আফগানিস্তানের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আমেরিকার প্রায় দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলা সামরিক আগ্রাসন বন্ধ হলেও অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন এখনো বন্ধ হয়নি। তালেবানরা পুরো আফগানিস্তানের ক্ষমতা ভার দখলের পরপরেই এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব সন্ত্রাসী আমেরিকা আফগানিস্তানের জনগণের কষ্টার্জিত আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯.৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আটকে দেয়। দারিদ্র ও ক্ষুধায় জর্জরিত আফগান জনগণ যখন তালেবানদের সহায়তায় নিজেদের হারানো গৌরব ও স্বাধীনতা ফিরে পেল, ঠিক তখনই সন্ত্রাসী আমেরিকা আফগান জনগণের মুখের খাবার কেড়ে নিতে নতুন করে অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের পথ বেছে নিলো। আসলে গাদ্দাররা সর্বদা এমনিই হয়। তথাকথিত প্রগতিশীল গাদ্দার আমেরিকা কয়েক মাস আগেও যখন তাদের অনুগত আফগান পুতুল সরকার ক্ষমতায় ছিলো, তখনও তারা আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতো শুধু মাত্র মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যার করার জন্য। আর এখন যখন আফগানিস্তানের প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা তাদের দেশের স্বাধীনতা ফিরে পেলো, ঠিক তখনই অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে সন্ত্রাসী আমেরিকা আফগানিস্তানে তাদের সমস্ত অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিল। এটাই হচ্ছে গাদ্দারদের আসল চেহারা। সন্ত্রাসী আমেরিকা এতদিন সাপের গর্তে থেকে তার আসল চেহারা পৃথিবীবাসীর সামনে আড়াল করতে চেয়েছে। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হলো না। সাপের মাথা, সন্ত্রাসীদের সর্দার আমেরিকার নোংড়া চেহারা (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি) দিনদিন পৃথিবীবাসীর সামনে আস্তে আস্তে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। সাথে সাথে তাদের মান সম্মানও দিনদিন ধুলোর সাথে মিশে যাচ্ছে, যদিও তাদের আত্নসম্মানবোধ বলতে কিছু নেই। কারণ অ্যামেরিকানরাই হচ্ছে একমাত্র জাতি যারা বর্তমান যামানায় ফিতনা-ফাসাদের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করছে। এই অ্যামেরিকানরাই হচ্ছে তারা যারা প্রায় দীর্ঘ দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে নীরব গণহত্যা চালিয়ে এসেছে কথিত নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অজুহাতে। আর আজ যখন সেই একই আফগানিস্তানের নারীরা তাদের জীবন-জীবিকার জন্য হাহাকার করছে তখন কোথায় গেল সেই প্রগতিশীল নারীবাদী অ্যামেরিকানরা? কোথায় গেল তাদের মানবতা? যেই অ্যামেরিকানরা বছরের পর বছর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নাম করে আফগানিস্তানে নতুন নতুন আগ্নেয়াস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে ঠিক সেই অ্যামেরিকানরাই আজ আফগানিস্তানে মানবাধিকারের বুকে কবর রচনা করার জন্য অর্থনৈতিক আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে, যদিও এটা নতুন কিছু নয়। এরা হচ্ছে দুমুখো ধারালো অস্ত্রের মত, যেদিকেই আপনি টানেন না কেন সেদিক দিয়েই এটি কাটবে। প্রকৃত কথা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের সর্দার আমেরিকা তার বিন্দুমাত্র স্বার্থ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নয়। যখনই তার কোন স্বার্থে আঘাত লাগে তখনই সে তার আসল চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়। হোক তারা মুসলিম কিংবা অন্য কোনো জাতি, সকলের সাথেই সন্ত্রাসী আমেরিকা প্রায় একই নীতিতে চলে। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করা যাক। যদিও ক্রুসেডর আমেরিকার গাদ্দারির এরকম হাজার হাজার উদাহরণ রয়েছে। তারপরও এই উদাহরণের মাধ্যমে আমাদের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। চীনা টেলিযোগাযোগ ও মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানী হুয়াই (Huawei)-এর উপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ তার বাস্তব উদাহরণ। হুয়াই-এর ব্যবসায়িক নীতিমালা যা আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থি, আর এ কারণেই আমেরিকা তার নিজ স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে পথে বসাতেও পিছপা হয় না। আসলে কথিত মানবতার ফেরিওয়ালা আমেরিকা এমনই। আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগলে সে তার বন্ধুদেরও পেছন থেকে ছুরি মারতে দ্বিধাবোধ করে না।
যাই হোক একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আর তা হল পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের কিছু না কিছু সম্পদ সন্ত্রাসী আমেরিকার ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জিভূত রয়েছে। আমেরিকা এমন এক দাজ্জালী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে যেখানে আমেরিকা নিজেই একটি বিশ্ব ব্যাংক হিসেবে কাজ করছে। এক রকম নিরুপায় হয়েই পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো আমেরিকার মাধ্যমে লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সম্পদের একটা বিরাট অংশ সর্বদাই আমেরিকার ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জিভূত থেকে যাচ্ছে। কোন রাষ্ট্র চাইলেই আমেরিকার ব্যাংকগুলোতে পুঞ্জিভূত রাখা এই সম্পদ কখনই পুরোপুরি চিরতরে উত্তোলন করতে পারবে না। কেননা দাজ্জালী বিশ্ব ব্যবস্থার নীতিমালা অনুযায়ী আমেরিকার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সম্পদ জমা ও লেনদেন করতে হবে কুফফার জাতিসংঘভূক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রকেই। সেই হিসেবে আমার ও আপনার মত অনেক লোকের পকেটের টাকার একটা বিরাট অংশ ক্রুসেডর আমেরিকার ব্যাংকগুলোতে জমা আছে এবং প্রতিনিয়ত লেনদেন হচ্ছে। ক্রুসেডর আমেরিকার স্বার্থে যখন আঘাত লাগবে ঠিকই তখন বর্তমান আফগানিস্তানের মতো আমাদের কষ্টার্জিত সম্পদের উপরও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করবে। তাই এখনই সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করার, যাতে করে মাজলুন আফগানদের মত আমাদেরও করুন পরিণতি বরণ করতে না হয়। আর মুসলিমদের হারানো গৌরব ও মান-মর্যাদা ফিরে পেতে বর্তমান মুসলিম নামধারী গাদ্দার শাসকদের দিকে চেয়ে না থেকে মুসলিমদের নিজেদের রাস্তা নিজেদেরই দেখা উচিত বলে মনে করি।
তথ্যসূত্রঃ > https://www.bloomberg.com/news/artic...al-bank-assets
> https://www.androidauthority.com/hua...id-ban-988382/
Comment