বহু বছর যাবত সিগার(Special Inspector for Afghanistan Reconstruction –SIGAR) মার্কিন সরকারের আফগানিস্তান পুনর্গঠন বিষয়ক বিশেষ পরিদর্শক সংস্থা হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত আমেরিকার সাধারণ জনগণ এবং মার্কিন সিনেট সদস্যদের আফগান যুদ্ধের সামগ্রিক উন্নতি (অথবা অবনিত) বিষয়ে অবহিত করে থাকে। গত সপ্তাহের বুধবার সিগার তার ৪৩তম ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যেখানে আমেরিকান জন্য আফগান যুদ্ধের ভয়াবহ কিছু বাস্তবতা উঠে এসেছে। ভুয়া ও মিথ্যা প্রপাগান্ডা সংবাদের এই যুগে সিগারের এই রিপোর্ট কিছুটা হলেও বাস্তবতার নির্দেশ করে এবং বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে বর্তমান সমগ্র আফগান জাতির দুই-তৃতীয়াংশ আফগান সরকার নিয়ন্ত্রণত্রিত বা প্রভাবিত এলাকায় বসবাস করছে। অথচ এই ধরনের তথ্য কোনভাবেই আফগান বা আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সেনাদের জয়ের নির্দেশক নয়। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ১৪০০০ মার্কিন বাহিনীসহ আরও হাজার খানেক প্রাভেট নিরাপত্তা সংস্থার কাজ করে করে আসছে।
সামগ্রিকভাবে আফগান যুদ্ধে বেসামরিক ও সামরিক হতাহতের সংখঅ্যা পর্যায়ক্রমে ৫% ও ১১% হারে বেড়েছে। একই সময়ে শুধুমাত্র আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে ৩১শতাংশ। বেসামরিক হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে যার মূল কারন হচ্ছে আমেরিকান বাহিনীর চালানো নির্বিচার বিমানহামলাগুলো।
ইতিমধ্যেই আফগান জাতীয় সেনাবাহিনী তার মোট সামরিক শক্তির ব্যাবহারের সক্ষমতা ৮৩শতাংশে নেমে এসেছে। দ্রুতই আফগান বাহিনীতে সেনা সংখ্যা কমছে যা সামরিক বাহিনীটির দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। উল্লেখ ৪মাস আগে সিগারের গত রিপোর্টে এই সক্ষমতার হার ছিল ৮৭.৫শতাংশ।
সিগার রিপোর্ট অনুসারে আফগান সেনাবাহিনীর মনোবল এবং দৃঢ়তা আজও সমস্যাসংকুল অবস্থায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আফগান পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য মার্কিন সরকারের একটি প্রোগ্রামের ৪০শতাংশ প্রশিক্ষনার্থী পালিয়ে গেলে আমেরিকা প্রোগ্রামটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
বহু বছর ধরে আমেরিকা আফগানিস্তানে দুর্নীতি দমনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু সিগার রিপোর্ট অনুসারে আজ অবধি তা বেড়েই চলছে এবং রিপোর্ট অনুসারে তা কমিয়ে আনার জন্য আফগান সরকার তেমন কোন চেষ্টাই চালায়নি। ২০০২ থেকে আমেরিকা আফগানিস্তানে পপি চাষ বন্ধে এই পর্যন্ত ৯০০কোটি ডলার ব্যায় করেছে কিন্তু তা কোন প্রকার ফলবয়ে আনতে ব্যার্থ হয়েছে।
যুদ্ধে ১৮ বছর অতিক্রম করলেও আজও দেশটিতে একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ২০১৮ দেশটির পুরো রফতানির পরিমান ছিল মাত্র ১০০কোটি ডলারেরও কিছু কম। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ব্যায়ের ৭০শতাংশই আসে বিদেশী অর্থ সহায়তা থেকে যা কাবুল সরকারকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি হাসপাতালে পরিণত করেছে। একইভাবে আফগান গণতন্ত্রও আছে লাফ সাপোর্টে –যা মার্কিন আগ্রাসনের সফলতা-ব্যার্থতার একটি নির্দেশক হতে পারে। ভোটিং সিস্টেমের সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন ইতিমধ্যমেই দুইবার পেছানো হয়েছে।
এই সবকিছুই আফগান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমেরিকার জন্য একটি ভয়ংকর ছবি তুলে ধরে। বহু বছর ধরেই কাবুলে অবস্থিত মার্কিন কমান্ডার ও ওয়াশিংটোনে অবস্থিত সিনিয়র কর্মকর্তারা আফগান যুদ্ধকে একটি ‘অচলবস্থা’ বলে দাবী করে আসছিল। কিন্তু সিগার রিপোর্ট বলছে এই ধরনের শব্দপ্রয়োগ বা ধারনা বাস্তবতা থেকে খুব বেশি অতিরঞ্জিত। যদিও পরিষ্কারভাবে এটা উল্লেখ করা হয়নি তবে সিগার রিপোর্টের সারকথা হচ্ছে এই যে, ১৮ বছর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং ৯০০ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ের পরও আমেরিকা একটি নিরাপদ, স্থায়ী ও গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান গড়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছে।
অবশ্যই আমেরিকার সেই উচ্চাকংখাগুলো অনেক আগেই অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছে যেখানে বর্তমান আফগান যুদ্ধে আমেরিকার লক্ষ্যই হচ্ছে তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সমঝোতা করা এবং নিরাপদে দেশে ফিরে আসা। এখানে 'সমঝোতা' হচ্ছে ব্যার্থতাকে উদারতার মোড়কে আড়াল করার জন্য একটি পোষাকি শব্দ মাত্র। অবিরামভাবে সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ ব্যাতীত ট্রাম্প প্রশাসন শুধু তালেবানের কাছে অনুনয়ই করে যাচ্ছে এই আশায় যে, তালেবান একটি শান্তি চুক্তিতে আসবে এবং আমেরিকান সেনাবাহিনী চিরকালের জন্য আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে "শান্তি" এই শব্দটিও একটি পোষাকি নাম মাত্র। শান্তি আলোচনা থেকে আফগান সরাকারের প্রতিনিধিদেরকে বাদ দেয়া পরিষ্কারকারভাবেই বলে দিচ্ছে যে আলোচনায় কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে(আমেরিকার বা তালেবানেরই হচ্ছে -অনুবাদক)
খুব শীঘ্রই অথবা কিছুকাল পরে হয়টো একদিন আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে, নিঃসন্দেহে সেই সময় ট্রাম্প নিজেকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে জণ্য মনোনীত করবে। এটা নিশ্চিত যে, একবার আফগানিস্তান থেকে সকল আমেরিকান সেনাবাহিনী সরিয়ে আনার পর আফগানিস্তানের ভাগ্যে কি রয়েছে ট্রাম প্রশাসন সেই ব্যাপারে কোন কেয়ারই করছে না। সত্য এটাও যে, আমেরিকান জনগণেরও কি এই ব্যাপারে কোন চিন্তা আছে -যদিও ২০০১ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধে চলতেই থাকে।
মূল-লেখকঃ অ্যান্ড্রু জে. ব্যাকভিচ, এমিরেটস, ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বোস্টন ইউনিভার্সিটি। (সংক্ষেপিত)
সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে বর্তমান সমগ্র আফগান জাতির দুই-তৃতীয়াংশ আফগান সরকার নিয়ন্ত্রণত্রিত বা প্রভাবিত এলাকায় বসবাস করছে। অথচ এই ধরনের তথ্য কোনভাবেই আফগান বা আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন সেনাদের জয়ের নির্দেশক নয়। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ১৪০০০ মার্কিন বাহিনীসহ আরও হাজার খানেক প্রাভেট নিরাপত্তা সংস্থার কাজ করে করে আসছে।
রিপোর্ট অনুসারে শত্রুপক্ষ(তালেবান) আক্রমণের সূচনা করছে -যা নির্দেশ করছে কোন পক্ষ যুদ্ধে কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে এবং প্রতিনিয়তই এই হামলার পরিমান বাড়ছে এবং তা বিগত রিপোর্তে উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে ১৯শতাংশ বেশি। প্রতি মাসে তালেবানের এমন আক্রমণের সংখ্যা গড়-পড়তা ২০০০ দাড়িয়েছে। হ্যা, সংখ্যাটা ঠিকই শুনেছেন –প্রতিমাসে দুই হাজার হামলা পরিচালনা করছে তালেবান। সোজা কথা তালেবান আক্রমন চালিয়ে যাচ্ছে আর সরকার ও মার্কিন বাহিনী তা প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সামগ্রিকভাবে আফগান যুদ্ধে বেসামরিক ও সামরিক হতাহতের সংখঅ্যা পর্যায়ক্রমে ৫% ও ১১% হারে বেড়েছে। একই সময়ে শুধুমাত্র আফগান নিরাপত্তা বাহিনীতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে ৩১শতাংশ। বেসামরিক হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে যার মূল কারন হচ্ছে আমেরিকান বাহিনীর চালানো নির্বিচার বিমানহামলাগুলো।
ইতিমধ্যেই আফগান জাতীয় সেনাবাহিনী তার মোট সামরিক শক্তির ব্যাবহারের সক্ষমতা ৮৩শতাংশে নেমে এসেছে। দ্রুতই আফগান বাহিনীতে সেনা সংখ্যা কমছে যা সামরিক বাহিনীটির দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। উল্লেখ ৪মাস আগে সিগারের গত রিপোর্টে এই সক্ষমতার হার ছিল ৮৭.৫শতাংশ।
সিগার রিপোর্ট অনুসারে আফগান সেনাবাহিনীর মনোবল এবং দৃঢ়তা আজও সমস্যাসংকুল অবস্থায় রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আফগান পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য মার্কিন সরকারের একটি প্রোগ্রামের ৪০শতাংশ প্রশিক্ষনার্থী পালিয়ে গেলে আমেরিকা প্রোগ্রামটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
বহু বছর ধরে আমেরিকা আফগানিস্তানে দুর্নীতি দমনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু সিগার রিপোর্ট অনুসারে আজ অবধি তা বেড়েই চলছে এবং রিপোর্ট অনুসারে তা কমিয়ে আনার জন্য আফগান সরকার তেমন কোন চেষ্টাই চালায়নি। ২০০২ থেকে আমেরিকা আফগানিস্তানে পপি চাষ বন্ধে এই পর্যন্ত ৯০০কোটি ডলার ব্যায় করেছে কিন্তু তা কোন প্রকার ফলবয়ে আনতে ব্যার্থ হয়েছে।
যুদ্ধে ১৮ বছর অতিক্রম করলেও আজও দেশটিতে একটি স্থিতিশীল অর্থনীতি অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ২০১৮ দেশটির পুরো রফতানির পরিমান ছিল মাত্র ১০০কোটি ডলারেরও কিছু কম। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় ব্যায়ের ৭০শতাংশই আসে বিদেশী অর্থ সহায়তা থেকে যা কাবুল সরকারকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি হাসপাতালে পরিণত করেছে। একইভাবে আফগান গণতন্ত্রও আছে লাফ সাপোর্টে –যা মার্কিন আগ্রাসনের সফলতা-ব্যার্থতার একটি নির্দেশক হতে পারে। ভোটিং সিস্টেমের সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন ইতিমধ্যমেই দুইবার পেছানো হয়েছে।
এই সবকিছুই আফগান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমেরিকার জন্য একটি ভয়ংকর ছবি তুলে ধরে। বহু বছর ধরেই কাবুলে অবস্থিত মার্কিন কমান্ডার ও ওয়াশিংটোনে অবস্থিত সিনিয়র কর্মকর্তারা আফগান যুদ্ধকে একটি ‘অচলবস্থা’ বলে দাবী করে আসছিল। কিন্তু সিগার রিপোর্ট বলছে এই ধরনের শব্দপ্রয়োগ বা ধারনা বাস্তবতা থেকে খুব বেশি অতিরঞ্জিত। যদিও পরিষ্কারভাবে এটা উল্লেখ করা হয়নি তবে সিগার রিপোর্টের সারকথা হচ্ছে এই যে, ১৮ বছর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং ৯০০ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ের পরও আমেরিকা একটি নিরাপদ, স্থায়ী ও গণতান্ত্রিক আফগানিস্তান গড়ে তুলতে ব্যার্থ হয়েছে।
অবশ্যই আমেরিকার সেই উচ্চাকংখাগুলো অনেক আগেই অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছে যেখানে বর্তমান আফগান যুদ্ধে আমেরিকার লক্ষ্যই হচ্ছে তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে সমঝোতা করা এবং নিরাপদে দেশে ফিরে আসা। এখানে 'সমঝোতা' হচ্ছে ব্যার্থতাকে উদারতার মোড়কে আড়াল করার জন্য একটি পোষাকি শব্দ মাত্র। অবিরামভাবে সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ ব্যাতীত ট্রাম্প প্রশাসন শুধু তালেবানের কাছে অনুনয়ই করে যাচ্ছে এই আশায় যে, তালেবান একটি শান্তি চুক্তিতে আসবে এবং আমেরিকান সেনাবাহিনী চিরকালের জন্য আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে "শান্তি" এই শব্দটিও একটি পোষাকি নাম মাত্র। শান্তি আলোচনা থেকে আফগান সরাকারের প্রতিনিধিদেরকে বাদ দেয়া পরিষ্কারকারভাবেই বলে দিচ্ছে যে আলোচনায় কার স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে(আমেরিকার বা তালেবানেরই হচ্ছে -অনুবাদক)
খুব শীঘ্রই অথবা কিছুকাল পরে হয়টো একদিন আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে, নিঃসন্দেহে সেই সময় ট্রাম্প নিজেকে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে জণ্য মনোনীত করবে। এটা নিশ্চিত যে, একবার আফগানিস্তান থেকে সকল আমেরিকান সেনাবাহিনী সরিয়ে আনার পর আফগানিস্তানের ভাগ্যে কি রয়েছে ট্রাম প্রশাসন সেই ব্যাপারে কোন কেয়ারই করছে না। সত্য এটাও যে, আমেরিকান জনগণেরও কি এই ব্যাপারে কোন চিন্তা আছে -যদিও ২০০১ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধে চলতেই থাকে।
মূল-লেখকঃ অ্যান্ড্রু জে. ব্যাকভিচ, এমিরেটস, ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, বোস্টন ইউনিভার্সিটি। (সংক্ষেপিত)
Comment