আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরকারের মন্ত্রী বা নীতি নির্ধারক, স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক ও গবেষকদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এমনটাই দাবি করেছেন।
পাঁচদিনের ভারত সফরে এসে একাধিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় ইনু এ কথাটিই গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন। ভারতীয় থিংক ট্যাংক হিসেবে বিবেচিত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন বা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের মতো দিল্লির নামজাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তেমনি আছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লির জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিও (জেএনইউ)। জেএনইউ-তে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের প্রথম সারির শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি।
তা ছাড়া তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে প্রভাবশালী ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু–যিনি হাসানুল হক ইনুর ভারতীয় কাউন্টার পার্ট –তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তার। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিংয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর আলোচনার কথা ছিল–যদিও শেষ মুহুর্তে অন্য কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু পর পর এই সব হাইপ্রোফাইল বৈঠক বা ইন্টারঅ্যাকশনে নতুন কথা কী বলছেন হাসানুল হক ইনু? বাংলা ট্রিবিউন যেটা জানতে পেরেছে তার সারসংক্ষেপ হল এরকম:
ক. ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের সমস্যাকে পুরোপুরি দূর করা সম্ভব বলেই বাংলাদেশের বিশ্বাস। একই সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সবার সাজা কার্যকর হয়ে যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে – ফলে ২০১৭’র পর এগুলো বাংলাদেশে আর কোনও ইস্যু হয়ে থাকবে না বলেই সরকারের দৃঢ় ধারণা।
খ. সরকারের সাঁড়াশি অভিযানে যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে এবং এখন নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আছে, এখন দেখা যাচ্ছে যে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই জামায়াত বা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ব্যাকগ্রাউন্ডের। বাকিরা কেউ কেউ মাদ্রাসার ছাত্র বা খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসেছে। সমস্যার উৎসটা যেহেতু চিহ্নিত করা গেছে, তাই সমূলে তার উৎপাটনটাও দ্রুত করা যাবে বলে সরকার আত্মবিশ্বাসী।
গ. এই সব ধৃত জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা বা কোনও আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগসাজশের প্রমাণ মেলেনি। অর্থাৎ এরা সবাই ‘হোমগ্রোওন টেরোরিস্ট’ বা বাংলাদেশেই তাদের শেকড়। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের তুলনায় নেহাতই মামুলি–যা থেকে প্রমাণ হয় তারা বিদেশ থেকে কোনও অস্ত্রের জোগান হাতে পায়নি।
ঘ. তবে হ্যাঁ, তাদের কাছ থেকে যেসব বিস্ফোরক পদার্থ মিলেছে, তার মান এবং বিধ্বংসী ক্ষমতা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। এই ধরনের ভালোমানের বিস্ফোরক গ্রামের কোনও কুঁড়েঘরে বা শহরের ফ্ল্যাটে বসে বানানো সম্ভব নয়–একমাত্র কোনও দেশের সামরিক বাহিনীর কারখানাতেই এগুলো তৈরি করা সম্ভব। (তথ্যমন্ত্রী কোনও দেশের নাম করেননি, তবে ইঙ্গিত যে দক্ষিণ এশিয়ারই একটি দেশের দিকে তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হওয়ার কথা নয়)।
ঙ. বাংলাদেশ এখন এমন একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে যে যেখানে দেশের নিরাপত্তা আর সুস্থিতির স্বার্থে কোনও আপস করা সম্ভব নয়–এমন কী কোনও ‘মিডল পাথ’ বা মধ্যপন্থা অনুসরণ করারও অবকাশ আর নেই। তথ্যমন্ত্রীর কথায়, আমরা এখন একটা ‘এসপার-ওসপার’ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি–এই সন্ত্রাসবাদের শেষ দেখে আমরা ছাড়ব, আর আমাদের বিশ্বাস আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই সেটা করা সম্ভব।
এই অভিযানে ভারতের সাহায্য যে তাদের ভীষণভাবেই প্রয়োজন, সেটা তথ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় বলছেন কোনও রাখঢাক না-করেই। দিল্লির নামজাদা থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোও তার বক্তব্যকে অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছে, হাসানুল হক ইনুও ব্যাখ্যা করছেন জঙ্গিবাদের সমস্যা দূর করার জন্য তাদের সরকারের ব্লু-প্রিন্টটা কী।
বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন যেমন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ থিঙ্কট্যাঙ্ক বলে পরিচিত–প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বহু প্রধান কর্মকর্তাই এই গবেষণাকেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ছেলে শৌর্য দোভাল এবং বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাম মাধব। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ভারত সরকারের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠতাও সুবিদিত, এই সরকারে তাদের মতামতেরও গুরুত্ব কম নয়।
হাসানুল হক ইনু যখন একের পর এক ভারতের এই সব থিঙ্কট্যাঙ্কে বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাসবাদ দমনের রূপরেখা পেশ করছেন এবং সবিস্তারে ব্যাখ্যা করছেন কেন তারা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী–তখন সে দিকে দিল্লি মনোযোগ দেবে সেটা অবধারিত, আর যথারীতি দিচ্ছেও।
সূত্রঃরঞ্জন বসু, দিল্লি০২:৫৩, আগস্ট ১৯, ২০১৬ বাংলা ট্রিবিউন
পাঁচদিনের ভারত সফরে এসে একাধিক প্রতিষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় ইনু এ কথাটিই গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন। ভারতীয় থিংক ট্যাংক হিসেবে বিবেচিত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেমন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন বা ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের মতো দিল্লির নামজাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তেমনি আছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিল্লির জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিও (জেএনইউ)। জেএনইউ-তে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের প্রথম সারির শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি।
তা ছাড়া তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গেও। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে প্রভাবশালী ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু–যিনি হাসানুল হক ইনুর ভারতীয় কাউন্টার পার্ট –তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তার। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ভি কে সিংয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রীর আলোচনার কথা ছিল–যদিও শেষ মুহুর্তে অন্য কারণে তা বাতিল হয়ে গেছে।
কিন্তু পর পর এই সব হাইপ্রোফাইল বৈঠক বা ইন্টারঅ্যাকশনে নতুন কথা কী বলছেন হাসানুল হক ইনু? বাংলা ট্রিবিউন যেটা জানতে পেরেছে তার সারসংক্ষেপ হল এরকম:
ক. ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের সমস্যাকে পুরোপুরি দূর করা সম্ভব বলেই বাংলাদেশের বিশ্বাস। একই সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের সবার সাজা কার্যকর হয়ে যাবে বলেও আশা করা হচ্ছে – ফলে ২০১৭’র পর এগুলো বাংলাদেশে আর কোনও ইস্যু হয়ে থাকবে না বলেই সরকারের দৃঢ় ধারণা।
খ. সরকারের সাঁড়াশি অভিযানে যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে এবং এখন নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আছে, এখন দেখা যাচ্ছে যে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই জামায়াত বা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ব্যাকগ্রাউন্ডের। বাকিরা কেউ কেউ মাদ্রাসার ছাত্র বা খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসেছে। সমস্যার উৎসটা যেহেতু চিহ্নিত করা গেছে, তাই সমূলে তার উৎপাটনটাও দ্রুত করা যাবে বলে সরকার আত্মবিশ্বাসী।
গ. এই সব ধৃত জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেট, আল কায়দা বা কোনও আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগসাজশের প্রমাণ মেলেনি। অর্থাৎ এরা সবাই ‘হোমগ্রোওন টেরোরিস্ট’ বা বাংলাদেশেই তাদের শেকড়। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের তুলনায় নেহাতই মামুলি–যা থেকে প্রমাণ হয় তারা বিদেশ থেকে কোনও অস্ত্রের জোগান হাতে পায়নি।
ঘ. তবে হ্যাঁ, তাদের কাছ থেকে যেসব বিস্ফোরক পদার্থ মিলেছে, তার মান এবং বিধ্বংসী ক্ষমতা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। এই ধরনের ভালোমানের বিস্ফোরক গ্রামের কোনও কুঁড়েঘরে বা শহরের ফ্ল্যাটে বসে বানানো সম্ভব নয়–একমাত্র কোনও দেশের সামরিক বাহিনীর কারখানাতেই এগুলো তৈরি করা সম্ভব। (তথ্যমন্ত্রী কোনও দেশের নাম করেননি, তবে ইঙ্গিত যে দক্ষিণ এশিয়ারই একটি দেশের দিকে তা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হওয়ার কথা নয়)।
ঙ. বাংলাদেশ এখন এমন একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে যে যেখানে দেশের নিরাপত্তা আর সুস্থিতির স্বার্থে কোনও আপস করা সম্ভব নয়–এমন কী কোনও ‘মিডল পাথ’ বা মধ্যপন্থা অনুসরণ করারও অবকাশ আর নেই। তথ্যমন্ত্রীর কথায়, আমরা এখন একটা ‘এসপার-ওসপার’ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছি–এই সন্ত্রাসবাদের শেষ দেখে আমরা ছাড়ব, আর আমাদের বিশ্বাস আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই সেটা করা সম্ভব।
এই অভিযানে ভারতের সাহায্য যে তাদের ভীষণভাবেই প্রয়োজন, সেটা তথ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভায় বলছেন কোনও রাখঢাক না-করেই। দিল্লির নামজাদা থিঙ্কট্যাঙ্কগুলোও তার বক্তব্যকে অসম্ভব গুরুত্ব দিচ্ছে, হাসানুল হক ইনুও ব্যাখ্যা করছেন জঙ্গিবাদের সমস্যা দূর করার জন্য তাদের সরকারের ব্লু-প্রিন্টটা কী।
বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন যেমন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ থিঙ্কট্যাঙ্ক বলে পরিচিত–প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বহু প্রধান কর্মকর্তাই এই গবেষণাকেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন। ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের কর্ণধার আবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ছেলে শৌর্য দোভাল এবং বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাম মাধব। অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে ভারত সরকারের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠতাও সুবিদিত, এই সরকারে তাদের মতামতেরও গুরুত্ব কম নয়।
হাসানুল হক ইনু যখন একের পর এক ভারতের এই সব থিঙ্কট্যাঙ্কে বাংলাদেশ সরকারের সন্ত্রাসবাদ দমনের রূপরেখা পেশ করছেন এবং সবিস্তারে ব্যাখ্যা করছেন কেন তারা জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী–তখন সে দিকে দিল্লি মনোযোগ দেবে সেটা অবধারিত, আর যথারীতি দিচ্ছেও।
সূত্রঃরঞ্জন বসু, দিল্লি০২:৫৩, আগস্ট ১৯, ২০১৬ বাংলা ট্রিবিউন
Comment