আজিমপুর অভিযান
মগজধোলাই হয়ে গেছে ওদের সন্তানদেরও!
'আব্বু জান্নাতে গিয়েছে। কে বলছে সে মারা গেছে। যুদ্ধ করতে করতে আব্বু জান্নাতে গেছে। সে জিহাদে অংশ নিয়েছে। তানভীর আঙ্কেল বলেছিল, আম্মুর কাছে নিয়ে যাবে। তানভীর আঙ্কেল শহীদ হয়েছে। তাই আঙ্কেলের সঙ্গে আম্মুর কাছে যাওয়া হয়নি।'
১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে অভিযানের পর জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় তিন শিশুকে। তাদের মধ্যে ছিল রূপনগরে অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের আট বছরের মেয়ে জুনায়রা নুরিন পিংকি। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের কাছে এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানায় শিশু জুনায়রা। একই ধরনের বক্তব্য রাখে অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর ১৪ বছরের ছেলে তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেল। দুই শিশুর মুখে উগ্রবাদী এমন কথা শুনে বিস্মিত হন গোয়েন্দারা; যারা দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে নানাভাবে কাজ করছেন।
তারা বলছেন, জঙ্গিরা তাদের কোমলমতি শিশুদেরও মগজধোলাই করে ফেলেছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা জরুরি। আজিমপুর থেকে উদ্ধার তিন শিশুর মধ্যে কাদেরীর ছেলে তাহরীমকে সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডেও চাওয়া হয়েছে। সে বর্তমানে গাজীপুরে কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। অন্য দুই শিশু জাহিদুলের কন্যা জুনায়রা ও আরেক পলাতক জঙ্গি বাশারুল্লাহ ওরফে বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেটের এক বছরের মেয়ে সাবিহা জামানকে পরিবারের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জঙ্গিরা তাদের সন্তানদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে। অনেক সময় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা ভুল শিক্ষা পায়। আজিমপুরে আস্তানায় উদ্ধার দুই শিশু হয়তো এই ধরনের প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে উগ্রপন্থি ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এখনই এ ধরনের শিশুদের কাউন্সেলিং করানো জরুরি। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তা চিহ্নিত করেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকোথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহিত কামাল সমকালকে বলেন, শিশুরা সাধারণত মা-বাবাকে অনুসরণ করে থাকে। ছয় বছরের পর থেকে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষঙ্গ জাগ্রত হতে শুরু করে। এই সময়ে তার মধ্যে যে মূল্যবোধ, শিক্ষা বা অনুশাসন ঢুকবে সেভাবেই সে চালিত হবে। এরই মধ্যে এসব শিশুর মধ্যে উগ্রবাদের যে বীজ ঢুকেছে তা ধীরে ধীরে সরানো না গেলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিণতি হতে পারে। তবে এসব শিশুর ওপর জোরজবরদস্তি না করে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মনস্তাত্তি্বক চিত্র পাল্টাতে হবে।
আজিমপুরে অভিযানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন একাধিক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, জাহিদুলের মেয়ে জুনায়রা প্রাথমিকভাবে তাদের জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগরে অভিযানে তার বাবার মৃত্যুর খবর তারা আজিমপুরের বাসায় বসে টেলিভিশনে দেখেছিল। মৃত্যুর খবর শুনে জুনায়রার মা জেবুন্নাহার শীলা প্রথমে কান্নাকাটি করেন। পরে স্বাভাবিক হন তার মা। জুনায়রার ভাষ্য, তার বাবা শহীদ হয়েছে। সে জান্নাতে গেছে। রূপনগরে অভিযানের কয়েক দিন আগে তারা আজিমপুরে তানভীর কাদেরীর বাসায় ওঠে। তবে অভিযান শেষে যখন জুনায়রাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয় তখন পুলিশের কাছে সে মায়ের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।তখন পুলিশের এক সদস্য জুনায়রাকে বলেন, 'তোমার মা তো তোমাকে ভালোবাসে না। তাই তোমাকে ওই বাসায় ফেলে তোমার বোনকে নিয়ে পালিয়েছে।' এর উত্তরে জুনায়রা বলে, 'মা তো আমাকে ফেলে পালায়নি। পুলিশ যাতে না ধরতে পারে তাই অন্য বাসায় উঠেছে। মা বলেছিল, তানভীর আঙ্কেলের বাসায় আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আঙ্কেল শহীদ হওয়ায় আমি তার সঙ্গে মায়ের কাছে যেতে পারিনি।' পুলিশের এক সদস্য জুনায়রাকে বলেন, 'তোমাকে নানা-নানুর কাছে দেওয়া হবে। এর মধ্যে তোমার আম্মুকে খুঁজে দেওয়া হবে।' এর উত্তরে জুনায়রা বলে, 'নানা-নানু হিজরত করেনি, বায়াত নেয়নি। ওদের কাছে যাব না। আমরা হিজরত করেছি, বায়াত নিয়েছি।' জুনায়রার মুখে এমন বক্তব্য শুনে হতবাক হন উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা। সাধারণত জঙ্গিরা নিজেরা পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে জায়গা পরিবর্তন করলে 'হিজরত' বলে থাকে। আর উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকলে 'বায়াত' বলে থাকে।
জুনায়রা আরও জানায়, হিজরত ও বায়াত নেওয়ার পর সবার নাম পাল্টে যায়। পাল্টে যায় সম্পর্ক।
আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর বায়াত গ্রহণের পর আবদুল করিম জামশেদ নামে পরিচিত ছিল। নব্য জেএমবির আরেক নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী প্রিয়তী ওরফে আফরিনকে 'ফুফু' বলে ডাকত জুনায়রা। সংগঠনের বায়াত নেওয়ার পর এই নামে প্রিয়তীকে ডাকা হয়। আর 'ফুফু' তাদের খুব ভালোবাসত বলে জানায় সে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আজিমপুরের আস্তানায় প্রবেশের পরপরই তানভীর কাদেরীর ছেলে তাহরীম কাদরী ছুরি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে ধরে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। ধরার পর তাহরীমও পুলিশকে জানায়, জিহাদের জন্য সে প্রস্তুত। সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আজিমপুরের আস্তানা থেকে গ্রেফতার তিন নারীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে তাহরীম শিশু হওয়ায় এরই মধ্যে প্রবেশন অফিসারকে জানানো হয়েছে। এই মামলায় তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। এখনও রিমান্ডের শুনানি হয়নি। তাহরীমের যমজ ভাইকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী তার ভাই এরই মধ্যে 'হিজরত' করে ঘর ছেড়েছে। আজিমপুরের ওই আস্তানায় কারা যাতায়াত করছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। আর নিহত তানভীর কাদেরীর ঘনিষ্ঠজনদের খোঁজা হচ্ছে। ২০১৪ সালে সৌদি আরব থেকে সপরিবারে ফেরার পর কীভাবে কাদেরী উগ্রপন্থায় প্রত্যক্ষভাবে জড়াল, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম সমকালকে বলেন, তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রোববার রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তাহরীমের ব্যাপারে প্রবেশন অফিসারকে অবগত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গি সুস্থ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, শিশুদের যারা অপব্যবহার করছে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা হওয়া জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ কোমলমতি শিশুদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে।
জুনায়রার চাচা জহিরুল ইসলাম সমকালকে জানান, জুনায়রা তার নানা-নানুর কাছে রয়েছে। বাসায় এখনও সে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করেনি।
সূত্র জানায়, সাধারণত ১৬ বছরের নিচে হলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুলিশ কোনো আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজিমপুরের ঘটনায় পুলিশ ১৪ বছরের তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে।
মগজধোলাই হয়ে গেছে ওদের সন্তানদেরও!
'আব্বু জান্নাতে গিয়েছে। কে বলছে সে মারা গেছে। যুদ্ধ করতে করতে আব্বু জান্নাতে গেছে। সে জিহাদে অংশ নিয়েছে। তানভীর আঙ্কেল বলেছিল, আম্মুর কাছে নিয়ে যাবে। তানভীর আঙ্কেল শহীদ হয়েছে। তাই আঙ্কেলের সঙ্গে আম্মুর কাছে যাওয়া হয়নি।'
১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরে অভিযানের পর জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয় তিন শিশুকে। তাদের মধ্যে ছিল রূপনগরে অভিযানে নিহত মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের আট বছরের মেয়ে জুনায়রা নুরিন পিংকি। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যদের কাছে এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানায় শিশু জুনায়রা। একই ধরনের বক্তব্য রাখে অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর ১৪ বছরের ছেলে তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেল। দুই শিশুর মুখে উগ্রবাদী এমন কথা শুনে বিস্মিত হন গোয়েন্দারা; যারা দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে নানাভাবে কাজ করছেন।
তারা বলছেন, জঙ্গিরা তাদের কোমলমতি শিশুদেরও মগজধোলাই করে ফেলেছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা জরুরি। আজিমপুর থেকে উদ্ধার তিন শিশুর মধ্যে কাদেরীর ছেলে তাহরীমকে সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডেও চাওয়া হয়েছে। সে বর্তমানে গাজীপুরে কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। অন্য দুই শিশু জাহিদুলের কন্যা জুনায়রা ও আরেক পলাতক জঙ্গি বাশারুল্লাহ ওরফে বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেটের এক বছরের মেয়ে সাবিহা জামানকে পরিবারের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জঙ্গিরা তাদের সন্তানদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে। অনেক সময় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা ভুল শিক্ষা পায়। আজিমপুরে আস্তানায় উদ্ধার দুই শিশু হয়তো এই ধরনের প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে উগ্রপন্থি ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এখনই এ ধরনের শিশুদের কাউন্সেলিং করানো জরুরি। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামের নামে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয় তা চিহ্নিত করেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকোথেরাপি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহিত কামাল সমকালকে বলেন, শিশুরা সাধারণত মা-বাবাকে অনুসরণ করে থাকে। ছয় বছরের পর থেকে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষঙ্গ জাগ্রত হতে শুরু করে। এই সময়ে তার মধ্যে যে মূল্যবোধ, শিক্ষা বা অনুশাসন ঢুকবে সেভাবেই সে চালিত হবে। এরই মধ্যে এসব শিশুর মধ্যে উগ্রবাদের যে বীজ ঢুকেছে তা ধীরে ধীরে সরানো না গেলে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিণতি হতে পারে। তবে এসব শিশুর ওপর জোরজবরদস্তি না করে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মনস্তাত্তি্বক চিত্র পাল্টাতে হবে।
আজিমপুরে অভিযানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন একাধিক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, জাহিদুলের মেয়ে জুনায়রা প্রাথমিকভাবে তাদের জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগরে অভিযানে তার বাবার মৃত্যুর খবর তারা আজিমপুরের বাসায় বসে টেলিভিশনে দেখেছিল। মৃত্যুর খবর শুনে জুনায়রার মা জেবুন্নাহার শীলা প্রথমে কান্নাকাটি করেন। পরে স্বাভাবিক হন তার মা। জুনায়রার ভাষ্য, তার বাবা শহীদ হয়েছে। সে জান্নাতে গেছে। রূপনগরে অভিযানের কয়েক দিন আগে তারা আজিমপুরে তানভীর কাদেরীর বাসায় ওঠে। তবে অভিযান শেষে যখন জুনায়রাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয় তখন পুলিশের কাছে সে মায়ের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।তখন পুলিশের এক সদস্য জুনায়রাকে বলেন, 'তোমার মা তো তোমাকে ভালোবাসে না। তাই তোমাকে ওই বাসায় ফেলে তোমার বোনকে নিয়ে পালিয়েছে।' এর উত্তরে জুনায়রা বলে, 'মা তো আমাকে ফেলে পালায়নি। পুলিশ যাতে না ধরতে পারে তাই অন্য বাসায় উঠেছে। মা বলেছিল, তানভীর আঙ্কেলের বাসায় আমাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আঙ্কেল শহীদ হওয়ায় আমি তার সঙ্গে মায়ের কাছে যেতে পারিনি।' পুলিশের এক সদস্য জুনায়রাকে বলেন, 'তোমাকে নানা-নানুর কাছে দেওয়া হবে। এর মধ্যে তোমার আম্মুকে খুঁজে দেওয়া হবে।' এর উত্তরে জুনায়রা বলে, 'নানা-নানু হিজরত করেনি, বায়াত নেয়নি। ওদের কাছে যাব না। আমরা হিজরত করেছি, বায়াত নিয়েছি।' জুনায়রার মুখে এমন বক্তব্য শুনে হতবাক হন উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা। সাধারণত জঙ্গিরা নিজেরা পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে জায়গা পরিবর্তন করলে 'হিজরত' বলে থাকে। আর উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকলে 'বায়াত' বলে থাকে।
জুনায়রা আরও জানায়, হিজরত ও বায়াত নেওয়ার পর সবার নাম পাল্টে যায়। পাল্টে যায় সম্পর্ক।
আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর বায়াত গ্রহণের পর আবদুল করিম জামশেদ নামে পরিচিত ছিল। নব্য জেএমবির আরেক নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী প্রিয়তী ওরফে আফরিনকে 'ফুফু' বলে ডাকত জুনায়রা। সংগঠনের বায়াত নেওয়ার পর এই নামে প্রিয়তীকে ডাকা হয়। আর 'ফুফু' তাদের খুব ভালোবাসত বলে জানায় সে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আজিমপুরের আস্তানায় প্রবেশের পরপরই তানভীর কাদেরীর ছেলে তাহরীম কাদরী ছুরি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে ধরে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। ধরার পর তাহরীমও পুলিশকে জানায়, জিহাদের জন্য সে প্রস্তুত। সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় আজিমপুরের আস্তানা থেকে গ্রেফতার তিন নারীসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে তাহরীম শিশু হওয়ায় এরই মধ্যে প্রবেশন অফিসারকে জানানো হয়েছে। এই মামলায় তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। এখনও রিমান্ডের শুনানি হয়নি। তাহরীমের যমজ ভাইকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী তার ভাই এরই মধ্যে 'হিজরত' করে ঘর ছেড়েছে। আজিমপুরের ওই আস্তানায় কারা যাতায়াত করছে, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। আর নিহত তানভীর কাদেরীর ঘনিষ্ঠজনদের খোঁজা হচ্ছে। ২০১৪ সালে সৌদি আরব থেকে সপরিবারে ফেরার পর কীভাবে কাদেরী উগ্রপন্থায় প্রত্যক্ষভাবে জড়াল, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ডিসি মহিবুল ইসলাম সমকালকে বলেন, তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রোববার রিমান্ডের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তাহরীমের ব্যাপারে প্রবেশন অফিসারকে অবগত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন নারী জঙ্গি সুস্থ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হবে।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এডিসি ছানোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, শিশুদের যারা অপব্যবহার করছে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা হওয়া জরুরি। যাতে ভবিষ্যতে কেউ কোমলমতি শিশুদের উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকে।
জুনায়রার চাচা জহিরুল ইসলাম সমকালকে জানান, জুনায়রা তার নানা-নানুর কাছে রয়েছে। বাসায় এখনও সে কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করেনি।
সূত্র জানায়, সাধারণত ১৬ বছরের নিচে হলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে প্রবেশন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুলিশ কোনো আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজিমপুরের ঘটনায় পুলিশ ১৪ বছরের তাহরীমকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে।
Comment