আফ্রিকার সেন্ট্রাল সাহেল অঞ্চল জুড়ে আল-কায়েদার অভূতপূর্ব সামরিক অগ্রগতি অব্যাহত

আল-কায়েদা পশ্চিম আফ্রিকা শাখা জামা’আত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন (জেএনআইএম), সেন্ট্রাল সাহেল অঞ্চল জুড়ে সামরিক কার্যক্রম কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি “জুলস দুহামেল” নামক একটি জার্নাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত জুলাই পর্যন্ত এই অঞ্চলে ‘জেএনআইএম’ এর সামরিক কার্যক্রম নিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে। মানচিত্রে সেন্ট্রালসাহেল অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে মুজাহিদদের সামরিক কার্যক্রমের স্থানগুলো চিহ্নিত করে এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

মানচিত্রে এটি স্পষ্ট যে, দলটির মুজাহিদিনরা চলতি বছর মালির উত্তরে ব্যাপক সামরিক কার্যক্রম চালাতে শুরু করেছেন, বিশেষ করে কিদালের দিকে দলটির আক্রমণের তীব্রতা বেড়েছে। এছাড়াও অকল্পনীয়ভাবে দেশের কেন্দ্রস্থলে বিশেষ করে সেগৌ, কৌলিকোরো, সিকাসো এবং কায়েসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে হামলার পরিধি বাড়িয়েছে দলটি। এই অঞ্চলগুলোতে পূর্বে দলটির মুজাহিদিনরা ড্রোন এবং বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহার করে জটিল আক্রমণ পরিচালনা করতো, কিন্তু গত কয়েক মাসে দেশের কেন্দ্রের একাধিক শহরে দলটি বৃহৎ পরিসরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থল অভিযান পরিচালনা করেছে। এতে কয়েক হাজার জান্তা সদস্য নিহত ও আহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে শত শত সামরিক যানবাহন ও অগণিত সামরিক সরঞ্জাম। মুজাহিদিনরা এসকল বীরত্বপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে কার্যত রাজধানী বামাকোকে ঘিরে ধরছেন চতুর্দিক থেকে, এই লক্ষ্যে মুজাহিদিনরা রাজধানীর উপকন্ঠের একাধিক শহর অবরোধ করে রেখেছেন এবং অন্য শহরগুলোর বিষয়েও সতর্কতা জারি করেছেন।

‘জুলস দুহামেল’ জার্নালের প্রকাশিত মানচিত্রে চলতি বছর ‘জেএনআইএম’এর সবচাইতে বেশি কার্যকলাপ দেখা গেছে বুরকিনা ফাসোতে। শুধু গত জুলাই মাসেই দেশটির ৫টি সীমান্ত অঞ্চলের ২৭টি শহরে অন্তত ৫২টি হামলা চালিয়েছেন দলটির মুজাহিদিনরা। কার্যত এসকল অভিযান ও সামরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে ‘জেএনআইএম’ বুরকিনা ফাসোর পুরো সীমান্ত অঞ্চল অবরোধ করার কৌশল অবলম্বন করছে। বর্তমানে গিনি সীমান্ত ছাড়া দেশটির অন্য ৫টি সীমান্ত অঞ্চলেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ও উপস্থিতি মজবুত করেছে দলটি। মালির চাইতেও বর্তমানে বুরকিনা ফাসোর বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন ‘জেএনআইএম’ এর হাতে। দলটির মুজাহিদিনরা সীমান্ত অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করার পর এখন জান্তার বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন, এমনকি শহরগুলি অস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন এবং কখনো কখনো কৌশলগত কারণে সেখান থেকে সরে পড়ছেন।

বর্তমানে বুরকিনা ফাসোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেশটির জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে। ২,৭৪,২০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির মাত্র ৪০% ভূখণ্ড এখন জান্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর মালিতে জান্তার পরিনতি আরও ভয়াবহ, ১,২৪০,১৯২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দেশটির ৩০% এরও কম ভূখণ্ড জান্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দু’টি দেশের বাকি বিশাল অংশই ‘জেএনআইএম’ এর নিয়ন্ত্রণে কিংবা সেখানে দলটির সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে।
মুজাহিদিনরা এই দু’টি দেশে সামরিক কার্যক্রম ও দাওয়াতি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই বর্তমানে সীমাবদ্ধ নেই। তাঁরা স্থানীয় জনগণের সমর্থন ও আস্থা অর্জনেও ব্যাপকভাবে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এরমধ্যে রয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি ও মসজিদ তৈরি করা, রাস্তাঘাট মেরামত ও বিশুদ্ধ পানির কূপ তৈরি করা, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, দরিদ্রদের আর্থিকভাবে সাহায্য করা। এছাড়াও দলটির মুজাহিদিনরা মসজিদ ও গোত্র ভিত্তিক দাওয়াতি কর্মশালা পরিচালনা করছেন।
এদিকে নাইজার এবং বেনিনেও ‘জেএনআইএম’ এর সামরিক কার্যক্রম লক্ষ্যণীয়। মালি এবং বুরকিনা ফাসোর তুলনায় এখানে দলটির নিয়ন্ত্রণ ও উপস্থিতি কম হলেও দেশ দু’টিতে চলতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিযান পরিচালনা করেছেন মুজাহিদিনরা। বিশেষ করে নাইজারের দোসো ও টিলাবেরি রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রশারিত করে চলছেন মুজাহিদিনরা। অপরদিকে বুরকিনা ফাসোর সীমান্ত লাগোয়া বেনিনেও ‘জেএনআইএম’এর সামরিক উপস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চাইতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দলটি বেনিন সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে নাইজেরিয়ায়ও নিজেদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেশটিতে মুজাহিদদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে গিনি ও টোগো হয়ে উপকূলীয় দেশগুলোর পশ্চিম দিকেও দলটির সম্প্রসারণ লক্ষ্যণীয়। এই দেশগুলোতে ‘জেএনআইএম’ এর সামরিক অপারেশন কিছুটা কম হলেও উপস্থিতি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘জেএনআইএম’ এর প্রকাশ্য কার্যক্রম কয়েকটি দেশে এতোদিন সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তাদের কার্যকলাপের পটভূমি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক স্ট্রিপের মতো হয়ে উঠছে।
তথ্যসূত্র:
– https://tinyurl.com/mtw9ws6t
Comment