপ নেয়। কেননা, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই আবারো ঘুরে দাঁড়ায়। তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন উদ্যমে ক্রুসেডার জোট ও স্থানীয় গাদ্দার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁরা পূণরায় মালির বিস্তীর্ণ ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন। বিশেষ করে সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকাগুলো প্রথম পর্বের অভিযানগুলোতেই দখলে নেন মুজাহিদগণ। এরপর তাঁরা শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলো দখলে নিতে শুরু করেন। আর বর্তমানে তো মুজাহিদগণ শহুরে অঞ্চলগুলোতেও হামলার মাত্রা বৃদ্ধি করেছেন এবং সুযোগ মতো সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন।
মালিতে মুজাহিদদের এই বিজয় অভিযান দেখে আনেক পশ্চিমা সাংবাদিকরা মন্তব্য করে বলেন যে, “ফ্রান্স মালিতে ভুতুড়ে যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করছে।” অনেক সংবাদিক তো মালিতে ফ্রান্সের এই যুদ্ধকে আফগান জিহাদের সাথে তুলনা করে বলেন “মালি ফ্রান্সের জন্য আফগানিস্তানে পরিণত হয়েছে।”
যাইহোক, এই যুদ্ধে ক্রুসেডার ফ্রান্স ও তাদের স্থানীয় গোলামরা মুজাহিদদের কাছে পুরোপুরি ভাবে পরাজিত হয়েছে। ফলে বর্তমানে ক্রুসেডার জোটের শরীক দেশগুলো ঘোষণা দিয়ে এক এক করে মালি ছাড়তে শুরু করেছে।
এবার সেই সূত্র ধরেই মালি থেকে সম্পূর্ণরূপে পালাতে যাচ্ছে ইউরোপীয় দু’টি ক্রুসেডার জোট বাহিনী। যারা ক্রুসেডার ফ্রান্সের নেতৃত্বে মালিতে বোরখান এবং তাকুবা মিশনের অধীনে কাজ করছে।
রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএফআই) দ্বারা প্রচারিত ফরাসি কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুসারে, ক্রুসেডার ফরাসি প্রশাসন মালি থেকে সরে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
এবিষয়ে ফ্রান্সের দাবি হচ্ছে, আমাদের শর্ত পূরণ না হলে আমরা মালিতে থাকব না। শর্তের বিষয়গুলো উল্লেখ না করে ঐ কর্মকর্তা তার বক্তব্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি সংক্ষিপ্ত করেছে। যার ফলে এটি এখনো জানা সম্ভব হয়নি যে, ফান্স কি ধরণের শর্তের কথা বলছে। নাকি এটি কেবলই মালি থেকে পালানোর অজুহাত!
সূত্রটি আরও জানিয়েছে যে, ক্রুসেডার ফ্রান্স আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পরে অনুমান করা হচ্ছে যে, ইউরোপীয় ক্রুসেডার শক্তিগুলি প্রতিবেশী দেশগুলি প্রধানত বুর্কিনা ফাঁসো ও নাইজার থেকেও তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। মালির প্রতিবেশি এই দেশ দু’টিতেও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে আল-কায়েদা।
বিশ্লেসকরা মনে করেন, ক্রুসেডার দেশগুলো চাচ্ছে না যে, আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা মালির মত প্রতিবেশি দেশগুলোতেও শক্তিশালী হয়ে উঠুক। যদি প্রতিবেশি এই দু’টি দেশেও আল-কায়েদা শক্তিশালী হয়ে উঠে, তাহলে পশ্চিমারা আল-কায়েদার বিজয় অভিযান রুখতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে পড়বে। সেই সাথে তারা সম্পূর্ণ পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যা ভবিষ্যতে ইউরোপীয় দেশগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে পরিণত হবে। কেননা আল-কায়েদা কখনোই কেবল মাত্র আফ্রিকার সীমান্ত নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে না। তাঁরা মুসলিমদের হারানো গৌরবময় ভূমি স্পেন বিজয় ও ইউরোপে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে থাকবেন।
আমরা যদি বর্তমানে মালিতে আল-কায়েদার শক্তি বৃদ্ধির ফলে প্রতিবেশি দেশগুলোতে এর প্রভাব বিস্তার নিয়ে সামান্য কিছু আলোকপাত করি, তাহলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মালি পশ্চিম আফ্রিকার সবচাইতে বিস্তৃত সীমান্তের অধিকারী একটি দেশ। দেশটির সীমান্ত জুড়ে ৭টি দেশের অবস্থান। যার ৫ টিতেই সামরিক অভিযান চালাচ্ছেন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট মুজাহিদগণ। দেশগুলো হচ্ছে: নাইজার, বুর্কিনা ফাঁসো, আইভরি কোষ্ট, গিনি ও সেনেগাল। অপরদিকে মৌরতানিয়া ও আলজেরিয়ায় কয়েক বছর পূর্বে অভিযান চালালেও বর্তমানে দেশ দু’টিতে কৌশলগত নিরবতা পালন করতে দেখা যাচ্ছে আল-কায়েদার বিজ্ঞ নেতৃত্বকে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর কারণ হতে পারে আল-কায়েদা এই দু’টি রাষ্ট্রকে নিজেদের সাপোর্টিং রাষ্ট্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। কেননা বর্তমানে জেএনআইএম এর শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ দায়িত্বশীল উমারাগণই আলজেরিয়া কিংবা মৌরতানিয়ার নাগরিক। সেই সাথে দলটির বেশিরভাগ বিদেশি যোদ্ধাই এ দু’টি দেশ থেকে আগত।
অপরদিকে মালির প্রতিবেশি দেশ বুর্কিনা ফাঁসো ও নাইজারেও এখন দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠছেন আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাগণ। এখানেও সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আল-কায়েদার। ফলে বর্তমানে এই দেশ দু’টি থেকেও মুজাহিদগণ প্রতিবেশি অন্য ৪টি দেশে হামলা চালাচ্ছেন। দেশগুলো হচ্ছে: বেনিন, টগো, ঘানা ও নাইজেরিয়া। এরমধ্যে আবার নাইজেরিয়ায় মুজাহিদগণ এখন অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মালিতে অবস্থিত জেএনআইএম যোদ্ধারা নাইজেরিয়ার সাথে স্থল পথে সরাসরি সংযুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই লক্ষে তাঁরা অত্যন্ত কৌশলে তাদের শরিয়াহ-শাসিত ভূমি সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ্। যদি তাঁরা এই কাজে ইনশাআল্লাহ্ সফল হন, তবে নাইজেরিয়ার আনসারু মধ্য আফ্রিকা থেকে শুরু করে পূর্ব আফ্রিকার সীমান্ত পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। আর পূর্ব আফ্রিকার সীমান্তে পৌঁছা মানে হারাকাতুশ শাবাবের সাথে মজবুত এক রোড-লাইন তৈরি হওয়া। তখন পুরো আফ্রিকা মহাদেশের পরিস্থিতিই হয়ে উঠবে ভিন্নতর, পশ্চিমা ক্রুসেদার ও জায়নবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তখন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ইনশাআল্লাহ্। আল-কায়েদা যোদ্ধারা তখন হয়ে উঠবেন আরও অপ্রতিরোধ্য। তাঁরা হয়ে উঠবেন যুগশ্রেষ্ঠ একটি সামরিক বাহিনী।
লিখেছেন : ত্বহা আলী আদনান
Comment