পশ্চিমা সমর্থিত গাদ্দার সোমালি বাহিনী শেষ পর্যন্ত দেশটির রাজধানী মোগাদিশুতে ২৪ ঘন্টার আরও একটি দীর্ঘ অবরোধ প্রত্যক্ষ করেছে। যা রাজধানী মোগাদিশুর সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত গাদ্দার সরকারের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ কমপ্লেক্স লক্ষ্য করে শুরু হয়েছিলো। আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন কর্তৃক পরিচালিত এই অবরোধে সোমালি সরকারের উচ্চপদস্থ অনেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা সহ অসংখ্য গাদ্দার সৈন্য হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, গত ২৭ নভেম্বর স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় মাগরিবের সালাতের কিছুক্ষণ পর এই অবরোধ শুরু হয়। যা চব্বিশ ঘন্টারও অধিক সময় পর গতকাল ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে আশ-শাবাব প্রশাসন।
অবরোধটি আশ-শাবাব যোদ্ধাদের ইস্তেশহাদী কমান্ডো ফোর্সের একজন মুজাহিদ কর্তৃক কমপ্লেক্সের একটি গুরত্বপূর্ণ ভবন লক্ষ্য করে ইস্তেশহাদী হামলার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ কমপ্লেক্সের ভিতর অবস্থিত “ভিলা রোসা” হোটেলের প্রধান ফটকে শক্তিশালী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ইস্তেশহাদী হামলাটি চালানো হয়। এই হোটেলটি সোমালি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জনপ্রিয় একটি সমাবেশস্থল।
যাইহোক, সফল এই ইস্তেশহাদী হামলার পরপরই আশ-শাবাবের একটি ইনগিমাসী দল উক্ত হোটেল ও কমপ্লেক্সের অন্যান্য ভবনগুলোতে প্রবেশ করেন; সেই সাথে এসব ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকেন। যেখানে মুজাহিদগণ কম্পাউন্ডটগুলিতে অবস্থান নেওয়া উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক প্রকার বন্দী করে ফেলেন। এবং তাদের মধ্যে অনেককে হত্যা ও আহত করেন। তবে হামলা শুরুর কয়েক ঘন্টা মধ্যে দেশটির পশ্চিমা সমর্থিত প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহ উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা কমপ্লেক্স থেকে বিমান সহায়তায় “হিলেনা” সামরিক ঘাঁটিতে পালাতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আহত হয়।
ফাইল ছবি: আহত হয়ে পালিয়ে যাওয়া সোমালি প্রতিরক্ষামন্ত্রি আহমদ দুদুশি
এরপর সেক্যুলার তুর্কিয়ে, ক্রুসেডার আমেরিকা ও বৃটেন সহ পশ্চিমাদের দ্বারা প্রশিক্ষিত সোমালি স্পেশাল ফোর্সগুলি কমপ্লেক্সটি পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা চালায়। যার প্রতিটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থতার রূপ নিয়েছে। আশ-শাবাবের ইনগিমাসী যোদ্ধাদের মতে, সোমালি বাহিনী এতো পরিমাণে কমপ্লেক্স পুনরুদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে যে, তার সঠিক হিসাবও আমাদের মনে নেই।
এদিকে আশ-শাবাব কর্মকর্তারা কঠিন এই সংঘর্ষের মধ্যেও ভিতরে অবস্থানরত তাদের কমান্ডোদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। যার ফলে দেখা যায়, হারাকাতুশ শাবাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে হামলা চলাকালে ২টি বিবৃতি সহ একে একে ১৪ বার হামলার আপডেট দেওয়া হয়েছে।
হামলার সময় আশ-শাবাবের প্রথম বিবৃতির কাভার ইমেজ
সূতমতে, অবরোধ যখন ১২ ঘন্টা অতিক্রম করছিল, তখন ভিতরে অবস্থানরত আশ-শাবাব যোদ্ধাদের অস্ত্রের মৌজুদ অনেকটাই শেষ পর্যায়ে ছিলো। তখন আশ-শাবাবের দিক থেকে হামলার গতিও কিছুটা কমে আসে। এসময় সোমালি স্পেশাল ফোর্সের একটি বড় ইউনিট ভারী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে কমপ্লেক্স পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ভিতরে ঢুকলে, আশ-শাবাব যোদ্ধারা উক্ত বাহিনীটিকে টার্গেট করে আরপিজি ও রকেট লঞ্চার দিয়ে আঘাত করে, এতে বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয় এবং বাকিরা অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ফেলেই পালিয়ে যায়। আর তখনই আশ-শাবাব যোদ্ধারা সোমালি সেনাদের অস্ত্রগুলি কাজে লাগিয়ে অবরোধ আরও দীর্ঘ করে। যেই অবরোধ পরবর্তীতে ২৪ ঘন্টা যাবৎ দীর্ঘায়িত হয়।
আশ-শাবাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অনুযায়ী, মুজাহিদগণ দীর্ঘ এই অবরোধের সময় কমপ্লেক্সের ভিতরে গাদ্দার সোমালি সরকারের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রাজনীতিবিদসহ অন্তত ৫২ কর্মকর্তাকে হত্যা এবং ৩৯ এর বেশি কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছেন। আর সফল এই অবরোধটি পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের সদর দপ্তর, অফিস ও কর্মকর্তাদের গাড়ি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। তবে ভবনগুলোতে অধিকাংশ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সোমালি বাহিনী নিজেরাই। কেননা তারা অবরোধ ভাঙতে না পেরে ভবনগুলো ধ্বংস করে।
অভিযান চলাকালীন আশ-শাবাবের দ্বিতীয় বিবৃতি
আশ-শাবাব কর্তৃক ঘোষিত ক্ষয়ক্ষতির এই পরিসংখ্যানটি ছিলো কমপ্লেক্সের ভিতরের, যা কমপ্লেক্সের ভিতরে অবস্থানরত আশ-শাবাবের ইনগিমাসী যোদ্ধাদের দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রমতে, কমপ্লেক্সের বাহিরে অবস্থান নেওয়া সেনাদের টার্গেট করেও অসংখ্য বার হামলা চালিয়েছেন শাবাব যোদ্ধারা। যাতে আরও কয়েক ডজন সৈন্য হতাহত হয়েছে।
যাইহোক, দীর্ঘ এই অবরোধ শেষে আশ-শাবাবের অধিকাংশ ইনগিমাসী যোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে নিরাপদে তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ফিরে আসেন। আর ইস্তেশহাদী মুজাহিদ সহ কয়েকজন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন (আল্লাহ্ তায়ালা তাদের শাহাদাতকে কবুল করুন)। সোমালি গাদ্দার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আশ-শাবাবের শহীদ যোদ্ধাদের সংখ্যা ৬ জন।
উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক যুদ্ধে সোমালি বাহিনী ও তার মিত্র গোত্রীয় মিলিশিয়ারা মধ্য সোমালিয়া জুড়ে আশ-শাবাব নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি এলাকা দখল করে, কিন্তু সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে নি সোমালি বাহিনী। বরং শাবাবের হামলার ঝড়ের মুখে এলাকাগুলো ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় সোমালি বাহিনী। সেই সাথে মুজাহিদগণ আরও নতুন অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসন রাজধানী মোগাদিশুর অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় পরিচালিত হামলাগুলি নিজেদের শক্তি প্রদর্শন ও শত্রু পক্ষকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে ব্যবহার করছে। রাজধানীতে আশ-শাবাবের সাম্প্রতিক অবরোধের উদ্দেশ্যও ছিল এটি দেখানো যে, হারাকাতুশ শাবাব যোদ্ধারা অদূর ভবিষ্যতে রাজধানী দখল করতে যাচ্ছেন, আর তাঁরা এখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদেও সফল হামলা করার ক্ষমতা রেখেন।
রাজধানীতে শাবাব কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক অবরোধ এমন একটি অপারেশন, যা বিশ্লেষক এবং সোমালি নীতিনির্ধারকদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, আশ-শাবাব দুর্বল হওয়া অনেক দূরের বিষয়, বরং তাঁরাও দিনদিন আরও শক্তিশালী হচ্ছেন। এই হামলার মাধ্যমে এটাও স্পষ্ট যে, সোমালিয়ার রাজধানীতে বিশাল সমর্থন এবং শক্তিশালী লজিস্টিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে আশ-শাবাব। নয়তো আশ-শাবাবের পক্ষে এধরণের হামলা পরিচালনা করা কিছুতেই সম্ভব হতো না, এমনকি তাঁরা হামলার পর নিরাপদে কমপ্লেক্স থেকে বেরও হতে পারতো না।
আশ-শাবাবের ইস্তেশহাদী কমান্ডো ফোর্স
গত বেশ কয়েক বছর ধরে, শাবাব মোগাদিশুর এসওয়াইএল হোটেল, এলিট হোটেল, মাক্কা আল মুকারমা হোটেল, দায়াহ হোটেল, বিচ ভিউ হোটেল, অ্যাম্বাসেডরস হোটেল, সেন্ট্রাল হোটেল, আল সাহাফি হোটেল এবং জাজিরা হোটেলে অভিযান চালিয়েছে। সর্বশেষ ভিলা-রোসাতে ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলার কৃতিত্ব অর্জন করেছে আশ-শাবাব। এনিয়ে চলতি বছর আশ-শাবাব মুজাহিদিন সোমালিয়াজুড়ে সর্বমোট ৪১টি ইস্তেশহাদী হামলা চালিয়েছেন। এর মধ্যে চলতি মাসেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭টি ইস্তেশহাদী হামলা চালিয়েছে আশ-শাবাব, আলহামদুলিল্লাহ।
লেখক
ত্বহা আলী আদনান
ত্বহা আলী আদনান
Comment