ইসরাইলকে কেন সমর্থন করছেন সৌদি যুবরাজ?
মুহাম্মাদ ফয়জুল্লাহ | clock৪:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৮,২০১৮
ইসরাইলকে কেন সমর্থন করছেন সৌদি যুবরাজ?
সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান বলেন, ‘নিজ ভূমির অধিকার ইসরাইলের আছে’। তার এই বক্তব্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে, সৌদি আরব ইসরাইলের অস্তিত্বকে সমর্থন দিতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কেন? কি কারণে সৌদি আরব এখন ইসরাইলকে সমর্থন দিতে চাচ্ছে- অথচ ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও আরব্য জাতীয়তাবাদের অংশ ফিলিস্তিনের ভূমি অবৈধভাবে জবর দখল করেই রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা হয়েছে!
সৌদি বাদশাহর পুত্র মুহাম্মাদ বিন সালমান গত ২ এপ্রিল সোমবার মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য আটলান্টিক’ এ প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকারে এই প্রথমবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘নিজ ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার ইসরাইলের আছে।’
পাশাপাশি সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘ইহুদিদের সাথে সৌদি আরবের কোনো বিরোধ নেই, বরং ইসলামের নবী তো একজন ইহুদি নারীকেও বিবাহ করেছিলেন’।
সৌদি যুবরাজের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, মাধ্যপ্রাচ্যের এই প্রভাবশালী রাষ্ট্রটি এখন ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। মুহাম্মাদ বিন সালমান এ কথাও বলেছিলেন, ‘ইসরাইলের প্রভাব যদি দেখা হয় তাহলে তুলনামূলকভাবে তার অর্থনীতি অনেক বিস্তৃত ও খুবই শক্তিশালী এবং ইসরাইল ও সৌদি আরব পরস্পরের সাথে বহু স্বার্থে জড়িয়ে আছে। যদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চলের পারস্পরিক সহযোগিতা কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলি এবং মিসর, জর্ডানের মতো আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে পরস্পরে আরও অনেক বেশি সহযোগিতা করা সম্ভব হবে’।
সৌদি যে ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়- এর একটি প্রমাণ এই যে, ইরানের সাথে ইসরাইলের রয়েছে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব, আর ওয়াহাবি মতাদর্শের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র সৌদি আরব শিয়া মতবাদধারী রাষ্ট্র ইরানকে আঞ্চলিক প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠায় নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। তাছাড়া সিরিয়া, ইয়েমেনসহ অন্যান্য সঙ্ঘাত কবলিত রাষ্ট্রগুলোতেও ইরান বরাবরের মতো সৌদির বিরুদ্ধে সাহায্য দিয়ে আসছে। তাই সৌদি-ইসরাইলের অভিন্ন শত্রু ইরান।
এ ব্যাপারে মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর হাসান নাফেয়াহ ডয়চে ভেলের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সৌদি আরবের ইসরাইল সম্পর্কিত নীতি পরিবর্তনের নেপথ্য কারণ হলো ইরান। সৌদি আরব ইরানের সাথে তার দ্বন্দ্বকে মূলত ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখে। কেননা এক্ষেত্রে ইরানের এগিয়ে যাওয়াতে মুসলিম বিশ্বে শিয়াদের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।’
হাসান নাফেয়াহ বলেন, ইসরাইল ও সৌদি আরব- উভয়েরই একই আশঙ্কা যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। আর সৌদি নেতা ইসরাইলের এমন সম্ভাব্য পদক্ষেপেরও স্বাগত জানায় যে, ইসরাইল ইরানের ওই সকল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর এক তরফা হামলা করে দিবে, যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
অপরদিকে, ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইউসা মাইকেলবার্গ ডি ব্লুর সাথে আলোচনায় বলেন, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বকে সমর্থন করা ইসরাইলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। বিশেষত এমন অবস্থায় যে, যখন মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্র ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করে।
প্রফেসর ইউসা মাইকেলবার্গের বক্তব্য অনুযায়ী ইসরাইল সৌদি যুবরাজের উক্ত বক্তব্যে খুশি হলেও ফিলিস্তিনিরা খুশি না। কেননা ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ যে, ইসরাইল নিজেই শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না- অথচ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ক্রমেই ইসরাইলকে সমর্থনদানের নিকটবর্তী হচ্ছে।
যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের ইসরাইল সম্পর্কিত এ বক্তব্যের পর ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ইলাদ রাস্তেন বলেন, সৌদি যুবরাজের এই বক্তব্য মূলত এটাই প্রকাশ করে যে, সৌদি আরব ইসরাইলের আঞ্চলিক নীতি সমর্থন করে।
অপরদিকে, গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি লেখক ইয়াসির আয-যাআতারাহ সৌদি যুবরাজের এই বক্তব্যে তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘দখলদারদের ফিলিস্তিনের কোনো একটি অংশেও কোনো প্রকার অধিকার নেই। ওরা জবর দখলকারী। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে ফিলিস্তিনিদের ভূমিকে দখল করেছে। এই অবস্থায় ইসরাইলের অধিকারের কথা বলা একটি চরম গর্হিত ও বেহুদা চেষ্টা’।
ইসরাইলের ব্যাপারে সৌদি নেতার নতুন পদক্ষেপ একথারও প্রমাণ যে, আরব-ইসরাইল বিবাদ এবং ইসরাইলের তার রাষ্ট্রের অধিকারের পক্ষে চ্যালেঞ্জ করার চলে আসার প্রবণতা আসন্ন মাস ও বছরগুলোতে আগের মতো থাকবে না- যেমনটা বিগত কয়েক দশক ধরে দেখা যাচ্ছিল। সূত্র: বাসিরাত অনলাইন, উর্দু
মুহাম্মাদ ফয়জুল্লাহ | clock৪:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৮,২০১৮
ইসরাইলকে কেন সমর্থন করছেন সৌদি যুবরাজ?
সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান বলেন, ‘নিজ ভূমির অধিকার ইসরাইলের আছে’। তার এই বক্তব্য স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে, সৌদি আরব ইসরাইলের অস্তিত্বকে সমর্থন দিতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কেন? কি কারণে সৌদি আরব এখন ইসরাইলকে সমর্থন দিতে চাচ্ছে- অথচ ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও আরব্য জাতীয়তাবাদের অংশ ফিলিস্তিনের ভূমি অবৈধভাবে জবর দখল করেই রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা হয়েছে!
সৌদি বাদশাহর পুত্র মুহাম্মাদ বিন সালমান গত ২ এপ্রিল সোমবার মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য আটলান্টিক’ এ প্রকাশিত তার একটি সাক্ষাৎকারে এই প্রথমবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘নিজ ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার ইসরাইলের আছে।’
পাশাপাশি সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘ইহুদিদের সাথে সৌদি আরবের কোনো বিরোধ নেই, বরং ইসলামের নবী তো একজন ইহুদি নারীকেও বিবাহ করেছিলেন’।
সৌদি যুবরাজের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, মাধ্যপ্রাচ্যের এই প্রভাবশালী রাষ্ট্রটি এখন ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চায়। মুহাম্মাদ বিন সালমান এ কথাও বলেছিলেন, ‘ইসরাইলের প্রভাব যদি দেখা হয় তাহলে তুলনামূলকভাবে তার অর্থনীতি অনেক বিস্তৃত ও খুবই শক্তিশালী এবং ইসরাইল ও সৌদি আরব পরস্পরের সাথে বহু স্বার্থে জড়িয়ে আছে। যদি শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে উপসাগরীয় অঞ্চলের পারস্পরিক সহযোগিতা কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলি এবং মিসর, জর্ডানের মতো আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে পরস্পরে আরও অনেক বেশি সহযোগিতা করা সম্ভব হবে’।
সৌদি যে ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়- এর একটি প্রমাণ এই যে, ইরানের সাথে ইসরাইলের রয়েছে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব, আর ওয়াহাবি মতাদর্শের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র সৌদি আরব শিয়া মতবাদধারী রাষ্ট্র ইরানকে আঞ্চলিক প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠায় নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। তাছাড়া সিরিয়া, ইয়েমেনসহ অন্যান্য সঙ্ঘাত কবলিত রাষ্ট্রগুলোতেও ইরান বরাবরের মতো সৌদির বিরুদ্ধে সাহায্য দিয়ে আসছে। তাই সৌদি-ইসরাইলের অভিন্ন শত্রু ইরান।
এ ব্যাপারে মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রফেসর হাসান নাফেয়াহ ডয়চে ভেলের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সৌদি আরবের ইসরাইল সম্পর্কিত নীতি পরিবর্তনের নেপথ্য কারণ হলো ইরান। সৌদি আরব ইরানের সাথে তার দ্বন্দ্বকে মূলত ইসলামি বিশ্বের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখে। কেননা এক্ষেত্রে ইরানের এগিয়ে যাওয়াতে মুসলিম বিশ্বে শিয়াদের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।’
হাসান নাফেয়াহ বলেন, ইসরাইল ও সৌদি আরব- উভয়েরই একই আশঙ্কা যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে। আর সৌদি নেতা ইসরাইলের এমন সম্ভাব্য পদক্ষেপেরও স্বাগত জানায় যে, ইসরাইল ইরানের ওই সকল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর এক তরফা হামলা করে দিবে, যেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে।
অপরদিকে, ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক ইউসা মাইকেলবার্গ ডি ব্লুর সাথে আলোচনায় বলেন, সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বকে সমর্থন করা ইসরাইলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে। বিশেষত এমন অবস্থায় যে, যখন মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্র ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব পোষণ করে।
প্রফেসর ইউসা মাইকেলবার্গের বক্তব্য অনুযায়ী ইসরাইল সৌদি যুবরাজের উক্ত বক্তব্যে খুশি হলেও ফিলিস্তিনিরা খুশি না। কেননা ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ যে, ইসরাইল নিজেই শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না- অথচ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র ক্রমেই ইসরাইলকে সমর্থনদানের নিকটবর্তী হচ্ছে।
যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের ইসরাইল সম্পর্কিত এ বক্তব্যের পর ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ইলাদ রাস্তেন বলেন, সৌদি যুবরাজের এই বক্তব্য মূলত এটাই প্রকাশ করে যে, সৌদি আরব ইসরাইলের আঞ্চলিক নীতি সমর্থন করে।
অপরদিকে, গাজায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনি লেখক ইয়াসির আয-যাআতারাহ সৌদি যুবরাজের এই বক্তব্যে তীব্র অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘দখলদারদের ফিলিস্তিনের কোনো একটি অংশেও কোনো প্রকার অধিকার নেই। ওরা জবর দখলকারী। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে ফিলিস্তিনিদের ভূমিকে দখল করেছে। এই অবস্থায় ইসরাইলের অধিকারের কথা বলা একটি চরম গর্হিত ও বেহুদা চেষ্টা’।
ইসরাইলের ব্যাপারে সৌদি নেতার নতুন পদক্ষেপ একথারও প্রমাণ যে, আরব-ইসরাইল বিবাদ এবং ইসরাইলের তার রাষ্ট্রের অধিকারের পক্ষে চ্যালেঞ্জ করার চলে আসার প্রবণতা আসন্ন মাস ও বছরগুলোতে আগের মতো থাকবে না- যেমনটা বিগত কয়েক দশক ধরে দেখা যাচ্ছিল। সূত্র: বাসিরাত অনলাইন, উর্দু
Comment