Announcement

Collapse
No announcement yet.

উদয়ের পথে নিকটবর্তী বিজয়ের নতুন সূর্যোদয় ||ষষ্ঠ কিস্তি|| নতুন যুগে প্রবেশ করলো সোমালিয়ার জিহাদ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উদয়ের পথে নিকটবর্তী বিজয়ের নতুন সূর্যোদয় ||ষষ্ঠ কিস্তি|| নতুন যুগে প্রবেশ করলো সোমালিয়ার জিহাদ

    উদয়ের পথে নিকটবর্তী বিজয়ের নতুন সূর্যোদয় ||ষষ্ঠ কিস্তি|| নতুন যুগে প্রবেশ করলো সোমালিয়ার জিহাদ





    সোমালিয়ায় কার্যত ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামি ইমারাত প্রতিষ্ঠা রাখে ইসলামি কোর্ট অফ ইউনিয়ন সরকার। কিন্তু ইসলামি ইমারাতের স্থিতিশীলতা ও এর সফলতা কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারেনি পশ্চিমা ও তাদের সমর্থিত আফ্রিকার ক্রুসেডার দেশগুলো। কেননা মুজাহিদগণ পশ্চিমাদের স্বার্থের বিপরীতে একটি ইসলামী শাসনের অধীনে সোমালিয়াকে একীকরণ করার মাধ্যমে এখানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। এই লক্ষ্যে ইমারাতে ইসলামিয়া কর্তৃক সোমালিয়ার সায়ত্তশাসিত অঞ্চলগুলোর নেতাদের সাথেও আলোচনা শুরু হয়। যা অনেকটাই সফলতার দিকে এগুচ্ছিলো।

    ফলশ্রুতিতে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া “ইসলামিক কোর্টস ইউনিয়ন” প্রশাসনকে উৎখাত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। এই লক্ষ্যে ইথিওপিয়া ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে সোমালিয়ায় আক্রমণ শুরু করে। ক্রুসেডার উগান্ডা এবং কেনিয়ার সৈন্যরাও এই আক্রমণে অংশ নেয়। আর এই যুদ্ধে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং বুরুন্ডিয়ার মতো দেশগুলোর ব্যাপকভাবে সমর্থন পায়। যার ফলে নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক কোর্টস ইউনিয়নের মাত্র কয়েক হাজার যোদ্ধা হানাদারদের বিরুদ্ধে বেশি দিন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি।



    এসময় দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময়ের যুদ্ধের পর দখলদার ইথিওপিয়ান বাহিনী জানুয়ারিতে ইমারাতে ইসলামিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর দখল নেয়। অতঃপর এখানে ধর্মনিরপেক্ষ এবং পশ্চিমা-সমর্থিত ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে সোমালিয়ায় ২০০৭ সালের এপ্রিলে ইসলামিক কোর্টস ইউনিয়নের বিলুপ্তি হয়। এরপর ইউনিয়নের বড় একটি অংশ আশ-শাবাবের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং কিছুসংখ্যক দক্ষিণ-পশ্চিম সোমালিয়ায় হিজবুল ইসলাম নামে সংঘটিত হয়।

    এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৬ সাল থেকে সোমালিয়ার যুদ্ধে জড়িত থাকলেও এটি ২০০৭ সালে সোমালিয়ায় সেনা প্রেরণ করে। যারা পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের সামরিক বাহিনী গঠন ও আশ-শাবাবের অবস্থানে ড্রোন হামলা চালাতে থাকে। সেই সাথে আশ-শাবাবকে প্রতিহত করতে ২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব গঠন করা হয় “আফ্রিকান ইউনিয়ন” নামে একটি জোট বাহিনী।



    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন মোগাদিশু সরকারকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে, তখন আশ-শাবাবও শাইখ মুখতার আলী জুবায়ের (রহ.) এর নেতৃত্বে দেশের দক্ষিণে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে নতুন এক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তাঁরা ইসলামিক কোর্টস ইউনিয়নের প্রাক্তন সদস্যদের আশ-শাবাবের অধীনে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ করতে শুরু করেন। সেই সাথে তাঁরা দেশের দক্ষিণের গ্রামাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলার চেষ্টা করেন।

    এই পরিস্থিতিতে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন আফগানিস্তান সহ বাকি বিশ্বের ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে থাকেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী আল-কায়েদা নেতা শাইখ ওসামা বিন লাদেনের সাথে সম্পর্ক পূর্বের চাইতে আরও ঘনিষ্ঠ করতে থাকেন।

    আল-কায়েদা ১৯৯০ এর দশক থেকে সোমালিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে এই ভূমিকাটি সাধারণত অর্থনৈতিক, সাংগঠনিক এবং সামরিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এবার তা আরও জোরদার হয়। ফলে সেটি আশ-শাবাবের জন্য “সোনার হাসের” মতো কাজ করে। কেননা এর ফলে আগের চাইতেও বেশি সহায়তা পেতে শুরু করে আশ-শাবাব। সেই সাথে আল-কায়েদার নির্দেশে সুদান ও ইয়েমেন সহ বহির্বিশ্ব থেকে যুদ্ধে পারদর্শী মুজাহিদগণও এখানে জড়ো হতে থাকেন; যা আশ-শাবাবের মতো দূর্বল একটি প্রতিরোধ বাহিনীকে খুব দ্রুতই শক্তিশালী করতে এবং সোমালিয়ার রণাঙ্গনে ঘুরে দাঁড়াতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।



    আল-কায়েদার সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে এখানে বিদেশি মুজাহিদদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। আর আল-কায়েদা নেতা শাইখ ওসামা বিন লাদেনও সোমালিয়ায় তার প্রতিনিধিদের একটি দলকে প্রেরণ করেন। তাঁরা আশ-শাবাবকে যুদ্ধের প্রশিক্ষিণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সহায়তা দিতে থাকেন।
    সোমালিয়া যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া আশ-শাবাবের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত:


    আল-কায়েদার সাথে আশ-শাবাবের ঘনিষ্ঠ এই সম্পর্ক সোমালিয়া যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে থাকে। কেননা আশ-শাবাব পূণরায় সোমালিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণে ইথিওপিয়ান বাহিনী আশ-শাবাবের হামলায় কঠিন বে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। সেই সাথে দক্ষিণের গ্রামাঞ্চলগুলি তখন আশ-শাবাবের নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে থাকে। যেখানে সোমালিয়ার মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন। এই ধারাবাহিকতায় আশ-শাবাব ২০০৭ সালের শেষ নাগাদ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ভূমির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।

    অতঃপর ২০০৮ সালে আল-কায়েদা নেতা শাইখ ওসামা বিন লাদেনের (রহিমাহুল্লাহ্) কাছে বায়াতের পত্র প্রেরণ করে আশ-শাবাব। এসময়টাতে বিন লাদেন আল-শাবাবকে কিছু সময়ের জন্য আনুগত্যের বিষয়টি গোপন রাখতে বলেন। সেই সাথে শত্রু বাহিনী দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত একটি রাষ্ট্র ঘোষণা না করার পরামর্শ দেন। এর কারণ হিসাবে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, ‘আল-কায়েদার প্রতি আনুগত্যের ফলে শত্রুরা আশ-শাবাবকে তীব্র আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করবে। যার ফলে অভাবী সোমালি জনগণের জন্য আসা মানবিক সহায়তাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি আশ-শাবাব নেতাদের ‘সদয় ও ধৈর্যশীল হতে, এবং জনসম্পর্ক উন্নত করার’ পরামর্শ দেন। এরপর শাইখ ওসামার এই নির্দেশনার ফলে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে আনুগত্যের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেনি আশ-শাবাব।



    আল-কায়েদার প্রতি আশ-শাবাবের এই আনুগত্যের পর সোমালিয়ার যুদ্ধের গতিপথ পাল্টাতে শুরু করে। যুদ্ধ গ্রাম থেকে শহরের দিকে ঝুঁকতে থাকে। রাজধানী মোগাদিশু ছাড়া দেশের অনেক শহরেই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমাদের নবনিযুক্ত পুতুল সরকারও আশ-শাবাবের তীব্র হামলার মধ্যে পড়ে। ইথিওপিয়া আর আফ্রিকান ইউনিয়নও আশ-শাবাবের নতুন এই যুদ্ধ কৌশলের কাছে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

    মোটকথা, শত্রু বাহিনী এতো তাড়াতাড়ি যে আক্রমণের কল্পনাও করেনি, এখন একের পর এক সেই আক্রমণের মুখোমুখিই হতে শুরু করেছে তারা। যার ফলে এসময় সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দখলদার ইথিওপিয়ান বাহিনী। আশ-শাবাবের হামলার ফলে প্রথম দিকে ইথিওপিয়ান বাহিনী সোমালিয়ায় তাদের উপস্থিতি বাড়ায়। কিন্তু এতেও বিদ্যমান প্রতিরোধকে দমন করতে পারেনি ইথিওপিয়া। বরং পূর্বের চাইতে শাবাবের আক্রমণে আরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় ইথিওপিয়া।

    আশ-শাবাবের হামলায় ইথিওপিয়ান বাহিনী সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হিসাবে দেখা যায় যে, দখলদার দেশটির সেনারা সোমালি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ এবং লুণ্ঠনের মতো ব্যাপক অপরাধের সাথে জড়িত ছিলো। ফলে সোমালি জনগণের সমর্থন হারায় ইথিওপিয়ান বাহিনী, বিপরীতে জনসাধারণ আশ-শাবাবকে বিভিন্নভাবে সমর্থন দিতে শুরু করে। আর এই যুদ্ধের সূচনাও করেছিলো দখলদার ইথিওপিয়া। ফলে আশ-শাবাবের হামলার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয় তারা।

    ২০০৮-৯ সালে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আল-কায়েদার হামলায় প্রতিদিনই অসংখ্য ইথিওপিয়ান সৈন্য নিহত এবং আহত হয়। এতে যুদ্ধের মনোবল হারায় ইথিওপিয়ান বাহিনী। সর্বশেষ ২০০৯ সালে দখলদার ইথিওপিয়া সোমালিয়া থেকে তার সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।



    ইথিওপিয়া সেনা প্রত্যাহারের ফলে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। একই সাথে জনসমর্থনও হারায় মোগাদিশু সরকার। কেননা সাধারণ জনগণ দেশে দখলদার সেনাদের অবস্থান এবং শরিয়ার বিপরীতে দেশে পশ্চিমা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন মেনে নিতে পারেন নি। যেখানে আশ-শাবাব দেশকে দখলদার মুক্ত করার এবং শরিয়াহ্ ভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতী দেয় জনগণকে। আর শাবাব মুজাহিদিন লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। ফলে জনসাধারণের সমর্থন অনেকাংশেই আশ-শাবাবের পক্ষে চলে যায়। আর এই জনসমর্থনের ফলে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানী মোগাদিশু সহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক শহরেই তখন যুদ্ধের তীব্রতা বাড়াতে সক্ষম হয় আশ-শাবাব। যাতে আফ্রিকান ইউনিয়ন বাহিনী এবং মোগাদিশুর পশ্চিমা-সমর্থিত সরকার একের পর এক আশ-শাবাবের আক্রমণের মুখোমুখি হয়।

    এমন পরিস্থিতিতে জনসমর্থন আদায় করতে নানা কৌশলে আশ্রয় নেয় পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। তারা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করে যে, আপনারা আমাদেরকে সমর্থন দিলে আফ্রিকান ইউনিয়ন সোমালিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। আর দেশে আপনাদের চাওয়া অনুযায়ী শরিয়া আইন প্রয়োগ করা হবে।

    এমন প্রতিশ্রুতীর পরও জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয় পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। কেননা উপজাতি নেতারা এবং জনগণ সরকারের এমন ঘোষণাকে অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন। ফলে জনগণ আগে প্রতিশ্রুতী বাস্তবায়নের কথা বলেন, এরপর সরকারকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু পশ্চিমা সমর্থিত সরকার জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতী বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে জনসমর্থনও পায়নি।



    এদিকে ২০১০ সালে সোমালিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হিজবুল ইসলাম আশ-শাবাবের সাথে একীভূত হয়। ফলে সোমালিয়ায় হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিনের শক্তি এবং জনসমর্থন আরও বেড়ে যায়। মুজাহিদ গ্রুপগুলোর এই ঐক্যের ফলে বড় ধরনের বিজয় পেতে শুরু করে আশ-শাবাব। যার ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে রাজধানী ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন মুজাহিদগণ।



    আর ২০১১ সালে এই বিজয় দ্বারা আরও অগ্রগতি লাভ করে। শাবাব মুজাহিদিন ঐবছর রাজধানী মোগাদিশু অবরোধ করেন। সেই সাথে রাজধানী বিজয়ের লক্ষ্যে বড় ধরণের অপারেশন চালাতে শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে অসংখ্য গাদ্দার ও কুফ্ফার সৈন্য নিহত এবং আহত হয়। সেই সাথে হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন তাদের লক্ষ্যে অনেকাংশে সফলও হন। মুজাহিদগণ মোগাদিশুর চতুর্দিক বিজয় করতে করতে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন।
    চলবে ইনশাআল্লাহ…




    লিখেছেন : ত্বহা আলী আদনান
    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org
Working...
X