আমেরিকার আল-কায়েদা ভীতি: শাবাব-একিউএপি সংযোগ বন্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ
সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকায় তৎপর আল-কায়েদা শাখা হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ১৪ জন ব্যক্তির উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে সন্ত্রাসবাদী আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
অক্টোবরের মধ্যভাগে সংস্থাটির প্রকাশিত এক রিপোর্টে হারাকাতুশ শাবাবের অর্থ বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত ৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত “অস্ত্র পাচার” এর অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও আশ-শাবাবের আরো ৫ জন উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের নাম সন্ত্রাসী আমেরিকার কথিত সরকারি ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ এ তোলা হয়েছে।
আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ আশ-শাবাবের বিস্তৃত অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কের ব্যাপারেও তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের এক গবেষণা মতে, আশ-শাবাবের ইসলামি প্রশাসন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রতি বছর শত শত মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মুনাফা অর্জন করে থাকে। যার বড় একটি অংশ খরচ হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে। আর ২৫% খরচ হয় আশ-শাবাবের সামরিক খাতে। ফলে বর্তমানে আল-কায়েদা-এর শাখা সমূহের নিয়ন্ত্রিত ইসলামি ইমারাহগুলোর মধ্যে আশ-শাবাব প্রশাসনকেই সবচাইতে ধনী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এবিষয়ে সোমালিয়ার একজন অর্থনীতিবিদ ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে জানান যে, “২০১৯ অর্থবছরে সোমালি সরকার $৩০.৪১ বিলিয়ন আয় করেছে। সেখানে আশ-শাবাব সোমালিয়ার ফেডারেল সরকার (FGS) থেকে আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করছে। যার পরিমাণ সোমালি সরকার থেকে তিনগুণ বেশি।”
অর্থাৎ ২০১৯ অর্থবছরে আশ-শাবাব ৯১.২৩ বিলিয়ন রাজস্ব আদায় করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেড়েছে।
হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন
আর আশ-শাবাবের অর্থনৈতিক এই সফলতাকে রুখতে লড়াইয়ে ময়দানের পাশাপাশি এবার অর্থনৈতিক ময়দানেও নামতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা। ফলে আশ-শাবাবের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে শুরু করেছে আমেরিকা ও তাদের সমর্থিত গাদ্দার সরকার।
এর ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ আশ-শাবাবের অর্থনৈতিক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- খালিফ আদালে, হাসান আফজাউয়ে, আব্দুল কারিম হুসাইন গাগালে এবং আব্দুর রাহমান নুরি।
উনাদের মধ্যে খালিফ আদালে শরীয়াহ অনুমোদিত বিভিন্ন ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনের কাজ করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যবসার উপর আরোপিত কর সংগ্রহ করেন, এনজিওদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন এবং সোমালি গোত্রগুলোর মাঝে বিবাদ হলে তা মিমাংসা করেন। এছাড়াও তিনি দাওয়াহ এর মাধ্যমে সোমালিদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেন।
হাসান আফজাউয়ে আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাদাকাহ গ্রহণ করেন এবং পশ্চিমা সমর্থিত যালিম সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের আটক করার এবং বিদেশী অনুদান গ্রহণের দায়িত্বও পালন করেন। আশ-শাবাবের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নেতাকে ধরার জন্য ক্রুসেডার আমেরিকা ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।
আব্দুর রাহমান নুরি এবং আব্দুল কারিম হুসাইন গাগালে আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। উল্লিখিত প্রত্যেকেই আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁরা আশ-শাবাব প্রশাসনের উচ্চপদস্থ নেতা মাহাদ কারাতে এর অধীনে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মাহাদ কারাতে সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারীর জন্য আমেরিকা ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। তিনি শাবাবের গোয়েন্দা শাখা ‘আমনিয়াত’ ডিভিশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি।
আর ব্ল্যাকলিস্টে যেসব ব্যক্তির নাম তোলা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সোমালিয়ার হিরান প্রদেশের প্রাক্তন গভর্ণর মুহাম্মাদ মিরে। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত শাবাবের যাকাত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আশ-শাবাবের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করেন। ব্ল্যাকলিস্টের অন্য ব্যক্তিরা হলেন ইয়াসির জিস, ইউসুফ আহমাদ হাজি নুরো, মুস্তফা আতো এবং মুহাম্মাদ আবদি আদেন নামের আরো চারজন নেতা।
ইয়াসির জিস শাবাবের সামরিক বিভাগের কামান্ডোর দায়িত্বে আছেন। হাজি নুরো আমনিয়াত বিভাগ দেখাশোনা করেন। মুস্তফা আতো আশ-শাবাব আমীরের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আমনিয়াত বিভাগেও উচ্চপদে আসীন। আর মুহাম্মাদ আবদি কেনিয়ায় আশ-শাবাবের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা।
আশ-শাবাবের অস্ত্রের যোগান
আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আশ-শাবাব কিভাবে ইয়েমেন থেকে মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এতগুলো বছর যাবত যুদ্ধ চালিয়ে আসছে এবং আরো বেশি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে।
রিপোর্ট মোতাবেক, ইয়েমেনের তানযিমুল কায়েদা ফিল জাযিরাতুল আরব তথা আনসারুশ শারীয়াহ গ্রুপের সাথে আশ-শাবাবের অস্ত্রের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কয়েকজন ব্যক্তি এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
আশ-শাবাবের অস্ত্রের যোগানের জন্য দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল্লাহি জিরি। তিনি সোমালিয়ার স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এবং ইয়েমেন – উভয় জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন।
ইয়েমেন ভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে তিনি সোমালিয়ায় অস্ত্র আনেন। এই নেটওয়ার্কে আছেন মুহাম্মাদ হুসাইন সালাদ, আহমাদ হাসান আলী সুলাইমান মাতান এবং মুহাম্মাদ আলী ব্রাদার্স নামের ব্যক্তিগণ। হুসাইন সালাদ এবং সুলাইমান মাতান ইয়েমেন থেকে জলযানের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সোমালিয়ার পুন্তল্যান্ড অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাঁদের দুইজনের কেউই শাবাবের সাথে সম্পৃক্ত নন এবং নেটওয়ার্কের তিনজন ব্যক্তিকেই আমেরিকা ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অপরদিকে মুহাম্মাদ আলী ব্রাদার্স আনসারুশ শারীয়াহ এর সদস্য। তিনি মূলত ইয়েমেন থেকে সোমালিয়ায় গুলি নিয়ে আসেন। আলী ব্রাদার্স ইয়েমেনের শাবওয়াহ অঞ্চলে আল-কায়েদার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আর আশ-শাবাব ও আনসারুশ শরিয়াহ্’র মধ্যকার এই সম্পর্ক সমুদ্রের এপার ওপারে আল-কায়েদার অবস্থানকে শক্তিশালী করেই চলছে। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে আরব সাগর এবং সুয়েজ খালের প্রবেশ পথ এডেন উপসাগর কেন্দ্রিক বড়ধরণের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ফেলবে আল-কায়েদা। আর এমনটি হলে বিশ্ববাণিজ্যের বড় অংশের উপর প্রভাব ফেলবে আল-কায়েদা।
সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মধ্যবর্তি এডেন উপসাগর, আরবসাগর ও বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ।
এদিকে আশ-শাবাব প্রশাসন আনসারুশ শরিয়াহ্’র মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে শুধু অস্ত্রই আনছে না বরং অর্থনৈতিকভাবেও আনসারুশ শরিয়াহ্’কে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে- যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের ভঙ্গুর অর্থনীতি আর চতুর্মুখি হামলার মাঝেও হাদরামাউত, আবইয়ান ও শাবওয়াহ্ রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে এখনো শক্তিমত্তার সাথে টিকে আছে আনসারুশ শরিয়াহ্। সেই সাথে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন অপারেশনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের বিষয়টিও জানান দিচ্ছে দলটি।
এছাড়াও, সন্ত্রাসী আমেরিকার তৈরি করা আশ-শাবাবের নেতৃবৃন্দের তালিকা জানান দেয়, আশ-শাবাবের তৎপরতা শুধু পূর্ব আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছড়িয়ে আছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। আমেরিকা তাই বলতে বাধ্য হয়েছে, হারাকাতুশ-শাবাব আল-কায়েদার সবথেকে বড় এবং সক্রিয় শাখা। একই সাথে শাবাবের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি আমেরিকা সরকারের জন্য অন্যতম এক হুমকি।
শাবাব ইতিমধ্যে সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবটুকুর দখল নিয়েছে। এবং রাজধানী মোগাদিশু ও পার্শ্ববর্তী দুই দেশ ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতে যেকোনো সময় আক্রমন চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ্। তাই, সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা ও পতনোন্মুখ বিশ্বমোড়লদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরাটা স্বাভাবিক।
সম্প্রতি পূর্ব আফ্রিকায় তৎপর আল-কায়েদা শাখা হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট ১৪ জন ব্যক্তির উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে সন্ত্রাসবাদী আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
অক্টোবরের মধ্যভাগে সংস্থাটির প্রকাশিত এক রিপোর্টে হারাকাতুশ শাবাবের অর্থ বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত ৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কথিত “অস্ত্র পাচার” এর অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও আশ-শাবাবের আরো ৫ জন উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের নাম সন্ত্রাসী আমেরিকার কথিত সরকারি ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ এ তোলা হয়েছে।
আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ আশ-শাবাবের বিস্তৃত অর্থনৈতিক নেটওয়ার্কের ব্যাপারেও তথ্য প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের এক গবেষণা মতে, আশ-শাবাবের ইসলামি প্রশাসন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রতি বছর শত শত মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ মুনাফা অর্জন করে থাকে। যার বড় একটি অংশ খরচ হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে। আর ২৫% খরচ হয় আশ-শাবাবের সামরিক খাতে। ফলে বর্তমানে আল-কায়েদা-এর শাখা সমূহের নিয়ন্ত্রিত ইসলামি ইমারাহগুলোর মধ্যে আশ-শাবাব প্রশাসনকেই সবচাইতে ধনী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এবিষয়ে সোমালিয়ার একজন অর্থনীতিবিদ ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে জানান যে, “২০১৯ অর্থবছরে সোমালি সরকার $৩০.৪১ বিলিয়ন আয় করেছে। সেখানে আশ-শাবাব সোমালিয়ার ফেডারেল সরকার (FGS) থেকে আরও বেশি রাজস্ব সংগ্রহ করছে। যার পরিমাণ সোমালি সরকার থেকে তিনগুণ বেশি।”
অর্থাৎ ২০১৯ অর্থবছরে আশ-শাবাব ৯১.২৩ বিলিয়ন রাজস্ব আদায় করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বেড়েছে।
হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন
আর আশ-শাবাবের অর্থনৈতিক এই সফলতাকে রুখতে লড়াইয়ে ময়দানের পাশাপাশি এবার অর্থনৈতিক ময়দানেও নামতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা। ফলে আশ-শাবাবের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে শুরু করেছে আমেরিকা ও তাদের সমর্থিত গাদ্দার সরকার।
এর ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী আমেরিকার ট্রেজারি বিভাগ আশ-শাবাবের অর্থনৈতিক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- খালিফ আদালে, হাসান আফজাউয়ে, আব্দুল কারিম হুসাইন গাগালে এবং আব্দুর রাহমান নুরি।
উনাদের মধ্যে খালিফ আদালে শরীয়াহ অনুমোদিত বিভিন্ন ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনের কাজ করেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ব্যবসার উপর আরোপিত কর সংগ্রহ করেন, এনজিওদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন এবং সোমালি গোত্রগুলোর মাঝে বিবাদ হলে তা মিমাংসা করেন। এছাড়াও তিনি দাওয়াহ এর মাধ্যমে সোমালিদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করেন।
হাসান আফজাউয়ে আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাদাকাহ গ্রহণ করেন এবং পশ্চিমা সমর্থিত যালিম সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ লোকদের আটক করার এবং বিদেশী অনুদান গ্রহণের দায়িত্বও পালন করেন। আশ-শাবাবের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী এই নেতাকে ধরার জন্য ক্রুসেডার আমেরিকা ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।
আব্দুর রাহমান নুরি এবং আব্দুল কারিম হুসাইন গাগালে আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। উল্লিখিত প্রত্যেকেই আশ-শাবাবের অর্থ বিভাগের কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁরা আশ-শাবাব প্রশাসনের উচ্চপদস্থ নেতা মাহাদ কারাতে এর অধীনে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মাহাদ কারাতে সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারীর জন্য আমেরিকা ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। তিনি শাবাবের গোয়েন্দা শাখা ‘আমনিয়াত’ ডিভিশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি।
আর ব্ল্যাকলিস্টে যেসব ব্যক্তির নাম তোলা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সোমালিয়ার হিরান প্রদেশের প্রাক্তন গভর্ণর মুহাম্মাদ মিরে। তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত শাবাবের যাকাত বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আশ-শাবাবের কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করেন। ব্ল্যাকলিস্টের অন্য ব্যক্তিরা হলেন ইয়াসির জিস, ইউসুফ আহমাদ হাজি নুরো, মুস্তফা আতো এবং মুহাম্মাদ আবদি আদেন নামের আরো চারজন নেতা।
ইয়াসির জিস শাবাবের সামরিক বিভাগের কামান্ডোর দায়িত্বে আছেন। হাজি নুরো আমনিয়াত বিভাগ দেখাশোনা করেন। মুস্তফা আতো আশ-শাবাব আমীরের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং আমনিয়াত বিভাগেও উচ্চপদে আসীন। আর মুহাম্মাদ আবদি কেনিয়ায় আশ-শাবাবের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা।
আশ-শাবাবের অস্ত্রের যোগান
আমেরিকার ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আশ-শাবাব কিভাবে ইয়েমেন থেকে মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এতগুলো বছর যাবত যুদ্ধ চালিয়ে আসছে এবং আরো বেশি অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে।
রিপোর্ট মোতাবেক, ইয়েমেনের তানযিমুল কায়েদা ফিল জাযিরাতুল আরব তথা আনসারুশ শারীয়াহ গ্রুপের সাথে আশ-শাবাবের অস্ত্রের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কয়েকজন ব্যক্তি এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অস্ত্রের ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
আশ-শাবাবের অস্ত্রের যোগানের জন্য দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল্লাহি জিরি। তিনি সোমালিয়ার স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র এবং ইয়েমেন – উভয় জায়গা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেন।
ইয়েমেন ভিত্তিক একটি নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে তিনি সোমালিয়ায় অস্ত্র আনেন। এই নেটওয়ার্কে আছেন মুহাম্মাদ হুসাইন সালাদ, আহমাদ হাসান আলী সুলাইমান মাতান এবং মুহাম্মাদ আলী ব্রাদার্স নামের ব্যক্তিগণ। হুসাইন সালাদ এবং সুলাইমান মাতান ইয়েমেন থেকে জলযানের মাধ্যমে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সোমালিয়ার পুন্তল্যান্ড অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাঁদের দুইজনের কেউই শাবাবের সাথে সম্পৃক্ত নন এবং নেটওয়ার্কের তিনজন ব্যক্তিকেই আমেরিকা ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অপরদিকে মুহাম্মাদ আলী ব্রাদার্স আনসারুশ শারীয়াহ এর সদস্য। তিনি মূলত ইয়েমেন থেকে সোমালিয়ায় গুলি নিয়ে আসেন। আলী ব্রাদার্স ইয়েমেনের শাবওয়াহ অঞ্চলে আল-কায়েদার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আর আশ-শাবাব ও আনসারুশ শরিয়াহ্’র মধ্যকার এই সম্পর্ক সমুদ্রের এপার ওপারে আল-কায়েদার অবস্থানকে শক্তিশালী করেই চলছে। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে আরব সাগর এবং সুয়েজ খালের প্রবেশ পথ এডেন উপসাগর কেন্দ্রিক বড়ধরণের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব ফেলবে আল-কায়েদা। আর এমনটি হলে বিশ্ববাণিজ্যের বড় অংশের উপর প্রভাব ফেলবে আল-কায়েদা।
সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মধ্যবর্তি এডেন উপসাগর, আরবসাগর ও বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র ।
এদিকে আশ-শাবাব প্রশাসন আনসারুশ শরিয়াহ্’র মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে শুধু অস্ত্রই আনছে না বরং অর্থনৈতিকভাবেও আনসারুশ শরিয়াহ্’কে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে- যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের ভঙ্গুর অর্থনীতি আর চতুর্মুখি হামলার মাঝেও হাদরামাউত, আবইয়ান ও শাবওয়াহ্ রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে এখনো শক্তিমত্তার সাথে টিকে আছে আনসারুশ শরিয়াহ্। সেই সাথে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন অপারেশনের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ইয়েমেনে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের বিষয়টিও জানান দিচ্ছে দলটি।
এছাড়াও, সন্ত্রাসী আমেরিকার তৈরি করা আশ-শাবাবের নেতৃবৃন্দের তালিকা জানান দেয়, আশ-শাবাবের তৎপরতা শুধু পূর্ব আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ছড়িয়ে আছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। আমেরিকা তাই বলতে বাধ্য হয়েছে, হারাকাতুশ-শাবাব আল-কায়েদার সবথেকে বড় এবং সক্রিয় শাখা। একই সাথে শাবাবের ক্রমবর্ধমান প্রতিপত্তি আমেরিকা সরকারের জন্য অন্যতম এক হুমকি।
শাবাব ইতিমধ্যে সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সবটুকুর দখল নিয়েছে। এবং রাজধানী মোগাদিশু ও পার্শ্ববর্তী দুই দেশ ইথিওপিয়া ও কেনিয়াতে যেকোনো সময় আক্রমন চালানোর সক্ষমতা অর্জন করেছে। আলহামদুলিল্লাহ্। তাই, সন্ত্রাসী অ্যামেরিকা ও পতনোন্মুখ বিশ্বমোড়লদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরাটা স্বাভাবিক।