নতুন রূপে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানঃ দিকভ্রান্ত পাকি-প্রশাসন
ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রটির নীতিনির্ধারকের আসনগুলি আঁকড়ে ধরে আছে নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু ‘দুষ্ট’ প্রকৃতির লোক, যাদের অধিকাংশই শিয়া মতাবলম্বি। এরা মুখে নিজেদেরকে ইসলাম, মুসলিম এবং পাকিস্তানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ বললেও, তাদের শরীরে বইছে ইংরেজ তথা পশ্চিমাদের গোলামির ধারা।ফলে তারা, ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই ভূমিকে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সংকীর্ণ করে তুলেছে।
পাকি ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে দখলদার পশ্চিমা তথা বিদেশিদের বিশ্বস্ত সেবাদাস হিসাবে উপস্থাপন করতেই সর্বদা ব্যতিব্যস্ত সময় পার করেছে। দুই দশকের আফগান যুদ্ধে দখলদারদের সহায়তা, সীমান্ত অঞ্চলে শরীয়াহ্র আওয়াজ উত্তোলনকারীদের নির্মমভাবে হত্যা করা এবং দেশের হক্কানি আলেম উলামাদের হত্যার মিশনে পশ্চিমা শক্তির হয়ে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করেছে এই দেশের প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী; যা আজও চলমান।
আর এই কাজে দেশকে, জাতিকে এমনকি দেশের গোটা অর্থনীতিকে ধ্বংস করতেও তারা পিছপা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটিতে বিভিন্ন সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা লেগেই আছে।
এর ছোট একটা উদাহারন পাওয়া যায় আফগান জেনারেল মুবিন খানের এক মন্তব্যে থেকে, যেখানে মুবিন খানের সীমান্ত সফরকালে একজন তালিবান মুজাহিদ বলেছিলেন, আপনি কি এখন সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের দিকে যাবেন? তখন তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে এতটাই অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং এই রাষ্ট্রের মাথায় এতটাই ঋণ আছে যে, কোনো বুদ্ধিমানকে যদি ফ্রীতেও এই রাষ্ট্র দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও সে তা গ্রহন করবে না।
ক্ষমতার পালাবদল হলেও বদলায়নি পাকিস্তানের রূপ, কমেনি দারিদ্রতার হার। আর ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায় দেশটির মানুষের। সেই ফাঁকে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে নিজেদের আখের গোছানোতেই বেশি মনযোগী হয়ে থেকেছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের হাল ধরতে ও শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে উঠে দাড়ান হক্কানি আলেমদের একটি দল; তাঁরা সাথে পান ইসলামপ্রিয় একদল তরুণ-যুবককে, যারা অপ-রাজনীতি এবং জুলুমের এই ঘনঘটাময় দিনগুলোকে দূর করতে হাতে অস্ত্র তুলে নেন। আর এই যুবকরাই একতাবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে শহীদ শাইখ বায়তুল্লাহ মেহসুদ (রহ.) এর নেতৃত্বে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) গঠন করেন। এর সুবাদে গত ২০ বছরের আফগান যুদ্ধে তাঁরা সর্বাত্মকভাবে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
যদিও মাঝে খারেজি দায়েশের ফিতনার বছরগুলোতে কিছু ছোট দল দিকভ্রান্ত হয়ে তাদের আনুগত্যে চলে যায়, এবং সেসময় তারা কিছু ‘ভুল’ কাজের মাধ্যমে মুজাহিদদেরকে সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়। তবে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের বিজয়ের পর, সকলেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবারো টিটিপির পতাকাতলে একত্রিত হন। ফের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নিজ ভূমিতে শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার দিকে মনযোগী ও তৎপর হয়।
সেই লক্ষ্যে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী টিটিপি’র আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.) পাকিস্তানজুড়ে দলটির কার্যক্রম আরও প্রশারিত করেন এবং বাকি অন্যান্য ছোট ছোট ইসলামি প্রতিরোধ গ্রুপগুলোকেও এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন আলহামদুলিল্লাহ্। সেই সাথে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন বৃদ্ধি করেন।
টিটিপির শক্তিবৃদ্ধি ও সামরিক অপারেশনের ফলে তখন কিছুটা নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান প্রশাসন। যার ধারাবাহিকতায় গত একবছর ধরে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মধ্যস্থতায় টিটিপির সাথে শান্তি-আলোচনাও করে পাকিস্তান। আর আলোচনার ফলবরূপ দুপক্ষের মধ্যে গত বছর মে মাসে একটি অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
কিন্তু গাদ্দার পাকি সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিরতির মধ্যেও তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রাখে এবং টিটিপির কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাকে শহীদ করে দেয়। ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যেতে শুরু করে। আর তখনই টিটিপি একটানা ৪ মাসের যুদ্ধবিরতি শেষে সেপ্টেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে শুধু প্রতিরক্ষামূলক হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু বারবার সতর্ক করার পরেও গাদ্দার পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রাখে, যার ফলে গত নভেম্বরের শেষে যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসে টিটিপি। সেই সাথে দেশজুড়ে গাদ্দার বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন শুরু করে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনীটি।
টিটিপির এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত বছর টানা ৪ মাসের যুদ্ধবিরতি এবং ৩ মাসের প্রতিরক্ষামূলক হামলা সত্বেও, মুজাহিদগণ গত বছর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩৬৭টি অপারেশন পরিচালনা করছেন। যাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ১০১৫ এর বেশি সদস্য হতাহত হয়েছে। সেই সাথে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অগণিত, শুধু এক সিটিডি কম্পাউন্ডেই টিটিপির হামলায় পাকিস্তানের ৫০ কোটি রুপি সমমূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে টিটিপি দেশজুড়ে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, আফগান তালিবানদের আদলেই দেশে একটি ছায়া সরকার বা প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেছে। যার অধীনে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় , বিচার বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক টিম, অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইফতা বোর্ড এবং প্রাদেশিক গভর্নর সহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়।
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আছেন মুফতি মোয়াজাম হাফিজাহুল্লাহ্। এই মন্ত্রণালয়কে পাকিস্তানের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, প্রথমটিতে পেশোয়ার, মালাকান্দ, মারদান, গিলগিট-বালতিস্তান এবং হাজারা প্রদেশ। দ্বিতীয়টিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দিখান, বানো, কোহাট এবং সোব প্রদেশ। এই মন্ত্রণালয়ের সামরিক বাহিনীর মাঝে একটি ইস্তেশহাদী কমান্ডো ফোর্সও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যারা আল-ফারুক সামরিক ক্যাম্পের দুটি শাখায় প্রশিক্ষণ গ্রহন করে থাকেন। সম্প্রতি এই ইস্তেশহাদী ফোর্সের ৬ মিনিটের একটি দুর্দান্ত ভিডিও রিলিজ করেছে দলটির অফিসিয়াল উমর মিডিয়া।
অপরদিকে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ, প্রতিরোধ বাহিনীর আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.) দ্বারা পরিচালিত হবে।
সবমিলিয়ে টিটিপি এখন আগের যেকোনো সময়ের চাইতে আরও বেশি সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও দক্ষ। ইমরান খানের এক বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে টিটিপির ৪০ হাজার সদস্য রয়েছেন। যাদের আছে আফগান যুদ্ধে আমেরিকা ও ন্যাটোর মতো শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা। শুধু অভিজ্ঞতাই নয়, বরং পশ্চিমাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অত্যাধুনিক সব অস্ত্রও রয়েছে তাদের; আর পিছনে রয়েছে শক্তিশালী একটি ইসলামি ইমারাত।
তাই এটা এখন অনুমেয় যে, সময় থাকতে পাকিস্তান যদি টিটিপির শর্তে মেনে আবারও চুক্তি না করে, তবে আমরা ২০২৩ সালে পাকিস্তান ও টিটিপির মাঝে বড় সামরিক সংঘাত দেখতে পাবো। আর এই সংঘাত হয়তো উপমহাদেশে আরো একটি ইসলামি ইমারতের অভ্যুদয় ঘটাবে, ইনশাআল্লাহ্।
ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রটির নীতিনির্ধারকের আসনগুলি আঁকড়ে ধরে আছে নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু ‘দুষ্ট’ প্রকৃতির লোক, যাদের অধিকাংশই শিয়া মতাবলম্বি। এরা মুখে নিজেদেরকে ইসলাম, মুসলিম এবং পাকিস্তানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ বললেও, তাদের শরীরে বইছে ইংরেজ তথা পশ্চিমাদের গোলামির ধারা।ফলে তারা, ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠা হওয়া এই ভূমিকে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সংকীর্ণ করে তুলেছে।
পাকি ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে দখলদার পশ্চিমা তথা বিদেশিদের বিশ্বস্ত সেবাদাস হিসাবে উপস্থাপন করতেই সর্বদা ব্যতিব্যস্ত সময় পার করেছে। দুই দশকের আফগান যুদ্ধে দখলদারদের সহায়তা, সীমান্ত অঞ্চলে শরীয়াহ্র আওয়াজ উত্তোলনকারীদের নির্মমভাবে হত্যা করা এবং দেশের হক্কানি আলেম উলামাদের হত্যার মিশনে পশ্চিমা শক্তির হয়ে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করেছে এই দেশের প্রশাসন ও সামরিক বাহিনী; যা আজও চলমান।
আর এই কাজে দেশকে, জাতিকে এমনকি দেশের গোটা অর্থনীতিকে ধ্বংস করতেও তারা পিছপা হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটিতে বিভিন্ন সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা লেগেই আছে।
এর ছোট একটা উদাহারন পাওয়া যায় আফগান জেনারেল মুবিন খানের এক মন্তব্যে থেকে, যেখানে মুবিন খানের সীমান্ত সফরকালে একজন তালিবান মুজাহিদ বলেছিলেন, আপনি কি এখন সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের দিকে যাবেন? তখন তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে এতটাই অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং এই রাষ্ট্রের মাথায় এতটাই ঋণ আছে যে, কোনো বুদ্ধিমানকে যদি ফ্রীতেও এই রাষ্ট্র দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও সে তা গ্রহন করবে না।
ক্ষমতার পালাবদল হলেও বদলায়নি পাকিস্তানের রূপ, কমেনি দারিদ্রতার হার। আর ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায় দেশটির মানুষের। সেই ফাঁকে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে নিজেদের আখের গোছানোতেই বেশি মনযোগী হয়ে থেকেছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের হাল ধরতে ও শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে উঠে দাড়ান হক্কানি আলেমদের একটি দল; তাঁরা সাথে পান ইসলামপ্রিয় একদল তরুণ-যুবককে, যারা অপ-রাজনীতি এবং জুলুমের এই ঘনঘটাময় দিনগুলোকে দূর করতে হাতে অস্ত্র তুলে নেন। আর এই যুবকরাই একতাবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে শহীদ শাইখ বায়তুল্লাহ মেহসুদ (রহ.) এর নেতৃত্বে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) গঠন করেন। এর সুবাদে গত ২০ বছরের আফগান যুদ্ধে তাঁরা সর্বাত্মকভাবে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
যদিও মাঝে খারেজি দায়েশের ফিতনার বছরগুলোতে কিছু ছোট দল দিকভ্রান্ত হয়ে তাদের আনুগত্যে চলে যায়, এবং সেসময় তারা কিছু ‘ভুল’ কাজের মাধ্যমে মুজাহিদদেরকে সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়। তবে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের বিজয়ের পর, সকলেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবারো টিটিপির পতাকাতলে একত্রিত হন। ফের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নিজ ভূমিতে শরিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার দিকে মনযোগী ও তৎপর হয়।
সেই লক্ষ্যে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী টিটিপি’র আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.) পাকিস্তানজুড়ে দলটির কার্যক্রম আরও প্রশারিত করেন এবং বাকি অন্যান্য ছোট ছোট ইসলামি প্রতিরোধ গ্রুপগুলোকেও এক পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হন আলহামদুলিল্লাহ্। সেই সাথে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন বৃদ্ধি করেন।
টিটিপির শক্তিবৃদ্ধি ও সামরিক অপারেশনের ফলে তখন কিছুটা নড়েচড়ে বসে পাকিস্তান প্রশাসন। যার ধারাবাহিকতায় গত একবছর ধরে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মধ্যস্থতায় টিটিপির সাথে শান্তি-আলোচনাও করে পাকিস্তান। আর আলোচনার ফলবরূপ দুপক্ষের মধ্যে গত বছর মে মাসে একটি অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়।
কিন্তু গাদ্দার পাকি সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিরতির মধ্যেও তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রাখে এবং টিটিপির কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাকে শহীদ করে দেয়। ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেস্তে যেতে শুরু করে। আর তখনই টিটিপি একটানা ৪ মাসের যুদ্ধবিরতি শেষে সেপ্টেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে শুধু প্রতিরক্ষামূলক হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। কিন্তু বারবার সতর্ক করার পরেও গাদ্দার পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রাখে, যার ফলে গত নভেম্বরের শেষে যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসে টিটিপি। সেই সাথে দেশজুড়ে গাদ্দার বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অপারেশন শুরু করে ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনীটি।
টিটিপির এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত বছর টানা ৪ মাসের যুদ্ধবিরতি এবং ৩ মাসের প্রতিরক্ষামূলক হামলা সত্বেও, মুজাহিদগণ গত বছর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ৩৬৭টি অপারেশন পরিচালনা করছেন। যাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ১০১৫ এর বেশি সদস্য হতাহত হয়েছে। সেই সাথে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অগণিত, শুধু এক সিটিডি কম্পাউন্ডেই টিটিপির হামলায় পাকিস্তানের ৫০ কোটি রুপি সমমূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে টিটিপি দেশজুড়ে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, আফগান তালিবানদের আদলেই দেশে একটি ছায়া সরকার বা প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেছে। যার অধীনে রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় , বিচার বিভাগ, গোয়েন্দা সংস্থা, রাজনৈতিক টিম, অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইফতা বোর্ড এবং প্রাদেশিক গভর্নর সহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়।
তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আছেন মুফতি মোয়াজাম হাফিজাহুল্লাহ্। এই মন্ত্রণালয়কে পাকিস্তানের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, প্রথমটিতে পেশোয়ার, মালাকান্দ, মারদান, গিলগিট-বালতিস্তান এবং হাজারা প্রদেশ। দ্বিতীয়টিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দিখান, বানো, কোহাট এবং সোব প্রদেশ। এই মন্ত্রণালয়ের সামরিক বাহিনীর মাঝে একটি ইস্তেশহাদী কমান্ডো ফোর্সও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যারা আল-ফারুক সামরিক ক্যাম্পের দুটি শাখায় প্রশিক্ষণ গ্রহন করে থাকেন। সম্প্রতি এই ইস্তেশহাদী ফোর্সের ৬ মিনিটের একটি দুর্দান্ত ভিডিও রিলিজ করেছে দলটির অফিসিয়াল উমর মিডিয়া।
অপরদিকে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ, প্রতিরোধ বাহিনীর আমীর মুফতি নূর ওয়ালী মেহসুদ (হাফি.) দ্বারা পরিচালিত হবে।
সবমিলিয়ে টিটিপি এখন আগের যেকোনো সময়ের চাইতে আরও বেশি সুসংগঠিত, শক্তিশালী ও দক্ষ। ইমরান খানের এক বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে টিটিপির ৪০ হাজার সদস্য রয়েছেন। যাদের আছে আফগান যুদ্ধে আমেরিকা ও ন্যাটোর মতো শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা। শুধু অভিজ্ঞতাই নয়, বরং পশ্চিমাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অত্যাধুনিক সব অস্ত্রও রয়েছে তাদের; আর পিছনে রয়েছে শক্তিশালী একটি ইসলামি ইমারাত।
তাই এটা এখন অনুমেয় যে, সময় থাকতে পাকিস্তান যদি টিটিপির শর্তে মেনে আবারও চুক্তি না করে, তবে আমরা ২০২৩ সালে পাকিস্তান ও টিটিপির মাঝে বড় সামরিক সংঘাত দেখতে পাবো। আর এই সংঘাত হয়তো উপমহাদেশে আরো একটি ইসলামি ইমারতের অভ্যুদয় ঘটাবে, ইনশাআল্লাহ্।
লেখক : ত্বহা আলী আদনান
Comment