“দাওয়াতে খিলাফত ও মানহাজে রাসূল ﷺ” ।।
মাওলানা আসেম উমর হাফিযাহুল্লাহ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
===================
দাওয়াতের কয়েকটি মূল ভিত্তি
এক. শ্রোতাদের নিকট দাওয়াত পৌছানোর সুযোগ সন্ধান করা
দাঈর জন্য জরুরি হল, সে এমন সুযোগের সন্ধানে থাকবে যে কখন শ্রোতা তার দাওয়াতকে শোনার জন্য মনোযোগী হবে। সময় মতো বলা অত্যন্ত সাদামাঠা কথাও শ্রোতার ওপর অনেক শুভকর বয়ে আনে। বিপরীতে অনুপযুক্ত স্থানে এবং অসময়ে অনেক জ্ঞানগর্ব আলোচনাও কোন উপকারে আসে না। এমনিভাবে কখনো কখনো অনেক ভালো কথাও অনুপযুক্ত স্থানে বলার দ্বারা দাওয়াতের উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বুঝার জন্য কিছু উপমা পেশ করা হচ্ছে।
সাইয়্যেদিনা হযরত ইবরাহীম (আ.)- এর দাওয়াত
সাইয়্যেদিনা হযরত ইবরাহীম (আ.) তাঁর জাতিকে ঐ সময় দাওয়াত দিয়েছেন যখন সমগ্র জাতি তার দিকে মনোযোগী ছিলেন। যখন তিনি মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেললেন এবং কাফির নেতৃবর্গ তাকে সবার সম্মুখে দাঁড় করাল এবং জিজ্ঞাস করল, হে ইবরাহীম আমাদের দেবতাদের এই অবস্থা কি তুমি করেছো? সাইয়্যেদিনা ইবরাহীম (আ.) উত্তর দিলেন-
قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِن كَانُوا يَنطِقُونَ
অর্থাৎ এই কাজটি এই বড় মূর্তিটিই করেছে সুতরাং তোমরা তাকেই জিজ্ঞাস করো, যদি সে বলতে পারে। [সূরা আম্বিয়া -৬৩]
একজন দাঈর জন্য কখনো কখনো এমন সুবর্ণ সুযোগ সামনে এসে যায় যখন তার সকল শ্রোতা পুরোপুরি মনোযোগের সাথে তার দুই ঠোটের নড়াচডা পর্যন্ত অনুভব করে থাকে। তাই ঐ সময় দাঈ তার পুরো দাওয়াতকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে থাকে। এটা সেই দাঈর দূরদর্শিতা এবং আল্লাহ তা’আলার তাওফিকের ওপর নির্ভর করে। যেহেতু হযরত ইবরাহীম (আ.)- এর সংক্ষিপ্ত বাক্য বিরোধী কাফিরদের ওপর ঐ কুঠারের ধারের চেয়েও হাজারো গুণ ধারাল ছিল যেটা দিয়ে তিনি তাদের প্রতিমাগুলো ভেঙ্গে ছিলেন। এই বাক্য শুধুমাত্র জনসাধারণের মধ্যেই নয় বরং তাদের নেতাদেরও লজ্জাকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা তাদের জাতির সামনে এই কথাকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে যা সাধারণ অবস্থায় কখনোই স্বীকার করে না। তারা বলতে লাগল-
لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَؤُلَاء يَنطِقُونَ
তুমি তো ভালো করেই জানো যে এই দেবতা কথা বলতে পারে না। [সূরা আম্বিয়া -৬৫]
قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ ﴿٦٦﴾ أُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿٦٧﴾
তিনি বললেন -- ''তোমরা কি তবে আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা কর যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না আর তোমাদের অপকারও করে না? (66) ''ধিক্ তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদেরও প্রতি! তোমরা কি তবুও বুঝবে না?’’ (67) [সূরা আম্বিয়া-৬৬-৬৭]
ফায়দা
এই ঘটনা দ্বারা একথা জানা গেল দাঈ এমন সুযোগের তালাশে থাকবে যখন মানুষ তার কথা শুনতে চাইবে। অথবা যদি সে এমন সুযোগকে হারিয়ে ফেলে তাহলে কবির ভাষায়
زمانہ بڑےغور سےسن رہاتھا • ہمیں سو گۓ داستاں کہتے کہتے
যমানা অনেক মনোযোগ দিয়ে শুনতে ছিলো, আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি কাহিনি বলতে বলতে।
হযরত মুসা (আ.)- এর দাওয়াত
হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের দরবারে যখন মু’জিযা দেখালেন তখন ফেরাউন বলল যে, এটাতো জাদু, সুতরাং আমিও তোমাদের মোকাবেলায় আমার জাদুকরদের নিয়ে আসবো, একটি সময় নির্ধারণ করো। হযরত মুসা (আ.) বললেন,
قَالَ مَوْعِدُكُمْ يَوْمُ الزِّينَةِ وَأَن يُحْشَرَ النَّاسُ ضُحًى
নির্ধারিত দিনটি তাহলে রাজকীয় অনুষ্ঠানের দিনই হোক। এবং সময় হলো দিনের শুরুতে যখন লোকজন জমা হবে। [সূরা ত্বা-হা -৫৯]
ফায়দা,
সাইয়্যেদিনা হযরত মুসা (আ.) এখানে একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর তা হলো যে লোকজন বেশি থেকে বেশি জমা হয়। এজন্য তিনি রাজকীয় অনুষ্ঠানের দিনকে নির্ধারণ করেছেন। কেননা রাজকীয় অনুষ্ঠানের দিন তাদের মেলা হয় এবং মেলার দিনেও তিনি সময়টা এমন সময় পছন্দ করেছেন যখন সকল লোকজন মেলায় পৌছবে, যেন সকলের সামনে সত্যের সত্যতা ও ভ্রান্তির ভ্রান্ততা প্রমাণ হয়ে যায়। ক্ষমতাশীল শ্রেণি সর্বদাই এই চেষ্টা করে যেন সত্যের দাওয়াত জনসাধারণ পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। সুতরাং দাঈকে একথা ভাবতে হবে, সে তার দাওয়াতকে জনসাধারণ পর্যন্ত কিভাবে পৌঁছাবে।
বর্তমানেও দাওয়াতী ময়দানে নিয়োজিত মুজাহিদদের এমন সুযোগের তালাশে থাকা চাই কখন তার দাওয়াতকে বেশি থেকে বেশি মানুষের নিকট পৌছানো যাবে।
এর একটি উদাহরণ হল হযরত ইউসুফ (আ.)- এর ঘটনা। তিনি জেলখানায় উপস্থিত কয়েদীদেরকে তখনই দাওয়াত দিয়েছেন যখন কয়েদীরা তার নিকট তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে এসেছে।
Comment