আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
“এবং মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করুন!”
।।কমান্ডার সাদ বিন আতিফ আল-আওলাকি হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
“এবং মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করুন!”
।।কমান্ডার সাদ বিন আতিফ আল-আওলাকি হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি বলেছেনঃ
“আমেরিকা তার পথভ্রষ্টতা, সীমালঙ্ঘন, অবিচার এবং আগ্রাসী আচরণ থেকে পিছিয়ে আসবে না—না সেই আন্তর্জাতিক বৈধতার সামনে, যা তারা নিজেরাই তৈরি করেছে ও তাতে অর্থ দিয়েছে, না তাদেরই নিযুক্ত ও সমর্থিত দালাল শাসকদের সামনে, না এমন লোকদের সামনে যারা তাদের শক্তি ও শ্রেণিবিন্যাসকে ভয় পায়। আমেরিকাকে থামাতে পারে একমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ—অস্ত্র ও বর্শা দিয়ে এবং যুক্তি ও স্পষ্ট বাণীর মাধ্যমে পরিচালিত জিহাদ। তাদেরকে থামাতে পারে দাওয়াত, প্রচার, ত্যাগ, উৎসর্গ, তাওয়াক্কুল, দুনিয়া বিমুখতা এবং ইসলামের আকীদা ও শরিয়াহর বিধানের উপর অটল থাকার ঈমানী অস্ত্র। ইনশাআল্লাহ, আমেরিকাকে পরাজিত করবে আল্লাহর পথে লড়াইকারী মুজাহিদগণ, আমলদার আলেমগণ, আন্তরিক দাঈগণ এবং তাওহীদের পতাকার অধীনে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহ।
অতএব, হে মুসলিম উম্মাহ!
চলুন, আমেরিকার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিটি স্থানে জিহাদ করি, যেমনিভাবে তারা আমাদের উপর প্রতিটি জায়গায় আক্রমণ করে। চলুন, এক হয়ে তাদের মুখোমুখি হই; বিভক্ত না হয়ে একত্রিত হই; ছড়িয়ে ছিটিয়ে না থেকে ঐক্যবদ্ধ হই; নিজেদের মধ্যে ফাটল না ধরিয়ে পরস্পরে সম্পূরক হই।”
তারা যখন এসব কথা বলেছেন, তা শুধু এ জন্যই বলেছেন, আমরা যেন সেই অবস্থানে না পৌঁছাই, যেখানে আজ পৌঁছে গেছি। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তারা আমেরিকাকে “কুফরের প্রধান”, “সব অশুভ শক্তির উৎস” এবং “বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর উপর যেসব বিপর্যয় নেমে এসেছে বা আসবে, সেগুলোর মূল কারণ” বলে অভিহিত করে আসছেন। তারা বহু প্রবন্ধ ও বক্তৃতায় আমেরিকাকে এই উম্মাহর ফেরাউন, ক্রুশের বাহক, নবী ও রাসূলদের হত্যাকারী ইয়াহুদিদের রক্ষক এবং এই যুগের ‘হুবাল’ বলে বর্ণনা করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ কথাগুলো খুব অল্প কিছু লোকই বোঝে। তবে সব অবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ।
হে ইসলামী উম্মাহ, আজকের এই সময়টা তিরস্কার বা আত্মনিন্দা কিংবা পিছিয়ে পড়াদের ও দায়িত্বহীনদের প্রতি অভিযোগের সময় নয়, যারা জাতির অগ্রপথিক ও জিহাদী ব্যক্তিত্বদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি—যে মহান মানুষগুলো নিজেদের দুনিয়া বিক্রি করে দিয়েছিলেন, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যাতে তাদের উম্মাহ সম্মানিত, মর্যাদাশীল ও বিজয়ী হিসেবে বেঁচে থাকতে পারে।
এখন কাজের সময়। বিলম্ব ও দ্বিধা না করে যা হারিয়েছি, তা পুনরুদ্ধার আপনাদেরকেই করতে হবে। আমাদের কথা মন দিয়ে শুনুন, আশা করি এ থেকে মুক্তির পথ পাওয়া যাবে।
হে প্রিয় উম্মাহ্!, আজ ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা কোনো প্রতিক্রিয়া নয়—যেমনটা তারা দাবি করে—বরং এটি দীন ইসলামের প্রতি তাদের চিরন্তন শত্রুতারই ধারাবাহিকতা। তারা ইসলাম ও তার রাসূল ﷺ-কে অস্বীকার করে, যদিও তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, তিনি তাদের কিতাব তাওরাতে নাম, চিত্র ও গুণাবলি সহকারে উল্লিখিত সেই নবী, যাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন। তারা তাঁর আগমনের আশায় ছিলো, কিন্তু যখন তিনি তাদের মধ্য থেকে (তাদের গোত্র থেকে) এলেন না, তখন তারা তাঁকে অস্বীকার করলো, তাঁর সাথে শত্রুতা করলো, তাঁকে হত্যার চেষ্টা করলো এবং প্রতারণা করলো। এরপর তারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলো এবং মানুষকে তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞে লেলিয়ে দিলো। কিন্তু আল্লাহ তাদের লাঞ্ছিত করলেন এবং পরাজিত অবস্থায় পিছু হটতে বাধ্য করলেন। আল্লাহর নির্দেশে ও ন্যায়বান ফায়সালার মাধ্যমে রাসূল ﷺ বানু নাযিরের মতো চুক্তিভঙ্গকারীদেরকে নির্বাসিত করলেন। কুরআন আমাদের কাছে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা, কুফরি ও মুহাম্মাদ ﷺ-এর উম্মাহর প্রতি তাদের বিদ্বেষের কথা বর্ণনা করেছে। খ্রিস্টানরাও একই রকম—আল্লাহ তাদের সবাইকে লাঞ্ছিত করুন!!
সুতরাং, ইহুদী, খ্রিস্টান, মজুসি ও মূর্তিপূজকদের পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি যে শত্রুতা প্রকাশ পায়, তা তাদের ধর্ম ও গেঁথে থাকা বিশ্বাস থেকেই উৎসারিত, যা আপনি কোনোভাবেই মুছে ফেলতে পারবেন না—যেমন শয়তানের আদম সন্তানের প্রতি শত্রুতা, ঘৃণা ও ধোঁকার বিষয়টি কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে—ঠিক তেমনি। (তবে, তাদের মধ্যে আল্লাহ যাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তারা ব্যতিক্রম।) ইহুদি খ্রিস্টানেরা শয়তানের মতো, যার আত্মা তাকে বিভ্রান্ত করেছিলো, অহংকার তাকে ধোঁকায় ফেলেছিলো এবং হিংসা তাকে অন্ধ করেছিলো। আপনি যেমন কখনো শয়তানকে এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধু ভাবতে পারেন না, তেমনি তার সঙ্গে ‘ভাল সম্পর্ক’ স্থাপন বা ‘পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে সংলাপ’ করার চিন্তা করাও অবাস্তব। আর যদি কেউ তা করে, তবে সে প্রতারিত হয়েছে, ধোঁকায় পড়েছে এবং শয়তান তাকে টেনে নিয়ে যাবে ভয়ানক আগুনের গভীরে। অতএব, এদের সাথে একমাত্র বৈধ পথ হলো—যুদ্ধ, তারপর আবার যুদ্ধ এবং কেয়ামত পর্যন্ত যুদ্ধ। আর এ সম্পর্কের প্রকৃতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই আয়াতে কারিমায়:
وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থ: আর তারা তো তোমাদের সঙ্গে লড়াই করতে থাকবে, যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়—যদি পারে আর কি। আর তোমাদের মধ্যে কেউ তার দীন থেকে ফিরে গিয়ে কাফির অবস্থায় মারা গেলে (এরকম যারা করবে) তাদের কর্মসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তারাই জাহান্নামের অধিবাসী, তাতেই তারা চিরকাল থাকবে। [সূরা আল-বাকারা (২): আয়াত ২১৭]
সুতরাং, হে মুসলিম উম্মাহ! গাজায় আমাদের ভাইদের অবস্থা ও গোটা অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে কার্যকর সমাধান হলো নিম্নরূপ:
প্রথমত: এই অঞ্চলের মুসলিম জনসাধারণের দায়িত্ব হলো—আজ গাজায় যা ঘটছে, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। অন্তত ন্যূনতম করণীয় হচ্ছে—নাগরিক অবাধ্যতা (civil disobedience) এবং প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে সেগুলোর উপর স্থায়ীভাবে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করা। বিশেষ করে, রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতাদের বাসভবনের দিকে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলো, সরকারি কাজকর্ম ও মন্ত্রণালয়গুলোর পথ, বিমানবন্দর, বন্দর এবং মিশর ও জর্ডানের স্থলসীমান্তের প্রবেশদ্বারগুলোর দিকেই এই অবরোধ কেন্দ্রীভূত করা উচিত।
দ্বিতীয়ত: গোটা অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে হিজাজের ভূমি (বর্তমান সৌদি আরব), সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ইরাক ও কুয়েত—এসব দেশের প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো, যারা তেল, খনিজ সম্পদ এবং এগুলোর রপ্তানি খাতে কাজ করেন, কিংবা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সরকারি অফিসে কর্মরত আছেন—তাদের উচিত সম্মিলিতভাবে কর্মবিরতি পালন করা। আর যদি সম্মিলিতভাবে সম্ভব না হয়, তবে ছোট ছোট দলে কিংবা একাকী হলেও তা করা উচিত। সেইসঙ্গে, এ কর্মসূচিকে গণমাধ্যমে তুলে ধরা উচিত—সোশ্যাল মিডিয়া সহ সকল উপলব্ধ মাধ্যমে—যাতে আল্লাহর ইচ্ছায় সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায়।
তৃতীয়ত: গালফ অঞ্চল—গালফ রাষ্ট্রসমূহ, ইরাক ও সিরিয়ার সব গোত্র ও গোত্রপ্রধানদের দায়িত্ব হলো, যত দ্রুত সম্ভব সকল প্রকার অস্ত্র সংগ্রহ করা, নিজেদের প্রস্তুত করা এবং সেই অনিবার্য দিনের জন্য প্রস্তুত থাকা। সেইসঙ্গে, তারা যেন নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে, পারস্পরিক সমন্বয় করে এবং গোত্রের যুবসমাজকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির জন্য তৈরি রাখে, যেন যখনই সাধারণ জিহাদের আহ্বান জানানো হবে, তখনই তারা নিপীড়িত ফিলিস্তিনি ভাইদের অথবা শত্রুর কবলে পড়া যেকোনো মুসলিম দেশের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।
চতুর্থত: আলেম, দাঈ ও গোত্রপ্রধানদের দায়িত্ব হলো—উম্মাহর, বিশেষ করে এর যুবসমাজের মনোবলকে জাগ্রত করা এবং তাদেরকে প্রস্তুতির ময়দান ও জিহাদের মাঠে এগিয়ে দেওয়া—যার বিবরণ পরে আসছে।
পঞ্চমত: উম্মাহর ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে এবং সাধারণভাবে প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের উচিত—যতটুকু সম্ভব, তা কম হোক বা বেশি—প্রস্তুতির ময়দান ও জিহাদের রাস্তায় দান করা; কোনো ভয় বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই।
আরও পড়ুন
প্রথম পর্ব ---------------------------------------------------------------------------------------------- শেষ পর্ব