দুই বছরে ১৫ লাখ বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার, বাস্তুচ্যুত ৭০ লাখ মানুষ
গত দুই বছরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই পর্যন্ত মোট প্রায় ১৫ লাখ বাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী সরকার। এর ফলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। এই ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই সংগঠিত হয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনপদগুলোতে। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ‘বুল ডোজার জাস্টিসের’ সমালোচনা করলে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর দুর্দশা সবার সামনে প্রতীয়মান হয়।
ভারতের রাজ্যগুলোতে বুলডোজার অপারেশনের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি তথ্যানুসারে, বুলডোজার হামলার ফলে অসংখ্য বাড়িঘর এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী সরকার বিরতিহীনভাবেই তাদের ধ্বংসাত্মক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এই সকল কাজকে।
বুলডোজার আগ্রাসনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, লক্ষ্মৌ এর আকবার নগর এলাকা। উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার কুকরাইল নদী খননের নামে ১১৬৯ টি বসতি এবং ১০১ টি ব্যাবসায়িক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ অধিবাসীরা জানায়, এই এলাকায় তারা কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসছে। এমনকি তথাকথিত ডেভেলেপমেন্ট সোসাইটি প্রতিষ্ঠা হবার আগ পর্যন্ত এখানে বসবাস করছে।
মধ্যপ্রদেশেও ‘বুলডোজার জাস্টিস’ এর এই ঘটনা চোখে পড়ার মতো। গত ১৫ জুন ২০২৪ সালে ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার অভিযোগ তুলে ১১ জন মুসলিমের বাড়ি সম্পূর্ণভাবে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং নির্দিষ্টভাবে মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্য করে চালানো দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ।
এই ঘটনার প্রবাহ থেকে দিল্লিও মুক্ত নয়। ১৪ মে ২০২৩ সরকারি কর্ম বিভাগ দিল্লির ধালুয়া এলাকায় বেশ কিছু ঘর ভেঙ্গে দেয়। যার ফলস্বরূপ শত শত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। বিজেপি শাসিত এলাকা না হয়েও এই হীন ঘটনা রাজধানী দিল্লিতে ঘটে।
হাউজিং এন্ড ল্যান্ড রাইটস নেটওয়ার্ক এই ধ্বংসযজ্ঞের একটি ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান একত্রিত করেছে। ২০২৪ সালে করা তাদের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ২০২২-২০২৩ সালে কমপক্ষে ১,৫৩,৮২০ বসতি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৭,৩৮,৪৩৮ জন মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১০.৬৮ লাখ মানুষ বুলডোজার আগ্রাসনের শিকার হয়েছে।
২০২২ সালে ২,২২,৬৮৬ টি বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৫,১৫,৭৫২ তে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ধ্বংসের শিকার ওই সকল স্থাপনার ৫৯% শতাংশই শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ভুমি উদ্ধার, বস্তি অপসারণ ইত্যাদি অজুহাতে করা হয়েছে।
বুলডোজার অপারেশন সাধারণত উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে করা হচ্ছে। জয়পুর, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর, নুহ হারিয়ানা, দিল্লির জাহাঙ্গীরপুর সহ আরো অনেক এলাকা এই ধরনের আগ্রাসনের শিকার হয়েছে ।
সরকারী সংস্থা বরাবরেই দাবী করেছে অবৈধ স্থাপনা অপসারনের জন্য এই সকল অভিযানের দরকার ছিলো।
পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই সকল স্থাপনার অধিকাংশই ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের লক্ষ করে করা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে দিল্লিতে হনুমান জয়ন্তী র্যালিতে সংঘর্ষের পর দিল্লি মিনিউসিপাল কর্পোরেশন জাহাঙ্গীর নগরে একটি বুলডোজার আগ্রাসন চালায়। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নামে প্রায় ২৫ টির মতো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দেওয়া হয়। গুড়িয়ে দেওয়া ওই সকল দোকানের মালিক বেশিরভাগই মুসলিম।
একইভাবে মধ্যপ্রদেশে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রাম নাভামি ও হুনুমান জনতা সংঘর্ষের পর সেখানেও বুলডোজার আগ্রাসন চালায় সরকার। মুসলিম মালিকানাধীন ১৫ টি বাসা ও ২৯ টি দোকান সম্পূর্ণভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্রঃ
1.‘Bulldozer Justice’: Over 15 Lakh Homes Razed in Two Years; 70 Lakh Displaced
-https://tinyurl.com/yeywsfrz
Comment