ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের বিগত বছরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের এক ঝলক
সম্প্রতি আফগানিস্তানে অনুসৃত সৌর হিজরি বর্ষ পঞ্জিকায় নতুন বছরের আগমন হয়েছে। তাই গত হওয়া ১৪০২ সৌর হিজরি সালে আফগানিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের কার্যক্রম নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিগত বছর আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
যদিও আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এখনও নানাবিধ প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে যাচ্ছে। বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।
পাঠকদের সমীপে ১৪০২ সৌর হিজরি সালের(২১ মার্চ ২০২৩ ইং – ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং)
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হল:
বিগত সৌর বছরে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ছোট বড় অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য অনেক দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। আফগানিস্তানের মুদ্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি বিদেশি একাধিক বিনিয়োগকারী সংস্থা আফগানিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
কুশতেপা খাল খনন (প্রথম পর্যায় সম্পন্ন, দ্বিতীয় পর্যায় চলমান), সালং মহাসড়ক পুনর্নির্মাণ(আংশিক সম্পন্ন) বিগত বছরের মেগা প্রকল্পসমূহের মধ্যে অন্যতম দুটি প্রকল্প। চলমান আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে CASA-১০০০ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্প, ট্রান্স আফগানিস্তান গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প, আমু ওয়া আরুস বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত বছর ১৩ বিলিয়ন আফগানি অর্থ ব্যয়ে ১১৪ টি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। এছাড়া জাতীয় ক্রয় কমিশন ৬০ বিলিয়ন আফগানি প্রকল্প ব্যয়ে ১৮০ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ১১০টির কাজ বিগত বছরে শুরু হয়েছে। এছাড়াও খনিজ সম্পদ খাতে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে সরকার। হেরাত প্রদেশের ঘোরিয়ানে চারটি বৃহৎ খনি খনন কাজের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল খনিতে লোহা, সোনা, সীসা, জিংক, সিমেন্ট প্রকল্প, কয়লা ও মার্বেল পাথরের মত মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। আমু দরিয়া অববাহিকার তেল খনিসমূহ দেশের অর্থনীতিতে অন্যতম সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনগণকে উন্নত পরিষেবা সরবরাহ এবং দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এই সকল প্রকল্প গ্রহণের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এছাড়া বিগত বছর আফগানিস্তানের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইমারতে ইসলামিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গণি বারাদার হাফিজাহুল্লাহ’র দেয়া তথ্যানুযায়ী, বিগত সৌর হিজরি বছরে দেশের মোট রপ্তানি আয় ১.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক পণ্যসমূহ ইরান, পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, চীন, কাজাখিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হচ্ছে। আর আমদানি বাণিজ্যের মধ্যে ২১% ইরান থেকে, ১৮% চীন, ১৮% পাকিস্তান ও ১৪% সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সম্পাদিত হয়েছে।
বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে আফগান মুদ্রার মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৈনিক লেনদেনে বিদেশি মুদ্রার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হাসিবুল্লাহ নুরীর দেয়া তথ্যমতে, আফগানিস্তানের মুদ্রা ‘আফগানি’র মান বর্তমানে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় বেড়েছে, বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল মুদ্রা। আগের বছরের তুলনায় ১৪০২ সৌর হিজরি সালে আফগানি মুদ্রার মান ১৭.৮২% বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তান থেকে ডলার পাচার করা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
প্রতিবেশী দেশ ও অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের আয়োজন ও অংশগ্রহণ করেছে ইমারতে ইসলামিয়া। রাজধানী কাবুলে পৃথক পৃথক দিনে আফগান-উজবেক এবং আফগান-ইরান যৌথ বাণিজ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া কাজাখিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানেও আফগানিস্তানের সাথে যৌথ বাণিজ্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইমারতে ইসলামিয়ার বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক সফর জারি রেখেছেন।
বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগ প্রতিনিধিগণ সময়ে সময়ে আফগানিস্তানে বাণিজ্যিক সফরে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ গত জানুয়ারি মাসে কিরগিজস্তানের অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী দ্যানিয়ার আমানালিয়েভ’র কাবুল সফর উল্লেখযোগ্য। উক্ত সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ট্রানজিটের উন্নয়ন সাধন বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি উভয় দেশের মোকাবেলা করা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোকপাত করা হয়।
বিগত বছরে আফগানিস্তানের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রনালয় দেশের বিমানবন্দরসমূহকে আরও উন্নত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। উক্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে আফগানিস্তানে ২৭ টি বিমানবন্দর সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চালু রয়েছে।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ বিচারে ১৪০২ সৌর হিজরি সালকে একটি সাফল্যের বছর হিসেবে বিবেচনা করছেন ইমারতে ইসলামিয়া মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ হাফিজাহুল্লাহ। আর দারিদ্রে জর্জরিত হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তানের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা। ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের একক নেতৃত্বে আফগানিস্তান অর্থনৈতিক সংকট থেকে অতি শীঘ্রই বের হয়ে আসবে ইনশা আল্লাহ।
তথ্যসূত্র:
1. A look at the economic progress of Afghanistan in 1402
–https://tinyurl.com/yspn6tdm
2. Various Infrastructure Projects Initiated in Past Solar Year 1402: Ministry
–https://tinyurl.com/2d9yawrw
Comment