আক্রমণে পুলিশ তখন হতবিহ্বল
সমকাল থেকে
কলাবাগান থানায় গত সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে প্রথম ফোনটি যায়। উত্তর ধানমণ্ডির এক বাসিন্দা জানিয়েছিলেন, '৩৫ নম্বর বাসায় হামলা হচ্ছে।' এরপর আরও কয়েকটি ফোন পায় পুলিশ। কেউ কেউ বলেন, 'বাসায় ডাকাতি হচ্ছে।' ফোন পাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়। ওই বাসায় পেঁৗছানোর আগেই পুুলিশ রাস্তায় অস্ত্র ও চাপাতি হাতে কয়েকজন তরুণকে হাঁটতে দেখে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল গাড়ি দেখে তারা দৌড়ে পালাচ্ছিল। এরপর পুলিশ সদস্যরা তাদের তাড়া করেন। কিছুটা অপ্রস্তুত পুলিশ সদস্যদের একজনকে কুপিয়ে আহত করে ওই যুবকরা। তখনও পুলিশের ধারণা ছিল_ 'ওই হামলাকারীরাই ডাকাত দলের সদস্য।' দ্রুত ঘটনাস্থলে চার সদস্যের পুলিশের একটি দল পেঁৗছলেও ঘটনার আকস্মিকতায় তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হন তারা। মাত্র দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েই পুলিশ তার দায়িত্ব পালন শেষ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, খুনিরা সংখ্যায় ছিল পাঁচজন। তাদের পাকড়াও করতে যাওয়া পুলিশ দলের সদস্য সংখ্যা ছিল চার। তাদের দুই কর্মকর্তাসহ চারজনের হাতেই ছিল অস্ত্র। গোলাগুলির পরও কোনো দুর্বৃত্ত গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন উঠেছে। টানা কয়েকটি ঘটনার পর উগ্রপন্থি খুনিদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার গলদঘর্ম অবস্থা। চলছিল টানা অভিযানও। এরই মধ্যে বাসায় ঢুকে দু'জনকে হত্যার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে খুনিরা কীভাবে পালাল, তা নিয়েও কথা উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা গেলে অনেক ক্লু বেরিয়ে আসত। পুলিশের গুলিতে জড়িতদের কেউ মারা গেলেও তা 'সাফল্য' হিসেবে বিবেচিত হতো।
যদিও পুলিশ বলছে, জঙ্গিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে রাখা একটি ব্যাগের ভেতর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। আর ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন ব্যাগসহ একজনকে আটক করতে গিয়ে পুলিশের 'সময়' নষ্ট হয়েছে। পরে জানা গেছে, আটক করা ওই তরুণ নিরপরাধ।
কলাবাগান থানার ওসি মো. ইকবাল বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশের দুটি দল পাঠানো হয়। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময়ও হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা তখনও ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানতেন না।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনার সময় দ্রুতই ঘটনাস্থলে পেঁৗছতে পেরেছিল পুলিশের দুটি ইউনিট। কলাবাগান থানার একটি দল স্কয়ার হাসপাতালের উল্টোপাশের গলি দিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। অপর দলটি ডলফিন গলির মুখ দিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে থাকে। মূলত পুলিশের ওই দলটির সঙ্গেই খুনিদের গোলাগুলি হয়। ওই টিমে কলাবাগান থানা পুলিশের এসআই শামীম আহমেদের নেতৃত্বে একজন এএসআই ও দু'জন কনস্টেবল ছিলেন। গাড়িচালক একজন কনস্টেবল থাকলেও তিনি ছিলেন নিরস্ত্র।
এসআই শামীম আহমেদ সমকালকে জানান, ডলফিন গলির ভেতর ঢুকতেই ৬০ নম্বর বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। অপ্রস্তুত পুলিশ সদস্যরাও পজিশন নিয়ে গুলি ছোড়ে। ততক্ষণে এএসআই মোমতাজ উদ্দিন খুনি দলের এক সদস্যকে জাপটে ধরলে আরেকজন তাকে কুপিয়ে ওই দুর্বৃত্তকে ছাড়িয়ে নেয়। ওই সময় অন্য দুই কনস্টেবল তাকে উদ্ধারে তৎপর হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, তিনি নিজের অস্ত্র বের করে খুনিদের তাড়া করতে শুরু করেন। ওই সময় এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। তারাও পাল্টা গুলি করতে থাকে। ওই সময় তিনি রাস্তার পাশে গর্তের ভেতর পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। তবে একজনের ব্যাগ কেড়ে নিতে সমর্থ হন। খুনিরা ডলফিন গলি দিয়ে মিরপুর সড়কে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
ওই দলে থাকা কনস্টেবল নুরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখে তিনি শটগান দিয়ে এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। খুনিরা সংখ্যায় বেশি থাকায় তাদের কাবু করা যায়নি। তা ছাড়া শুরুতেই তাদের একজন অফিসারকে কোপানোর ফলে তারা ঘাবড়ে যান।
অপর কনস্টেবল আজগর আলী বলেন, তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন ধারণাও করেননি। পজিশন নেওয়ার আগেই খুনিরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। খুব সামনে থাকায় তারা ধারালো অস্ত্র নিয়েও তেড়ে আসছিল। মনে হয়েছে, তারা খুব প্রশিক্ষিত।
পুলিশের সঙ্গে খুনিদের গোলাগুলির আশপাশেই অন্তত তিনটি মুদি দোকান রয়েছে। সড়কেও ছিল অনেক মানুষ। তাদের কয়েকজন জানান, গোলাগুলির পর খুনিরা মিরপুর সড়কের দিকে চলে যায়। তখন পুলিশ আহত সদস্যকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সূত্রঃ- http://bangla.samakal.net/2016/04/27/208700
সমকাল থেকে
কলাবাগান থানায় গত সোমবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে প্রথম ফোনটি যায়। উত্তর ধানমণ্ডির এক বাসিন্দা জানিয়েছিলেন, '৩৫ নম্বর বাসায় হামলা হচ্ছে।' এরপর আরও কয়েকটি ফোন পায় পুলিশ। কেউ কেউ বলেন, 'বাসায় ডাকাতি হচ্ছে।' ফোন পাওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে রওনা হয়। ওই বাসায় পেঁৗছানোর আগেই পুুলিশ রাস্তায় অস্ত্র ও চাপাতি হাতে কয়েকজন তরুণকে হাঁটতে দেখে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল গাড়ি দেখে তারা দৌড়ে পালাচ্ছিল। এরপর পুলিশ সদস্যরা তাদের তাড়া করেন। কিছুটা অপ্রস্তুত পুলিশ সদস্যদের একজনকে কুপিয়ে আহত করে ওই যুবকরা। তখনও পুলিশের ধারণা ছিল_ 'ওই হামলাকারীরাই ডাকাত দলের সদস্য।' দ্রুত ঘটনাস্থলে চার সদস্যের পুলিশের একটি দল পেঁৗছলেও ঘটনার আকস্মিকতায় তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হন তারা। মাত্র দুই রাউন্ড গুলি ছুড়েই পুলিশ তার দায়িত্ব পালন শেষ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, খুনিরা সংখ্যায় ছিল পাঁচজন। তাদের পাকড়াও করতে যাওয়া পুলিশ দলের সদস্য সংখ্যা ছিল চার। তাদের দুই কর্মকর্তাসহ চারজনের হাতেই ছিল অস্ত্র। গোলাগুলির পরও কোনো দুর্বৃত্ত গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন উঠেছে। টানা কয়েকটি ঘটনার পর উগ্রপন্থি খুনিদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার গলদঘর্ম অবস্থা। চলছিল টানা অভিযানও। এরই মধ্যে বাসায় ঢুকে দু'জনকে হত্যার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে খুনিরা কীভাবে পালাল, তা নিয়েও কথা উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা গেলে অনেক ক্লু বেরিয়ে আসত। পুলিশের গুলিতে জড়িতদের কেউ মারা গেলেও তা 'সাফল্য' হিসেবে বিবেচিত হতো।
যদিও পুলিশ বলছে, জঙ্গিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে রাখা একটি ব্যাগের ভেতর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পাওয়া গেছে। আর ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন ব্যাগসহ একজনকে আটক করতে গিয়ে পুলিশের 'সময়' নষ্ট হয়েছে। পরে জানা গেছে, আটক করা ওই তরুণ নিরপরাধ।
কলাবাগান থানার ওসি মো. ইকবাল বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশের দুটি দল পাঠানো হয়। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তাদের গুলিবিনিময়ও হয়। তবে পুলিশ সদস্যরা তখনও ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানতেন না।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনার সময় দ্রুতই ঘটনাস্থলে পেঁৗছতে পেরেছিল পুলিশের দুটি ইউনিট। কলাবাগান থানার একটি দল স্কয়ার হাসপাতালের উল্টোপাশের গলি দিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। অপর দলটি ডলফিন গলির মুখ দিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে থাকে। মূলত পুলিশের ওই দলটির সঙ্গেই খুনিদের গোলাগুলি হয়। ওই টিমে কলাবাগান থানা পুলিশের এসআই শামীম আহমেদের নেতৃত্বে একজন এএসআই ও দু'জন কনস্টেবল ছিলেন। গাড়িচালক একজন কনস্টেবল থাকলেও তিনি ছিলেন নিরস্ত্র।
এসআই শামীম আহমেদ সমকালকে জানান, ডলফিন গলির ভেতর ঢুকতেই ৬০ নম্বর বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। অপ্রস্তুত পুলিশ সদস্যরাও পজিশন নিয়ে গুলি ছোড়ে। ততক্ষণে এএসআই মোমতাজ উদ্দিন খুনি দলের এক সদস্যকে জাপটে ধরলে আরেকজন তাকে কুপিয়ে ওই দুর্বৃত্তকে ছাড়িয়ে নেয়। ওই সময় অন্য দুই কনস্টেবল তাকে উদ্ধারে তৎপর হয়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, তিনি নিজের অস্ত্র বের করে খুনিদের তাড়া করতে শুরু করেন। ওই সময় এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। তারাও পাল্টা গুলি করতে থাকে। ওই সময় তিনি রাস্তার পাশে গর্তের ভেতর পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। তবে একজনের ব্যাগ কেড়ে নিতে সমর্থ হন। খুনিরা ডলফিন গলি দিয়ে মিরপুর সড়কে ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়।
ওই দলে থাকা কনস্টেবল নুরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে তারা হতভম্ব হয়ে পড়েন। দুর্বৃত্তদের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখে তিনি শটগান দিয়ে এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। খুনিরা সংখ্যায় বেশি থাকায় তাদের কাবু করা যায়নি। তা ছাড়া শুরুতেই তাদের একজন অফিসারকে কোপানোর ফলে তারা ঘাবড়ে যান।
অপর কনস্টেবল আজগর আলী বলেন, তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন ধারণাও করেননি। পজিশন নেওয়ার আগেই খুনিরা এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। খুব সামনে থাকায় তারা ধারালো অস্ত্র নিয়েও তেড়ে আসছিল। মনে হয়েছে, তারা খুব প্রশিক্ষিত।
পুলিশের সঙ্গে খুনিদের গোলাগুলির আশপাশেই অন্তত তিনটি মুদি দোকান রয়েছে। সড়কেও ছিল অনেক মানুষ। তাদের কয়েকজন জানান, গোলাগুলির পর খুনিরা মিরপুর সড়কের দিকে চলে যায়। তখন পুলিশ আহত সদস্যকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সূত্রঃ- http://bangla.samakal.net/2016/04/27/208700
Comment