যা ঘটছে... মিসরের ইতিহাসে তা নতুন নয়- ক্ষমতার পালাবদলের লালসায় মত্ত কর্ণধারদের মসনদ বাসনার স্বপ্ন উৎসবে বরাবর এভাবেই কোরবানি হয়েছেন সাধারণ মিসরীয়রা। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অভ্যস্ত মিসরীয়দেরও গা-সওয়া হয়ে গেছেÑ জেনারেল মুহাম্মদ নাগিব থেকে (১৯৫৩-১৯৫৪) শুরু করে হোসনি মোবারক (১৯৮১-২০১১) আমল পর্যন্ত অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে প্রাণ বিসর্জনের এ ঘটনা নতুন নয়। তবে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির শাসন পদ্ধতির চমকে রীতিমতো চমকে উঠেছেন মিসরীয়ারা। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে গোটাবিশ্ব। নতুন প্রজš§ও ভিন্নচোখে দেখেছেন মিসরের এ গণহত্যাকে। তাদের মতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের দেখভাল নয়, গণতন্ত্র রক্ষা বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিচ্ছবি এটি নয়। নির্মম সমরতন্ত্রের নিষ্ঠুর প্রতিফলন চলছে দেশটিতেÑ মিসরের সমরনায়ক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিই তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মিসরবাসী তথা এ গোত্রে বিশ্বের এ বিশ্বাসকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’র সহযোগী সম্পাদক ল্যালি গ্রাহাম ওয়েমাউথ সম্প্রতি সেনাপ্রধান সিসির এক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সমকালীন মিসর পরিস্থিতিকে কোন চোখে দেখছেন তিনি, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই সাক্ষাৎকারে
ওয়েমাউথ : বর্তমান সংকটের সূচনা কবে থেকে?
সিসি : বর্তমান সংকটের সূচনা হয়েছে মিসর রাষ্ট্রের ধারণাগত এবং মতাদর্শগত বিভক্তি নিয়ে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রাষ্ট্র গঠনের ধারণা এবং রাষ্ট্রের মতাদর্শ। এ বিষয়েই মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত্র। মুরসি সমগ্র মিসরকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনুসারী ও সমর্থকদের জন্য তিনি মিসরে ইসলামি সাম্রাজ্য কায়েম করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিভূ ও প্রতিনিধি।
ওয়েমাউথ : বিষয়টি কখন আপনার কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়?
সিসি : মুরসির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথের দিনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিচার বিভাগের ওপর অযাচিত নগ্ন হস্তক্ষেপে তা আরও প্রকট হয়। বিচারকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেও মুরসি ছিলেন আপাদমস্তক কৃপণ। তবে, সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করেছে।
ওয়েমাউথ : তবে কি আনুগত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রেসিডেন্ট মুরসিকে মিসর এবং সিনাই ইস্যুতে উপদেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি তা মানেননি?
সিসি : মুরসির ওপর সেনাবাহিনীর পরিপূর্ণ আস্থা ছিল। আমরা মুরসির বিরুদ্ধে গেলে নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ক্ষমতার গদা হাতে পাওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধে শাসকে বৈধতা এবং ন্যায্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এমনকি ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হওয়ার দ্বাররুদ্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, মুরসি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সমর্থক বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
ওয়েমাউথ : তিনি কোথা হতে কাদেরকে ডাক দিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
সিসি : বিশ্বের ৬০টিরও অধিক দেশে ব্রাদারহুডের জাল বিস্তৃত। রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম, মতাদর্শ কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা থেকে নয়, ব্রাদারহুডে সংগঠনের নিজস্ব ধারণার ওপর গ্রোথিত যা জাতি-রাষ্ট্র চিন্তাধারা থেকে যোজন যোজন দূরে।
ওয়েমাউথ : কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া এবং নাহদা স্কয়ারে মুরসি সমর্থকদের লাগাতার অবস্থান এবং সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ, নিন্দা প্রকাশ করেছে।
সিসি : আমরা সত্যিই যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে হতাশ। যারা মিসরের নিরাপত্তা এবং ভালো চায় তাদের কার্যকরী কোনো ভূমিকাই নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা কথায়? স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় তারাই একমাত্র চর্চাকারীÑ অন্যসব দেশের কি সেই অধিকার ও সুযোগ নেই? তাহরির স্কয়ারে লাখো মানুষের পরিবর্তনের ক্ষুধা কি আপনারা দেখেননি? আমি এর জবাব চাই? আপনারা মিসরের জনগণকে ছেড়ে গেছেন। মিসর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মিসরের জনগণ এটা ভুলবে না। কিন্তু মার্কিন স্বার্থ আর জনগণের ইচ্ছার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
ওয়েমাউথ : যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় কি?
সিসি : আরব বসন্ত-উত্তর মিসরের ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য মার্কিন সহায়তা কোথায়? এমনকি মুরসির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও বছরজুড়ে সে সহায়তা ছিল না। অর্থনীতিসহ মৌলিক অনেক চাহিদা মেটাতে সহায়তা কেন নেই?
ওয়েমাউথ : আপনি কি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন?
সিসি : এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তপাতহীন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
ওয়েমাউথ : আপনি কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন?
সিসি : আপনি মনে হয় বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না যে কর্ণধার হওয়ার আশা-আকাক্সক্ষা পোষণ করে না, এমন মানুষও পৃথিবীতে আছে।
ওয়েমাউথ : আপনি কি তেমন একজন?
সিসি : অবশ্যই।
ওয়েমাউথ : আপনি কি মনে করেন সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ না করলে মিসরে গৃহযুদ্ধ বেধে যেত?
সিসি : আমি সে বিশ্বাসই পোষণ করি। আর গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনার কথা আমি মুরসিকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সে সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেন।
ওয়েমাউথ : আগামী নির্বাচনে মিসর কি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে?
সিসি : বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের পর্যবেক্ষকদের জন্য মিসর উন্মুক্ত থাকবে।
ওয়েমাউথ : মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রেসিডেন্ট ওবামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা প্রতিরক্ষামন্ত্রী কি আপনাকে ফোন করেছেন?
সিসি : প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেননি। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেলের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়।
(collected)
ওয়েমাউথ : বর্তমান সংকটের সূচনা কবে থেকে?
সিসি : বর্তমান সংকটের সূচনা হয়েছে মিসর রাষ্ট্রের ধারণাগত এবং মতাদর্শগত বিভক্তি নিয়ে। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রাষ্ট্র গঠনের ধারণা এবং রাষ্ট্রের মতাদর্শ। এ বিষয়েই মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত্র। মুরসি সমগ্র মিসরকে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে। অনুসারী ও সমর্থকদের জন্য তিনি মিসরে ইসলামি সাম্রাজ্য কায়েম করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিভূ ও প্রতিনিধি।
ওয়েমাউথ : বিষয়টি কখন আপনার কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট হয়?
সিসি : মুরসির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথের দিনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিচার বিভাগের ওপর অযাচিত নগ্ন হস্তক্ষেপে তা আরও প্রকট হয়। বিচারকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেও মুরসি ছিলেন আপাদমস্তক কৃপণ। তবে, সেনাবাহিনী গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন করেছে।
ওয়েমাউথ : তবে কি আনুগত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রেসিডেন্ট মুরসিকে মিসর এবং সিনাই ইস্যুতে উপদেশ দিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি তা মানেননি?
সিসি : মুরসির ওপর সেনাবাহিনীর পরিপূর্ণ আস্থা ছিল। আমরা মুরসির বিরুদ্ধে গেলে নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ক্ষমতার গদা হাতে পাওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। রাষ্ট্রীয় অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধে শাসকে বৈধতা এবং ন্যায্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। এমনকি ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হওয়ার দ্বাররুদ্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, মুরসি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সমর্থক বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
ওয়েমাউথ : তিনি কোথা হতে কাদেরকে ডাক দিয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?
সিসি : বিশ্বের ৬০টিরও অধিক দেশে ব্রাদারহুডের জাল বিস্তৃত। রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম, মতাদর্শ কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা থেকে নয়, ব্রাদারহুডে সংগঠনের নিজস্ব ধারণার ওপর গ্রোথিত যা জাতি-রাষ্ট্র চিন্তাধারা থেকে যোজন যোজন দূরে।
ওয়েমাউথ : কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া এবং নাহদা স্কয়ারে মুরসি সমর্থকদের লাগাতার অবস্থান এবং সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ, নিন্দা প্রকাশ করেছে।
সিসি : আমরা সত্যিই যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা নিয়ে হতাশ। যারা মিসরের নিরাপত্তা এবং ভালো চায় তাদের কার্যকরী কোনো ভূমিকাই নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ভূমিকা কথায়? স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের মূল্যবোধ রক্ষায় তারাই একমাত্র চর্চাকারীÑ অন্যসব দেশের কি সেই অধিকার ও সুযোগ নেই? তাহরির স্কয়ারে লাখো মানুষের পরিবর্তনের ক্ষুধা কি আপনারা দেখেননি? আমি এর জবাব চাই? আপনারা মিসরের জনগণকে ছেড়ে গেছেন। মিসর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মিসরের জনগণ এটা ভুলবে না। কিন্তু মার্কিন স্বার্থ আর জনগণের ইচ্ছার মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।
ওয়েমাউথ : যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় কি?
সিসি : আরব বসন্ত-উত্তর মিসরের ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য মার্কিন সহায়তা কোথায়? এমনকি মুরসির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও বছরজুড়ে সে সহায়তা ছিল না। অর্থনীতিসহ মৌলিক অনেক চাহিদা মেটাতে সহায়তা কেন নেই?
ওয়েমাউথ : আপনি কি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন?
সিসি : এ মুহূর্তে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তপাতহীন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা।
ওয়েমাউথ : আপনি কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন?
সিসি : আপনি মনে হয় বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না যে কর্ণধার হওয়ার আশা-আকাক্সক্ষা পোষণ করে না, এমন মানুষও পৃথিবীতে আছে।
ওয়েমাউথ : আপনি কি তেমন একজন?
সিসি : অবশ্যই।
ওয়েমাউথ : আপনি কি মনে করেন সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ না করলে মিসরে গৃহযুদ্ধ বেধে যেত?
সিসি : আমি সে বিশ্বাসই পোষণ করি। আর গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনার কথা আমি মুরসিকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সে সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেন।
ওয়েমাউথ : আগামী নির্বাচনে মিসর কি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে?
সিসি : বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের পর্যবেক্ষকদের জন্য মিসর উন্মুক্ত থাকবে।
ওয়েমাউথ : মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রেসিডেন্ট ওবামা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা প্রতিরক্ষামন্ত্রী কি আপনাকে ফোন করেছেন?
সিসি : প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেননি। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেলের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়।
(collected)
Comment