"Al-Qaeda is back"
  [দ্য ইকোনমিক টাইমস ভারতের অন্যতম প্রধান এক সংবাদ মাধ্যম — গত ০১ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে তারা একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম হলো—"Al-Qaeda is back - this country could become the first to be ruled by the terror group in its 40-year history"—ঐ প্রতিবেদনের প্রতিটা শব্দে ফুটে উঠেছে তাদের আতঙ্কের চিহ্ন আর মুজাহিদদের সক্ষমতার ব্যাপারে প্রশংসা। কাফেরদের মুখে উম্মাহর সিংহ পুরুষদের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে? (!) ঐ প্রতিবেদন থেকেই কিছু অংশের "হুবুহু" অনুবাদ এখানে উপস্থাপন করছি]
...
 আল-কায়েদা তাদের চল্লিশ বছরের ইতিহাসে যা কখনও করেনি—একটি দেশের শাসনভার গ্রহণ—তার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মালিতে তাদের সহযোগী গোষ্ঠী জামায়াত নুসরত আল-ইসলাম ওয়াল-মুসলিমিন (JNIM) দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে এবং রাজধানী বামাকো দখলের হুমকি দিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, এটি আল-কায়েদার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসা প্রথম দেশ হতে পারে।গত কয়েক মাস ধরে জঙ্গিরা দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, রাজধানী বামাকোকে ঘিরে ফেলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুটগুলি রুদ্ধ করছে। জ্বালানি সঙ্কট, খাদ্য অবরোধ, এবং আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির ফলে বামাকোর দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে পড়েছে। বাজারগুলিতে প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহনকারী ট্রাক শহরে পৌঁছাতে পারছে না। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, জঙ্গিরা গ্রামাঞ্চলে চেকপয়েন্ট বসিয়েছে, কর আদায় করছে এবং এমনকি অস্থায়ী আদালতও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা বিশেষজ্ঞরা 'ছায়া সরকার' হিসেবে অভিহিত করছেন।
২০২০ ও ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী মালির সামরিক জান্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। পশ্চিমা মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং বিদেশি ভাড়াটে সৈন্যদের ওপর নির্ভরতার কারণে এই সামরিক সরকার দুর্বল ও অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়েছে। সামরিক বাহিনীর মনোবল কম, এবং রসদ সীমিত। জঙ্গিদের ক্রমাগত অগ্রগতি এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়ার কারণে সরকারের ওপর জনগণের আস্থা দ্রুত বিলীন হচ্ছে।
বর্তমানে মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজার জুড়ে ৬,০০০ এরও বেশি সশস্ত্র যোদ্ধা JNIM এর ব্যানারে সক্রিয়। তারা একটি ধৈর্যশীল, কৌশলগত পদ্ধতি অবলম্বন করেছে—রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করা, রসদ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা এবং ধাপে ধাপে রাষ্ট্রের প্রভাবকে ক্ষুণ্ণ করা। বহু গ্রামীণ অঞ্চলে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট উক্ত বাহিনী এখন কার্যত কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পালন করছে; তারা আইন বলবৎ করছে, বিরোধ নিষ্পত্তি করছে এবং বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের প্রভাব সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক অবরোধ এবং স্থানীয় অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি বামাকোর পতন ঘটে, তবে এটি হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা—মার্কিন নির্ধারিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বারা একটি সার্বভৌম জাতি শাসন। এমন পরিস্থিতি আফ্রিকা ও সারা বিশ্বে বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করবে। এটি আল-কায়েদাকে নতুন বৈধতা, আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সম্পদের প্রবেশাধিকার দেবে, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আইএস ইরাক ও সিরিয়ায় স্বল্প সময়ের জন্য পেয়েছিল। এটি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য নতুন নিরাপদ আশ্রয়স্থল সরবরাহ করবে, যা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ।
মানবিক মূল্য ইতিমধ্যেই চরম আকার ধারণ করেছে। ৮ মিলিয়নেরও বেশি মালির নাগরিকের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এই বছর উগ্রপন্থার সাথে সম্পর্কিত সহিংসতায় ২,০০০ এরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। একাধিক প্রদেশে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে রসদের অভাব দেখা দিচ্ছে। যুদ্ধ তীব্র হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে এই অবরোধ চলতে থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
অর্থনৈতিক পতন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গ্যাস স্টেশনে তেলের জন্য দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে, এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট এখন সাধারণ ঘটনা। মৌলিক পরিষেবা সরবরাহের ক্ষমতা সরকার প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক অংশীদাররা সরে যাচ্ছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলি নিজেদের সঙ্কট নিয়ে ব্যস্ত থাকায়, মালি বিপজ্জনকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আল-কায়েদার কাছে মালি কেবল একটি অঞ্চলের চেয়েও বেশি কিছু। এটি একটি আদর্শিক বিজয়। এটি প্রমাণ করে যে অধ্যবসায় এবং স্থানীয় জোটের মাধ্যমে এই গোষ্ঠী বিদ্রোহ থেকে শাসনে রূপান্তরিত হতে পারে। এই রূপান্তর সফল হলে সাহেল, উত্তর আফ্রিকা এবং এমনকি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে জিহাদি আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। গোষ্ঠীটির প্রচার মাধ্যমগুলি ইতিমধ্যেই এই অভিযানকে 'দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র' এবং 'বিদেশি প্রভাবের' উপর এক ঐশ্বরিক বিজয় হিসাবে তুলে ধরছে।
তবে বামাকোর যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। সামরিক বাহিনী এই মুহূর্তে রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। কিন্তু সরবরাহ লাইন অবরোধের মুখে, এবং মনোবল হ্রাস পাচ্ছে। আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত সামরিক সাহায্য না পৌঁছায়, তবে বছরের শেষের আগেই শহরটি সরাসরি আক্রমণের মুখে পড়তে পারে। দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নিলে, মালি অচিরেই এমন এক সীমা অতিক্রম করতে পারে যা কেউ ভাবেনি—আধুনিক ইতিহাসে আল-কায়েদা শাসিত প্রথম জাতিতে পরিণত হওয়া।
বিশ্ব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মালির পতন শুধু পশ্চিম আফ্রিকাকেই নয়, বরং আগামী বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস দমন নীতিকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। যা স্থানীয় বিদ্রোহ হিসেবে শুরু হয়েছিল, তা এখন একটি সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। আল-কায়েদার প্রত্যাবর্তন, যা একসময় অসম্ভব মনে হয়েছিল, তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এবং তাদের পরবর্তী বিজয় হয়ত যুদ্ধক্ষেত্রে নয়—একটি দেশের রাজধানীর অভ্যন্তরে হতে পারে।
...
  পুরো প্রতিবেদন পড়ুন
.
  .
https://m.economictimes.com/news/international/us/al-qaeda-is-back-this-country-could-become-the-first-to-be-ruled-by-the-terror-group-in-its-40-year-history/articleshow/125016306.cms