Announcement

Collapse
No announcement yet.

মালিতে ফ্রান্স ও অপারেশন বারখানের ব্যর্থতার অনুঘটকসমূহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • মালিতে ফ্রান্স ও অপারেশন বারখানের ব্যর্থতার অনুঘটকসমূহ




    ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ‘নির্মূল’ করার মিশন নিয়ে ২০১৩ সালে মালিতে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ফ্রান্স। এরপর প্রায় এক দশক ধরে দেশটিতে দখলদারিত্ব ও রক্তপাত ঘটাতে থাকে ফ্রান্স নেতৃত্বাধীন বাহিনীগুলো। দীর্ঘ এই যুদ্ধে ক্লান্তশ্রান্ত ফ্রান্স অবশেষে ২০২১ সালের জুন মাস থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে এবং ২০২২ সালের আগস্টে সর্বশেষ সেনাদলকে ফিরিয়ে নেয়।

    কথিত পরাশক্তি এবং সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ উপনিবেশবাদী ফ্রান্সের সেনা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত জনমনে নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়।

    কেন ম্যাক্রন মালি থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলো, যা ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে হার মেনে নেওয়ার নামান্তর? ফ্রান্স এই যুদ্ধে প্রতিরোধ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে পূর্ণশক্তিতে ‘অপারেশন বারখান’ পরিচালনা করে, তথাপি কেন তারা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলো? আবার, ফ্রান্স নেতৃত্বাধীন জোটের এই বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরেও ২০২১ সালে মালির সরকারকে কেন প্রতিরোধ বাহিনী (জেএনআইএম) সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধের কথা ভাবতে হলো? সর্বশেষ কেনই বা মালির সরকারকে সাহায্য নিতে হলো রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার মিলিশিয়াদের?

    আজ আমরা জনমনে তৈরি হওয়া এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।


    মালিতে ইউরোপীয়ানদের অপারেশন সার্ভাল ও বারখান:

    দীর্ঘ এক দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মালির ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স অপারেশন সার্ভাল এবং অপারেশন বারখান নামে দুটি বড় পরিসরের যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেছিল। ২০১২ সালে ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রবল আঘাতে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা মালির ক্ষমতাসীন ইসলামবিরোধী, দুর্নীতিবাজ, জালিম সরকার ও এর অনুগত বাহিনী, উপনিবেশবাদী ফ্রান্সের সাহায্য প্রার্থনা করে।
    এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের নেতৃত্বে মালির ভূখণ্ডে শুরু হয় অপারেশন সার্ভাল।



    কথিত এই অপারেশন সার্ভালের শুরুতে ফ্রান্স একচেটিয়া বিমান হামলা, আর্টিলারি নিক্ষেপ ও উন্নত যুদ্ধপ্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজধানী বামাকো প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া ঠেকিয়ে দেয়। এসময় সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় বিপথগামী মিলিশিয়াদের সহায়তা নিয়ে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে তারা মালির উত্তরাঞ্চলে এবং আলজেরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে পিছু হটতে বাধ্য করে।
    সার্ভালের সফলতা বলতে শুধু এটুকুই। রাজধানী বামাকো ব্যতিত অন্য কোনো এলাকা ফ্রান্স তখন দখলে রাখতে পারেনি।

    সার্ভাল অপারেশনের পর ২০১৪ সালের আগস্টে ফ্রান্স আরো বড় পরিসরে শুরু করে অপারেশন বারখান। এই অপারেশন বারখানে যুক্ত হয় ইউরোপীয় অন্যান্য পরাশক্তিগুলো। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশ এবং সাহেল অঞ্চলের বেশ কিছু দেশের সেনাবাহিনী ছাড়াও জাতিসংঘ বিশ্বের ১৫টি দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে এই যুদ্ধে অংশ নেয়। অফিসিয়াল হিসাব অনুযায়ী, এই অপারেশনে শুধু ফ্রান্সেরই ৪৫০০ সৈন্য অংশ নিয়েছিল। এতে যুক্ত করা হয়েছিল ৩টি ড্রোন, ৭টি ফাইটার, ২১টি হেলিকপ্টার, ১০টি এয়ারলিফটার, ২৬০টি ভারী সাঁজোয়া যান, ৩৬০টি লজিস্টিকাল যানবাহন এব ২১০টি হালকা সাঁজোয়া যান সহ অসংখ্য অত্যাধুনীক ও বিধ্বংসী অস্ত্র।

    তবে এতো বিপুল সামরিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও ফ্রান্স এই অপারেশনের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করতে ব্যর্থ হয়। সেই সাথে বিভিন্ন দেশের সেনাদের মধ্যে পারষ্পরিক সমন্বয়ের অভাবও দেখা দেয়।

    ফ্রান্স ঠিক করতে ব্যর্থ হয় – বারখানের সেনারা ‘জেএনআইএম’এর বিরুদ্ধে কি ধরনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে! ফরাসি সেনারা কি ডিফেন্সিভ ধাঁচে লড়াই করবে নাকি এলাকা দখলে নিবে? নাকি তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে থাকবে, যেগুলোর মাধ্যমে ‘জেএনআইএম’ কে আদর্শিক ভাবে পরাজিত করা যেতো? ঠেকানো যেত যুবকদের প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ্রহ!

    বিপরীতে তাদের প্রতিপক্ষ ‘জেএনআইএম’এর ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য – মালিতে যেকোনো মূল্যে ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠা করা। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের কর্মপন্থাও ছিল একটিই – আমৃত্যু লড়ে যাওয়া।



    অপারেশন বারখানে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ আল-কায়েদার যোদ্ধা ও অস্ত্রের মজুদ ছিলো খুবই স্বল্প, যার দ্বারা কথিত পরাশক্তিগুলোর সম্মিলিত জোটবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া একরকম অসম্ভব। তবে শক্তির বিশাল এই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী এক গেরিলা যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন, যেই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত করে ফেলা যাবে।
    কিন্তু ফ্রান্স এর জন্য প্রস্তুত ছিল না।

    তাছাড়া ফ্রান্স স্থানীয় মিত্র হিসেবে যেসব তুয়ারেগ প্যারামিলিটারি বাহিনীকে নির্বাচন করে, তারাও ফ্রান্সের জন্য অনাস্থাভাজন হিসেবে প্রমাণিত হয়। কেননা তুয়ারেগ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়ে নিজেদের স্বাধীন প্রদেশ গঠন করতেই বেশি মনোযোগী ছিল।

    যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধারা টার্গেট কিলিং অপারেশন শুরু করেন, যার দ্বারা তাঁরা নিয়মিত বীরতিতে ফ্রান্স ও মালিয়ান সরকারপন্থি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের হত্যা করতে থাকেন। আর গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রু সেনাদেরকে অস্থির করে তুলেন ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিনের (জেএনআইএম) এধরণের অভিযানের ফলে অপারেশন বারখানে অংশ নেওয়া অসংখ্য সৈন্য এবং মালি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সহ হাজার হাজার সৈন্য নিহত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে মালি সরকার নিজেদের দখলকৃত এলাকার প্রশাসনে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিতে এবং একটি কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।

    বিশিষ্ট সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষক ওয়াসিম নাসেরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মালিতে প্রায় দশকব্যাপি এই সেনা অভিযানে শুধুমাত্র ২০২০ সালেই ফ্রান্সের ব্যয় হয় ১ বিলিয়ন ইউরো। প্রতিবছর ফ্রান্সের আন্তঃদেশীয় ও বহির্বিশ্বের সামরিক কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ৭৬ শতাংশই ব্যয় হতো মালিতে। তাই বলা যায় মালিতে ফ্রান্স পরাজিত, কারণ তারা জিহাদিদের থামাতে পারেনি। উপরন্তু জেএনআইএম এবং রাশিয়ার কাছে কূটনীতির লড়াইয়েও তারা পরাজিত হয়েছে। জেএনআইএম যোদ্ধারা ফ্রান্সকে সামরিকভাবে পুরোপুরি পরাজিত না করলেও তাদেরকে এমন অবস্থায় ফেলেছেন যে, তারা আর কোনো অবস্থাতেই মালির দিকে হাত বাড়াতে পারবে না।
    মালিতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, ওয়াগনার মোতায়েন এবং ফ্রান্সের বিদায়ঘন্টা:


    অপারেশন বারখান এর উল্লেখযোগ্য কোনো ফলাফল দেখতে না পেয়ে মালিয়ান সরকারের মধ্যেই ফ্রান্সের প্রতি অসন্তোষ দানা বাধতে থাকে। এক পর্যায়ে মালির সরকার নিজেদের ব্যর্থতার ভার ফ্রান্সের দিকে চাপিয়ে দিতে শুরু করে। আর ঠিক এই সুযোগ লুফে নেয় রাশিয়া। ২০২০ সালে এক ক্যু এর মাধ্যমে মালির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে মালির সামরিক জান্তা ক্ষমতার দখল নেয়। মালির সামরিক সরকার তখন রাশিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করে। আর গণমাধ্যম ফ্রান্সের বিরুদ্ধে এবং মালির সরকার ও ওয়াগনার যোদ্ধাদের পক্ষে প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে।



    রাশিয়া মালির অভ্যন্তরের বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি গ্রুপ অর্থাৎ নাগরিকদের অধিকার আদায়ের সংস্থাগুলোকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে ওয়াগনারের মিডিয়া আউটলেট এফডিএনভি ভোটিং পোল তৈরির মাধ্যমে দাবি করে যে, মালির শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষ ওয়াগনারের উপস্থিতি কামনা করে।

    রাশিয়ার এসব তৎপরতার ফলে রাজধানী বামাকোর রাস্তায় মানুষ ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভে নেমে পড়ে। ফলে একসময়ের মিত্র ফ্রান্স তখন পরিণত হয় নিউ কলোনিয়ালিস্ট তথা নব্য সাম্রাজ্যবাদীতে। ফ্রান্সের সাথে সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটে যখন মালির সামরিক সরকার ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার কাছ থেকে হেলিকপ্টার ক্রয়ের চুক্তি করে। এই সিদ্ধান্তের কারণে ম্যাক্রন জানান, তিনি মালির সামরিক সরকারের ‘বৈধতা’ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মালির সরকার হাজারখানেক ওয়াগনার যোদ্ধাকে রাশিয়া থেকে নিয়ে এসে মালিতে মোতায়েন করে।

    ন্যাটো-বিরোধী শক্তি রাশিয়ার ওয়াগনার যোদ্ধাদের মালিতে মোতায়েন করার ফলে ন্যাটো জোটভুক্ত ফ্রান্সের কাছে দুটি পথ খোলা থাকে: হয় ওয়াগনারের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া অথবা মালি থেকে সরে পড়া। কিন্তু টানা কয়েক বছর যাবত জেএনআইএমের প্রতিরোধ যুদ্ধ মোকাবেলা করে ক্লান্ত-শ্রান্ত ফরাসিরা নতুন কোনো সংঘাতে লিপ্ত হবার বিলাসিতা দেখানোর পথে হাঁটেনি। তারা বরং সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তই গ্রহণ করে।

    ২০২১ সাল থেকে সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনতে শুরু করে ফ্রান্স। আর ২০২২ সালের ১৬ই আগস্ট ফ্রান্স তার সেনাদের সর্বশেষ ব্যাচকে প্রত্যাহার করে।



    পরাজয় ঢাকার ‘সুযোগ’ হাতছাড়া করলো ফ্রান্স:

    ফ্রান্স অপারেশন বারখানের ব্যর্থতার শত অজুহাত দেখাতে পারলেও এটা তারা অস্বীকার করতে পারবে না যে, তারা মালি থেকে সঠিক সময়ে সরে পড়ার একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
    ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে মালির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বুবাকার ঘোষণা দিয়েছিল যে, চলমান সংঘাত বন্ধে সে প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ এর সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। এখানে ফ্রান্সের সামরিক অভিযান বন্ধ করে নিজ দেশে ফিরে যাবার বড় একটি সুযোগ ছিল। কিন্তু দাম্ভিক ফ্রান্স এই সুযোগ হাতছাড়া করে এবং মালির প্রেসিডেন্টকে শাসিয়ে দেয় এই বলে যে ‘টেররিস্ট’ দের সাথে কোনো প্রকারের বোঝাপড়া করা যাবে না।

    এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে জেএনআইএম ঘোষণা দেয়, তারা ফ্রান্সের ভূখন্ডে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি এবং সামনে করার পরিকল্পনাও নেই। এর মাসখানেক পরে জেএনআইএম এর আমীর শায়েখ আবু উবাইদা (হাফি.) ঘোষণা করেন, মালির মুজাহিদরা কখনো ফ্রান্সের ভূমিকে টার্গেট বানাননি। মূলত এসব বক্তব্যের মাধ্যমে জেএনআইএম ফ্রান্সকে ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তোমাদেরকে আমরা আলোচনার টেবিলে বসে সংঘাত থামাতে আহবান করছি।

    জেএনআইএম এর উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সকে সাময়িকভাবে এই আশ্বাস দেয়া যে, মালির মুজাহিদদের দিক থেকে ফ্রান্স নিরাপদ। মালিতে দখলদার সেনা ব্যতিত ফ্রান্সের ভূখন্ডে তারা হামলা চালাবেন না। কিন্তু ফ্রান্স তাদের এই স্পষ্ট ইঙ্গিতকে এড়িয়ে যায় এবং দ্বিতীয়বারের মতো সমঝোতার মাধ্যমে মিমাংসার সুযোগ হাতছাড়া করে।

    বিশ্লেষক ওয়াসিম নাসর এই ঘটনা সম্পর্কে বলেন, জিহাদিদের দেয়া এই সুযোগকে গ্রহণ করলে ফ্রান্স অপারেশন বারখানকে অন্তত একটি দিক দিয়ে সফল বলতে পারতো যে, তারা নিশ্চিত করেছে মালির জিহাদিদের হাত থেকে তাদের দেশ নিরাপদ। এসব সুযোগ হাতছাড়া করে ফ্রান্স নিজেদের সেনা, অর্থ, মূল্যবান সময় সবই অর্থহীনভাবে অপচয় করেছে। আর এর জন্য এখন তাদের আফসোস হওয়ারই কথা।

    উল্লেখ্য যে, দীর্ঘ এই যুদ্ধে ইসলাম বিরোধী মালির ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজ সরকারের পক্ষে অপারেশন বারখানের ফ্রান্স নেতৃত্বাধীন জোট ছাড়াও আরও কয়েকটি সামরিক জোট অংশ নিয়েছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পশ্চিমা সামরিক জোট তাকুবা, জাতিসংঘের সামরিক জোট MINUSMA এবং সাহেলের সামরিক জোট জি-৫। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আরও অনেক দেশ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। ইতিমধ্যে এই যুদ্ধ থেকে বারখানের জোটের পাশাপাশি তাকুবা ফোর্স ও পশ্চিমা অনেক দেশ সরে দাড়িয়েছে। জি-৫ জোটের কয়েকটি দেশও তাদের অনেক সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে।

    সর্বশেষ জান্তা সরকারের সাথে আস্থার সংকট তৈরির পর জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট MINUSMA দেশটি থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এই জোটের অধীনে বাংলাদেশের দেড় হাজার সৈন্য সহ অন্তত ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে।

    একে একে এসব দেশের সৈন্যদের প্রত্যাহারের পর এখন মালির জান্তা সরকার ওয়াগনারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এদিকে রাশিয়ার সাথে ওয়াগনারের সম্পর্কটা সম্প্রতি ভালো যাচ্ছে না। ফলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াগনার খুব শীগ্রই মালিতে আল-কায়েদা যোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছে, আর ওয়াগনারের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পতন ঘটবে মালির জান্তা সামরিক সরকারেরও।



    সংক্ষেপে, মালিতে ফ্রান্সের অঘোষিত পরাজয়ের কারণগুলো ছিল মূলত:-

    – অপারেশন বারখানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের সেনাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা,
    – ফ্রান্সের অনির্দিষ্ট লক্ষ্য, বিপরীতে আল-কায়েদার ইমারাহ প্রতিষ্ঠার “ওয়ান এ্যান্ড অনলি টার্গেট”,
    – আল-কায়েদার কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আক্রমণসমূহ,
    – আল-কায়েদা কর্তৃক মালির সরকারের ফ্রান্সপন্থী নেতাদের একের পর এক টার্গেট কিলিং করা এবং যার ফলে মালির সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়া,
    – মালির সরকার ও ফ্রান্সের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষ,
    – রাশিয়াপন্থী সামরিক সরকারের ক্ষমতা দখল এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা,
    – সর্বশেষ রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার মিলিশিয়াদের দেশটিতে মোতায়েন।

    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    সুন্দর আর্টিকেল! প্রতিবেদককে জাযাকাল্লাহু খাইরান।
    অপরাধী ফ্রান্সের চাওয়া হয়ত এটা ছিল- যার কারণে সে বিলম্ব করে যে, তার স্থলে আরেক অপরাধী (ওয়াগনার) স্থলাভিষিক্ত হোক! মুজাহিদদের দমন করাই যখন লক্ষ্য তখন অপরাধীরা আপন সংঘাত ভুলে যায়।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ, বরকতময় এই জিহাদে আমাদের শরিক থাকার তাওফিক দান করুন আমিন।
      ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدة ولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القاعدة
      سورة توبة ٤٦

      Comment


      • #4
        এবং এসবের মাধ্যমেই আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের হাতে পরাস্ত করল ইসলামের দুশমনকে। পাওনা মেটানো আরো বহু বাকি এ তো কেবল শুরু - ইনশাআল্লাহ!

        রাষ্ট্রীয় আল্লাহ ও রাসূল বিদ্বেষি সামান্য দুঃখেও মুমিন হৃদয় প্রশান্ত লাভ করে আলহামদুলিল্লাহ।

        স্পেশালি যে কথা বুঝে আসে তা হলে : উম্মাহর দুশমনকে পরাজিত করতে সশস্ত্র জিহাদের বিকল্প কিছুই নেই কারণ রব্বে কারীম দেননি।

        অনেক জাযা-কুমুল্ল-হু খইরন আহসানাল জাযা মুহতারামানে আল-ফিরদাউস মিডিয়া বৃন্দ!
        হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

        Comment


        • #5
          একে একে এসব দেশের সৈন্যদের প্রত্যাহারের পর এখন মালির জান্তা সরকার ওয়াগনারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এদিকে রাশিয়ার সাথে ওয়াগনারের সম্পর্কটা সম্প্রতি ভালো যাচ্ছে না। ফলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ওয়াগনার খুব শীগ্রই মালিতে আল-কায়েদা যোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছে, আর ওয়াগনারের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পতন ঘটবে মালির জান্তা সামরিক সরকারেরও।
          তৃতীয় আরেকটি বিজয় দেখার অপেক্ষায়। আল্লাহ তায়ালা দ্রুত সাহায্য এবং বিজয় দান করুন। আমীন

          Comment

          Working...
          X