মূল: আলজাজিরা অনুবাদ: রওশন প্রধান | clock৩:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯,২০১৮
আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে?
১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে অথচ তার পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি- এমন প্রায় ৫০ লাখ লোককে বিতাড়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম সরকার। স্বাভাবিকভাবেই অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে, যেখানকার ৭ লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন?
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব লোক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনের (এনআরসি) কাছে তাদের যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তাদের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদন আগামী শনিবার প্রকাশ করতে যাচ্ছে আসাম কর্তৃপক্ষ।
ভারতের এ রাজ্য সরকার বলছে, কারা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে তাদের শনাক্ত ও বিতাড়নের জন্য এই নাগরিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বিগত ছয় দশকে এই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো।
তবে সমালোচকরা আসাম সরকারের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এর ফলে আসামের মুসলিম নাগরিক ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দীর্ঘদিনের শরণার্থীরা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে- যা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচারণের শামিল।
প্রসঙ্গত, আসামে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি লোক বাস করে, যার তিন ভাগের এক ভাগই মুসলিম।
এনআরসির কর্মকর্তা প্রতীক হাজেলা, যিনি নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের সঙ্গে জড়িত, বুধবার আলজাজিরাকে বলেছেন, শনিবার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে তাতে আসামে বসবাসরত প্রায় ৪৮ লাখ লোক তাদের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের শুরুতে একটি খসড়া নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশ করে আসাম সরকার। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসছে জুনের মধ্যে প্রকাশে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৬ সালের নির্বাচনে আসামের ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা- এনআরসির তালিকায় নেই এমন লোকদের বিতাড়নের অঙ্গীকার করে।
আসামের অর্থ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এনআরসির তালিকায় যাদের নাম নেই তাদের অবশ্যই বিতাড়ন করা হবে।’ কিন্তু কোথায় তাদের বিতাড়ন করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের আগে সরকার আইনশৃঙ্লা বাহিনীর ৪০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করবে বলেও জানান আসাম সরকারের এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সুযোগ কিংবা অজুহাত গ্রহণ করব না, যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
মন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভারতে থাকতে দেওয়া হবে। কারণ যেসব হিন্দু নিজ দেশে নির্যাতনের স্বীকার তাদের আশ্রয় দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেশ কিছু হিন্দু ও মুসলমান ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের এই রাজ্যে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে।
১৯৮০ সালে অভিবাসনবিরোধী এক বিক্ষোভে বেশ কিছু লোক মারা যায়। এরপর ১৯৮৫ সালে বিক্ষোভকারীদের দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা ওই রাজ্যে প্রবেশ করেছে তারা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবে।
সর্বশেষ নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের শর্তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দাবি করতে হলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তারা উল্লিখিত সময়ের আগ থেকেই আসামে অবস্থান করছে।
এদিকে, বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আসাম সরকারকে নির্দেশও দিয়েছে এ আদালত।
প্রক্রিয়াটি দ্রুত সমাপ্ত করতে ২০০৯ সালে আদালতে আবেদন করে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস নামের একটি সংগঠন। সম্প্রতি আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের অন্যতম সমর্থক অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আদিবাসী আসামিদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করছে, যারা পূর্ব বঙ্গে (এখন বাংলাদেশ) জনসংখ্যা তত্ত্বের আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল।
এনআরসির চাহিদা অনুযায়ী যারা যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি, আলতাফ হোসেন তাদের মধ্যে একজন।
আসামের পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলাদেশর সীমান্তবর্তী ধুবরি জেলার বাসিন্দা মুদি দোকানি আলতাফ বলেন, ‘প্রথম তালিকায় আমার নাম নেই। আমি জানতে পেরেছি যে, কর্তৃপক্ষ আমার পারিবারিক যোগসূত্র *ভুল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ১৯৪২ সাল থেকে আসামে অবস্থান করছে। অথচ এখন আমার নাম লাখ লাখ সম্ভাব্য রাষ্ট্রহীনের তালিকায় চলে এসেছে।’
আসামের বরাক উপত্যকার এক হিন্দু কাঠমিস্ত্রি বলেন, তালিকায় তারও নাম নেই। করিমগঞ্জ শহরের অনিল সূত্রধর নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘১৯৩০ সালে যখন আসাম পূর্ববঙ্গ ছিল তখন আমার দাদার বাবা আসামে এসেছিল।’
অনিল বলেন, ‘পরবর্তী তালিকায় যদি আমার নাম না থাকে তাহলে বিপর্যয় হয়ে যাবে, আমি কি আর এখন বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারব?’
স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, তথ্য-প্রমাণ নেই এমন সব অভিবাসীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত সপ্তাহে আলজাজিরাকে বলেন, আসাম থেকে কাউকে বাংলাদেশে বিতাড়নের কোনো তথ্য তার জানা নেই।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সম্ভাবনার বিষয়ে আমরা অবহিত নই।’
এদিকে, সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। যেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১৯৮২ সালে নাগরিক হওয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পালিয়ে এসেছে।
উৎপল বর্দোলো নামের এক স্থানীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকর ফেব্রুয়ারি মাসে সাউথ এশিয়ান মনিটর নামের একটি গণমাধ্যমে লেখা নিবন্ধে এমন প্রশ্ন তুলেছেন যে, আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে?
সঞ্জয় হাজারিকা নামের এক লেখক আলজাজিরাকে বলেন, সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের বিতাড়নের বিরোধী তিনি।
এ লেখক বলেন, ‘আমরা ইতিহাস পুনরায় লিখতে পারি না। এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট, সংকীর্ণ মানসিকতা এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী দলগুলো আসামের সামাজিক বন্ধনকে নস্যাৎ করে দিবে। যার রক্ত গত কয়েক দশক ধরেই ঝরছে।’
শুধু বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দেওয়ার বিপদ যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এক কথায় শেষ করা যাবে না,’ বলেন হাজারিকা।
আরপি
আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে?
১৯৭১ সালের আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে অথচ তার পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি- এমন প্রায় ৫০ লাখ লোককে বিতাড়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে আসাম সরকার। স্বাভাবিকভাবেই অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে, যেখানকার ৭ লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন?
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব লোক ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনের (এনআরসি) কাছে তাদের যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি তাদের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রতিবেদন আগামী শনিবার প্রকাশ করতে যাচ্ছে আসাম কর্তৃপক্ষ।
ভারতের এ রাজ্য সরকার বলছে, কারা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে তাদের শনাক্ত ও বিতাড়নের জন্য এই নাগরিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। বিগত ছয় দশকে এই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো।
তবে সমালোচকরা আসাম সরকারের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এর ফলে আসামের মুসলিম নাগরিক ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দীর্ঘদিনের শরণার্থীরা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে- যা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচারণের শামিল।
প্রসঙ্গত, আসামে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি লোক বাস করে, যার তিন ভাগের এক ভাগই মুসলিম।
এনআরসির কর্মকর্তা প্রতীক হাজেলা, যিনি নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের সঙ্গে জড়িত, বুধবার আলজাজিরাকে বলেছেন, শনিবার যে প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে তাতে আসামে বসবাসরত প্রায় ৪৮ লাখ লোক তাদের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরের শুরুতে একটি খসড়া নাগরিকত্ব তালিকা প্রকাশ করে আসাম সরকার। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসছে জুনের মধ্যে প্রকাশে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৬ সালের নির্বাচনে আসামের ক্ষমতায় আসে। এরপর তারা- এনআরসির তালিকায় নেই এমন লোকদের বিতাড়নের অঙ্গীকার করে।
আসামের অর্থ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এনআরসির তালিকায় যাদের নাম নেই তাদের অবশ্যই বিতাড়ন করা হবে।’ কিন্তু কোথায় তাদের বিতাড়ন করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের আগে সরকার আইনশৃঙ্লা বাহিনীর ৪০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করবে বলেও জানান আসাম সরকারের এই মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সুযোগ কিংবা অজুহাত গ্রহণ করব না, যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
মন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ভারতে থাকতে দেওয়া হবে। কারণ যেসব হিন্দু নিজ দেশে নির্যাতনের স্বীকার তাদের আশ্রয় দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেশ কিছু হিন্দু ও মুসলমান ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের এই রাজ্যে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে।
১৯৮০ সালে অভিবাসনবিরোধী এক বিক্ষোভে বেশ কিছু লোক মারা যায়। এরপর ১৯৮৫ সালে বিক্ষোভকারীদের দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা ওই রাজ্যে প্রবেশ করেছে তারা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবে।
সর্বশেষ নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের শর্তে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দাবি করতে হলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তারা উল্লিখিত সময়ের আগ থেকেই আসামে অবস্থান করছে।
এদিকে, বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে আসাম সরকারকে নির্দেশও দিয়েছে এ আদালত।
প্রক্রিয়াটি দ্রুত সমাপ্ত করতে ২০০৯ সালে আদালতে আবেদন করে আসাম পাবলিক ওয়ার্কস নামের একটি সংগঠন। সম্প্রতি আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানিয়েছে সংগঠনটি।
সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব শনাক্তকরণের অন্যতম সমর্থক অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা সমুজ্জল ভট্টাচার্য বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আদিবাসী আসামিদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করছে, যারা পূর্ব বঙ্গে (এখন বাংলাদেশ) জনসংখ্যা তত্ত্বের আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল।
এনআরসির চাহিদা অনুযায়ী যারা যথাযথ তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারেনি, আলতাফ হোসেন তাদের মধ্যে একজন।
আসামের পশ্চিমাঞ্চলীয় বাংলাদেশর সীমান্তবর্তী ধুবরি জেলার বাসিন্দা মুদি দোকানি আলতাফ বলেন, ‘প্রথম তালিকায় আমার নাম নেই। আমি জানতে পেরেছি যে, কর্তৃপক্ষ আমার পারিবারিক যোগসূত্র *ভুল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ১৯৪২ সাল থেকে আসামে অবস্থান করছে। অথচ এখন আমার নাম লাখ লাখ সম্ভাব্য রাষ্ট্রহীনের তালিকায় চলে এসেছে।’
আসামের বরাক উপত্যকার এক হিন্দু কাঠমিস্ত্রি বলেন, তালিকায় তারও নাম নেই। করিমগঞ্জ শহরের অনিল সূত্রধর নামের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘১৯৩০ সালে যখন আসাম পূর্ববঙ্গ ছিল তখন আমার দাদার বাবা আসামে এসেছিল।’
অনিল বলেন, ‘পরবর্তী তালিকায় যদি আমার নাম না থাকে তাহলে বিপর্যয় হয়ে যাবে, আমি কি আর এখন বাংলাদেশে ফিরে যেতে পারব?’
স্থানীয় রাজনীতিকরা বলছেন, তথ্য-প্রমাণ নেই এমন সব অভিবাসীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত সপ্তাহে আলজাজিরাকে বলেন, আসাম থেকে কাউকে বাংলাদেশে বিতাড়নের কোনো তথ্য তার জানা নেই।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সম্ভাবনার বিষয়ে আমরা অবহিত নই।’
এদিকে, সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। যেখানকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা ১৯৮২ সালে নাগরিক হওয়ার বৈধতা হারিয়েছেন। গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর অভিযানের শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পালিয়ে এসেছে।
উৎপল বর্দোলো নামের এক স্থানীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকর ফেব্রুয়ারি মাসে সাউথ এশিয়ান মনিটর নামের একটি গণমাধ্যমে লেখা নিবন্ধে এমন প্রশ্ন তুলেছেন যে, আসাম কি পরবর্তী রাখাইন হতে যাচ্ছে?
সঞ্জয় হাজারিকা নামের এক লেখক আলজাজিরাকে বলেন, সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের বিতাড়নের বিরোধী তিনি।
এ লেখক বলেন, ‘আমরা ইতিহাস পুনরায় লিখতে পারি না। এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট, সংকীর্ণ মানসিকতা এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী দলগুলো আসামের সামাজিক বন্ধনকে নস্যাৎ করে দিবে। যার রক্ত গত কয়েক দশক ধরেই ঝরছে।’
শুধু বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দেওয়ার বিপদ যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এক কথায় শেষ করা যাবে না,’ বলেন হাজারিকা।
আরপি
Comment