আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ও শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা যখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে, তখনই বেঁকে বসল আমেরিকা। সম্প্রতি তালেবানরা আমেরিকানদের ওপর বড় কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে এক হামলায় ১২ জন সৈন্য হতাহত হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই শান্তি আলোচনা স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। ৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প ডেভিডে তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। হামলার পর এ বৈঠক বাতিল করে আমেরিকা।
শান্তি আলোচনা বাতিলের ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ইলিয়ট অ্যাঞ্জেল বলেন, ‘আফগানিস্তান যুদ্ধে দুই হাজারেরও বেশি মার্কিন সৈন্য প্রাণ দিয়েছে। তালেবানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেস ও মার্কিন নাগরিকদের অন্ধকারে রেখেছে। এই লড়াইয়ের অবসান কিভাবে হবে—ভেবে হতাশ হচ্ছি।’
আফগান শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খালিলজাদ এর আগে বলেছিলেন, তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন, এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। বিনিময়ে তালেবানরাও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
যেখানে শান্তি আলোচনা ঠিকঠাক এগোচ্ছিল, আমেরিকাও চলে যাবে বলে বলছিল, সেখানে এ অবস্থায় হামলার মাত্রা বাড়ানো কী দরকার পড়ল তালেবানের? আলজাজিরার সাক্ষাৎকারে তালেবানের কাতারের দোহা পলিটিক্যাল অফিসের মুখপাত্র সোহাইল শাহীন বলেন, ‘আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর তারা আমাদের ওপর হামলা করবে না—এমনটি নিশ্চিত হলেই শুধু আমরা হামলা বন্ধ করব, এর আগে না।’ তালেবানদের নীতি হচ্ছে, আলোচনার টেবিলে আলোচনা, লড়াইয়ের ময়দানে লড়াই। হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েই কিন্তু আমেরিকাকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করেছে তালেবান।
এখন কথা হচ্ছে, আলোচনা কত দিন স্থগিত থাকবে বা আবার কবে শুরু হবে, আদৌ সে সুযোগ বা ইচ্ছা আমেরিকার আছে কি না! আসলে আমেরিকা নিজেদের ইচ্ছায়ই আগ বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করেছে। প্রথম দিকে অবস্থাটা এমন ছিল যে কয়েকজনকে ডেকে টেবিলে বসিয়ে আমেরিকার পক্ষে বলা হচ্ছিল, ‘আমরা তালেবানদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে আলোচনা করছি।’ জবাবে তালেবানরা বলছিল, ‘যাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, তারা আমাদের কেউ না।’ পরে যখন তালেবানরা দেখল, আমেরিকা সত্যিই একটা উপায় খুঁজছে আফগানিস্তান ছাড়ার, তখনই তারা আমেরিকার আয়োজিত বৈঠকে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাল। এর আগে শর্ত দিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বন্দিকেও ছাড়িয়ে নেয়; এমনকি কাতারে নিজেদের রাজনৈতিক অফিসও খুলেছে। এক বছর ধরে ধাপে ধাপে বৈঠক হয়েছে, উভয় পক্ষই বলেছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ অবস্থায় আলোচনা থামিয়ে দেওয়া মানে আমেরিকা এত দিন ধরে যা চাইছে, তা ব্যর্থ হলো। আর তালেবানরা যা চাইছে অর্থাৎ গোটা আফগানিস্তান দখল, আলোচনা ছাড়াও সে লক্ষ্যের খুব কাছাকছি তারা। আফগান
ভূ-রাজনীতি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেখানে তালেবানদের মূল জনগোষ্ঠী পশতুনদের সংখ্যা মাত্র ৪২ শতাংশ। ভিন্ন মতাদর্শের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের বাধা পাওয়ার কথা; কিন্তু এমনটি হচ্ছে না। কারণ তালেবানদের নীতি হচ্ছে—ভিন্নমতের কারো ওপর ততক্ষণ হামলা করবে না, যতক্ষণ না নিজেরা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি আইএস যখন বাজার-লোকালয়, বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা জনসমাগমস্থলে ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের, বিশেষ করে শিয়া ও হাজারাদের ওপর হামলা করেছে, তালেবানরা এর নিন্দা করার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইএসের নৃসংশতা দমনে সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাধারণ মানুষ তালেবানকেই উপযুক্ত মনে করছে। বেশির ভাগ ভূখণ্ডের দখল নেওয়া তালেবানরা আজ কিংবা কাল গোটা আফগানিস্তান দখল করে ক্ষমতায় ফিরবে—এটা নিশ্চিত। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়ে কী লাভ তাদের। আলজাজিরায় ‘লাইফ আন্ডার তালেবান’, ‘দিস ইজ তালেবান কান্ট্রি’ শিরোনামের ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, লোকজন সরকারি আদালতে না গিয়ে তালেবান পরিচালিত আদালতে বিচার-ফায়সালা করছে। তালেবানরা নিজেদের দখলকৃত ভূ-খণ্ডে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে।
চলমান লড়াইয়ে সব দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে তালেবান, তাই আমেরিকার সঙ্গে বৈঠক স্থগিত হওয়ায় খুব একটা মাথাব্যথা নেই তাদের।
গত বছর ঈদে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়, তালেবানরা এতে সায় দেয়। এ ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়ে বলেছে, তালেবানরা বোধ হয় নমনীয় হয়েছে।
কিন্তু যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই বড় ধরনের হামলা শুরু করে। অর্থাৎ তারা স্বভাবে পরিবর্তন আনলেও নীতি বদলায়নি। এ বছরের ঈদেও যখন আগেরবারের মতো যুদ্ধবিরতির আশা করা হচ্ছিল, তখন ঈদ বার্তায় তালেবানপ্রধান হুঁশিয়ারি করে বলেন, ‘উত্তপ্ত ভূমি থেকে কেউ যেন শীতল পানি আশা না করে!’ একই সঙ্গে তিনি ‘লড়াই করেই ক্ষমতায় ফিরবেন’ বলে ইঙ্গিত দেন। তাঁর কথা ও অন্যান্য ভূমিকায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট—তাঁরা শুধু শান্তি আলোচনার ওপর ভরসা করছেন না।
এমন অবস্থায় মনে হয় না আমেরিকা বেশিদিন বৈঠক স্থগিত রাখবে। আলোচনা স্থগিত রেখে সৈন্য রেখে দিলে দেখা যাবে, ঠিকই একসময় সৈন্য সরাতে হবে; কিন্তু তত দিনে আরো অনেক আমেরিকান সৈন্যের প্রাণ যাবে!
ধরা যাক, আলোচনা আবার শুরু হলো। তখনো কিন্তু একটা বিপত্তি থেকে যাবে। আলোচনার ফোকাস মূলত দুই বিষয়ে—আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার নেতৃত্বে থাকা সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে, আর তালেবানরা
আল-কায়েদাসহ কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে আশ্রয় সহায়তা দিতে পারবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালে এসে আমেরিকা যে অপশন দিচ্ছে, ২০০১ সালেই সে পথ বন্ধ করে দিয়েছে মারকুটে আল-কায়েদা। কৌশল, রাজনীতি আর সমরনীতিতে তারা আইএসের মতো কাঁচা না। আমেরিকা দেশটিতে হামলার পর থেকে বিভিন্ন দেশে আল-কায়েদার শাখা করা হলেও আফগানিস্তানে কোনো শাখা করেনি। কৌশলগত দিক থেকে এর মানে হচ্ছে—তারা নিজেদের তালেবানদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে। আফগান ভূ-খণ্ডে শাখা করে নিজেদেরকে তালেবানদের থেকে ‘আলাদা’ করেনি।
তালেবানপ্রধান মোল্লা মনসুর নিহত হওয়ার পর যখন মোল্লা হাইবাতুল্লা দায়িত্ব নেন, তখন আল-কায়েদাপ্রধান তাঁর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকটি শাখা তালেবানদের অধীনে একেকটি সেনাদল হিসেবে কাজ করবে।
শত্রুকে পরাজিত করার প্রথম শর্ত হচ্ছে শত্রুকে চেনা। আমেরিকা শান্তি আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইলে পারবে। কিন্তু যদি ভাবে, এ আলোচনায় মারকুটে আল-কায়েদাকে আফগানছাড়া করা যাবে কিংবা নিষ্ক্রিয় করা যাবে, তাহলে ভুল করবে।
তারেক হাবিব
কালের কন্ঠ ১৮-৯-১৯
শান্তি আলোচনা বাতিলের ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ইলিয়ট অ্যাঞ্জেল বলেন, ‘আফগানিস্তান যুদ্ধে দুই হাজারেরও বেশি মার্কিন সৈন্য প্রাণ দিয়েছে। তালেবানের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন কংগ্রেস ও মার্কিন নাগরিকদের অন্ধকারে রেখেছে। এই লড়াইয়ের অবসান কিভাবে হবে—ভেবে হতাশ হচ্ছি।’
আফগান শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খালিলজাদ এর আগে বলেছিলেন, তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন, এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। বিনিময়ে তালেবানরাও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
যেখানে শান্তি আলোচনা ঠিকঠাক এগোচ্ছিল, আমেরিকাও চলে যাবে বলে বলছিল, সেখানে এ অবস্থায় হামলার মাত্রা বাড়ানো কী দরকার পড়ল তালেবানের? আলজাজিরার সাক্ষাৎকারে তালেবানের কাতারের দোহা পলিটিক্যাল অফিসের মুখপাত্র সোহাইল শাহীন বলেন, ‘আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর তারা আমাদের ওপর হামলা করবে না—এমনটি নিশ্চিত হলেই শুধু আমরা হামলা বন্ধ করব, এর আগে না।’ তালেবানদের নীতি হচ্ছে, আলোচনার টেবিলে আলোচনা, লড়াইয়ের ময়দানে লড়াই। হামলার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েই কিন্তু আমেরিকাকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করেছে তালেবান।
এখন কথা হচ্ছে, আলোচনা কত দিন স্থগিত থাকবে বা আবার কবে শুরু হবে, আদৌ সে সুযোগ বা ইচ্ছা আমেরিকার আছে কি না! আসলে আমেরিকা নিজেদের ইচ্ছায়ই আগ বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করেছে। প্রথম দিকে অবস্থাটা এমন ছিল যে কয়েকজনকে ডেকে টেবিলে বসিয়ে আমেরিকার পক্ষে বলা হচ্ছিল, ‘আমরা তালেবানদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে আলোচনা করছি।’ জবাবে তালেবানরা বলছিল, ‘যাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, তারা আমাদের কেউ না।’ পরে যখন তালেবানরা দেখল, আমেরিকা সত্যিই একটা উপায় খুঁজছে আফগানিস্তান ছাড়ার, তখনই তারা আমেরিকার আয়োজিত বৈঠকে নিজেদের প্রতিনিধি পাঠাল। এর আগে শর্ত দিয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বন্দিকেও ছাড়িয়ে নেয়; এমনকি কাতারে নিজেদের রাজনৈতিক অফিসও খুলেছে। এক বছর ধরে ধাপে ধাপে বৈঠক হয়েছে, উভয় পক্ষই বলেছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ অবস্থায় আলোচনা থামিয়ে দেওয়া মানে আমেরিকা এত দিন ধরে যা চাইছে, তা ব্যর্থ হলো। আর তালেবানরা যা চাইছে অর্থাৎ গোটা আফগানিস্তান দখল, আলোচনা ছাড়াও সে লক্ষ্যের খুব কাছাকছি তারা। আফগান
ভূ-রাজনীতি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সেখানে তালেবানদের মূল জনগোষ্ঠী পশতুনদের সংখ্যা মাত্র ৪২ শতাংশ। ভিন্ন মতাদর্শের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের বাধা পাওয়ার কথা; কিন্তু এমনটি হচ্ছে না। কারণ তালেবানদের নীতি হচ্ছে—ভিন্নমতের কারো ওপর ততক্ষণ হামলা করবে না, যতক্ষণ না নিজেরা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি আইএস যখন বাজার-লোকালয়, বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা জনসমাগমস্থলে ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের, বিশেষ করে শিয়া ও হাজারাদের ওপর হামলা করেছে, তালেবানরা এর নিন্দা করার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইএসের নৃসংশতা দমনে সরকার যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সাধারণ মানুষ তালেবানকেই উপযুক্ত মনে করছে। বেশির ভাগ ভূখণ্ডের দখল নেওয়া তালেবানরা আজ কিংবা কাল গোটা আফগানিস্তান দখল করে ক্ষমতায় ফিরবে—এটা নিশ্চিত। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে শত্রুতা বাড়িয়ে কী লাভ তাদের। আলজাজিরায় ‘লাইফ আন্ডার তালেবান’, ‘দিস ইজ তালেবান কান্ট্রি’ শিরোনামের ডকুমেন্টারিতে দেখা যায়, লোকজন সরকারি আদালতে না গিয়ে তালেবান পরিচালিত আদালতে বিচার-ফায়সালা করছে। তালেবানরা নিজেদের দখলকৃত ভূ-খণ্ডে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছে।
চলমান লড়াইয়ে সব দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে তালেবান, তাই আমেরিকার সঙ্গে বৈঠক স্থগিত হওয়ায় খুব একটা মাথাব্যথা নেই তাদের।
গত বছর ঈদে আফগান সরকারের পক্ষ থেকে তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়, তালেবানরা এতে সায় দেয়। এ ঘটনায় অনেকেই অবাক হয়ে বলেছে, তালেবানরা বোধ হয় নমনীয় হয়েছে।
কিন্তু যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই বড় ধরনের হামলা শুরু করে। অর্থাৎ তারা স্বভাবে পরিবর্তন আনলেও নীতি বদলায়নি। এ বছরের ঈদেও যখন আগেরবারের মতো যুদ্ধবিরতির আশা করা হচ্ছিল, তখন ঈদ বার্তায় তালেবানপ্রধান হুঁশিয়ারি করে বলেন, ‘উত্তপ্ত ভূমি থেকে কেউ যেন শীতল পানি আশা না করে!’ একই সঙ্গে তিনি ‘লড়াই করেই ক্ষমতায় ফিরবেন’ বলে ইঙ্গিত দেন। তাঁর কথা ও অন্যান্য ভূমিকায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট—তাঁরা শুধু শান্তি আলোচনার ওপর ভরসা করছেন না।
এমন অবস্থায় মনে হয় না আমেরিকা বেশিদিন বৈঠক স্থগিত রাখবে। আলোচনা স্থগিত রেখে সৈন্য রেখে দিলে দেখা যাবে, ঠিকই একসময় সৈন্য সরাতে হবে; কিন্তু তত দিনে আরো অনেক আমেরিকান সৈন্যের প্রাণ যাবে!
ধরা যাক, আলোচনা আবার শুরু হলো। তখনো কিন্তু একটা বিপত্তি থেকে যাবে। আলোচনার ফোকাস মূলত দুই বিষয়ে—আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার নেতৃত্বে থাকা সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার করতে হবে, আর তালেবানরা
আল-কায়েদাসহ কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে আশ্রয় সহায়তা দিতে পারবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালে এসে আমেরিকা যে অপশন দিচ্ছে, ২০০১ সালেই সে পথ বন্ধ করে দিয়েছে মারকুটে আল-কায়েদা। কৌশল, রাজনীতি আর সমরনীতিতে তারা আইএসের মতো কাঁচা না। আমেরিকা দেশটিতে হামলার পর থেকে বিভিন্ন দেশে আল-কায়েদার শাখা করা হলেও আফগানিস্তানে কোনো শাখা করেনি। কৌশলগত দিক থেকে এর মানে হচ্ছে—তারা নিজেদের তালেবানদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছে। আফগান ভূ-খণ্ডে শাখা করে নিজেদেরকে তালেবানদের থেকে ‘আলাদা’ করেনি।
তালেবানপ্রধান মোল্লা মনসুর নিহত হওয়ার পর যখন মোল্লা হাইবাতুল্লা দায়িত্ব নেন, তখন আল-কায়েদাপ্রধান তাঁর প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকটি শাখা তালেবানদের অধীনে একেকটি সেনাদল হিসেবে কাজ করবে।
শত্রুকে পরাজিত করার প্রথম শর্ত হচ্ছে শত্রুকে চেনা। আমেরিকা শান্তি আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাইলে পারবে। কিন্তু যদি ভাবে, এ আলোচনায় মারকুটে আল-কায়েদাকে আফগানছাড়া করা যাবে কিংবা নিষ্ক্রিয় করা যাবে, তাহলে ভুল করবে।
তারেক হাবিব
কালের কন্ঠ ১৮-৯-১৯
Comment