দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম
দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম
‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ নামে একটি উগ্রবাদী ফোরামের নির্দেশনায় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে হামলাকারী ফয়জুল।ওই গ্রুপে জাফর ইকবালকে হত্যা করা নিয়ে নিয়মিত আলোচনাও হতো বলে জানিয়েছে সে।
নির্দেশনা পাওয়ার পর ফয়জুল সিলেটের মদিনা মার্কেটের একটি জিমে শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্যও ভর্তি হয়েছিল। কীভাবে হামলা করতে হবে এবং কোথায় আঘাত করলে দ্রুত মৃত্যু হতে পারে, ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ ফোরামে সেসব কৌশল নিয়েও আলোচনা করা হয়েছিল। এদিকে হামলার চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর সিলেটের জিন্দাবাজারের আল-হামরা মার্কেটের একটি দোকান থেকে কমান্ডো নাইফটি (চাকু) কেনে ফয়জুল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এপর্যন্ত ধারণা করছি, ফয়জুলের সঙ্গে আরও কেউ ছিল। কিন্তু সে মুখ খুলতে চাইছে না। সে একাই জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে দাবি করছে। কিন্তু সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি।’
পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘হামলাকারী ফয়জুলের কোথায় কোথায় বিচরণ ছিল, কোথা থেকে সে কমান্ডো নাইফ কিনেছে, কখন কীভাবে পরিকল্পনা করেছে, এসবের কিছু কিছু তথ্য জানা গেছে। তার সহযোগীদের সনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।’
গত শনিবার (৩ মার্চ) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আয়োজনে রোবোটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথা, ঘাড়ে এবং হাতে ছুরিকাঘাত করে ২৪-২৫ বছর বয়সী ফয়জুর ওরফে ফয়জুল নামে এক তরুণ। ঘটনার পরপরই জাফর ইকবালকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। বুধবার (৭ মার্চ) সকালে তাকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট- আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হামলার পরপরই ফয়জুলকে আটক করে গণপিটুনী দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে র*্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হামলার একদিন পর রবিবার বিকালে ফয়জুলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র*্যাব। বর্তমানে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও ঢাকার সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা তদন্তে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি র*্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট হামলার রহস্য উন্মোচনে অনুসন্ধান শুরু করে। পুলিশ সদর দফতর থেকেও সরাসরি বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন,‘‘ ফয়জুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে দাওয়ায় ইলাল্লাহ নামে একটি ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই ফোরামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নাস্তিক আখ্যায়িত করে তাকে কীভাবে হত্যা করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। ফয়জুল নিজে থেকে জাফর ইকবালকে হত্যার দায়িত্ব নেয়। এরপর জাফর ইকবালকে কীভাবে হত্যা করা হবে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে ফয়জুলকে সেসব বিষয়ে ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফয়জুলকে শেখানো হয়— মাথা এবং ঘাড়ের পেছনে আঘাত করতে হবে। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই ‘টার্গেট’ মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। সেই প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সে জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়েই কমান্ডো নাইফ নিয়ে আঘাত করেছিল।’’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলার কয়েকদিন আগে সিলেটের আল হামরা মার্কেট থেকে কমান্ডো নাইফটি কিনেছিল ফয়জুল।’
হামলার আগে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ফয়জুল
হামলার আগে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ফয়জুল
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দাওয়াহ ইলাল্লাহ হলো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আনসার আল ইসলামের একটি অনলাইন ফোরাম। যেখানে নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমেই কেবল প্রবেশ করা যায়। বিভিন্নভাবে পরীক্ষিত লোকজনই এই ফোরামের আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের যেসব সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারাও দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের কথা স্বীকার করেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দাওয়াহ ইলাল্লাহসহ অনেক গ্রুপ এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার সিটিটিসি এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, দাওয়ায় ইলাল্লাহ ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে প্রথমে রেকি করা শুরু করে ফয়জুল। বিভিন্ন সময়ে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতো। ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটের স্থানীয় মদিনা মার্কেটের জিম ক্রাফটে ভর্তি হয়েছিল সে। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে গত বছরের ৩১ আগস্ট জিমে ভর্তি হলেও প্রথম তিন দিন জিমে গিয়ে আর যায়নি। তবে হামলা চূড়ান্ত করার আগে গত একমাস ধরে নিয়মিত জিম করতো ফয়জুল।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘এপর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে ফয়জুলকে ‘সেল্ফ র*্যাডিক্যালাইজড’ বলেই মনে হচ্ছে। তবে সে দাওয়ায় ইলাল্লাহসহ আনসারুল বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব ফোরামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যা করতে নানারকম উসকানিমূলক আলোচনা হতো। এসব থেকেই সে হত্যাচেষ্টায় উদ্ভুদ্ধ হতে পারে।’
মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফয়জুলের কয়েকজন সহযোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া সুমন নামে ফয়জুলের এক সহকর্মীও পলাতক। সুমনের সঙ্গে ফয়জুল তার বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেও জঙ্গিবাদ ভাবাদর্শের অনুসারী হতে পারে। এছাড়া ফয়জুলের ভাই এনামুলও পলাতক। তাকেও খোঁজা হচ্ছে। এনামুলের কাছে ফয়জুলের ব্যবহৃত সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন হন্যে হয়ে ফয়জুলের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভিভাইসগুলো খুঁজছেন। কিন্তু হামলার পরপরই ফয়জুলের ভাই এনামুল এগুলো নিয়ে পালিয়ে গেছে। এনামুলের কাছে ফয়জুলের একটি মোবাইল এবং একটি ট্যাব রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ফয়জুলের ব্যবহৃত ট্যাবের মাধ্যমেই সে যোগাযোগের সিক্রেট অ্যাপস টেলিগ্রাম এবং দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে যুক্ত ছিল।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে তারা ফয়জুলের ব্যবহৃত একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধারের পর ঘেঁটে দেখেছেন। সেখানে আল-কায়েদা এবং আইএসের নানারকম ভিডিও, ইরাক-সিরিয়ার ভিডিওসহ নানারকম জঙ্গিবাদি প্রপাগান্ডা প্রচারণার উপাদান পাওয়া গেছে। তবে এসব উপাদান অন্য জায়গা থেকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সিটিটিসি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন,ফয়জুল ট্যাবের মাধ্যমে এসব কিছু ডাউনলোড এবং সব যোগাযোগ স্থাপন
দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম
‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ নামে একটি উগ্রবাদী ফোরামের নির্দেশনায় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে হামলাকারী ফয়জুল।ওই গ্রুপে জাফর ইকবালকে হত্যা করা নিয়ে নিয়মিত আলোচনাও হতো বলে জানিয়েছে সে।
নির্দেশনা পাওয়ার পর ফয়জুল সিলেটের মদিনা মার্কেটের একটি জিমে শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্যও ভর্তি হয়েছিল। কীভাবে হামলা করতে হবে এবং কোথায় আঘাত করলে দ্রুত মৃত্যু হতে পারে, ‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ ফোরামে সেসব কৌশল নিয়েও আলোচনা করা হয়েছিল। এদিকে হামলার চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর সিলেটের জিন্দাবাজারের আল-হামরা মার্কেটের একটি দোকান থেকে কমান্ডো নাইফটি (চাকু) কেনে ফয়জুল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এপর্যন্ত ধারণা করছি, ফয়জুলের সঙ্গে আরও কেউ ছিল। কিন্তু সে মুখ খুলতে চাইছে না। সে একাই জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে বলে দাবি করছে। কিন্তু সে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি।’
পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘হামলাকারী ফয়জুলের কোথায় কোথায় বিচরণ ছিল, কোথা থেকে সে কমান্ডো নাইফ কিনেছে, কখন কীভাবে পরিকল্পনা করেছে, এসবের কিছু কিছু তথ্য জানা গেছে। তার সহযোগীদের সনাক্ত এবং গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে।’
গত শনিবার (৩ মার্চ) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আয়োজনে রোবোটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথা, ঘাড়ে এবং হাতে ছুরিকাঘাত করে ২৪-২৫ বছর বয়সী ফয়জুর ওরফে ফয়জুল নামে এক তরুণ। ঘটনার পরপরই জাফর ইকবালকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। বুধবার (৭ মার্চ) সকালে তাকে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট- আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হামলার পরপরই ফয়জুলকে আটক করে গণপিটুনী দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাকে র*্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হামলার একদিন পর রবিবার বিকালে ফয়জুলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র*্যাব। বর্তমানে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও ঢাকার সিটিটিসি’র কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা তদন্তে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি র*্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট হামলার রহস্য উন্মোচনে অনুসন্ধান শুরু করে। পুলিশ সদর দফতর থেকেও সরাসরি বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন,‘‘ ফয়জুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সে দাওয়ায় ইলাল্লাহ নামে একটি ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই ফোরামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নাস্তিক আখ্যায়িত করে তাকে কীভাবে হত্যা করা যায়, সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। ফয়জুল নিজে থেকে জাফর ইকবালকে হত্যার দায়িত্ব নেয়। এরপর জাফর ইকবালকে কীভাবে হত্যা করা হবে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে ফয়জুলকে সেসব বিষয়ে ভার্চুয়াল আলোচনার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফয়জুলকে শেখানো হয়— মাথা এবং ঘাড়ের পেছনে আঘাত করতে হবে। তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই ‘টার্গেট’ মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। সেই প্রশিক্ষণ অনুযায়ী সে জাফর ইকবালের মাথা ও ঘাড়েই কমান্ডো নাইফ নিয়ে আঘাত করেছিল।’’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হামলার কয়েকদিন আগে সিলেটের আল হামরা মার্কেট থেকে কমান্ডো নাইফটি কিনেছিল ফয়জুল।’
হামলার আগে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ফয়জুল
হামলার আগে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে ফয়জুল
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দাওয়াহ ইলাল্লাহ হলো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আনসার আল ইসলামের একটি অনলাইন ফোরাম। যেখানে নির্দিষ্ট আইডির মাধ্যমেই কেবল প্রবেশ করা যায়। বিভিন্নভাবে পরীক্ষিত লোকজনই এই ফোরামের আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের যেসব সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারাও দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের কথা স্বীকার করেছে। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দাওয়াহ ইলাল্লাহসহ অনেক গ্রুপ এবং ওয়েবসাইট বন্ধ করেও দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার সিটিটিসি এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, দাওয়ায় ইলাল্লাহ ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে প্রথমে রেকি করা শুরু করে ফয়জুল। বিভিন্ন সময়ে সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতো। ফোরামের নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটের স্থানীয় মদিনা মার্কেটের জিম ক্রাফটে ভর্তি হয়েছিল সে। শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে গত বছরের ৩১ আগস্ট জিমে ভর্তি হলেও প্রথম তিন দিন জিমে গিয়ে আর যায়নি। তবে হামলা চূড়ান্ত করার আগে গত একমাস ধরে নিয়মিত জিম করতো ফয়জুল।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘এপর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে ফয়জুলকে ‘সেল্ফ র*্যাডিক্যালাইজড’ বলেই মনে হচ্ছে। তবে সে দাওয়ায় ইলাল্লাহসহ আনসারুল বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অনলাইন ফোরামের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব ফোরামে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যা করতে নানারকম উসকানিমূলক আলোচনা হতো। এসব থেকেই সে হত্যাচেষ্টায় উদ্ভুদ্ধ হতে পারে।’
মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘ফয়জুলের কয়েকজন সহযোগীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া সুমন নামে ফয়জুলের এক সহকর্মীও পলাতক। সুমনের সঙ্গে ফয়জুল তার বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেও জঙ্গিবাদ ভাবাদর্শের অনুসারী হতে পারে। এছাড়া ফয়জুলের ভাই এনামুলও পলাতক। তাকেও খোঁজা হচ্ছে। এনামুলের কাছে ফয়জুলের ব্যবহৃত সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন হন্যে হয়ে ফয়জুলের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ভিভাইসগুলো খুঁজছেন। কিন্তু হামলার পরপরই ফয়জুলের ভাই এনামুল এগুলো নিয়ে পালিয়ে গেছে। এনামুলের কাছে ফয়জুলের একটি মোবাইল এবং একটি ট্যাব রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, ফয়জুলের ব্যবহৃত ট্যাবের মাধ্যমেই সে যোগাযোগের সিক্রেট অ্যাপস টেলিগ্রাম এবং দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে যুক্ত ছিল।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে তারা ফয়জুলের ব্যবহৃত একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধারের পর ঘেঁটে দেখেছেন। সেখানে আল-কায়েদা এবং আইএসের নানারকম ভিডিও, ইরাক-সিরিয়ার ভিডিওসহ নানারকম জঙ্গিবাদি প্রপাগান্ডা প্রচারণার উপাদান পাওয়া গেছে। তবে এসব উপাদান অন্য জায়গা থেকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সিটিটিসি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন,ফয়জুল ট্যাবের মাধ্যমে এসব কিছু ডাউনলোড এবং সব যোগাযোগ স্থাপন
Comment