*উপসম্পাদকীয়( দৈনিক নয়া দিগন্ত )
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৩
-
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তালেবানের সাথে সমঝোতা চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও সফলতা অর্জন করতে পারল না। গত ৫ সেপ্টেম্বর কাবুলের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত কূটনৈতিকপাড়ায় গাড়িবোমা হামলায় একজন মার্কিন সেনাসহ ১২ জন প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। যেকোনো সময় আলোচনা আবার শুরু হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কথায়ও এটা বোঝা যায়। তালেবান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছে, ‘শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কারণ এতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ হবে, তাদের শান্তিবিরোধী অবস্থান বিশ্বের কাছে প্রকাশ পাবে, জীবন ও সম্পদহানি বৃদ্ধি পাবে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি আলোচনা বাতিল করে কোনো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন বলে মনে হয় না। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনী সমঝোতা চুক্তির পক্ষে। তালেবান যে নিছক ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ নয়, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে তা স্বীকার করে নিয়েছে। অপর দিকে, তালেবানরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এ কারণে, সমঝোতা চুক্তি না হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তাদের বেগ পেতে হবে না।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, আন্তর্জাতিক জোটের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্যের প্রাণের বিনিময়েও আফগানিস্তানকে দখলে রাখা যাচ্ছে না। দেশটির ৭০ শতাংশ এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। জোটের অবস্থা এখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’। সম্ভাব্য চুক্তির মূলনীতি হিসেবে আফগানিস্তান থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে এবং পাঁচটি সেনাঘাঁটি ১৩৫ দিনের মধ্যে ছেড়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের নিযুক্ত আফগানবিষয়ক মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ ওই চুক্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ ১৮ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছিলেন তালেবান কর্মকর্তারা। সম্প্রতি দুই পক্ষের নবম ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে। এর আগে বৈঠক হয়েছে পাকিস্তানেও। ন্যাটো এ সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যায়ক্রমে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ১৪ হাজার পরিশ্রান্ত সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী।
আলোচনা, সমঝোতা ও চুক্তির পাশাপাশি গেরিলা যুদ্ধও তালেবান অব্যাহত রেখেছে স্বদেশে। ওই দিকে, খলিলজাদের ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপরই কাবুলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের বিদেশী কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হাউজিং কমপ্লেক্সে তালেবানের গাড়িবোমা হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হলেন। আহত শতাধিক মানুষ। কাবুলের সুরক্ষিত ‘গ্রিন জোনের’ খুব কাছেই ওই হাউজিং কমপ্লেক্সের অবস্থান। এটা ছিল রাজধানীতে তালেবানদের শক্তির মহড়া।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক জোটের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য নিহত হয়েছে এ যাবৎ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার ৩০০ জন। আফগানিস্তানের বেসামরিক, তালেবান ও সরকারি সেনার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা কঠিন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়, ‘আফগান যুদ্ধে ৩২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট জানায়, এই যুদ্ধে ৫৮ হাজার নিরাপত্তা সদস্য ও প্রায় ৪২ হাজার বিদ্রোহী সেনা নিহত হয়েছে। (নয়া দিগন্ত, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯)।
১৮ বছর ধরে ন্যাটো ও মার্কিন সেনাবাহিনীর বারবার বোমাবর্ষণ, অব্যাহত তল্লাশি ও সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও আফগানিস্তানের শহরে-পাহাড়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তালেবান সংগঠিত হচ্ছে। বিদেশী বাহিনী ও কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাবুল, কান্দাহার, গারদেজ, হেলমান্দ, লোগার, জালালাবাদ, খোস্ত, পাকতিয়া, জাবুল ও কুনারসহ ৩৫টি প্রদেশে জোটবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা অভিযান তীব্রতর হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি প্রদেশের বিদেশী সৈন্যরা যুদ্ধ না করেই ঘরে ফিরতে আগ্রহী। শহরে-গ্রামে সর্বত্র তালেবানদের উপস্থিতি লক্ষ করার মতো। তালেবানদের ভয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং সরকারের কর্মকর্তাদের নির্বিঘেœ চলাফেরাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কান্দাহার প্রদেশে ক্ষমতার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হওয়ার সাত বছর পর ২০০১ সালে মার্কিন মদদপুষ্ট বাহিনীর সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের ফলে তালেবান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। মার্কিন বাহিনী পাশ্চাত্যের অনুসারী হামিদ কারজাইকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মসনদে বসালেও ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি নিয়ন্ত্রণ করেছে তারাই। জাতিসঙ্ঘের ব্যবস্থাপনায় জার্মানির বনে অনুষ্ঠিত আন্তঃআফগান সম্মেলনে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার দলিল চূড়ান্ত হয়েছিল। সামরিক কর্মকর্তা ও সমর বিশ্লেষকেরা এ মর্মে প্রচারণায় নেমে পড়েন যে, ‘তালেবানের মৃত্যু হয়েছে’।
কিন্তু বিগত ১৮ বছরের ঘটনাপ্রবাহ, গেরিলা অভিযান ও আত্মঘাতী বোমা হামলার ফলে প্রমাণ হচ্ছে, ধারণাটি সত্য হয়নি। তাই মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বিজয় উল্লাস ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের বহু পার্বত্য উপত্যকায় এখন চলছে তালেবান শাসন। নিত্যনতুন এলাকা তাদের দখলে আসছে। সম্প্রতি তালেবানরা কাবুলের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গজনি প্রদেশের আজরিস্তান জেলা সদর কামান ও রকেটের সাহায্যে দখল করে নেয়। প্রচণ্ড হামলার মুখে সরকারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির বাস্তবতায় মার্কিন ও তার মিত্রবাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমরাস্ত্রের প্রত্যক্ষ মোকাবেলায় না গিয়ে সাময়িক পশ্চাৎপসারণকে তালেবানরা কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ কৌশল তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং সুবিধাজনক সময়ে বিক্ষিপ্ত শক্তিকে পুনর্গঠিত করতে সাহায্য করেছে। তাদের কয়েক হাজার যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছে। বৃহত্তর অংশ টিকে রয়েছে এবং তারা জনগণের মূল স্র্রোতধারার সাথে মিশে গেছে। বহু তালেবান যোদ্ধা পাশের দেশের বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকার দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে একই পশতুন জনগোষ্ঠীর আশ্রয় পেয়েছে।
২০০২ সালের শুরুর দিকে তালেবান যোদ্ধারা কান্দাহার, হেলমান্দ ও জাবুল অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে বিভক্ত হয়ে গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেছিল। বহু ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে। ২০০৩-২০০৫ সালে তালেবানেরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকে সমরকৌশল হিসেবে অগ্রাধিকার প্রদান করে। তারা আবার পুনর্গঠিত হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের দৃশ্যমান পুনরুত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ক্রিয়াশীল।
প্রথমত, মোল্লা ওমরের ইন্তেকালের পর উচ্চপর্যায়ের বেশ ক’জন নেতা সাহসিকতার সাথে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়ায় তালেবান যোদ্ধাদের আস্থা, বিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, কারজাই ও আশরাফ গানির সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা ও সমরনেতাদের বাড়াবাড়ির ফলে জনসমর্থন হ্রাস পেতে চলেছে। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি জনগণকে হতাশায় ঠেলে দিয়েছে। অনেকে তালেবান শাসনামল ফিরে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিশন বাহিনীর অবিবেচক সমরকৌশল- বিশেষত বিদ্রোহ দমনের নামে বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে ব্যাপকবিধ্বংসী বোমাবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও ধ্বংসযজ্ঞ জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। পঞ্চমত, ১৮ বছর ধরে সরকার জনগণের প্রতি যেসব ওয়াদা করে আসছে তার বেশির ভাগ তাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক টানাপড়েন সাধারণ মানুষকে হতাশ করে দিয়েছে। তাই তারা বিকল্প সন্ধান করছেন।
সরকারের জনসমর্থন ক্রমেই হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও তারা আফগানিস্তানে ‘পোড়ামাটি নীতি’ অনুসরণ করে চলেছে। অতীতে আফগান জাতিকে স্থায়ীভাবে কেউ পরাজিত করতে পারেনি। আফগানিস্তান বড়ই দুর্গম। আফগানরা এতই দুর্দমনীয় যে, তাদের পদানত করা সাধ্যের বাইরে। আফগানিস্তানের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও দেশবাসীর প্রকৃতি এবং রণকৌশল আলাদা। আফগান যুদ্ধফেরত জেনারেল রুসলান আউসেভ বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের মাটিতে মার্কিন বাহিনীকে নাকানি-চুবানি খেতে হবে।’
অতীতে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে আফগানিস্তানকে পদানত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের ভাষায়- আফগানিস্তান হচ্ছে ‘রক্তাক্ত ক্ষত’। শত বছর আগে একজন ব্রিটিশ ভাইসরয় মন্তব্য করেছিলেন- আফগানিস্তান হচ্ছে ‘বিষাক্ত পানপাত্র’। East India Company-এর জেনারেল এলফিনস্টোনের অধীনস্থ ১৬ হাজার সৈন্যের লাশ রয়েছে আফগানিস্তানের মাটিতে। পার্বত্য এলাকায় খোঁজ করলে এসব সৈন্যের হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া যাবে।
১৯৭৯-৮৯ সালে দীর্ঘ ১০ বছর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এক লাখ ৪০ হাজার সেনাসদস্য নিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। তারা পাহাড়-পর্বতে এবং গুরুত্বপূর্ণ Strategic Point-এ এক কোটি শক্তিশালী মাইন পুঁতে রাখে এবং ১৫ লাখ আফগানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। এত কিছু করেও কমপক্ষে ১৫ হাজার সৈন্যের লাশ ফেলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হয়। তদ্রƒপ অথবা তার চেয়েও বেশি সৈন্যের লাশ ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হতে পারে। স্বদেশী প্রতিরোধকারীদের সাথে ভাড়াটিয়া ও হানাদার বাহিনী বেশি দিন টিকতে পারে না। একটানা ১০ বছর বোমা বর্ষণ করে এবং ৫০ হাজার মার্কিন সৈন্যের লাশের বিনিময়েও ভিয়েতনামকে পরাজিত করা আমেরিকার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ তিক্ত স্মৃতি নিশ্চয়ই আফগানিস্তানে তাদের ‘ধাওয়া করছে’। তালেবান যোদ্ধাদের নিষ্ক্রিয় তথা পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে আফগান জাতীয় পুলিশবাহিনী, আফগান জাতীয় সেনাবাহিনী এবং ৪৮ হাজার বিদেশী সৈন্যসহ এক লাখ সশস্ত্র সদস্য বিভিন্ন ফ্রন্টে সক্রিয়। তালেবানদের আক্রমণ থেকে সরকারপন্থী গ্রাম-সরদারদের রক্ষার জন্য বিপুলসংখ্যক মিলিশিয়া তৎপর।
আফগান সরকার তালেবানদের সাথে আপস-মীমাংসায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তালেবান নেতাদের সাথে সমঝোতা করার প্রস্তাব বারবার দিচ্ছেন তারা। কিন্তু অনির্বাচিত ও প্রতিনিধিত্বহীন সরকারের সাথে আলোচনায় তালেবান রাজি হচ্ছে না। আপস-মীমাংসা, আলোচনা ও সাধারণ ক্ষমার উদ্যোগ কার্যকর ফল বয়ে আনেনি।
অভিযোগে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারকে সামনে রেখে আফগানিস্তানের হাজার বছরের লালিত উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পপির চাষ আবার শুরু হয়েছে পুরোদমে। পপি চাষ তথা মাদক উৎপাদনের দিক দিয়ে আফগানিস্তান এখন শীর্ষে। ক্যাসিনো, নাইট ক্লাব ও মদের আসর বসছে নিয়মিত। ২৫০ চ্যানেলবিশিষ্ট ডিশ পাওয়া যায় মাত্র ১০ হাজার টাকায়। আফগানিস্তান সত্যিকার অর্থেই আফগান জনগণ দ্বারা শাসিত হোক এবং আফগানিস্তানের ভূমি সব ধরনের আগ্রাসী বাহিনীর দখলমুক্ত হোক- এটাই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কামনা।
লেখক :*অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৩
-
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তালেবানের সাথে সমঝোতা চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও সফলতা অর্জন করতে পারল না। গত ৫ সেপ্টেম্বর কাবুলের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত কূটনৈতিকপাড়ায় গাড়িবোমা হামলায় একজন মার্কিন সেনাসহ ১২ জন প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি আলোচনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি বাতিলের এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। যেকোনো সময় আলোচনা আবার শুরু হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কথায়ও এটা বোঝা যায়। তালেবান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছে, ‘শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কারণ এতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ হবে, তাদের শান্তিবিরোধী অবস্থান বিশ্বের কাছে প্রকাশ পাবে, জীবন ও সম্পদহানি বৃদ্ধি পাবে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তি আলোচনা বাতিল করে কোনো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন বলে মনে হয় না। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনী সমঝোতা চুক্তির পক্ষে। তালেবান যে নিছক ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ নয়, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে তা স্বীকার করে নিয়েছে। অপর দিকে, তালেবানরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। এ কারণে, সমঝোতা চুক্তি না হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তাদের বেগ পেতে হবে না।
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে, আন্তর্জাতিক জোটের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্যের প্রাণের বিনিময়েও আফগানিস্তানকে দখলে রাখা যাচ্ছে না। দেশটির ৭০ শতাংশ এলাকা তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। জোটের অবস্থা এখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’। সম্ভাব্য চুক্তির মূলনীতি হিসেবে আফগানিস্তান থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে ৫ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে এবং পাঁচটি সেনাঘাঁটি ১৩৫ দিনের মধ্যে ছেড়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের নিযুক্ত আফগানবিষয়ক মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ ওই চুক্তির বিবরণ প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ ১৮ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছিলেন তালেবান কর্মকর্তারা। সম্প্রতি দুই পক্ষের নবম ধাপের আলোচনা শেষ হয়েছে। এর আগে বৈঠক হয়েছে পাকিস্তানেও। ন্যাটো এ সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যায়ক্রমে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ১৪ হাজার পরিশ্রান্ত সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী।
আলোচনা, সমঝোতা ও চুক্তির পাশাপাশি গেরিলা যুদ্ধও তালেবান অব্যাহত রেখেছে স্বদেশে। ওই দিকে, খলিলজাদের ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরপরই কাবুলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের বিদেশী কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত হাউজিং কমপ্লেক্সে তালেবানের গাড়িবোমা হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হলেন। আহত শতাধিক মানুষ। কাবুলের সুরক্ষিত ‘গ্রিন জোনের’ খুব কাছেই ওই হাউজিং কমপ্লেক্সের অবস্থান। এটা ছিল রাজধানীতে তালেবানদের শক্তির মহড়া।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক জোটের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সদস্য নিহত হয়েছে এ যাবৎ। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার ৩০০ জন। আফগানিস্তানের বেসামরিক, তালেবান ও সরকারি সেনার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা কঠিন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়, ‘আফগান যুদ্ধে ৩২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট জানায়, এই যুদ্ধে ৫৮ হাজার নিরাপত্তা সদস্য ও প্রায় ৪২ হাজার বিদ্রোহী সেনা নিহত হয়েছে। (নয়া দিগন্ত, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯)।
১৮ বছর ধরে ন্যাটো ও মার্কিন সেনাবাহিনীর বারবার বোমাবর্ষণ, অব্যাহত তল্লাশি ও সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও আফগানিস্তানের শহরে-পাহাড়ে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তালেবান সংগঠিত হচ্ছে। বিদেশী বাহিনী ও কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাবুল, কান্দাহার, গারদেজ, হেলমান্দ, লোগার, জালালাবাদ, খোস্ত, পাকতিয়া, জাবুল ও কুনারসহ ৩৫টি প্রদেশে জোটবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা অভিযান তীব্রতর হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি প্রদেশের বিদেশী সৈন্যরা যুদ্ধ না করেই ঘরে ফিরতে আগ্রহী। শহরে-গ্রামে সর্বত্র তালেবানদের উপস্থিতি লক্ষ করার মতো। তালেবানদের ভয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং সরকারের কর্মকর্তাদের নির্বিঘেœ চলাফেরাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে কান্দাহার প্রদেশে ক্ষমতার দৃশ্যপটে আবির্ভূত হওয়ার সাত বছর পর ২০০১ সালে মার্কিন মদদপুষ্ট বাহিনীর সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের ফলে তালেবান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল। মার্কিন বাহিনী পাশ্চাত্যের অনুসারী হামিদ কারজাইকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মসনদে বসালেও ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি নিয়ন্ত্রণ করেছে তারাই। জাতিসঙ্ঘের ব্যবস্থাপনায় জার্মানির বনে অনুষ্ঠিত আন্তঃআফগান সম্মেলনে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার দলিল চূড়ান্ত হয়েছিল। সামরিক কর্মকর্তা ও সমর বিশ্লেষকেরা এ মর্মে প্রচারণায় নেমে পড়েন যে, ‘তালেবানের মৃত্যু হয়েছে’।
কিন্তু বিগত ১৮ বছরের ঘটনাপ্রবাহ, গেরিলা অভিযান ও আত্মঘাতী বোমা হামলার ফলে প্রমাণ হচ্ছে, ধারণাটি সত্য হয়নি। তাই মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের বিজয় উল্লাস ধীরে ধীরে উবে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের বহু পার্বত্য উপত্যকায় এখন চলছে তালেবান শাসন। নিত্যনতুন এলাকা তাদের দখলে আসছে। সম্প্রতি তালেবানরা কাবুলের প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গজনি প্রদেশের আজরিস্তান জেলা সদর কামান ও রকেটের সাহায্যে দখল করে নেয়। প্রচণ্ড হামলার মুখে সরকারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
পরিবর্তিত পরিস্থিতির বাস্তবতায় মার্কিন ও তার মিত্রবাহিনীর আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সমরাস্ত্রের প্রত্যক্ষ মোকাবেলায় না গিয়ে সাময়িক পশ্চাৎপসারণকে তালেবানরা কৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ কৌশল তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং সুবিধাজনক সময়ে বিক্ষিপ্ত শক্তিকে পুনর্গঠিত করতে সাহায্য করেছে। তাদের কয়েক হাজার যোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছে। বৃহত্তর অংশ টিকে রয়েছে এবং তারা জনগণের মূল স্র্রোতধারার সাথে মিশে গেছে। বহু তালেবান যোদ্ধা পাশের দেশের বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকার দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে একই পশতুন জনগোষ্ঠীর আশ্রয় পেয়েছে।
২০০২ সালের শুরুর দিকে তালেবান যোদ্ধারা কান্দাহার, হেলমান্দ ও জাবুল অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটে বিভক্ত হয়ে গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেছিল। বহু ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে। ২০০৩-২০০৫ সালে তালেবানেরা আত্মঘাতী বোমা হামলাকে সমরকৌশল হিসেবে অগ্রাধিকার প্রদান করে। তারা আবার পুনর্গঠিত হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের দৃশ্যমান পুনরুত্থানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ ক্রিয়াশীল।
প্রথমত, মোল্লা ওমরের ইন্তেকালের পর উচ্চপর্যায়ের বেশ ক’জন নেতা সাহসিকতার সাথে সরাসরি নেতৃত্ব দেয়ায় তালেবান যোদ্ধাদের আস্থা, বিশ্বাস ও মনোবল বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, কারজাই ও আশরাফ গানির সরকারের দুর্বল ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তা ও সমরনেতাদের বাড়াবাড়ির ফলে জনসমর্থন হ্রাস পেতে চলেছে। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি জনগণকে হতাশায় ঠেলে দিয়েছে। অনেকে তালেবান শাসনামল ফিরে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোয়ালিশন বাহিনীর অবিবেচক সমরকৌশল- বিশেষত বিদ্রোহ দমনের নামে বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে ব্যাপকবিধ্বংসী বোমাবর্ষণ, হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও ধ্বংসযজ্ঞ জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। পঞ্চমত, ১৮ বছর ধরে সরকার জনগণের প্রতি যেসব ওয়াদা করে আসছে তার বেশির ভাগ তাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক টানাপড়েন সাধারণ মানুষকে হতাশ করে দিয়েছে। তাই তারা বিকল্প সন্ধান করছেন।
সরকারের জনসমর্থন ক্রমেই হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও তারা আফগানিস্তানে ‘পোড়ামাটি নীতি’ অনুসরণ করে চলেছে। অতীতে আফগান জাতিকে স্থায়ীভাবে কেউ পরাজিত করতে পারেনি। আফগানিস্তান বড়ই দুর্গম। আফগানরা এতই দুর্দমনীয় যে, তাদের পদানত করা সাধ্যের বাইরে। আফগানিস্তানের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও দেশবাসীর প্রকৃতি এবং রণকৌশল আলাদা। আফগান যুদ্ধফেরত জেনারেল রুসলান আউসেভ বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের মাটিতে মার্কিন বাহিনীকে নাকানি-চুবানি খেতে হবে।’
অতীতে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনাবাহিনী পাঠিয়ে আফগানিস্তানকে পদানত করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। সাবেক সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের ভাষায়- আফগানিস্তান হচ্ছে ‘রক্তাক্ত ক্ষত’। শত বছর আগে একজন ব্রিটিশ ভাইসরয় মন্তব্য করেছিলেন- আফগানিস্তান হচ্ছে ‘বিষাক্ত পানপাত্র’। East India Company-এর জেনারেল এলফিনস্টোনের অধীনস্থ ১৬ হাজার সৈন্যের লাশ রয়েছে আফগানিস্তানের মাটিতে। পার্বত্য এলাকায় খোঁজ করলে এসব সৈন্যের হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া যাবে।
১৯৭৯-৮৯ সালে দীর্ঘ ১০ বছর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এক লাখ ৪০ হাজার সেনাসদস্য নিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। তারা পাহাড়-পর্বতে এবং গুরুত্বপূর্ণ Strategic Point-এ এক কোটি শক্তিশালী মাইন পুঁতে রাখে এবং ১৫ লাখ আফগানকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। এত কিছু করেও কমপক্ষে ১৫ হাজার সৈন্যের লাশ ফেলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে হয়। তদ্রƒপ অথবা তার চেয়েও বেশি সৈন্যের লাশ ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হতে পারে। স্বদেশী প্রতিরোধকারীদের সাথে ভাড়াটিয়া ও হানাদার বাহিনী বেশি দিন টিকতে পারে না। একটানা ১০ বছর বোমা বর্ষণ করে এবং ৫০ হাজার মার্কিন সৈন্যের লাশের বিনিময়েও ভিয়েতনামকে পরাজিত করা আমেরিকার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ তিক্ত স্মৃতি নিশ্চয়ই আফগানিস্তানে তাদের ‘ধাওয়া করছে’। তালেবান যোদ্ধাদের নিষ্ক্রিয় তথা পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে আফগান জাতীয় পুলিশবাহিনী, আফগান জাতীয় সেনাবাহিনী এবং ৪৮ হাজার বিদেশী সৈন্যসহ এক লাখ সশস্ত্র সদস্য বিভিন্ন ফ্রন্টে সক্রিয়। তালেবানদের আক্রমণ থেকে সরকারপন্থী গ্রাম-সরদারদের রক্ষার জন্য বিপুলসংখ্যক মিলিশিয়া তৎপর।
আফগান সরকার তালেবানদের সাথে আপস-মীমাংসায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তালেবান নেতাদের সাথে সমঝোতা করার প্রস্তাব বারবার দিচ্ছেন তারা। কিন্তু অনির্বাচিত ও প্রতিনিধিত্বহীন সরকারের সাথে আলোচনায় তালেবান রাজি হচ্ছে না। আপস-মীমাংসা, আলোচনা ও সাধারণ ক্ষমার উদ্যোগ কার্যকর ফল বয়ে আনেনি।
অভিযোগে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারকে সামনে রেখে আফগানিস্তানের হাজার বছরের লালিত উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পপির চাষ আবার শুরু হয়েছে পুরোদমে। পপি চাষ তথা মাদক উৎপাদনের দিক দিয়ে আফগানিস্তান এখন শীর্ষে। ক্যাসিনো, নাইট ক্লাব ও মদের আসর বসছে নিয়মিত। ২৫০ চ্যানেলবিশিষ্ট ডিশ পাওয়া যায় মাত্র ১০ হাজার টাকায়। আফগানিস্তান সত্যিকার অর্থেই আফগান জনগণ দ্বারা শাসিত হোক এবং আফগানিস্তানের ভূমি সব ধরনের আগ্রাসী বাহিনীর দখলমুক্ত হোক- এটাই বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের কামনা।
লেখক :*অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম
Comment