Announcement

Collapse
No announcement yet.

সাম্প্রতিক ইতিহাসের দীর্ঘতম ও ধ্বংসাত্মক ক্রুসেড : “আফগান যুদ্ধ”

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সাম্প্রতিক ইতিহাসের দীর্ঘতম ও ধ্বংসাত্মক ক্রুসেড : “আফগান যুদ্ধ”

    সাম্প্রতিক ইতিহাসের দীর্ঘতম ও ধ্বংসাত্মক ক্রুসেড : “আফগান যুদ্ধ”



    গতকাল ছিল ৭ অক্টোবর; ক্রুসেডার অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট ২০০১ সালের এই দিনে স্বাধীন ইসলামি ইমারাত আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। যার মাধ্যমে আমেরিকা সম্প্রতিক ইতিহাসের সবচাইতে দীর্ঘতম ক্রুসেড যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।

    ৭ অক্টোবর ২০০১-এ শুরু হওয়া আগ্রাসনের ২১ বছর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে কোনো বাস্তব সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। বরং এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাঞ্ছনাকর পরাজয় বরণ করে। এবং আফগানিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। অ্যামেরিকার অপরাপর ন্যাটো মিত্ররা অবশ্য তারও অনেক আগেই তল্পিতল্পা সমেত আফগান ভূমি ত্যাগ করতে বাধ হয়।


    আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন:

    সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতা ও গোষ্ঠীগুলির ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে দেশটি একটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঠিক এসময় আত্মপ্রকাশ হয় সশস্ত্র তালিবান আন্দোলনের। যারা অল্প সময়ের মধ্যে এসব যুদ্ধবাজ নেতাদের হটিয়ে প্রায় পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেন। এই যুদ্ধে তালিবানদের বিজয়ী হতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আল-কায়েদা।

    আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সদ্য বিজয়ী তালিবানরা দেশে ইসলামি শাসন বাস্তবায়ন করেন। সেই সাথে আরব মুজাহিদদের (আল-কায়েদা)-কে সমর্থন ও আশ্রয় দিতে থাকেন। যে আরব মুজাহিদদেরকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট কথিত “সন্ত্রাসী” তকমা লাগায়। পশ্চিমা বিশ্ব ও তালিবানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির পেছনে যে কয়েকটি কারণ ছিলো, তার মধ্যে এটি ছিলো অন্যতম।

    এরইমধ্যে বরকতময় ৯/১১ হামলার ঘটনা ঘটে, যা এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে যে, হামলাটি তালিবানদের আশ্রয়ে থাকা আল-কায়েদার নেতৃত্বে চালানো হয়েছে। এদিকে হামলাটি কারা চালিয়েছে এবিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য ছিলো না। ফলে তালিবান সরকারও বারবার অ্যামেরিকাকে বলছিল যে, তারা যেনো হামলার বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য ও প্রমাণ পেশ করে।

    কিন্তু কোন তথ্য-প্রমাণ পেশ করতে ব্যার্থ হয় অ্যামেরিকা। তবে সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা এটা বুঝতে পেরেছিল যে, আল-কায়েদা ছাড়া তাদের বুকের মাঝখানে এই হামলা চালানোর সাহস কেউ করবে না। তাছাড়া ইতিপূর্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একাধিক সফল হামলা চালিয়েছে আল-কায়েদা। সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা বিশ্বে তার ‘অপরাজেয়’ ইমেজ ধরে রাখতে কোন তথ্য প্রমাণ পেশ না করেই আফগানিস্তানে আক্রমণ করে বসে।

    তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসনের বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ এবং তালিবানের অনেক নেতার অভিমত ছিল যে, ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর হামলার আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান সরকারকে উৎখাত করতে (বিদ্রোহীদের অর্থ-অস্ত্র দিয়ে) হস্তক্ষেপ করেছে। আফগানিস্তানে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। তাই ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১-এর হামলা আমেরিকার একটা অযুহাত মাত্র।

    যাইহোক, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, হোয়াইট হাউজ এবং পেন্টাগনের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলিতে একযোগে বিমান হামলা- এটি বিশ্বে নতুন একটি পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করতে শুরু করে।

    এই হামলার পরে তালিবান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আফগানিস্তানে অবস্থানরত আল-কায়েদা নেতাদের টার্গেট করে সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা। তৎকালীন তালিবান সরকারের প্রধান, আমীরুল মু’মিনিন মোল্লা মুহাম্মদ ওমর মুজাহিদ (রহি.) অ্যামেরিকার এমন কাজে শায় না দেওয়ায় ইমারাতে ইসলামিয়াকেও টার্গেট করা হয়।

    ফলশ্রুতিতে, ১১ সেপ্টেম্বরের পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যুদ্ধের ঘোষণা করে। সে আফগানিস্তান দখলের জন্য একটি মতবাদ ছড়িয়ে দেয় এবং আফগান যুদ্ধকে “ক্রুসেড” হিসেবে বর্ণনা করতে থাকে। মুখ থেকে বের হয়ে যাওয়া এই ‘ক্রুসেড’ শব্দটি আড়াল করতে অ্যামেরিকা আবার তার পালিত মিডিয়ার মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শ্লোগানটি প্রতিষ্ঠিত করতে থাকে। এসময় বুশ তার এক বক্তব্যে ঘোষণা করে, “তুমি হয় আমাদের থেকে না হয় সন্ত্রাসের।”

    অর্থাৎ বুশ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তখন পুরো বিশ্বকে ঈমান ও কুফরের দুটি তাবুতে পৃথক করে। বুশের এই মতবাদে ঐক্যবদ্ধ হয় পশ্চিমা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শায় দেয় পাকিস্তান সহ মুসলিম নামধারী মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ।

    শুরু হয় “অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম” নামে আমেরিকার নতুন ক্রুসেড। আকাশ ও স্থলপথে আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেন। স্থলপথে উত্তর জোটের সহায়তায় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলো দখল করতে শুরু করে। আল-কায়েদা ও তালিবান শিবিরগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ছত্রভঙ্গ করতে টনকে টন বোমা ফেলতে থাকে দখলদার অ্যামেরিকা ও ন্যাটো জোট।


    তালিবানদের প্রত্যাবর্তন:

    বছরের পর বছর ধরে আমেরিকা তার লক্ষ্যগুলি অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করে। কিন্তু যে লক্ষ্যে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় দখলদার বাহিনী, তার একটিও সম্পূর্ণ পূর্ণরূপে অর্জিত হয়নি আমেরিকার।

    ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৩ নভেম্বর কৌশলগত কারণে রাজধানী কাবুল ছাড়ে তালিবান সরকার। এরপর থেকে তালিবান ও আল-কায়েদা ক্ষতি এড়াতে এই যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সাথে সম্মুখ সারির যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে। বরং এই সময়টাতে আল-কায়েদা ও তালিবান যোদ্ধারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কঠিন পাহাড়ি এলাকাগুলো বেছে নেয়। এবং নিজদের শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। তালিবান এবং আল-কায়েদা মার্কিন নেতৃত্বাধীন ক্রুসেডার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সময়ের সাথে সাথে পুনর্গঠিত হতে থাকে।

    কয়েক বছরের মাথায় তালিবান পূণরায় আফগানিস্তানের পাহাড়ি ও গ্রামাঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে। এভাবে তাঁরা ২০০৯ সালের মধ্যে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন। আর ২০১৪-১৫ সালে তালিবানরা দেশের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান, আলহামদুলিল্লাহ্‌।

    এর কয়েক বছর পর মার্কিন জনগণই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আওয়াজ তুলে। কেননা তারা দেখছিলো যে, দীর্ঘ এই যুদ্ধে তাদের কফিনের সংখ্যা বাড়ছে, আর ভারি হচ্ছে মুসলিমদের বিজয়ের পাল্লা। আর্থিক ক্ষতিও কয়েক ট্রিলিয়ন ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন ব্যার্থতায় পর্যবাসিত হচ্ছে।

    ফলশ্রুতিতে, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালিবানদের মধ্যে ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০-এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর তালিবানরা ১৫ আগস্ট, ২০২১ তারিখে আবারও রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে। সেই সাথে দখলদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গাদ্দার সরকারকে সম্পূর্ণরূপে উৎখাত করে। এবং ২০ বছর পর আবার ক্ষমতায় আসে তালিবান। ঘোষণা করা হয় ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান।

    সর্বশেষ মার্কিন সৈন্যটি ৩১ আগস্ট রাতের আধারে আফগান ভূখণ্ড ত্যাগ করে।

    শেষাংশ:


    সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা আফগানের ভূমি ছেড়ে গেলেও, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ থেমে নেই। মিডিয়াতে সে এখনো তালিবানের নামে নানান প্রোপ্যাগান্ডা ছড়িয়ে যাচ্ছে, বাস্তবে যেসকল মিথ্যা রটনার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

    আবার সম্প্রতি পাকিস্তানের সহায়তায় কাবুলে এক ড্রোন হামলার মাধ্যমে আল-কায়েদা প্রধান শায়েখ আয়মান আল-জাওয়াহিরি (হাফি.)-কে হত্যার দাবিও করে অ্যামেরিকা। গাদ্দার পাকিস্তানও তার প্রভু অ্যামেরিকার ইশারা পেয়ে সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে ক্রমাগত। অপর প্রান্তে তাজিকিস্তানও সীমান্তে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে। আর অ্যামেরিকার ‘গোপন ও পুরানো বন্ধু’ শিয়া রাফেজি ইরানও সীমান্তে সমস্যা সৃষ্টি করে যাচ্ছে ইসলামি ইমারত আফগানিস্তানের সাথে।

    সোমালিয়ার ভূমিতেও ফিরে গেছে নির্লজ্জ অ্যামেরিকা। ইয়েমেনেও আল-কায়েদার নেতৃত্বাধীন আহলুস-সুন্নাহর অনুসারীদের সাথে যুদ্ধ থেমে নেই অ্যামেরিকা ও দোসর আরব জোটের। শামেও রয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। আবার ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার ত্রিসীমান্তে খ্রিস্টান রাষ্ট্র কায়েমের পশ্চিমা পরিকল্পনাকে ‘আলোর মুখ’ দেখানোর ক্রুসেডিয় দায়িত্ব পালনে অ্যামেরিকা এই অঞ্চলে প্রবেশ করতেও মরিয়া।

    সুতরাং, অ্যামেরিকা তথা পশ্চিমাদের এই ক্রুসেড শেষ হয়ে যায় নি। এই যুদ্ধ শেষ হবে না, যতদিন না আফগানিস্তানের মতো শাম, আরব, হিন্দ ও মাগরেব মুক্ত করে গোটা বিশ্বকে এই নব্য ক্রুসেডারদের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে।

    যুদ্ধের এই ঝড় থেমে যায় নি; এই ঝড় সহসাই থেমে যাবার নয়।
    যুদ্ধ তো কেবলই শুরু…



    লিখেছেন : ত্বহা আলী আদনান
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    ইনশাআল্লাহ চুড়ান্ত বিজয় আমাদেই হবে

    Comment


    • #3
      অ্যামেরিকা তথা পশ্চিমাদের এই ক্রুসেড শেষ হয়ে যায় নি। এই যুদ্ধ শেষ হবে না, যতদিন না আফগানিস্তানের মতো শাম, আরব, হিন্দ ও মাগরেব মুক্ত করে গোটা বিশ্বকে এই নব্য ক্রুসেডারদের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। যুদ্ধের এই ঝড় থেমে যায় নি; এই ঝড় সহসাই থেমে যাবার নয়। যুদ্ধ তো কেবলই শুরু…
      আর এটা চলবে ততদিন যতদিননা কিয়ামত এসে যায়... আর যতদিননা তারা পরাজয়ের সুস্বাদু শরবত পান করে তুষ্ট না হয়।
      আল্লাহ তা'য়া তাদের এমন অবস্থা করার মহান সৌভাগ্য আমাদেরকে দান করুন! আমিন!।
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment

      Working...
      X