Announcement

Collapse
No announcement yet.

🌿মাসউল ও মামুরের "আদাব রক্ষা" মাকবুলিয়্যাতের এক অলংঘনীয় শর্ত! {১ম পর্ব}

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 🌿মাসউল ও মামুরের "আদাব রক্ষা" মাকবুলিয়্যাতের এক অলংঘনীয় শর্ত! {১ম পর্ব}

    بسم الله الرحمن الرحيم
    نحمده ونصلي علي رسوله الكريم اما بعد

    আদাব কী?
    {প্রতিটি মানুষ ও বস্তুকে তার যথোপযুক্ত সম্মানদান ও অধিকার আদায় করাই আদাব।}

    আদাব রুচিশীল মুমিনের বাস্তবতা। আদাব প্রকৃত শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা। আদাব উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সফলতার সিঁড়ি। আদাব মহান রবের কাছে মাকবুলিয়্যাতের এক অলংঘনীয় শর্ত। তাই যার কাছে আদাবিয়্যাতের কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই, তার জন্য মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে মাকবুলিয়্যাতেরও কোন সুযোগ নেই।

    আদাব এটি প্রতিটি মানুষের ভেতরের সুপ্ত ও গুপ্ত মানুষটির প্রতিচ্ছবি। এই আদাবই প্রকাশ করে দেয়, আমার, আপনার ও আমাদের সবার প্রকৃত অবস্থা। একটি স্বচ্ছ আয়নার সামনে দাঁড়ালে যেমন মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য ও অসৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয়, তেমনি আদাব নামক এই বিষয়টি দ্বারা মানুষের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য ও কদর্যতা উদ্ভাসিত হয়।


    আদাবের গুরুত্ব

    ইসলামে, ইসলামী শরিয়াতে আদাবের গুরুত্ব পূর্বের সকল শরিয়া থেকেও অনেক বেশি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা পবিত্র কোর'আন জুড়ে বহু আয়াতে এই উম্মাতকে আদাব শিক্ষা দিয়েছেন। শুধুমাত্র এই আদাবিয়্যাতের ব্যাপারেই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক যবানে উচ্চারিত হয়েছে অসংখ্য হাদিস।

    মুহতারাম ভাইয়েরা আমার! আদাব ও আদাবিয়্যাতের গুরুত বুঝানোর জন্য একটি আয়াত ও একটি হাদিসই যথেষ্ট। আদাবের গুরুত্ব ও প্র*য়োজনীয়তা উপলব্ধি করার জন্য এর বেশি আসলেই প্রয়োজন পড়েনা। মহান রব্বুল আলামিন এরশাদ করেছেন-

    یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ وَ لَا تَجۡهَرُوۡا لَهٗ بِالۡقَوۡلِ کَجَهۡرِ بَعۡضِکُمۡ لِبَعۡضٍ اَنۡ تَحۡبَطَ اَعۡمَالُکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۲﴾
    হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল-নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। {সুরা হুজুরাতঃ২}

    এই আয়াতে কারিমাটি দুই মহান ব্যক্তি তথা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ ও হযরত উমার ফারুক রাঃ এর ব্যাপারে নাজিল হয়েছিলো। তাঁরা একটি বিষয়কে কেন্দ্র করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উঁচু আওয়াজে কথা বলেছিলেন। আর এটুকুর কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এক কঠোর সতর্কবার্তা নাজিল করে জানিয়ে দিলেন যে- যদি এমনটি আর হয় তাহলে তোমাদের অজ্ঞাতসারেই তোমাদের সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে।

    আবু মুলাইকা রাঃ বলেন- এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো যে, মহান দুই ব্যাক্তি যেনো ধ্বংসই হয়ে যাচ্ছিলেন; যেহেতু তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে তাঁদের কন্ঠস্বর উঁচু করেছিলেন....

    আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাঃ বলেন- এরপর থেকে উমার রাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এতো নিন্মস্বরে কথা বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করতেন। { ফাতহুল বারী: ৮/৪৫৪}

    আমার ভাই! এই আয়াতে কারিমার মাঝে সরল পথের অনুসন্ধানী প্রতিটি ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষার উপকরণ রয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর রঃ তাঁর তাফসির গ্রন্থে এই আয়াতের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। আগ্রহী ভাইয়েরা সেখান থেকে পড়ে নিতে পারেন।

    এবার আসুন আমরা একটিমাত্র হাদিস শরীফ দেখে আসি-

    عن أَنَس بْن مَالِكٍ، يَقُولُ جَاءَ شَيْخٌ يُرِيدُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَبْطَأَ الْقَوْمُ عَنْهُ أَنْ يُوَسِّعُوا لَهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيُوَقِّرْ كَبِيرَنَا ‏"‏ ‏
    আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন - নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসার উদ্দেশ্যে এক বৃদ্ধ এলো। কিন্তু উপস্থিত লোকজন তাকে পথ করে দিতে দেরী করে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না আর বড়দের শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের নয়। { তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৯১৯ }

    সুবহানাল্লাহ! এটাই ইসলাম ও ইসলামী শরিয়ার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব যে, এখানে প্রতিটি সদস্যকে তার উপযুক্ত সম্মান ও হক প্রদান করা হয়েছে। চাই সে ছোট হোক কিংবা বড়। কাউকেই অবহেলা করা হয়নি। বরং ছোট-বড় সবার বিষয়টিকেই সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

    সুতরাং, ইসলামের দান করা সেই সম্মান ও হক নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। দেখুন! সাহাবায়ে কেরাম রাঃ সেই বৃদ্ধ লোকটির জন্য পথতো করে দিয়েছেন, কিন্তু কিছুটা দেরী করেছেন। আর এই কিছু সময় দেরী করাটাই সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সেই বৃদ্ধের আদাব, সম্মান ও হক নষ্ট করার শামিল। তাই তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট উচ্চারণ করলেন যে, এভাবে বলে-কয়ে দেরী করে হক আদায় করলেও কোন ব্যক্তি আমার মিল্লাতের প্রকৃত অনুসারী হতে পারবেনা। কেননা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরিয়া কারো হক ও পাওনাকে তার যথাযথ সময়ে আদায় করা আবশ্যক করে দিয়েছে।

    আমার ভাইয়েরা! আমরা আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজে আমাদের উপরোস্থ-অধিনস্থ সকল ভাইদের আদাব-সম্মানের হক ঠিকঠাক আদায় করছি তো? নাকি গুরুত্বপূর্ণ এই আদাবিয়্যাতের ব্যাপারে আমাদের অবহেলায়, আমরা নিজেদের আমলগুলোকে বরবাদ করে দিচ্ছি?! আর নিজের অজান্তেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিল্লাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছি??!


    সামনে ২য় ও ৩য় পর্বে গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক বিষয় নিয়ে উপস্থিত হবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীনা ওয়াল মুজাহিদীন।

  • #2
    খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পোষ্ট জাযাকাল্লাহ ভাই । উপকৃত হলাম আলহামদুলিল্লাহ।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ আপনার কলমে বারাকাহ দান করুন। আমিন
      গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

      Comment


      • #4
        খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট সব ভায়ের পড়া দরকার.. আল্লাহ তায়া'লা ভাইকে উত্তম বিনিময় দান করুন,আমিন।

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহ।

          Comment


          • #6
            Originally posted by Abu Usama Al Hindi View Post
            জাযাকাল্লাহ।
            প্রিয় ভাই! শুধু জাযাকাল্লাহ লিখে পোস্ট করা ফোরামের নিয়মের খেলাফ। সামনে থেকে এ বিষয়টি মাথায় রাখলে ভালো হবে। জাযাকাল্লাহ নামে আলাদা একটি অপশন আছে। যেখানে ক্লিক/টাচ করলে অটোমেটিক জাযাকাল্লাহ হবে যাবে।
            আর ফোরামের নীতিমালা পড়ে নিলে ভালো হবে। ইনশাআল্লাহ



            খুবই গুরুত্বপূর্ণ || দাওয়া ইলাল্লাহ ফোরামের নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা
            https://dawahilallah.com/showthread.php?12542
            গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

            Comment


            • #7
              মাশা-আল্লাহ,, আল্লাহ আপনি আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন আমীন। ভাইজান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আশাকরি খুব দ্রুত সামনের পর্বগুলো নিয়ে আসছেন। জাযাকাল্লাহ।
              اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

              Comment


              • #8
                মাশ আল্লাহ.. ভাই, উত্তম একটি টপিকস নির্বাচন করেছেন।
                আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করুন। আমিন...

                বাকি লিখাগুলো পাওয়ার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষায় আছি।।

                Comment


                • #9
                  মামুর ও মাসউলের আদাব রক্ষা মাকবুলিয়্যাতের এক অলংঘনীয় শর্ত!{পর্ব-২}


                  মামুর ও মাসউলের আদাব রক্ষা মাকবুলিয়্যাতের এক অলংঘনীয় শর্ত!{পর্ব-৩}


                  আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

                  Comment


                  • #10
                    মাশাআল্লাহ
                    খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পোষ্ট।
                    আলহামদুলিল্লাহ উপকৃত হলাম ।

                    Comment


                    • #11
                      জাযাকাল্লাহ। মাশাআল্লাহ। ভাই! সুন্দর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
                      ভাই! পোস্টের আলোচনায় আমি কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই:

                      ১. ভাই আপনি যে আয়াত পেশ করেছেন, তাতে আপনার শিরোনামের দাবির পক্ষে কোন দলিল নেই। কারণ ওখানে প্রত্যক্ষভাবে আল্লাহর রাসূলের সাথে আদবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমীরের সাথে মামুরের আদবের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আর এই আদেশ আমীর বা নেতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে- এমন মত কোন মুফাস্সির, মুহাদ্দিস বা ইমাম পেশ করেছেন কিনা এবং সেটা মুরাজ্জাহ (অগ্রগণ্য) মত কিনা তাও দেখাননি। হয়তো থাকতে পারে, আমি জানি না। যদি থাকে, তাহলে দেখালে ভালো হয়। দলিল ছাড়া নিজে একটা ব্যাখ্যা করলে তো অপব্যাখ্যা ও বিকৃতি হবে। যদি আপনি দলিল দেখাতে পারেন বা আমি নিজেই কোথাও দলিল পেয়ে যাই, তাহলে তো আল্লাহর হুকুম অম্লান বদনে, অবনত মস্তকে ও সমর্পিত চিত্তে মেনে নিবো ইনশাআল্লাহ।
                      তবে আমি তাফসীরে কুরতুবীতে পেয়েছি, ইমাম কুরতুবী রহ. বলেছেন, এটা উলামাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। যেহেতু তারা নবীর ওয়ারিস।

                      ২. ভাই! আপনি যে হাদিসটা পেশ করেছেন, তাতেও আপনার দাবির পক্ষে কোন দলিল নেই ভাই। ওখানে তো বয়সে বড়দেরকে সম্মান করতে বলা হয়েছে। কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাকারী তো এটাকে আমীরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন বলে আমি জানি না। আমি না জানা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি এমন কোন ইমামের উদ্ধৃতি পেশ করেননি। যদি থাকে, তাহলে পেশ করুন অনুগ্রহ করে।

                      ৩. আমীরদের আনুগত্য করার, অর্থাৎ তানযীমী বা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে আমীরদের আদেশ-নিষেধ মানার ব্যাপারে আয়াত ও হাদিস অসংখ্য। এর গুরুত্বের কথা বলে আমি এখানে শেষ করতেও পারবো না। এটার উপরই মুসলিম সমাজের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে। শৃঙ্খলা বা বিশৃঙ্খলা নির্ভর করে। এমনকি শৃঙ্খলা ও ঐক্য ধরে রাখার স্বার্থে ইসলাম এমন কথাও বলেছে যে, তাদের হক তাদেরকে দিয়ে দাও আর তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চেয়ে নাও। আরো বলেছে, যদি তোমাদের পিঠ ভেঙ্গে দেয়, তবুও তাদের আনুগত্য করে যাও, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না। মানে তাদের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না; তবে শুধু অন্যায়টির প্রতিবাদ করতে পারো। পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক, ভালো লাগুক বা না লাগুকা, তাদের কথা মানতেই হবে। তাদের আনুগত্য করতেই হবে।

                      কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে- এমন হাদিস কয়টি ও কী কী, সেগুলো উল্লেখ করলে ভালো হবে।

                      Comment

                      Working...
                      X