ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নাগরিকদের মাঝে ইসলামি চেতনা প্রসারিত করতে ব্যাপক দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে এসেছে ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে আফগানবাসী ক্রমেই শরীয়াহ আইনের প্রতি আরও অনুগতশীল হয়ে উঠছে। এবার তাই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন অনুমোদন করেছেন ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের সর্বোচ্চ আমির মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা হাফিযাহুল্লাহ। গত ২১ আগস্ট ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে।
অনুমোদিত এই আইনে ৪টি অধ্যায় ও ৩৫টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ আইনটি অনুসরণ করে তাদের দায়িত্ব ও কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এই আইনে বর্ণিত বিষয়াদির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হল নারীদের হিজাব, পুরুষদের বেশভূষা, গণমাধ্যম বিধিমালা ও জনগণের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আচরণ বিধিমালা।
এই আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ ইসলামী শরীয়াহ ও হানাফি ফিকহের মানদণ্ড অনুসরণ করবেন। তাঁরা জনগণের মাঝে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের আমল করতে বাধ্য থাকবেন। তবে এতে নাগরিকদেরকে নম্রতার সাথে নসিহত করার কথা বলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের অবশ্যই জাতীয়তাবাদী চেতনা যেমন: ভাষা, আঞ্চলিকতা, গোষ্ঠী এসবের উর্ধ্বে থাকতে হবে, জনগণের মাঝে শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। শরীয়াহ অনুমোদিত বিষয় ছাড়া সাধারণভাবে কোন মুসলিমের গোপন গুনাহ প্রকাশ করতে আইনে নিষেধ করা হয়েছে। তালেবান সরকারের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বরকতুল্লাহ রাসূলী কথাগুলো বর্ণনা করেন।
উক্ত আইনের ১৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নারীদের পোশাক ও চলাফেরায় ইসলামী শরীয়াহ মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন: বাহিরে চলাফেরার ক্ষেত্রে নারীদের পুরো শরীর ঢাকা বাধ্যতামূলক। ফেতনার আশংকা থাকায় তাদেরকে নেকাবও পরিধান করতে হবে। পাতলা ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান পরিহার করতে হবে। তাদেরকে কন্ঠের শালীনতা রক্ষা করতে হবে, অর্থাৎ উচ্চস্বরে কথা বলা বা হাসা, পর-পুরুষকে আকর্ষণ করে এমন ভাষা বর্জন করতে হবে। নারীদের বাহিরে সফরের ক্ষেত্রে অবশ্যই মাহরাম পুরুষ সাথে থাকতে হবে।
১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিউজ বা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। যেমন মুসলিমদের অবমাননা করে সংবাদ প্রকাশ না করা, প্রাণীর ছবি অঙ্কন বা ছাপানো থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। এছাড়া কম্পিউটার বা মোবাইলে প্রাণীর ছবি বা ভিডিও দেখাও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
২২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, টাইপরাইটার, রেডিও এবং এই ধরনের ডিভাইসগুলো দ্বারা হারাম কাজ করা যাবে না। এই অনুচ্ছেদে পশ্চিমাদের অনুসরণে টাই পড়াকে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া এক মুষ্টির নিচে দাড়ি ছাঁটা ও কাফেরদের অনুকরণে চুল সাজানোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে কাফেরদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করা, তাদের অনুসরণ করা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া মাদক, জুয়া, ব্যভিচার নিয়ন্ত্রণ করতে কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। কোন ব্যক্তি নামাজ, রোজা আদায় করতে অস্বীকার করলে এই আইনের আওতায় কর্মকর্তাগণ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
কোনও ব্যক্তি আইন লঙ্ঘন করলে অপরাধের মাত্রা হিসেবে তাকে সতর্কতা অথবা এক ঘণ্টা থেকে তিন দিন পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপযুক্ত মনে করেন এমন শাস্তির পরামর্শ দিতে পারবেন।
তথ্যসূত্র:
1. IEA supreme leader approves law on propagation of virtue and prevention of vice
– https://tinyurl.com/4bajs95d
2. Vice and Virtue Law Ratified By Islamic Emirate Leader
– https://tinyurl.com/mv55bkbz
Comment