সালাফী আলেম শাইখ আবু উবাইদুল্লাহ মুতাওয়াক্কিলকে হত্যা, তালিবানের নিন্দা!
সম্প্রতি গত ৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের অন্যতম মশহূর সালাফী আলেম, আবু উবাইদুল্লাহ মুতাওয়াক্কিলকে কাবুল থেকে কিছু দূরে হত্যা করা হয়েছে। নিহত অবস্থায় তার লাশকে টুকরা টুকরা করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেই সাথে তার একজন ছাত্রকেও হত্যা করা হয়েছে। যাকে তার সাথেই অপহরণ করা হয়েছিল।
তিনি ছিলেন সালাফী মানহাজের দাওয়াতের পথে একজন নিবেদিত প্রাণ মুখলেস দাঈ। ছিলেন মানুষের কল্যাণকামী, হেদায়াতের পথে আহব্বানকারী দুনিয়া বিমুখ আলেম।
উনার পরিবার সুত্রে জানা যায়, তালিবান কাবুল বিজয়ের পর অন্যান্য বন্দীদের সাথে তিনিও কারাগার থেকে বের হয়ে যান। এবং কাবুলের গাঞ্জানাবাদ কোম্পানি এলাকায় নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। গত ২৪ আগস্ট একটি সাদা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে পাঁচ জন সশস্ত্র ব্যক্তি তালিবান পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
তালিবানের বক্তব্য-
শাইখ মুতাওয়াক্কিলের পরিবার স্থানীয় থানার তালিবান পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ করলে তারা তাৎক্ষণিক জানান যে হয়তোবা মুজাহিদিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গিয়েছেন। আশা করি উনি দ্রুতই ফিরে আসবেন। কিন্তু উনারা আরও যাচাইয়ের পর জানান যে তালিবান গোয়েন্দা বাহিনী উনাকে নিয়ে যান নি। উনারা অপহরণকারীদের ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পরিশেষে উনার বিধ্বস্ত লাশ পাওয়া যায় কাবুলে।
এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর তালিবান মুখপাত্র যাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক টুইট বার্তায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন-
আলিমে দ্বীন মৌলবি উবাইদুল্লাহ মুতাওয়াক্কিল ও তার একজন ছাত্রের হত্যাকাণ্ডের সাথে ইমারাহ’র মুজাহিদদের কোন সম্পর্ক নেই। ইমারাহ’র গোয়েন্দা বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে।
সন্দেহের তীর আইএস এর দিকে-
শাইখ মুতাওয়াক্কিল নিজে সালাফি ঘরানার ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তালিবানের বিজয়ে খুশি ছিলেন। এমনকি শেষের দিকে কিছু ভিডিও বার্তায় তিনি জনগণ ও তার অনুসারীদেরকে তালিবান সরকারকে সহযোগিতার ব্যাপারে আহবান করেছিলেন। যদিও পশ্চিমা মদদপুষ্ট কিছু সাংবাদিক উনাকে আইএসের সাথে সম্পৃক্ত করে হত্যাকাণ্ডের দায়ভার তালিবানের উপরে চাপাতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল কারাগারে আইএসের সদস্যরা উনাকে এতোটা ঘৃণা করতো যে উনার পিছনে নামাজও পড়তো না। কারণ বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে আইএসের সাথে তার মতানৈক্য ছিল। তিনি আইএসের নেতাকে বাইয়াত দেননি। আর আইএস যে সকল আলিম তাদের নেতাকে বাইয়াত দেয়না, তাদেরকে গোমরাহ মনে করে থাকে।
শাইখ মুতাওয়াক্কিল সামরিক কোন সংগঠনের সাথেই যুক্ত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন উনার পরিবার ও পরিচিতিজন। তবে তার বেশ কিছু অনুসারী তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আইএসে যোগ দিয়েছিল। আর এটাকে পুজি করেও কাবুলের পুতুল সরকার তাঁকে ২০১৯ সাল থেকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছিল। উল্লেখ্য আইএস শুধু হানাফি ঘরানার আলিমদেরকেই হত্যা করেছে তা নয়, বরং যে সকল সালাফি আলিমরা তাদের আমীরকে বাইয়াত দেয়নি বা দেওয়া জরুরী মনে করে না, তাদেরকেও শত্রু হিসেবেই গণ্য করে। এমনকি এই ধরণের বেশ কিছু সালাফি আলিমকে তারা হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বছর-ই শাইখ মুতাওয়াক্কিলের একজন বন্ধু কাবুল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর উস্তাদ মুবাশশির মুসলিমইয়ারকে হত্যা করা হয়। হত্যার কিছু দ্বীন পূর্বেই তিনি কারাগার থেকে বের হয়েছিলেন। তালিবান সেই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেও আইএসের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। হতে পারে আইএস সাবোটাজ করার উদ্দেশ্যে তাদের বিরোধী সালাফি আলিমদের হত্যা করে এর দায়ভার তালিবানের উপর চাপাতে চাচ্ছে।
তালিবান কি সালাফি আলিমদের বিরোধী?
‘তালিবান কি সালাফি আলিমদের বিরোধী’ এটি একটি নির্জলা অপবাদ। কতিপয় মাদখালি ও খারেজী গোষ্ঠী এমনটি প্রচার করে থাকে। তারা এটি ভুলে যায় যে তালিবানের বিভিন্ন নেতার মাঝে সালাফি উলামা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন। তালিবানের প্রথম শাসনামলে আফগানিস্তানে আরব মুহাজিরিনদের অন্যতম আবু হাফস আল-মৌরিতানি কিছু টুইট বার্তায় তালিবানের বিশিষ্ট কয়েকজন সালাফি আলিমের তালিকাও দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন-
১- শাইখ আব্দুর রহীম। তিনি কুনারের সালাফি মুজাহিদদের শাইখ
২ – হাজী হায়াতুল্লাহ, শাইখ জামিলুর রহমানের (বিখ্যাত সালাফি আলিম, ৯২ সালে কুনারে ইসলামী ইমারত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন) ভাতিজা
৩- হাজী হাকিম, নুরিস্তানের গভর্নর
৪- শাইখ মুনিব, ডেপুটি গভর্নর
৫- মুহিবুল্লাহ, নুরিস্তানে সামরিক প্রধান
তবে এটি ঠিক যে সরকারী মাদখালি ও খারেজী সালাফি আলিমদেরকে তালিবান পসন্দ করেন না। কারণ অন্যায়ভাবে তালিবানের বিরোধিতা করে এবং তাদের সাথে শত্রুতা প্রকাশ করে।
শাইখ মুতাওয়াক্কিলের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি মর্মান্তিক ঘটনা। মুজাহিদিনের শত্রুরা তাদেরকে বিতর্কিত করতে বিভিন্ন ঘরানার উলামাদের হত্যা করছে। আমরা আশা করি তালিবান সরকার এই অপরাধীদের কঠোর থেকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করবেন।
Comment