পানিতে ডুবন্ত একজন মানুষ যেভাবে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, মরুভূমিতে দিক হারানো ক্ষুৎপিপাসায় কাতর ব্যক্তি যেভাবে মরীচিকাকে নিজের জীবন রক্ষার শেষ অবলম্বন মনে করে, ফলস্বরুপ সে দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কারণ খড়কুটো কিংবা মরীচিকার ভরসায় নিজেকে সপে দিয়ে সে তার নিজের ধ্বংস ত্বরান্বিত করেছে।
ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানে পরাজিত ও বিপর্যস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরাট একটি অংশ নিজেদের সামনে আশার আলো দেখতে না পেয়ে এমন ব্যক্তিদেরকে উম্মাহর আশা-আকাংখা বাস্তবায়নের কাণ্ডারি হিসেবে কল্পনা করে নিচ্ছে,যারা কোনোভাবেই উম্মাহর কাণ্ডারি হওয়ার যোগ্য নয়। বরং তাদের কেউ কেউ সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে কুফফারদের লড়াইয়ের সহযোগী। ফলশ্রুতিতে উম্মাহ আরো দ্রুত ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। উপরে উঠার কল্পনা করতে গিয়ে আরো নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদকে মুসলিম উম্মাহর নেতা বানিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। অথচ মাহাথির মুহাম্মদ কথিত মডারেইট বা উদার-সহনশীল ইসলামের একজন প্রবক্তা। ইসলামী আইনের বিভিন্ন বিষয়কে পশ্চিমাদের অনুকূলে ব্যবহারের জন্য সে বহু মনগড়া বক্তব্য পেশ করেছে। প্রকৃত শরী’আহ বাস্তবায়ন করাকে সে উগ্রতা মনে করত।
আমরা যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি কম বুঝি (জিহাদ বিমুখ লোকদের ভাষায়। অবশ্য ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইসলাম বিমুখ এই রাজনীতি বুঝার প্রয়োজনও নেই !) তারা যখন মাহাথির মুহাম্মদকে উম্মাহর কাণ্ডারি হিসেবে অযোগ্য মনে করতাম,তখন সেসব রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে নির্মম উপহাস পেয়েছি। পশ্চাদপদ,বাস্তবতা বুঝি না,আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচ জানি না, হিকমাহ বুঝি না ইত্যাদি সবকতো আমরা নিয়মিতই পেয়েছি।
অতঃপর মাহাথির ফ্যান্টাসি শেষ হলে নতুন কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া, আল-আকসা উদ্ধার করা, ইসরায়েলকে পৃথিবির মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া সহ মুসলিমদের বিভিন্ন বিষয়ে সে বহু চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক বক্তব্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পেশ করেছে। এই আহমাদিনেজাদকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে তুলনা দিতেও দেখা গেছে ! আমরা যখন বলতাম, প্রথমতঃ সে একজন শিয়া। শিয়াদের বেশিরভাগ গ্রুপই স্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দলগতভাবে কাফির দল। আহমাদিনেজাদের অবস্থাও এর থেকে ভিন্ন নয়। দ্বিতীয়তঃ ইরান একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং আহমাদিনেজাদ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ফলে তার দ্বারা মুসলিমদের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তখন আমাদেরকে বলা হতো, এই আপনাদের জন্যই মুসলিমরা পিছিয়ে আছে ! আপনারা মুসলিম উম্মাহর কোনো ব্যক্তিকে উঠতেই দেন না। যে আসে তারই সমালোচনা করতে থাকেন ! মুসলিমদের পক্ষে আহমাদিনেজাদের মতো এতো স্পষ্টবাদী কোনো নেতা পৃথিবীতে আছে !!! আপনারা আসলে বিশ্ব-রাজনীতির প্রেক্ষাপট বুঝেন না !!
অতঃপর আহমাদিনেজাদ ফ্যান্টাসি শেষ হলে আসলো মুরসি ঝড়। এই ঝড়ে পারলে গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলো গ্লোবাল জিহাদকে যাদুঘরে পাঠিয়ে পৃথিবী জুড়ে তাদের কল্পিত গণতান্ত্রিক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলে। মুরসি ছিলো অনেকের স্বপ্নের নায়ক। হাফিযে কুরআন মুরসী ! রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সলাতের ইমামতি করেন মুরসি ! এটি কী পৃথিবীর অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের দ্বারা সম্ভব হয়েছে !! তারা এটিকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে মিলানোর ধৃষ্টতা দেখাতো।
আমরা যখন বলতামঃ মুরসি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অধীনে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। তদুপরি মিসরে তখনো চরম ইসলাম বিদ্বেষী, কুফুরী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট সেনাবাহিনী বহাল তবিয়তে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। ফলে মুরসির দ্বারা আসলে কখনোই ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। (অবশ্য মুরসি অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্নতর। মুরসি মিসরে একটি ইসলামী সংবিধান তৈরির চেষ্টা করেছিল। এছাড়া ফিলিস্তিনের মুসলিমদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিল। আর এসব কারণেই ১ বছরের মাথায় আমেরিকা ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুরতাদ সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।)
এমতাবস্থায় আমাদেরকে সেই পুরোনো বয়ান শোনানো হতো। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ না বুঝা ! হিকমাহ না থাকা !! খালি জিহাদ জিহাদ করা ইত্যাদি ইত্যাদি !!!
সেই মাহাথির মুহাম্মদ, সেই আহমাদিনেজাদ, সেই মুরসিদের কল্পিত নেতৃত্ব আজ কোথায় ! স্বপ্নীল উত্থানের ফেনীল বুদবুদ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কারণ এসব হেয়ালি ভাবনার পেছনে না ছিলো ইসলামী শরীয়ত আর না ছিলো ইসলামের সঠিক ইতিহাসের নিরিখে কোনো প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তা। ফলে কথিত সেইসব খলীফা ও সুলতানদের নাম এখন যাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে। অপরদিকে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাহাথির মুহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ ও মুরসির ফ্যান্টাসি শেষ হতে না হতেই আরেক নতুন ফ্যান্টাসি এসে হাজির হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ তুরষ্কের আত্মস্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট রিসেপ/রজব তায়েব এরদোগান। এখানেও সেই পুরোনো বয়ান, সেই পুরোনো ফ্যান্টাসি। এ যামানার অবিসংবাদিত নেতা ! যামানার সুলতান ! ভবিষ্যৎ খলিফা ! আরো কত কী !!
এ যাত্রায়ও আমরা স্পষ্টভাবেই বলছি, একটি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টকে আমরা শরীয়ত কিংবা আকল কোনো দিক থেকেই মুসলিম উম্মাহর কাণ্ডারি ভাবতে পারছি না। কাগজে বানানো বিমানে মহাকাশ পাড়ি দেয়া কিংবা বেলুনের নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দেয়া যেমন অসম্ভব ও কাল্পনিক, ঠিক তেমনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে মুসলিম জাতির আগামী দিনের খলীফা/সুলতান ভাবা অদ্ভুত ও অবাস্তব।
কিন্তু ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’ এ বাস করা ব্যক্তিরা আমাদেরকে সেই পুরোন বয়ান শোনাচ্ছেন। হাফিযে কুরআন ! মুসলিমদের পক্ষে সোচ্চার কন্ঠ !! আরাকানসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে উচ্চ কন্ঠের দৃপ্ত আওয়াজের অধিকারী এরকম আর কেউ আছে কী !!!
পুরোনো রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ, হিকমাহ ইত্যাদি স্লোগান ঠিক আগের মতোই হুবহু আছে।
আমাদের মানদণ্ড যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এমন নীতিমালা, যা সব ধরণের সংশয়ের ঊর্ধ্বে। তাই আমরা বারবার ধোঁকায় পতিত হই না, আলহামদুলিল্লাহ্*। গণতান্ত্রিক কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের দিকে তাকিয়ে আশার ফানুস তৈরি করি না বরং দ্বীন ও শরীয়তের জন্য নিজেদের জান-মাল দিয়ে এক চূড়ান্ত লড়াইয়ে নিয়োজিত দুনিয়ার মুজাহিদদেরকে উম্মাহর নেতা মনে করি। ফলাফল পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার ভূমিতে আল্লাহর শরী’আহ কায়েম, আলহামদুলিল্লাহ্*।
উদাহরণস্বরুপঃ শুধুমাত্র সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাবের অধীনে আড়াই লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকায় পূর্ণ শরী’আহ কায়েম আছে, আলহামদুলিল্লাহ্*। এছাড়া তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগানিস্তানের প্রায় ৭০% এলাকা, ইয়েমেনের মধ্যাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা এবং মালির বিস্তীর্ণ ভূমিতে মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর শরী’আহ বাস্তবায়িত হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্*।
আর মুমিনদের জন্য একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হওয়া শোভা পায় না। এটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।” (সহীহ বুখারী)
কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ, মুরসি ও এরদোগানরা গণতন্ত্রের ঘোড়ায় চড়ে এক সেকেন্ডের জন্যও পৃথিবীর এক হাত জায়গায় আল্লাহর শরী’আহ কায়েম করতে পারেনি বা করেনি। বরং এরদোগানতো ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা তথা সেক্যুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। সুবহানাল্লাহ্* !!
অথচ এই শ্রেণির লোকেরা প্রতিনিয়তই এক ফ্যান্টাসি থেকে অপর ফ্যান্টাসি, এক ধোঁকা থেকে অপর ধোঁকায় পতিত হচ্ছে এবং উম্মাহর এক বিরাট শ্রেণিকে বিভ্রান্ত করে রাখছে। ফলে এসব বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করতে আল্লাহ প্রদত্ত শরী’আর বিধানের আলোকে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কর্মকান্ড এবং তার হুকুম জানা জরুরি। শুধুমাত্র আল্লাহর শরী’আহ সমুন্নত রাখতে এবং উম্মাহকে বিপথগামীতার মরীচিকা থেকে মুক্ত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে এ বিষয়ে লেখা। কোনো দল,মত,গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষবশতঃ বিরোধীতা করা থেকে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হিফাযত করুন।
ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানে পরাজিত ও বিপর্যস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরাট একটি অংশ নিজেদের সামনে আশার আলো দেখতে না পেয়ে এমন ব্যক্তিদেরকে উম্মাহর আশা-আকাংখা বাস্তবায়নের কাণ্ডারি হিসেবে কল্পনা করে নিচ্ছে,যারা কোনোভাবেই উম্মাহর কাণ্ডারি হওয়ার যোগ্য নয়। বরং তাদের কেউ কেউ সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে কুফফারদের লড়াইয়ের সহযোগী। ফলশ্রুতিতে উম্মাহ আরো দ্রুত ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। উপরে উঠার কল্পনা করতে গিয়ে আরো নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদকে মুসলিম উম্মাহর নেতা বানিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। অথচ মাহাথির মুহাম্মদ কথিত মডারেইট বা উদার-সহনশীল ইসলামের একজন প্রবক্তা। ইসলামী আইনের বিভিন্ন বিষয়কে পশ্চিমাদের অনুকূলে ব্যবহারের জন্য সে বহু মনগড়া বক্তব্য পেশ করেছে। প্রকৃত শরী’আহ বাস্তবায়ন করাকে সে উগ্রতা মনে করত।
আমরা যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি কম বুঝি (জিহাদ বিমুখ লোকদের ভাষায়। অবশ্য ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইসলাম বিমুখ এই রাজনীতি বুঝার প্রয়োজনও নেই !) তারা যখন মাহাথির মুহাম্মদকে উম্মাহর কাণ্ডারি হিসেবে অযোগ্য মনে করতাম,তখন সেসব রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে নির্মম উপহাস পেয়েছি। পশ্চাদপদ,বাস্তবতা বুঝি না,আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচ জানি না, হিকমাহ বুঝি না ইত্যাদি সবকতো আমরা নিয়মিতই পেয়েছি।
অতঃপর মাহাথির ফ্যান্টাসি শেষ হলে নতুন কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া, আল-আকসা উদ্ধার করা, ইসরায়েলকে পৃথিবির মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া সহ মুসলিমদের বিভিন্ন বিষয়ে সে বহু চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক বক্তব্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পেশ করেছে। এই আহমাদিনেজাদকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে তুলনা দিতেও দেখা গেছে ! আমরা যখন বলতাম, প্রথমতঃ সে একজন শিয়া। শিয়াদের বেশিরভাগ গ্রুপই স্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দলগতভাবে কাফির দল। আহমাদিনেজাদের অবস্থাও এর থেকে ভিন্ন নয়। দ্বিতীয়তঃ ইরান একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং আহমাদিনেজাদ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ফলে তার দ্বারা মুসলিমদের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তখন আমাদেরকে বলা হতো, এই আপনাদের জন্যই মুসলিমরা পিছিয়ে আছে ! আপনারা মুসলিম উম্মাহর কোনো ব্যক্তিকে উঠতেই দেন না। যে আসে তারই সমালোচনা করতে থাকেন ! মুসলিমদের পক্ষে আহমাদিনেজাদের মতো এতো স্পষ্টবাদী কোনো নেতা পৃথিবীতে আছে !!! আপনারা আসলে বিশ্ব-রাজনীতির প্রেক্ষাপট বুঝেন না !!
অতঃপর আহমাদিনেজাদ ফ্যান্টাসি শেষ হলে আসলো মুরসি ঝড়। এই ঝড়ে পারলে গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলো গ্লোবাল জিহাদকে যাদুঘরে পাঠিয়ে পৃথিবী জুড়ে তাদের কল্পিত গণতান্ত্রিক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলে। মুরসি ছিলো অনেকের স্বপ্নের নায়ক। হাফিযে কুরআন মুরসী ! রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সলাতের ইমামতি করেন মুরসি ! এটি কী পৃথিবীর অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের দ্বারা সম্ভব হয়েছে !! তারা এটিকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে মিলানোর ধৃষ্টতা দেখাতো।
আমরা যখন বলতামঃ মুরসি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অধীনে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। তদুপরি মিসরে তখনো চরম ইসলাম বিদ্বেষী, কুফুরী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট সেনাবাহিনী বহাল তবিয়তে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। ফলে মুরসির দ্বারা আসলে কখনোই ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। (অবশ্য মুরসি অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্নতর। মুরসি মিসরে একটি ইসলামী সংবিধান তৈরির চেষ্টা করেছিল। এছাড়া ফিলিস্তিনের মুসলিমদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিল। আর এসব কারণেই ১ বছরের মাথায় আমেরিকা ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুরতাদ সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।)
এমতাবস্থায় আমাদেরকে সেই পুরোনো বয়ান শোনানো হতো। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ না বুঝা ! হিকমাহ না থাকা !! খালি জিহাদ জিহাদ করা ইত্যাদি ইত্যাদি !!!
সেই মাহাথির মুহাম্মদ, সেই আহমাদিনেজাদ, সেই মুরসিদের কল্পিত নেতৃত্ব আজ কোথায় ! স্বপ্নীল উত্থানের ফেনীল বুদবুদ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কারণ এসব হেয়ালি ভাবনার পেছনে না ছিলো ইসলামী শরীয়ত আর না ছিলো ইসলামের সঠিক ইতিহাসের নিরিখে কোনো প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তা। ফলে কথিত সেইসব খলীফা ও সুলতানদের নাম এখন যাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে। অপরদিকে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাহাথির মুহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ ও মুরসির ফ্যান্টাসি শেষ হতে না হতেই আরেক নতুন ফ্যান্টাসি এসে হাজির হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ তুরষ্কের আত্মস্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট রিসেপ/রজব তায়েব এরদোগান। এখানেও সেই পুরোনো বয়ান, সেই পুরোনো ফ্যান্টাসি। এ যামানার অবিসংবাদিত নেতা ! যামানার সুলতান ! ভবিষ্যৎ খলিফা ! আরো কত কী !!
এ যাত্রায়ও আমরা স্পষ্টভাবেই বলছি, একটি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টকে আমরা শরীয়ত কিংবা আকল কোনো দিক থেকেই মুসলিম উম্মাহর কাণ্ডারি ভাবতে পারছি না। কাগজে বানানো বিমানে মহাকাশ পাড়ি দেয়া কিংবা বেলুনের নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দেয়া যেমন অসম্ভব ও কাল্পনিক, ঠিক তেমনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে মুসলিম জাতির আগামী দিনের খলীফা/সুলতান ভাবা অদ্ভুত ও অবাস্তব।
কিন্তু ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’ এ বাস করা ব্যক্তিরা আমাদেরকে সেই পুরোন বয়ান শোনাচ্ছেন। হাফিযে কুরআন ! মুসলিমদের পক্ষে সোচ্চার কন্ঠ !! আরাকানসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে উচ্চ কন্ঠের দৃপ্ত আওয়াজের অধিকারী এরকম আর কেউ আছে কী !!!
পুরোনো রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ, হিকমাহ ইত্যাদি স্লোগান ঠিক আগের মতোই হুবহু আছে।
আমাদের মানদণ্ড যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এমন নীতিমালা, যা সব ধরণের সংশয়ের ঊর্ধ্বে। তাই আমরা বারবার ধোঁকায় পতিত হই না, আলহামদুলিল্লাহ্*। গণতান্ত্রিক কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের দিকে তাকিয়ে আশার ফানুস তৈরি করি না বরং দ্বীন ও শরীয়তের জন্য নিজেদের জান-মাল দিয়ে এক চূড়ান্ত লড়াইয়ে নিয়োজিত দুনিয়ার মুজাহিদদেরকে উম্মাহর নেতা মনে করি। ফলাফল পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার ভূমিতে আল্লাহর শরী’আহ কায়েম, আলহামদুলিল্লাহ্*।
উদাহরণস্বরুপঃ শুধুমাত্র সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাবের অধীনে আড়াই লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকায় পূর্ণ শরী’আহ কায়েম আছে, আলহামদুলিল্লাহ্*। এছাড়া তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগানিস্তানের প্রায় ৭০% এলাকা, ইয়েমেনের মধ্যাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা এবং মালির বিস্তীর্ণ ভূমিতে মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর শরী’আহ বাস্তবায়িত হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্*।
আর মুমিনদের জন্য একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হওয়া শোভা পায় না। এটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।” (সহীহ বুখারী)
কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ, মুরসি ও এরদোগানরা গণতন্ত্রের ঘোড়ায় চড়ে এক সেকেন্ডের জন্যও পৃথিবীর এক হাত জায়গায় আল্লাহর শরী’আহ কায়েম করতে পারেনি বা করেনি। বরং এরদোগানতো ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা তথা সেক্যুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। সুবহানাল্লাহ্* !!
অথচ এই শ্রেণির লোকেরা প্রতিনিয়তই এক ফ্যান্টাসি থেকে অপর ফ্যান্টাসি, এক ধোঁকা থেকে অপর ধোঁকায় পতিত হচ্ছে এবং উম্মাহর এক বিরাট শ্রেণিকে বিভ্রান্ত করে রাখছে। ফলে এসব বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করতে আল্লাহ প্রদত্ত শরী’আর বিধানের আলোকে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কর্মকান্ড এবং তার হুকুম জানা জরুরি। শুধুমাত্র আল্লাহর শরী’আহ সমুন্নত রাখতে এবং উম্মাহকে বিপথগামীতার মরীচিকা থেকে মুক্ত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে এ বিষয়ে লেখা। কোনো দল,মত,গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষবশতঃ বিরোধীতা করা থেকে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হিফাযত করুন।
Comment