আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১২তম পর্ব
===================
“আকীদাতুল ওয়ালা ওয়াল-বারা” ।।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১২তম পর্ব
===================
গ. সংশয় সৃষ্টিকারী মুনাফিকদের সাথে যুদ্ধ করা
মহান আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মুনাফিকদের সাথে কঠোরতা, অনমনীয়তা, যুক্তি উপস্থাপন ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে জিহাদ করতে বলেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ ﴿التحريم: ٩﴾
“হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন।”(সূরাতাহরীম: ৯)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
فيه مسألة واحدة وهو التشديد في دين الله، فأمره أن يجاهد الكفار بالسيف والمواعظ الحسنة والدعاء إلى الله، والمنافقين بالغلظة وإقامة الحجة، وأن يعرفهم أحوالهم في الآخرة وأنهم لا نور لهم يجوزون به الصراط مع المؤمنين ، وقال الحسن: أي جاهدهم بإقامة الحدود عليهم
.
“এ আয়াতে একটি মাসআলা স্পষ্ট করা হয়েছে। তা হলো: দ্বীনের ব্যাপারে অনমনীয়তা। তিনি নির্দেশ করেছেন যে, কাফেরদের সাথে অস্ত্রশস্ত্র, উত্তম উপদেশ ও আল্লাহর দিকে আহ্বানের মাধ্যমে যুদ্ধ কর। আর মুনাফিকদের সাথে কঠোরতা ও যুক্তি উপস্থাপন এবং তাদের শেষ পরিণাম কীরূপ হবে এবং মু’মিনদের সাথে চললেও তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এ কথা অবহিত করে বুঝানোর মাধ্যমে যুদ্ধ কর। হাসান রহ. বলেন, অর্থাৎ শাস্তি বাস্তবায়ন করে তাদের সাথে জিহাদ কর।” (তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/২০১ পৃ.)
০৮. শরীয়াহর নিকট অগ্রহণযোগ্য কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বকারীদের কিছু মিথ্যা অজুহাত:
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের মিথ্যা অজুহাত গ্রহণ করেননি। তারা কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে। যুগের বিপর্যয় ও বৈশ্বিক পরিবর্তনের অজুহাতে তাদেরকে সাহায্য করে। কখনো তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করেছে কাফেরদের নিকট তাদের একটা অবস্থান হওয়ার অজুহাতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿المائدة: ٥١﴾ فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ فَعَسَى اللَّهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ ﴿المائدة: ٥٢﴾ وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا أَهَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُوا خَاسِرِينَ ﴿المائدة: ٥٣﴾
“হে মু’মিনগণ! তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না। বস্তুত যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, আপনি তাদেরকে দেখবেন, দৌড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলে, আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হই। অতএব, সেদিন দূরে নয়, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করবেন অথবা নিজের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশ দেবেন; ফলে তারা স্বীয় গোপন মনোভাবের জন্য অনুতপ্ত হবে। মু’মিনগণ বলবে, এরাই কি সে সব লোক; যারা আল্লাহর নামে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথেই আছি? তাদের কৃতকর্মসমূহ নষ্ট হয়ে গেছে; ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে।” (সূরামায়িদা: ৫১-৫৩)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন-
}فترى الذين في قلوبهم مرض} أي شك وريب ونفاق، {يسارعون فيهم} أي يبادرون إلى موالاتهم ومودتهم في الباطن والظاهر، {يقولون نخشى أن تصيبنا دائرة} أي يتأولون في مودتهم وموالاتهم أنهم يخشون أن يقع أمر من ظفر الكافرين بالمسلمين، فتكون لهم أياد عند اليهود والنصارى.
فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন অর্থাৎ সন্দেহ, সংশয় ও মুনাফিকী রয়েছে। يُسَارِعُونَ فِيهِمْ দৌঁড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে অর্থাৎ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে তাদের বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতার জন্য দৌড়ঝাঁপ করে। يَقُولُونَ نَخْشٰى أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ তারা বলে, আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হই। অর্থাৎ, তাদের বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতার কারণ ব্যাখ্যা করে বলে, তারা ভয় করছে যে, কাফেররা যদি মুসলমানদের উপর বিজয় লাভ করে, তখন ইয়াহুদী-নাসারাদের কাছে তাদের একটা অবস্থান হবে।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৭১)
০৯. মু’মিনদের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করা এবং তাদেরকে সাহায্য করার নির্দেশ:
কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আলোচনা করার পর সংক্ষিপ্তাকারে মু’মিনদের সাথে বন্ধুত্ব করার নির্দেশের বিষয়ে আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلَايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ ﴿الأنفال: ٧٢﴾ وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُن فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ ﴿الأنفال: ٧٣﴾ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ ﴿الأنفال: ٧٤﴾ وَالَّذِينَ آمَنُوا مِن بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَٰئِكَ مِنكُمْ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿الأنفال: ٧٥﴾
“যাঁরা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করেছে এবং যাঁরা তাঁদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তাঁরা একে অপরের বন্ধু। আর যারা ঈমান এনেছে; কিন্তু হিজরত করেনি তোমাদের জন্য তাদের অভিভাবকত্বের কোনো দায়িত্ব নেই, যতক্ষণ না তারা হিজরত করে। অবশ্য যদি তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে; তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু তোমাদের সাথে যাদের চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নয়। বস্তুত তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সে সবই দেখেন। আর যারা কাফের তারা পারস্পরের বন্ধু। তোমরা যদি (উপরোক্ত) ব্যবস্থা কার্যকর না কর; তবে ফেতনা বিস্তার লাভ করবে এবং বড়ই বিপর্যয় দেখা দেবে। আর যাঁরা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাহে জিহাদ করেছে এবং যাঁরা তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো প্রকৃত মু’মিন। তাঁদের জন্য রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। আর যাঁরা ঈমান এনেছে পরবর্তী পর্যায়ে এবং হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে সম্মিলিত হয়ে জিহাদ করেছে, তাঁরাও তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বস্তুত যারা আত্মীয়, আল্লাহর বিধান মতে তাঁরা পরস্পর বেশি হকদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাবতীয় বিষয়ে সক্ষম ও অবগত।” (সূরাআনফাল: ৮২-৮৫)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন-
قوله تعالى: {وإن استنصروكم في الدين} يريد إن دعوا هؤلاء المؤمنون الذين لم يهاجروا من أرض الحرب عونكم بنفير أو مال لاستنقاذهم فأعينوهم، فذلك فرض عليكم فلا تخذلوهم، إلا أن يستنصروكم على قوم كفار بينكم وبينهم ميثاق فلا تنصروهم عليهم ولا تنقضوا العهد حتى تتم مدته
.
قال ابن العربي: إلا أن يكونوا أسراء مستضعفين فإن الولاية معهم قائمة، والنصرة لهم واجبة حتى لا تبقى منا عين تطرف، حتى نخرج إلى استنقاذهم إن كان عددنا يحتمل ذلك، أو نبذل جميع أموالنا في استخراجهم حتى لا يبقى لأحد درهم كذلك قال مالك وجميع العلماء. فإنا لله وإنا إليه راجعون على ما حل بالخلق في تركهم إخوانهم في أسر العدو، وبأيديهم خزائن الأموال وفضول الأحوال والقدرة والعدد والقوة والجلد.
“আল্লাহর বাণী- وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ “যদি তারা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দারুল হারব থেকে হিজরত করতে না পারা মু’মিনরা যদি তোমাদের কাছে সৈন্য প্রেরণ বা সম্পদ সাহায্য চায়, তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও। এটি তোমাদের উপর ফরয। অতএব, তোমরা তাদেরকে নিরাশ করবে না। তবে তারা যদি এমন কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করে, যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি আছে, তখন সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি ভঙ্গ করবে না।
ইবনুল আরাবী রহ. বলেন, তবে তারা যদি দুর্বল বন্দী হয়। কেননা তাদের সাথে বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে এবং তাদেরকে সাহায্য করা ওয়াজিব। আমাদের পক্ষ থেকে যাতে কোনো অবহেলা না পাওয়া যায়। এমনকি আমাদের সংখ্যা বিচারে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে মুক্ত করার সম্ভাবনা থাকলে, তাদেরকে মুক্ত করার জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে বা তাদেরকে মুক্ত করতে যত টাকার প্রয়োজন, তত টাকা খরচ করে হলেও তাদেরকে মুক্ত করতে হবে। এমনকি আমাদের কাছে এক পয়সাও বাকি না থাকুক। ইমাম মালেক ও সমস্ত আলেম এমনটিই বলেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! কত নীচু তাদের চরিত্র, যাদের ভাইয়েরা দুশমনের কারাগারে বন্দী; অথচ তাদের হাতে রয়েছে সম্পদ, তাদের রয়েছে শক্তি-সামর্থ, তারা সংখ্যায় যথেষ্ট, তাদের সেনাবাহিনী রয়েছে, রয়েছে অস্ত্র-শস্ত্র।” (কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না!!) (তাফসীরে কুরতুবী, ৮/৫৭)
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন-
ذكر تعالى أصناف المؤمنين، وقسمهم إلى مهاجرين خرجوا من ديارهم وأموالهم، وجاءوا لنصر الله ورسوله وإقامة دينه، وبذلوا أموالهم وأنفسهم في ذلك، وإلى أنصار وهم المسلمون من أهل المدينة إذ ذاك، آووا إخوانهم المهاجرين في منازلهم، وواسوهم في أموالهم، ونصروا الله ورسوله بالقتال معهم، فهؤلاء بعضهم أولياء بعض، أي كل منهم أحق بالآخر من كل أحد، ولهذا آخى رسول الله صلى الله عليه وسلم بين المهاجرين والأنصار كل اثنين إخوان .
وقوله تعالى: {والذين آمنوا ولم يهاجروا مالكم من ولايتهم من شيء حتى يهاجروا} هذا هو الصنف الثالث من المؤمنين وهم الذين آمنوا ولم يهاجروا بل أقاموا في بواديهم فهؤلاء ليس لهم في المغانم نصيب ولا في خمسها إلا ماحضروا فيه القتال.
يقول تعالى: {وإن استنصروكم} هؤلاء الأعراب الذين لم يهاجروا في قتال ديني على عدو لهم فانصروهم، فإنه واجب عليكم نصرهم، لأنهم إخوانكم في الدين إلا أن يستنصروكم على قوم من الكفار بينكم وبينهم ميثاق، أي مهادنة إلى مدة فلا تخفروا ذمتكم ولا تنقضوا أيمانكم مع الذين عاهدتم، وهذا مروي عن ابن عباس رضي الله عنه
“আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের প্রকারভেদ বর্ণনা করেন। প্রথম প্রকার: মুহাজিরীন- যাঁরা ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পদ ত্যাগ করে বেরিয়ে গেছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করা এবং দ্বীন কায়েম করার জন্য চলে এসেছেন। এই পথে নিজেদের জান-মাল কুরবান করেছেন। দ্বিতীয় প্রকার: মদীনার স্থায়ী বাসিন্দা আনসার- যাঁরা তাঁদের বাড়িতে মুহাজির ভাইদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, নিজেদের সম্পদ তাঁদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন। মুহাজিরদের সাথে যুদ্ধ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করেছেন (অর্থাৎ দ্বীনকে বিজয়ী করেছেন)। সুতরাং তাঁরাই পরস্পরে বন্ধু। অর্থাৎ প্রত্যেকের নিকট অপর ভাই নিজের জীবনের চেয়েও প্রিয়। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহাজির-আনসারকে দু’জন দু’জন করে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلَايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا ﴿الأنفال: ٧٢﴾
“যারা ঈমান এনেছে; তবে হিজরত করেনি তাদের সাথে তোমাদের কীসের বন্ধুত্ব- যতদিন না তারা হিজরত করছে??” এটি মুমিনের তৃতীয় প্রকার। যারা ঈমান আনা সত্ত্বেও হিজরত করেনি; বরং তাদের স্ব স্ব স্থানে রয়ে গেছে, তাদের জন্য গনীমতে কোনো অংশ নেই। এক পঞ্চমাংশেও তাদের অংশ নেই। তবে যারা যুদ্ধে অংশ নেবে তারা এর ব্যতিক্রম।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন- وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ “তারা যদি তোমাদের সহায়তা কামনা করে।” যেসব লোক হিজরত করে কাফেরদের সঙ্গ নিয়ে যুদ্ধ করতে যায়নি, তারা যদি সাহায্য কামনা করে, তাদেরকে সাহায্য কর। তাদেরকে সাহায্য করা ওয়াজিব। কারণ, তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই। তবে তারা যদি এমন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য চায়, যাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদে তোমাদের চুক্তি রয়েছে, তখন তোমরা তোমাদের দায় ও চুক্তি ভঙ্গ করবে না। এটি ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৩২৯-৩৩০)
মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ﴿التوبة: ٧١﴾
“ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু। তাঁরা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে। সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা‘আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাতাওবা: ৭১)
ইবনে কাসীর রহ. বলেন, মুনাফিকদের গর্হিত গুণাবলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের প্রশংসার্হ গুণাবলি তুলে ধরেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের বন্ধু” অর্থাৎ, একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে।
যেমন সহীহ বুখারীর হাদীসে এসেছে-
الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ، وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ
“মু’মিনগণ পরস্পর একটি প্রাসাদের ন্যায়। যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। এই বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাতের আঙুলগুলো অপর হাতের আঙুলে প্রবেশ করালেন।” (সহীহবুখারী, হাদীসনং- ৪৮১)
বুখারীর অন্য এক হাদীসে আছে-
مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إذَا اشْتَكَى شَيْئًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
“পরস্পর মহব্বত, দয়া ও অনুগ্রহে মু’মিনদের উদাহরণ একটি দেহের ন্যায়। যখন তার এক অঙ্গ অসুস্থ হয়, তখন তার পুরো দেহ বিনিদ্রা ও জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়ে।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬০১১)
সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৩৭০)
Comment